On This Page
এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - লেনদেন ও হিসাবরক্ষণ | NCTB BOOK

হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি (Method of Book keeping)

হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি দুইরকম । যথা— 

১. একতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি । 

২. দু'তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি ।

হিসাবরক্ষণের এ পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি (Double Entry System)। বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য হিসাবরক্ষণ আধুনিক পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। দু'তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি বর্ণনার পূর্বে কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে জানা দরকার ।

১. সম্পদ (Assets ) 

২. মূলধন (Capital ) 

৩. ঋণ (Credit)

দু'তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতিতে এ তিন ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে হিসাব রক্ষিত হয় ।

১. সম্পদ (Assets): এখানে সম্পদ বলতে ব্যবসার প্রয়োজনে যে সকল দ্রব্য ক্রয় করা হয়। যেমন-জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, স্টেশনারি দ্রব্য, এমনকি নগদ টাকাও সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয় ।

২. মূলধন (Capital): মূলধন হচ্ছে ব্যবসায় সম্পদ ক্রয় করার জন্য এবং সেই সাথে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিনিয়োগকৃত অর্থ ও ব্যবসায় মূলধন । 

৩. ঋণ (Credit): ঋণ হচ্ছে উক্ত সম্পদগুলোর ক্রয় করার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যখন অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে কোনো শর্তের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে তখন সেই পরিমাণ অর্থকে ঋণ বলে । যেমন-ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, কোনো পণ্য দ্রব্য বাকিতে ক্রয় করা অথবা কোনো পাওনা এখনও পরিশোধ করা হয়নি এমন অর্থও ঋণ পাওনা হিসাবে দেখানো হয় ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণের সময় নিম্নলিখিত তিনটি বিষয় বিবেচনা করতে হয় ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সংজ্ঞা (Definition of Double Entry System) :

যে পদ্ধতির প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষকে সমান টাকার অংকে একটিকে ডেবিট এবং অপরটিকে ক্রেডিট করে হিসাবের বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির কতিপয় জনপ্রিয় সংজ্ঞা নিম্নে প্রদত্ত হলো :

১. উইলিয়াম পিকলস-এর মতে, 'দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে টাকা বা টাকায় পরিমাপযোগ্য প্রতিটি লেনদেনকে দ্বৈত সত্তায় প্রকাশ করা হয় । ফলে একটি হিসাব খাতকে প্রাপ্ত সুবিধার জন্য ডেবিট এবং সুবিধা প্রদানকারী হিসাবকে ক্রেডিট করা হয় । এটাই দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি ।'

২. অধ্যাপক ব্রুক ও পামার আর্চারের মতে, 'প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈত সত্তা লিপিবদ্ধ করে কারবারের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।'

৩. স্পাইসার ও পেগলার-এর মতে, 'যে পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনকে সমপরিমাণ অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় । অর্থাৎ এক বক্তির নিকট হতে যে সুবিধা পায় এবং অপর ব্যক্তিকে সমান মূল্যের সুবিধা প্রদান করে তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

উপরোক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, হিসাব পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট এই দ্বৈত সত্তা দু'টি পৃথক হিসাব খাতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাসমূহ ( Advantages of Double Entry System )

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। নিম্নে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :

১. লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ হিসাব: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে লেনদেনের দ্বৈত সত্তার উপর প্রতিষ্ঠিত বলে লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখা সম্ভব ।

২. গাণিতিক নির্ভুলতা যাচাই: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণের মাধ্যমে যাচাই করা যায় । 

৩. লাভ-লোকসান নির্ণয়: এ পদ্ধতিতে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাবসমূহ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়; ফলে কোনো নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে সহজেই লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুত করে কারবারের সঠিক লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করা যায় । 

৪. দেনা-পাওনার পরিমাণ জানা: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রাখলে মোট দেনা ও মোট পাওনার পরিমাণ জানা যায় এবং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা সহজ হয় । 

৫. আর্থিক অবস্থা নির্ণয়: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পত্তি ও দায়ের হিসাব যথাযথভাবে রাখা হয় । ফলে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা যায় । 

৬. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায় । 

৭. তুলনামূলক বিশ্লেষণ: এ পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হলে চলতি হিসাবকালের সাথে সহজেই এক বা একাধিক হিসাবকালের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করা যায় ।

৮. চুরি ও জালিয়াতি রোধ: এ পদ্ধতিতে হিসাব রাখলে হিসাবের ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি সহজে উদ্ঘাটন করা যায় এবং চুরি ও জালিয়াতির হাত থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষাও করা যায় ।

৯. তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ: এ পদ্ধতিতে হিসাব রাখার মাধ্যমে ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সহজেই সংগ্রহ করা যায় এবং প্রয়োজনে তথ্যসমূহ সরবরাহ করে ব্যবসায়ীকে সহায়তা করা যায় । 

১০. সহজ প্রয়োগ: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিটি নির্ভরযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হওয়ায় ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োগ করা যায় ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি (Double Entry System)

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য হিসাব ব্যবস্থা। ইতালীয় ধর্মযাজক লুকা প্যাসিওলি ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি প্রচলন করেন । বর্তমান বিশ্বে এ পদ্ধতিটি হিসাবরক্ষণের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত এবং সুসংবদ্ধ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । যে পদ্ধতির প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষকে সমান টাকার অংকে একটিকে ডেবিট এবং অপরটিকে ক্রেডিট করে হিসাব বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

প্রত্যেক ব্যবসায়ের লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকে। একটি ডেবিট পক্ষ এবং অপরটি ক্রেডিট পক্ষ । যে পক্ষ গ্রহণ করে তাকে ডেবিট এবং যে পক্ষ প্রদান করে তাকে ক্রেডিট বলে ।

দু'তরফা দাখিলা হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি একটি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া যা অবিরত চক্রাকারে চলতে থাকে । হিসাবরক্ষণের এই প্রক্রিয়াকে হিসাব চক্র বলে । নিম্নলিখিত পাঁচটি স্তরে হিসাব চক্রকে বিভক্ত করা যায় । যথা-

Content added By

Promotion