এসএসসি(ভোকেশনাল) - এগ্রোবেসড্ ফুড -১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

খাদ্যশস্য গুদামে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা একটি বড় সমস্যা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO) এর মতে পৃথিবীতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন শস্য গুদামে নাড়াচূড়ার দরুন নষ্ট হয়। কোনো কোনো দেশে শতকরা ১৫-৩০ ভাগ শস্য গুদামে নষ্ট হয়। উল্লেখ্য যে ৫০ ধরনের পোকা আমাদের দেশে গোলাজাত শস্যের ক্ষতিসাধন করে থাকে। পরিবেশগত দিক থেকে পোকামাকড়ের অবস্থা ও বংশ বিস্তারের জন্য বাংলাদেশ মোটামুটিভাবে উত্তম স্থান। এখানে অনুকূল আবহাওয়ার দরুন পোকামাকড় দ্রুত বংশবিস্তার করে। ফলে গুদামজাত শস্য অতি অল্প সময়ের মধ্যে পোকাক্রান্ত হয়। নিম্নে গুদামজাত ধান ফসলের প্রধান প্রধান পোকার পরিচিতি ও ক্ষতির প্রকৃতি বর্ণনা করা হলো- 

১. ধানের শুঁড় পোকা : গুদামজাত শস্যেরে কীটপতঙ্গের মধ্যে এটি অন্যতম। ইংরেজিতে এদের রাইস উইভিল বলে। এদের প্রধান খাদ্য ধান। এছাড়াও এরা গম, ভুট্টা প্রভৃতি আক্রমণ করে। এদের মাথার সামনে একটি শক্ত ও লম্বা শুঁড় থাকে। এরা শস্যের মধ্যে গর্ত করে শস্যের শাঁস খেয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই পোকা বর্ষাকালে, বিশেষ করে আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বেশি ক্ষতি করে। 

২. কেড়ি পোকা : ইংরেজিতে একে লেসার গ্রেইন বোরার বলে। এ পোকা ধান ও গম ফসলের বেশি ক্ষতি করে এদের চোয়াল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর সাহায্যে এরা শস্যদানার ভেতরের অংশ কুরে কুরে খায়। খাওয়ার ফলে শস্যদানার ভেতরের অংশ ফাঁপা হয়ে যায় এবং শুধু বাইরের খোসাটি অবশিষ্ট থাকে। একবার শস্যদানার মধ্যে ঢুকলে জীবনের অবশিষ্ট সময় এখানেই কাটিয়ে দেয় । 

৩. লাল শূসরী পোকা : ইংরেজিতে একে গ্রেইন বিটল বলে। এদের শরীরে লাল ও বাদামি রঙের হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ে গুদামজাত শস্যদানা বা প্রস্তুতকৃত খাদ্যদ্রব্য আক্রমণ করে। সাধারণত এরা অক্ষত ও পূর্ণ দানা আক্রমণ করে না। অন্য পোকা খাওয়া দানায় এরা ক্ষতি করে । পোকায় আক্রান্ত ময়দা, সুজি ও আটা একসাথে দলা বেঁধে যায় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

৪. খাগড়া বিটল: দামজাত শস্যের জন্য এটি একটি মারাত্মক পোকা। এ পোকা না খেরে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। এ পোকা ধান, গম, ভুট্টা, আটা ও ময়দায় আক্রমণ করে। পোকার কীড়া দানার ক্ষতি করে। এরা গুদামজাত শস্যের উপরের স্তরে আক্রমণ শুরু করে এবং কখনও খুব বেশি ভিতরে ঢোকে না।

৫. ধানের সুরুই পোকা : ইংরেজিতে একে রাইস মথ বলে। এ পোকা ধান, পম ভুট্টা ও অন্যান্য শস্যদানা আক্রমণ করে। এ পোকার কীড়া খানের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে ভেতরের শাঁস খেয়ে থাকে। আক্রান্ত খানের মধ্যে এরা গোলাকার ছিদ্র করে খার। সাধারণত এরা ধানের উপরের স্তরে বেশি ক্ষতি করে।

৬. চালের সুরুই পোকা : একে রাইস মিল মথ বলে। এরা ধানের সুরুই পোকা থেকে একটু বড়। এ পোকা চালের সবচেরে বেশি ক্ষতি করে। কীড়াগুলো এক প্রকার রেশমি জান তৈরি করে তার নিচে থেকে চালের ক্ষতি করে। আক্রান্ত শস্যদানা দুর্গন্ধ যুক্ত এবং খাওয়া বা বিক্রির অনুপযুক্ত হয়ে যায় এবং বড় বড় জটা সৃষ্টি করে।

৭. সুরুই পোকা : একে ইন্ডিয়ান মিল মথ বলে। এ পোকা বিভিন্ন প্রকার শস্যদানা, খাদ্য বন্ধ, সয়াবিন, শুকনো ফল, বাদাম ইত্যাদি আক্রমণ করে। শস্য দানার উপর এরা রেশমি সুতা দিয়ে একটি জাল তৈরি করে যার সাথে পোকার বিষ্ঠা মিশানো থাকে।

Content added By