এসএসসি(ভোকেশনাল) - এগ্রোবেসড্ ফুড -১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

ধান থেকে উৎপাদিত চাল আমাদের দেশে দুইভাবে ব্যবহার হয়। যথা-

(ক) আতপ চাল : সংগৃহীত ধানকে শুকিয়ে সরাসরি মিলিং করে যে চাল পাওয়া যায় তাকে আতপ চাল বা সান ড্রাইড রাইস (Sundried Rice) বলে।

(খ) সিদ্ধচাল : সংগৃহীত ধানকে সিদ্ধ করা হয়। তারপর শুকিয়ে মিলিং করে যে চাল পাওয়া যায় তাকে সিদ্ধ বা পারবয়েলড রাইস (Parboild rice) বলে।

ধান সিদ্ধ করা একটি প্রাচীন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। ধান সিদ্ধ করা প্রথমে শুরু হয়েছিল ভারতে এবং এই উপমহাদশে এখনও ব্যাপকভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সিদ্ধ চাল ব্যবহার করা হয়। যেমন- বাংলাদেশ, নেপাল, বার্মা, শ্রীলংকা, মালেশিয়া এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। ধারণা করা হয় এই উপমহাদেশে প্রায় অর্ধেক সিদ্ধ চাল খাওয়া হয় যা পৃথিবীর মোট চালের এক-পঞ্চমাংশ। তবে সুগন্ধি চাল সিদ্ধ করা হয় না কারণ তাতে চালের সুগন্ধ অনকেটা চলে যায়।

ধান সিদ্ধকরণের সুবিধা ও অসুবিধা : 

সুবিধা :

(১) সিদ্ধ করার ফলে ধানের খোসা ফেটে যায়। ফলে চাল থেকে তুষ বা খোসা সহজে পৃথক করা যায় । 

(২) সিদ্ধ করা ধান ভাঙালে খুদের পরিমাণ কম হয় ।

(৩) সিদ্ধ চালের পুষ্টি উপাদান বেশি হয়। 

(৪) সিদ্ধ চালের পোকমাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। 

(৫) সিদ্ধ চালের কুঁড়ায় তেলের (Rice bran oil) পরিমাণ বেশি হয়। 

(৬) সিদ্ধ চালের মাড়ে আতপ চালের মাড় অপেক্ষা কম খাদ্যমান অপচয় হয়।

অসুবিধা : 

(১) সিদ্ধ করার ফলে চালের প্রাকৃতিক জারণ প্রতিরোধক বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তা গুদামজাত অবস্থায় তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। 

(২) সিদ্ধ চাল রান্না করতে বেশি সময় লাগে এবং বেশি জ্বালানি খরচের প্রয়োজন হয়। 

(৩) সিদ্ধ ধান বেশি দিন সংরক্ষণ করলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

ধান সিদ্ধকরণ পদ্ধতি :

কৃষকের বাড়িতে হাঁড়ি, পাতিল, ডেগচি, কড়াই বা তাফালে ধান সিদ্ধ করা হয়। ভিজিয়ে রাখা ধান পাত্র থেকে তুলে রাখা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিতে হয়। পাত্র চুলার উপর রেখে জ্বাল দিতে থাকলে যখন বেশির ভাগ ধান ফেটে যায় তখন উঠিয়ে এনে উঠানে বা চাতালে মেলে রোদে শুকানো হয়। ধান সিদ্ধ করার পদ্ধতি দুই-প্রকার। যথা (১) প্রচলিত পদ্ধতি ও (২) আধুনিক পদ্ধতি।

প্রচলিত পদ্ধতি : আমাদের দেশের প্রয়োজনীয় সিদ্ধ ধানের প্রায় সমস্তটাই প্রচলিত বা দেশীয় পদ্ধতিতে সিদ্ধ করা হয়। এ পদ্ধতি আবার দুই প্রকারের। যথা-

ক) একসিদ্ধ পদ্ধতি : বিভিন্ন পাত্রে ধান ১-৩ দিন পর্যন্ত ভিজানো হয়। তারপর জ্বাল দিয়ে সিদ্ধ করে শুকানো হয়। 

খ) দুইসিদ্ধ পদ্ধতি : ধান পানিতে ডুবানোর পূর্বে আংশিক পানিপূর্ণ পাত্রে রেখে তাপ প্রয়োগ করা হয়। তাপের ফলে উৎপন্ন জলীয় বাষ্প ধানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। এ অবস্থায় গরম ধানকে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। প্রায় ১ দিন পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখার পর ভিজা ধানকে উপরে বর্ণিত একসিদ্ধ পদ্ধতিতে সিদ্ধ করা হয়। দুই সিদ্ধের চাল বেশ শক্ত হয়। উভয় পদ্ধতিতেই ধান সিদ্ধ করার সময় যখন ধানের খোসা ফেটে দুই ভাগ হয়ে যায় তখন ধান সিদ্ধ সম্পন্ন হয়।

আধুনিক পদ্ধতি : আধুনিক পদ্ধতি তিন ধরনের। যথা-

ক) ধান ভিজিয়ে সিদ্ধ করার ধীর পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে পাকা চাতালের বা প্লাটফর্মের (plat from) উপর চোঙ্গাকৃতি এক বা একাধিক ইট বা সিমেন্টের (tank) বা কেটেল এ ধান ভিজানোর হয়। ২৪-৭২ ঘণ্টা ভিজানো ধান এখানে স্থানান্তর করা হয়। এই (tank) বা কেটেল একটি নল দ্বারা বয়লারের সাথে সংযুক্ত থাকে। নলটি ট্যাঙ্কের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঢুকানো থাকে। বয়লার থেকে পানির বাষ্প সমস্ত ট্যাঙ্কের ধানে ছড়িয়ে পড়ে। বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নলে ভাল্‌ভ (Valve) লাগানো থাকে। বয়লারের পানি চুলার আগুনে বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্পের তাপে যখন সমস্ত ধান সিদ্ধ হয়ে খোসা ফেটে যায় তখন ট্যাঙ্ক বা কেটেলের নিচের ভালব খুলে সিদ্ধ ধান বের করে আনা হয়। অতঃপর তা শুকানো হয়।

(খ) ভারতীয় পদ্ধতি : এ পদ্ধতি ভারতের কেন্দ্রীয় খাদ্য কারিপরি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (CFTRI) কর্তৃক উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে স্টিলের তৈরি সিদ্ধকরণ ট্যাঙ্ক বা কেটেল ব্যবহার করা হয়। বয়লার থেকে বাম্প ট্যাঙ্কে প্রবেশ করার উপযোগী করে নলগুলো বিন্যস্ত থাকে। ট্যাকের উপরের অংশে পানি প্রবেশের নল থাকে। ট্যাঙ্কের নিচে দুইটি তাতে থাকে, একটি দিয়ে ট্যাঙ্কের পানি নিষ্কাশন করা হয় এবং অন্যটি দিয়ে সিদ্ধ ধান বের করা হয়। ট্যাঙ্কে পানি প্রবেশ করানোর পর বয়লার থেকে বাষ্প প্রবেশ করানো হয়। বাষ্পের তাপে পানির তাপমাত্রা যখন 85°C হয়ে যায় তখন ধানকে উক্ত গরম পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। স্বয়ংক্রিয় কনভেয়ারের সাহায্যে ধানকে সিদ্ধকরণ ট্যাঙ্কে ফেলা হয়। কিছুক্ষণ পর ধান ও পানি মিত্রণের তাপমাত্রা 70°C এ এসে যায় । এই তাপমাত্রা যেন স্থির থাকে সেজন্য ট্যাঙ্কের ভিতর পানি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রবাহিত করা হয়। এ অবস্থায় ৩-৪ ঘন্টা থাকার পর নিচের ভাত দিয়ে গরম পানি সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর ধানের মধ্যে গরম বা প্রবাহিত করে ধানকে সিদ্ধ করা হয়। বাম্পের পানি বের হওয়ার জন্য নিচে ভাত খোলা রাখা হয়। অধিকাংশ ধানের খোসা ফেটে গেলে ধান সিদ্ধ সম্পন্ন হয়।

(গ) প্রেসার পদ্ধতি : এটি ভারতে উদ্ভাবিত আধুনিক পদ্ধতি। এতে খানকে 90°C গরম পানিতে ৪০ মিনিট ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর উক্ত ভেজা ধানে ১৮ মিনিট পরম বাষ্প প্রবাহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে উচ্চ চাপে ধানের মধ্যে বাষ্প প্রবাহিত করা হয়। এতে সিদ্ধ ধানের রং কিছুটা হলুদ হয় এবং ভালা চাল ও খুদের পরিমাণ কম হয়।

সিদ্ধ ধান শুকানো :

সাধারণ বা আতপ ধান শুকানোর মতো সিদ্ধ করা ধান শুকানো যায় না। সিদ্ধ ধান খুব ধীরে শুকালে ক্ষতিকর অনুজীবের আক্রমণে ধান নষ্ট থেকে পারে। পক্ষান্তরে দ্রুত শুকালে চালে ফাটল তৈরি হয় এবং মিলিং-এর সময় ভাঙ্গা চালের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় ধান সকল দিকে সমভাবে কানো উচিত। সুতরাং সিদ্ধ খান দুই পর্যায়ে শুকাতে হয়। প্রথম পর্যায়ে জলীয় অংশ ১৬% পৌছানোর আগেই শুকানো বন্ধ করে ছারার জমা করে কয়েক ঘন্টা রাখতে হবে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে শুকিয়ে জলীয় অংশ ১৪% বা তার কম করতে হবে । এভাবে শুকানোর মাঝে বিরতি দেওয়াকে টেম্পারিং বলে। রোদে ওকানোর ক্ষেত্রে এক রোদে না শুকিয়ে ২- ৩ দিনের রোদে শুকানো উচিত। প্রথমবার শুকানোর পর রাতের বেলা স্তূপীকৃত করে রাখলে টেম্পারিং-এর কাজ সহজেই হয়ে যায়। শুধু তাই নয় উঠানে ধান ছড়িয়ে দিয়ে ১ ইঞ্চি বা ২.৫ সে.মি. এর বেশি পুরু না করে ঘন ঘন উল্টারে দেওরা উচিত। বিভিন্ন ধরনের ড্রায়ারের মধ্যে অবিরাম প্রবাহলীল ও টেম্পারিং ব্যবস্থাযুক্ত প্রায়ার দ্বারা ধান শুকানো উচিত।

Content added By

Promotion