SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - স্বাস্থ্য সুরক্ষা - Wellbeing - NCTB BOOK

মনোবন্ধু

চন্দনদের স্কুল বন্যার্তদের সেবায় বেশ কিছু কাজ করেছে। তারা 'ভালো থাকা' ক্লাবের পক্ষ থেকে সমবয়সীদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের মনের কথা শুনেছে- সাহস দিয়েছে এবং কয়েকজনের কিছু সমস্যা হচ্ছিল বলে নারী ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের মানসিক সহায়তার জন্য তথ্য দিয়েছে। জেলা প্রশাসক এই শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমে খুশি হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছেন। স্কুলের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীরা তার সম্মানে ছোট একটা মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। চন্দন ও রাহেলার ওপর দায়িত্ব পড়েছে এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনার। দুজন শিক্ষক তার সঙ্গে সহযোগিতায় থাকবেন। সব প্রস্তুতি শেষ, অনুষ্ঠানের দিন চলে এসেছে।

জেলা প্রশাসকসহ স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। হঠাৎ চন্দন কেমন যেন একটু অসুস্থবোধ করল। সে প্রস্তুতি অনুযায়ী কথা বলতে পরছে না। সে জন্য একটু বিব্রতবোধ করছে, কী করবে বুঝতে পারছে না। রাহেলা বিষয়টা খেয়াল করল এবং শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে সে বাকি কাজ শেষ করল। জেলা প্রশাসকও খেয়াল করেছিলেন। তিনি রাহেলার সঙ্গে কথা বলেছেন যাতে চন্দন বিব্রতবোধ না করে। ওর সহপাঠী ও শিক্ষকবৃন্দও অনেক বুঝালেন, কিন্তু চন্দন নিজেকে দোষারোপ করতে থাকল; আমার জন্যই এমন হলো, আমি অনুষ্ঠানটা ঠিকমতো করতে পারলাম না। সে মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, আগের মতো প্রাণবন্ত নেই, একটু নিজেকে গুটিয়ে রাখে।

রাহেলা চন্দনের অনুমতি নিয়ে শ্রেণির সবার সঙ্গে কথা বলল। এরপর সবাই শিক্ষক দিপা আপার সঙ্গে বসল। তিনি বললেন, চলো আমরা সহমর্মী হয়ে মন খুলে কথা বলি। কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন কারণে অন্যদেরও এরকম দু-একবার হয়েছে। একজন বলল, সে বাড়ি যওয়ার পথে একটি দুর্ঘটনা দেখেছিল, এটা নিয়ে অনেক দিন খুব ভয় করছিল স্কুলে আসতে, এখন ঠিক হয়ে গেছে। যারা বিভিন্ন অসুবিধার কথা শেয়ার করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, ওর নানুর সঙ্গে ওর খুব সখ্য, উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই ওর খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে, কিছুই ভালো লাগছে না। একজন বলল, ওর এক প্রতিবেশী ওকে নিয়ে কটূক্তি করেছিল, এরপর অনেক দিন ও খুব মানসিক চাপে ছিল।

এভাবে মানসিক চাপ কেউ কেউ কাটিয়ে উঠেছে, আবার কেউ কেউ এখনো একটু একটু সমস্যা বোধ করে। সবাই মন খুলে কথা বলার পরে ওরা বেশ ভালো বোধ করছিল। ঠিক করল, এরকম ভালো থাকার জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে ওরা মাঝে মাঝে বসে মন খুলে কথা বলতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ কোনো ঘটনায় যদি এমন হয়, তাহলে কী করা যায়, কীভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করা যায়। এই উদ্যোগের জন্য রাহেলাকে চন্দন, ওর সহপাঠীরা ও দিপা আপা ধন্যবাদ জানালেন। চন্দন বলল সবার কাছ থেকে শুনে ও নিজে বলার পরে তার এখন আর নিজেকে নিয়ে অভিযোগ নেই। সে বুঝতে পারছে এমন সমস্যা শুধু তার একার নয়, অনেকেরই মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়ে থাকে আবার ঠিকও হয়ে যায়। তবে সবার সহমর্মী ও মুক্ত আলোচনা তাকে সাহস দিচ্ছে। আশা করছে আর অসুবিধা হবে না, বা হলেও সে বন্ধুদের সহযোগিতা নেবে। চন্দন প্রস্তাব করল, আজ থেকে আমরা সবাই সবাইকে 'মনোবন্ধু' বলে ডাকতে চাই।

আমরা কি চাই এমন 'মনোবন্ধু' হতে? তাহলে তো আমাদের শিখতে হবে মনোবন্ধু হতে কী কী শেখা ও করা প্রয়োজন। যাতে আমরা সবাই সবার প্রয়োজনের সময় মনোবন্ধুর সহযোগিতা নিতে ও দিতে পারি। এই শিখন অভিজ্ঞতাটিতে আমরা রাহেলা ও চন্দনদের মতো মনোবন্ধু হব। একে অপরের মনোবন্ধু হয়ে আমরা সবাই যখন প্রয়োজন হয়, সবার মনের কথা শুনব, পাশে থাকব, সহযোগিতা করব এবং যদি কারো এমন সমস্যার কথা জানতে পারি, যাতে অন্যদের সহযোগিতা প্রয়োজন, তার উদ্যোগ নেব।

শুরুতেই দলগত আলোচনা করে জানব আমরা কী ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, দেখেছি বা শুনেছি যা আমাদের চাপ তৈরি করছে এবং এই ঘটনাগুলো আমাদের জীবনযাত্রায় কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা খুঁজে বের করব।

আমার জীবনে অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রভাব

ঘটনার ধরন/কী ঘটেছিলঘটেছিল প্রভাব

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এই ঘটনাগুলো আমাদের সবার জীবনে একরকম প্রভাব ফেলে না। ব্যক্তিত্বের ধরন, অভ্যাস ও অভিজ্ঞতা, পরিবার, পরিবেশ, সামাজিক সহযোগিতা সবকিছুই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তাই একটি ঘটনা একজনের জীবনে যেভাবে প্রভাব ফেলে, আরেক জনের জীবনে সেভাবে প্রভাব না-ও ফেলতে পারে। অনেকে এই বিষয়টিকে দুর্বলতা হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকেন, যা ঠিক নয়। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিন্নতাই এখানে ভূমিকা রাখে।

সমাজে বিভিন্ন আঙ্গিকে যে অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো ঘটে থাকে আমাদের জীবনে তার বিভিন্ন ধরনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলাম। এবার প্রভাবগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণের পালা। তবে তার আগে আমরা যেসব পরিস্থিতি ও প্রভাবের ক্ষেত্রে সেবা সংস্থা/পেশাজীবীর সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন এবং তার কারণ সম্পর্কে জেনে নেব।

আমাদের অভিজ্ঞতা, আলোচনা ও প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনায় আমরা যে ঘটনাগুলো ও তার প্রভাব বের করেছিলাম, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আমরা যেন পদক্ষেপ নিতে পারি, তাই নিচের ছকে ধরন অনুযায়ী লিখে রাখি।

যেসব পরিস্থিতিতে সহপাঠী ও বন্ধুরা সহযোগিতা করতে পারিযেসব পরিস্থিতিতে অভিভাবক/ শিক্ষক/নির্ভরযোগ্য কারও সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজনযেসব পরিস্থিতিতে সেবা সংস্থা/পেশাজীবীর সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন

 

 

 

  

 

 

 

  

 

 

 

  

সবগুলো ক্ষেত্রে ঝুঁকি কী কী হতে পারে এবং তা মোকাবিলার জন্য নিজেরা কীভাবে প্রস্তুত থাকতে পারি, তা নিয়ে আমরা দলগতভাবে আলোচনা ও উপস্থাপন করেছি। শিক্ষকও আমাদেরকে কিছু বিষয়ে তথ্য দিয়ে সচেতন করেছেন।

এবার মনোবন্ধু হতে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়গুলো মেনে চলব তা নিচের ছবিতে লিখি

এবার আমরা তৈরি তো 'মনোবন্ধু' হওয়ার জন্য? তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কী করব তা লিখি। ক্লাবের পক্ষ থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা উপলক্ষ্যে দলগত কাজে আমি কী করব নিচের 'আমার মনোবন্ধু হওয়ার পরিকল্পনা' ছকে লিখে নিই।

আমার মনোবন্ধু হওয়ার পরিকল্পনা

মনোবন্ধু হিসেবে আমার একক কাজমনোবন্ধু হিসেবে 'ভালো থাকা' ক্লাবে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতায় আমার কাজ

 

 

 

 

 

 

 

মনবন্ধু হয়ে আমরা নিজেদের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করব। যখনই এই কাজ করব, তখনই পাঠ্যপুস্তকের মনোবন্ধু হয়ে আমি যে কাজগুলো করেছি ছকে লিখে রাখব এবং নির্দিষ্ট সময় পরে পরে শিক্ষকের কাছে জমা দেব।

মনোবন্ধু হয়ে আমি যে কাজগুলো করেছি

আমার একক কাজ

ঘটনাযে কাজ করেছি

কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার

 সহযোগিতা নিয়েছি? নিয়ে 

থাকলে তা কী?

ফলাফল

মনোবন্ধু হিসেবে আমার 

অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা

 

 

 

    

 

 

 

    

 

 

 

    

 

 

 

    

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে নেব। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।

মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ

 নিজের মন্তব্যসহপাঠীর মন্তব্যঅভিভাবকের মন্তব্যশিক্ষকের মন্তব্য

স্বতঃস্ফূর্ত

 উদ্যোগ গ্রহণ

    

শ্রদ্ধাশীল আচরণ

 

    

সহযোগিতামূলক 

 

    

পাঠ্যপুস্তকে 

সম্পাদিত 

কাজের মান

    

মূল্যায়ন ছক ২: অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য মনোবন্ধু ভূমিকায় মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় দলগত কাজের দক্ষতা

ভালো থাকা ক্লাবে অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে মানসিক চাপ মোকাবিলায় মনোবন্ধু ভূমিকায় মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমার পর্যবেক্ষণ করে আমি নিজে, আমার সহপাঠী এবং শিক্ষক মূল্যায়ন করবেন। মন্তব্যের ঘরে আমি কী কী ভালো করেছি এবং আর কোথায় ভালো করার সুযোগ আছে তা লেখা হবে, যার মাধ্যমে আমি উন্নয়নের ক্ষেত্র বুঝে সেই অনুযায়ী কাজ করব।

 

মন্তব্য

নিজে

 

 

 

সহপাঠী

 

 

 

শিক্ষক

 

 

 

মূল্যায়ন ছক ৩: আমার জীবনে সমঝোতা-সংক্রান্ত কৌশল চর্চা

শিক্ষার্থীর নাম

সচেতনভাবে কৌশল

 ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত 

  গ্রহণের ব্যক্তিগত 

পরিকল্পনার যথার্থতা ও চর্চা

পরিকল্পনার আলোকে 

সচেতনভাবে কৌশল ব্যবহার 

করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজগুলো 

পাঠ্য পুস্তক এবং খাতা

/ডায়েরি/জার্নালে লিপিবদ্ধ করা

পাঠ্যপুস্তক ডায়েরি/ খাতা/

জার্নালে লিপিবদ্ধ করা চর্চাগুলোতে 

সচেতনভাবে কৌশল ব্যবহার করে 

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারণাগুলোর 

সঠিক প্রতিফলন

বর্ণনামূলক ফিডব্যাক

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

   

 

 

Content added By

Promotion