SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - গণিত - Mathematics - NCTB BOOK

গাণিতিক অনুসন্ধান

আগের শ্রেণিগুলোতে তোমরা সংখ্যা ও সংখ্যার বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিশ্চয়ই কিছু মজার তথ্য জেনে এসেছ। কিন্তু আজ আমরা সংখ্যা নিয়ে নতুন কিছু শিখব না। আজ শিখব সংখ্যা নিয়ে কীভাবে অনুসন্ধান করতে হয়। আগের শ্রেণিতে তথ্য ও উপাত্তের অভিজ্ঞতাটিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সংখ্যাবাচক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে, মনে আছে? আমাদের চারপাশে এমন অগণিত সংখ্যা রয়েছে যেগুলো নিয়ে গণিতজ্ঞ এবং গবেষকগণ চিন্তা করেন। গণিতজ্ঞ ও গবেষকগণের মতো দেখো তো চেষ্টা করে ব্যাপারটি আনন্দের নাকি নীরস, তোমাদের কী মনে হয়? তাহলে চলো আমরা কোনো একটি সমস্যা গণিতজ্ঞ গবেষকগণের মতো পরীক্ষা করে দেখি।

আজকে যে সমস্যাটি দেখব সেটি পৃথিবীর বড়ো বড়ো গণিতজ্ঞদের প্রিয় একটি সমস্যা এবং সেটির সঙ্গে ক্রমিক সংখ্যার অনুক্রমের সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটি/সম্পর্কগুলো কী, ঘাঁটাঘাঁটি শেষ করে তোমরা বলবে। আরও বলে রাখি, এই সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে তুমি এমন কিছু আবিষ্কার করতে পার যা অন্য কেউ কখনো করতে পারেনি। পরীক্ষাটি করতে গিয়ে তুমি বেশ কিছু হিসাব-নিকাশ এবং লেখালেখি করবে। কাজ শেষ হলে তুমি দেখে অবাক হয়ে যাবে যে গণিত নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে কত চমৎকার একটি রাস্তা পাড়ি দিয়েছ, কত কিছু শিখেছ! তাহলে চলো, ধাপে ধাপে সমস্যাটি দেখা যাক।

 

গাণিতিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া

সংখ্যা নিয়ে উপরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা অনুসন্ধানটি ভালো লেগেছে? এ তো গেল সংখ্যা নিয়ে একটিমাত্র সমস্যা। সংখ্যা ছাড়াও গণিতের আরও অনেক শাখা রয়েছে, সেসব শাখায় বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন এবং সমস্যা আছে। সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গেই যুক্ত। গাণিতিক কোনো সমস্যার বৈশিষ্ট্য, সমাধান বা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াকে আমরা গাণিতিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া বলতে পারি। গণিত ছাড়াও অন্যসব বিষয়েরও অনুসন্ধান রয়েছে। যেমন, বিজ্ঞানের অনেক অনুসন্ধান ল্যাবরেটরিতে করে। আবার সামাজিক বিজ্ঞানের অনুসন্ধানের জন্য সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাওয়া লাগতে পারে। কিন্তু গণিতের মজা হলো, গাণিতিক অনুসন্ধানের অনেকটাই তুমি ঘরে বসে খাতা-কলমে করে ফেলতে পারবে। কখনো কখনো ক্যালকুলেটর বা কম্পিউটার লাগতে পারে। কিন্তু হাতে-কলমে গাণিতিক অনুসন্ধান করার থেকে আনন্দের আর কী আছে?

 

গাণিতিক অনুসন্ধানের ধাপ

আগেই বলেছি, এই অভিজ্ঞতায় আমরা গণিত শিখব না, গাণিতিক অনুসন্ধান কীভাবে করে তার পদ্ধতি শিখব। তোমরা ইতোমধ্যেই একটি অনুসন্ধান সম্পন্ন করেছ, আশা করি মজা পেয়েছ। এখন একটু ফিরে দেখা দরকার যে আমরা আসলে কী পদ্ধতি অবলম্বন করলাম, কী কী ধাপে কাজটি শেষ করলাম। আমাদের গাণিতিক অনুসন্ধানে যা যা কাজ করেছি, নিচের ছকে সেগুলো এলোমেলো করে দেওয়া আছে (ক-ঝ)। তোমার কাজ হবে ধাপগুলোর বাম পাশের ফাঁকা ঘরে কোনটি তোমার ক্ষেত্রে কততম ধাপ, তা লেখা। কোনো ধাপ যদি প্রয়োজন না পড়ে, তবে তার ঘর ফাঁকা রাখতে পার।

 

 

গাণিতিক অনুসন্ধান করা জরুরি কেন?

এ পর্যন্ত আমরা গাণিতিক অনুসন্ধানের ধাপগুলো জানলাম, কোনটি কীভাবে করে তা হাতে-কলমে দেখলাম। কিন্তু তোমার কি জানতে ইচ্ছা করছে যে এই অনুসন্ধান করে কী হবে? কেন গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানীগণ অনুসন্ধান করে থাকেন? প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য তো বটেই, কিন্তু কী হবে সে সব প্রশ্নের উত্তর জেনে? তোমার মাথায় কী আসছে নিচের ফাঁকা ঘরে লেখো তো, ইচ্ছে হলে পাশে ছবিও এঁকে রাখতে পার।

 

কেন অনুসন্ধান করতে হবে, তার অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। তবে প্রধানতম কারণটি হলো সমস্যাটির বৈশিষ্ট্যগুলোকেই গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করা। সব সমস্যারই যে সমাধান সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলা সম্ভব তেমনটি সব সময় নয়। তবে সমস্যাটিকেই যদি আগের থেকে আরেকটু ভালো বোঝা যায়, তবে তা সমাধানের দিকে অনেকটা এগিয়ে যায়।

এই যে সমস্যার বৈশিষ্ট্য বোঝার কথা বললাম, এর মাধ্যমে কিন্তু আমরা সমজাতীয় সমস্যার সমাধান কীভাবে করব তাও বুঝতে পারি। আগের শ্রেণিতে তোমরা কিছু কিছু বীজগাণিতিক সূত্র ব্যবহার করা শিখে এসেছ। একই সূত্র দিয়ে সমজাতীয় অনেক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা যায়, তাই না?

 

দলগত অনুসন্ধান

এ পর্যন্ত তোমরা জেনে এসেছ গাণিতিক অনুসন্ধান কী, এই অনুসন্ধান কীভাবে সম্পন্ন করে, এর ধাপগুলো কী কী। কিন্তু ভবিষ্যতে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যাবলি একই পদ্ধতিতে সমাধান করার জন্য আমাদের এখন থেকেই চর্চা থাকা প্রয়োজন। তাই আমরা এবার কিছু দলগত কাজ করব। তোমাদের পুরো ক্লাসটিকে শিক্ষক ছয়টি ভাগে ভাগ করবেন, প্রতিটি ভাগ একটি দল। নিচে তিনটি দলের জন্য একটি করে সমস্যা বা প্রশ্ন দেওয়া আছে, বাকি তিনটি সমস্যা শিক্ষক সরবরাহ করবেন। দলগুলোর সেগুলো অনুসন্ধান করে সমাধান/পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করতে হবে। কোন দলের ভাগে কোন সমস্যাটি পড়বে তা শিক্ষকের নির্দেশনায় লটারি করে নির্ধারণ করা হবে। উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পোস্টার কাগজ ব্যবহার করলে ভালো, যদি না পার তবে শিক্ষকের পরামর্শে গাণিতিক অনুসন্ধানের ধাপ অনুসারে তোমাদের পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করবে। তোমাদের জন্য ৩টি সমস্যা দেওয়া হলো। শিক্ষকের সহায়তায় তোমরা আরও দুই বা তিনটি অনুসন্ধানের সমস্যা তৈরি করবে এবং এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখবে। তাহলে সমস্যা বা প্রশ্নগুলো দেখে নাও-

সমস্যা ১

প্রাচীন মিশরীয়রা গণিত এবং বিজ্ঞানে ভীষণ উন্নতি করেছিলেন, জানো তো? তাঁরা বিভিন্ন জ্যামিতিক পরিমাপের জন্য একটি দড়ি ব্যবহার করতেন। দড়িটির বৈশিষ্ট্য হলো, তাতে নির্দিষ্ট সমান ব্যবধানে ১৩টি গিট দেওয়া থাকত (ঠিক নিচের বাম পাশের ছবিটির মতো করে)।

এই দড়ি দিয়ে তাঁরা সমকোণী ত্রিভুজ বানাতেন (উপরের ডান পাশের ছবিটির মতো করে)। তোমরা নিশ্চয়ই জানো সমকোণী ত্রিভুজ কোনগুলো? পরবর্তী একটি অভিজ্ঞতায় তোমরা সমকোণী ত্রিভুজের মজার কিছু ব্যবহার শিখবে।

তোমাদের তোমাদের দলের অনুসন্ধানটির জন্য সমান দূরত্বে ১৩টি গিঁট দেওয়া একটি দড়ি জোগাড় করো। এরপর-

১। খুঁজে বের করো কী কী প্রকার ত্রিভুজ তৈরি করতে পার। শর্ত হলো দড়িটির দুই প্রান্তে গিঁট থাকবে, ত্রিভুজের প্রতিটি কোণে একটি করে গিঁট থাকবে, এবং দুই প্রান্তের গিঁট মিলিত হবে।

২। এমন একটি দড়ি দিয়ে আর কী কী আকৃতি তৈরি করতে পার (যেমন- বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি)?

সমস্যা ২

নিচের ছকটিতে মোট ১৯৬টি ঘর রয়েছে (তবে নিজে গণনা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো, আমরা ভুলও বলতে পারি)। ছকটির প্রতিটি সারির জন্য একটি করে সংখ্যা এবং প্রতিটি কলামের জন্য একটি করে বাংলা অক্ষর নির্ধারণ আছে। এই সংখ্যা এবং অক্ষর ধরে প্রতিটি ঘরের ঠিকানা বের করা যায়। যেমন- ২য় সারির ৩য় ঘরটির ঠিকানা হলো ২গ।

এই অনুসন্ধানটিতে তোমরা ছক-১.১ এর নির্দেশিত ঘরে মূলত ১ থেকে ১০ এর ঘরের নামতার ফলাফল লিখবে। যেমন- ২ × ১ = ২, নির্ধারিত ঘরে কেবল গুণফলটি লিখবে, অর্থাৎ ২। কিন্তু শর্ত হলো নামতার ফলাফলে যদি শতক বা দশকের ঘরের অঙ্কও থাকে সেটি বসাতে পারবে না, কেবল এককের ঘরের অঙ্কটি বসাবে। যেমন- ২ × ৫ = ১০, নির্ধারিত ঘরে কেবল০ লিখবে।

এবার নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করো

এখন পর্যবেক্ষণ করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

ক. অঙ্কগুলোর মধ্যে কী বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছ?

খ. কোনো পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছ? কোনো পুনরাবৃত্তি যদি দেখতে পাও, সেটিকে/সেগুলোকে ভিতরে রেখে চারদিকে দাগ দিয়ে প্রকাশ করতে পারবে? পুনরাবৃত্তি কি কেবল একই দিকে ঘুরতে পারে, নাকি বিপরীতেও?

গ. ছকটির বৈশিষ্ট্য এমনই কেন হলো?

সমস্যা ৩

সংখ্যার গুণনীয়ক সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমাদের ধারণা রয়েছে? না থাকলেও মনে করিয়ে দিই- কোনো একটি সংখ্যার গুণনীয়ক হলো এমন আরেকটি সংখ্যা যে সংখ্যা দিয়ে ঐ সংখ্যাটিকে ভাগ করা যায়। যেমন-

৮ এর গুণনীয়কগুলো হলো-

১, ২, ৪ এবং ৮

এবার ৮কে বাদ দিয়ে এর গুণনীয়কগুলোকে যোগ করলে কী পাওয়া যায় দেখো :

১ + ২ + ৪ = ৭

একইভাবে, ১০ এর গুণনীয়কগুলো বের করো। ১০কে বাদ দিয়ে এর গুণনীয়কগুলোকে যোগ করলে কী পাওয়া যায়?

এবার এসো দেখি একইভাবে ১২ এর গুণনীয়কগুলোর যোগফল কত হয়।

১২ এর গুণনীয়কগুলো হলো-

১, ২, ৩, ৪, ৬ এবং ১২

তাহলে ১২ বাদ দিয়ে বাকি গুণনীয়কগুলো যোগ করলে যোগফল কত হয় দেখা যাক-

১ + ২ + ৩ + ৪ + ৬ = ১৬

খেয়াল করে দেখ, ৮ এবং ১০ এর গুণনীয়কগুলোর যোগফল যথাক্রমে ৮ এবং ১০ এর থেকে ছোটো। কিন্তু ১২ এর ক্ষেত্রে তা নয়। তাই ১২ হলো সমৃদ্ধ সংখ্যা (abundant number)।

 

তোমার অনুসন্ধানের কাজটি হলো-

১। ৫টি সমৃদ্ধ সংখ্যা খুঁজে বের করো।

২। সমৃদ্ধ সংখ্যার বৈশিষ্ট্য কেন অন্যান্য সংখ্যার চেয়ে আলাদা?

৩। অন্য দলের সহপাঠীদের বোঝানোর জন্য সমৃদ্ধ সংখ্যার একটি সংজ্ঞা প্রস্তুত করো।

২। এবার শিক্ষকের নির্দেশনায় অপর একটি দলের সঙ্গে তোমাদের সমস্যাটি ব্যাখ্যা করো এবং তোমাদের পোস্টার বা প্রতিবেদনটি অদল-বদল করে নাও। তোমাদের অনুসন্ধানটি তারা বুঝতে পেরেছে নাকি খেয়াল করো। তাদের প্রশ্ন, পরামর্শ এবং মন্তব্যগুলো লিখে নাও। তাদের প্রশ্ন, পরামর্শ এবং মন্তব্যগুলো নিজেদের প্রতিবেদনে সংযোজন এবং পরিমার্জন করো।

৩ । অপর যে দলের পোস্টার বা প্রতিবেদনটি পেয়েছ, সেটি বুঝতে পেরেছ কি না দেখ, তাদের প্রশ্ন করো এবং পরামর্শ দাও।

৪। এই অনুসন্ধানটিতে শিক্ষক বা বাবা-মা তোমাদের তেমন কোনো সাহায্য করবেন না, কেবল লক্ষ করবেন। সুতরাং, তোমাদের সমস্যার উত্তর নিজেদেরই নির্ণয় করতে হবে।

৫। যদি অর্থবহ হয় তবে উপস্থাপনার দিন বাস্তব বস্তুর সাহায্যে প্রদর্শন করো।

 

গাণিতিক অনুসন্ধান করে কী কী পাই?

তোমরা দলগতভাবে কিছু গাণিতিক অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করলে এবং অন্যান্য দলের অনুসন্ধানের ফলাফল দেখলে। কিন্তু তোমাদের মনে কি প্রশ্ন জেগেছে যে গাণিতিক অনুসন্ধান করে কী কী পাওয়া যায়? নিচে এই প্রশ্নের কিছু সম্ভাব্য উত্তর দেওয়া আছে। যে উত্তরগুলো তোমার পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলে সেগুলোর বাম পাশের ঘরে টিক (√) চিহ্ন দাও। নিচের উত্তরগুলো ছাড়াও তোমার মাথায় আরও কিছু এলে ফাঁকা ঘরে লিখে রাখো।

 

বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তি থেকে প্যাটার্ন

আগের ছকটিতে খেয়াল করে দেখ, গাণিতিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে একই জাতীয় সমস্যার সমাধান করা যায় বলা আছে। তুমি যদি এই বাক্যটির সঙ্গে একমত হও, তাহলে এটি নিয়ে একটু আলোচনা করা যায়। নিচের দুই লাইনে বিভিন্ন সংখ্যা সাজানো রয়েছে। পর্যবেক্ষণ করে বলো, সংখ্যাগুলো যত পদ পর্যন্ত সাজানো রয়েছে তুমি কি তার পরের পদটি নির্ণয় করতে পারবে?

কী পদ্ধতিতে নির্ণয় করলে?

প্রথম রাশিটির বৈশিষ্ট্য হলো: পরের পদ = আগের পদ + ১;

আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে: পরের পদ = আগের পদ x ২

তাহলে যে কোনো গাণিতিক রাশির বৈশিষ্ট্যটি যদি তুমি ধরে ফেলতে পার, তাহলে ঐ রাশি বিষয়ক যে কোনো সমস্যাই সমাধান করতে পারবে। এই বৈশিষ্ট্যটির পুনরাবৃত্তিকে আমরা প্যাটার্ন (Pattern) বলে থাকি। গাণিতিক অনুসন্ধানের অন্যতম একটি কাজ হলো কোনো গাণিতিক সমস্যার বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তি বা প্যাটার্ন আবিষ্কার করা।

গাণিতিক অনুসন্ধান থেকে প্যাটার্ন আবিষ্কারের আরও একটি মজার উদাহরণ দেখা যাক।

 

একক কর্মপত্র

তুমি কি নিজের মতো করে কোনো সংখ্যার প্যাটার্ন এবং তার বৈশিষ্ট্য নির্ণয় তৈরি করতে পারবে? চেষ্টা করে দেখো এবং তোমার অনুসন্ধানের ফলাফল কর্মপত্রের মাধ্যমে শিক্ষকের কাছে জমা দাও।

কেন খুঁজব প্যাটার্ন?

ভাবছ যে প্যাটার্ন নিয়ে কথা বলার কী প্রয়োজন? তাহলে পাটিগণিত এবং বীজগণিতের দুটি খুব সাধারণ সমস্যার মধ্য দিয়ে প্যাটার্নের প্রয়োজনীয়তা বোঝার চেষ্টা করি, এসো। সমস্যা দুটি হলো :

সমস্যা দুটি সমাধান করতে তোমাদের নিশ্চয়ই তেমন কোনো কষ্ট হয়নি। প্রথম সমস্যাটিতে ৫০ এর জায়গায় ৫০০ আর ৫% এর জায়গায় ২৫% থাকলেও তোমার সমাধানের পদ্ধতি একই হতো। আবার দ্বিতীয় সমস্যাটিতেও ২ এর জায়গায় a, আর b এর জায়গায় ২৯ হলেও একই পদ্ধতিতে সমাধান করতে।

সুতরাং, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে একজাতীয়, বা একই বৈশিষ্ট্যের, বা একই ধারার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তাই গাণিতিক অনুসন্ধান করার সময় আমাদের লক্ষ থাকে সমস্যাটির প্যাটার্নটি বোঝার। একই জাতীয় সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিকে আমরা সূত্র বা Formula বলি। প্যাটার্ন আবিষ্কার করতে না পারলে আমরা সমস্যা সমাধানের সূত্র খুঁজে পাব না। এই শ্রেণিতে সামনের অভিজ্ঞতাগুলোতে তোমরা অনেক সমস্যাপাবে যেগুলো নিয়ে চিন্তা করে মজা পাবে। সমস্যাগুলোকে যদি একেকটি গাণিতিক অনুসন্ধান হিসেবে দেখ, তবে সেগুলোর প্যাটার্ন বুঝতে পারলেই সমাধান করাটা খুব সহজ হয়ে যাবে।

 

গাণিতিক অনুসন্ধানে তথ্যের উৎস

আমরা এই অভিজ্ঞতায় গাণিতিক অনুসন্ধানের ধাপ এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণের কথা বলেছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রতিটি গাণিতিক অনুসন্ধানেই তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সেসব তথ্য বা উপাত্ত বিভিন্ন নির্ধারিত উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তথ্য বা উপাত্ত যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তথ্যের উৎসও নির্ভরযোগ্য হওয়া একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে।

তোমাদের একটি ঘটনা বলি তাহলে সহজে বুঝতে পারবে। মনে করো তোমরা অষ্টম 'জবা' শাখার শিক্ষার্থী; তোমরা মোট ৪৫ জন ছেলেমেয়ে। তোমাদের বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিতেই শিক্ষণীয় কোনো একটি জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু তোমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছনা কোথায় যাবে। তোমাদের বন্ধু অনিক অষ্টম শ্রেণিতে 'সূর্যমুখী' শাখার বন্ধুদের নিকট থেকে জেনে এলো যে তারা চিড়িয়াখানায় ঘুরে এসেছে। অনিকের কাছ থেকে শুনে তোমাদের ক্লাসের ছেলেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে অষ্টম 'জবা' শাখার শিক্ষার্থীদেরও চিড়িয়াখানায় যাওয়া উচিত।

তাহলে কি বুঝতে পারলে যে সঠিক/কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করা কত জরুরি? তুমি কি নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারবে তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস ব্যবহার করা কেন প্রয়োজন?

তার মানে গবেষণা বা অনুসন্ধানের তথ্য নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ না করলে তার ফলাফল আমাদের কোনো কাজে আসে না। তাই না? কারণ উৎস যদি সঠিকভাবে নির্বাচন করা না হয় তাহলে তথ্য ও উপাত্ত সঠিক হবে না এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। টিকা তৈরির ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীগণ যদি সঠিক উৎস নির্বাচন করে তথ্য সংগ্রহ করতে না পারতেন, আমাদের পক্ষে কোভিড-১৯ মহামারি রোধে একটি কার্যকরী টিকা পাওয়া সম্ভব হতো না।

উৎসের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই

অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মাধ্যমিক উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাত্তের গুরুত্ব কম। বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না; সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক উৎস আমাদের সাহায্য করে। যেমন- যখন সদ্যজাত শিশুদের রোগ নির্ণয় করার প্রয়োজন হয় তখন চিকিৎসক অভিভাবকের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এবং শিশুটির অভিভাবক এখানে মাধ্যমিক উৎসের কাজ করে।

একটি উৎসের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া আছে। যে কোনো উৎস নির্বাচনের ক্ষেত্রে তোমরা এই বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে দেখবে।

এবার পরের সমস্যাটি জোড়ায় আলোচনা করে সমাধান করো।

কাজ

সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করে লেখো। 

নিচের বক্সে একটি টিকা তৈরির সময় বিজ্ঞানীগণ কোন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিল তার একটি বর্ণনা দেওয়া আছে। তোমাদের কাজ হবে তথ্যের উৎসের ধরন ও বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা।

 

(ক) টিকা তৈরির জন্য কোন ধরনের উৎস থেকে বিজ্ঞানীগণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন? কেন?

(খ) টিকা তৈরির জন্য যে উৎস ব্যবহার করা হয়েছিল তাদের সবার বৈশিষ্ট্য কি একই রকম ছিল? ভিন্নতা থাকলে তা বর্ণনা করো।

(গ) তথ্য সংগ্রহের উৎসের ক্ষেত্রে বয়সের ভিন্নতা থাকলে কী সুবিধা হয়েছে বলে তুমি মনে করো, লেখো।

(ঘ) এই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন জাতির মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই কাজটি উপরের উৎসের নির্ভরযোগ্যতার কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করছে?

 

শেষ কথা

অভিজ্ঞতাটিতে তুমি গাণিতিক অনুসন্ধান বা সমস্যা সমাধানের ধাপ, অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্যাটার্ন আবিষ্কার এবং অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের উৎসের নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেষ্টা করেছ। তার মধ্যে কিছু খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে যেগুলো হাতে-কলমে চর্চা করতে গেলে আরও পরিষ্কার হবে। আশা করা যায়, সামনের অভিজ্ঞতাগুলোতে তুমি অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে সমস্যাগুলোকে বিশ্লেষণ এবং সমাধানের চেষ্টা করবে। এটি এই অভিজ্ঞতার জন্য শেষ কথা হলেও, তোমার গণিত শিক্ষার জন্য একটি নতুন আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হোক গাণিতিক অনুসন্ধান দিয়ে।

Content added || updated By