SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

On This Page
অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) - Science (Investigative Study) - NCTB BOOK

2.1 কাজ ও শক্তি (Work and Energy)

আমরা সবাই দেখেছি বল প্রয়োগ করে একটি বস্তুকে ঠেলে সরিয়ে নেয়া যায়। কতটুকু বল প্রয়োগ করে কতটুকু সরানো হয়েছে তার উপর নির্ভর করে কতটুকু কাজ করা হয়েছে। 'কাজ' শব্দটি আমরা আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় সব সময় ব্যবহার করি, কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় কাজ শব্দটির একটা সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। বল প্রয়োগ করে যদি বলের দিকে একটা বস্তুকে ঠেলে নেওয়া যায় শুধু তাহলে ধরে নেওয়া হয় যে কাজ করা হয়েছে। মনে করো তুমি একটি ইঁট ধাক্কা দিয়ে 5 মিটার দূরে সরিয়ে নিয়েছ, তোমার বন্ধু সেই একই ইঁট একই পরিমাণ ধাক্কা দিয়ে 10 মিটার দূরে সরিয়ে নিয়েছে। দুজনেই একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করেছ, কিন্তু দুজনেই 'ইঁট সরিয়েছ' ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে, কাজেই দুজনের 'কাজ' হয়েছে দুরকম। একইভাবে দুজনেই যদি ধাক্কা দিয়ে ইটটিকে সমান দূরত্বে সরাতে কিন্তু সরানোর জন্য ভিন্ন পরিমাণ বল প্রয়োগ করাতে তাহলেও কিন্তু কাজের পরিমাণ ভিন্ন হতো। অন্যভাবে বলা যায় কাজের পরিমাণ বের করার জন্য বল এবং সরণ এই দুটি রাশি প্রয়োজন। প্রথমত, একটি বস্তুতে 'বল' প্রয়োগ করতে হবে, এবং সেই বল প্রয়োগ করে বস্তুটির 'সরণ' ঘটতে হবে। অর্থাৎ, গাণিতিকভাবে বলা যায় বল ও সরণের গুণফলই হলো কাজ।

কাজ = বল বলের দিক বরাবর সরণ বা, 

W = F × S 

কাজের একক হলো জুল (Joule), একে। দ্বারা লেখা হয়।

কাজ করতে প্রয়োজন হয় শক্তির। আমরা সবাই শক্তি শব্দটির সাথে পরিচিত, দৈনন্দিন কথায় আমাদের শক্তি প্রয়োগ বা বল প্রয়োগ বলতে একই বিষয় বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি (Energy) শব্দটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। কাজ করার সামর্থ্যকে বলা হয় শক্তি। শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, এক ধরনের শক্তি কেবল অন্য ধরনের শক্তিতে বদলে যেতে পারে। বইয়ের ভাষায় একে বলে শক্তির নিত্যতা। আর এক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে বদলে যাওয়াকে বলে শক্তির রূপান্তর।

একটু আগে তোমাদের বল প্রয়োগ করে একটি ইট সরিয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এই কাজের সামর্থ্য এসেছে তোমার হাত থেকে। তোমার হাতে এই শক্তি এসেছে তোমার দেহে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি থেকে। তোমার দেহে রাসায়নিক শক্তি এসেছে তোমার খাবার থেকে। খাবার হিসেবে তুমি ভাত বা রুটি খেয়ে থাকলে সেটি এসেছে ধানগাছ কিংবা গমগাছ থেকে। মাংস হলে এসেছে হাঁস, মুরগি কিংবা গরু-ছাগলের মতো কোনো প্রাণী থেকে। প্রাণীরাও বড়ো হয়েছে ঘাস, পাতা বা বিচালি খেয়ে। ঘাস, পাতা কিংবা অন্যান্য গাছের শক্তি এসেছে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন হয় আলো, সেটি আসে সূর্য থেকে। সূর্য তার এই শক্তি পেয়ে থাকে ক্রমাগত চলমান ফিউশান নামের নিউক্লিয় বিক্রিয়া থেকে। এভাবে এক শক্তি থেকে অন্য শক্তির রূপান্তর হতেই থাকে।

শক্তি যেহেতু কাজেরই পরিমাণ, তাই এর এককও জুল।

2.2 বিভবশক্তি (Potential Energy)

আমরা ইতোমধ্যে শক্তির বিভিন্ন উদাহরণ দেখেছি। আমরা এটাও জেনেছি যে কাজ করার সামর্থ্যই হচ্ছে শক্তি। কিছু শক্তি আছে যা কাজের মাধ্যমে সঞ্চয় করে রাখা যায়। একটা ইলাস্টিক কিংবা রাবার ব্যান্ড টেনে লম্বা করে ছেড়ে দিয়ে সেটা দিয়ে কিছু ছুড়ে দেওয়া যায়, গুলতিতে যা করা হয়। স্প্রিং দিয়েও একই ধরনের কাজ করা যায়, তাকে টেনে লম্বা কিংবা চেপে সংকুচিত করে তার ভেতর শক্তি সঞ্চয় করে রাখা যায়। একটা স্প্রিং কিংবা রাবার ব্যান্ড নিজে নিজে লম্বা হয় না, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে একে লম্বা করতে হয়। এই লম্বা করার প্রক্রিয়ায় যে কাজ করা হয় সেটি রাবার ব্যান্ড কিংবা স্প্রিঙের ভেতরে শক্তি হিসেবে জমা হয়ে থাকে।

কোনো একটা বস্তুকে তুমি যদি একটা টেবিলের উপর তুলে রাখতে চাও তবে তোমাকে সেটাকে টেনে উপরে তুলতে হবে, অর্থাৎ বস্তুটির ওপর বল প্রয়োগ করে সেটিকে টেবিলের উপরে তুলতে হবে। আমরা কাজের সংজ্ঞা থেকে জানি উপরের দিকে বল প্রয়োগ করে একটা বস্তুকে যখন উপরে নেওয়া হয় তখন সেখানে কাজ করা হয়। এই বস্তুটাকে টেবিলের উপর তোলার পর তুমি যদি সেটাকে কিনারায় এনে ছেড়ে দাও তখন বস্তুটি নিজ থেকেই নিচে পড়ে যাবে, সেটিকে টেনে নামাতে হবে না। বস্তুটা যদি একটা স্প্রিঙের ওপর পড়ে তাহলে স্প্রিংটা চেপে ছোট হয়ে যাবে, একটু আগেই আমরা জেনেছি, স্প্রিং ছোট করতে (কিংবা লম্বা করতে) বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ, উপর থেকে নিচে পড়ার সময় সময় বস্তুটির মাঝে কাজ করার মতো একটি সক্ষমতা বা শক্তি সৃষ্টি হয়েছে।'

এই শক্তি কোথা থেকে এসেছে? শুরুতে বস্তুটার উপর 'কাজ করে' যখন উপরে তোলা হয়েছিল, তখন ঐ কাজটুকুই বস্তুটিতে শক্তি হিসেবে জমা হয়েছে। বস্তুটিকে টেবিলের কিনারায় এনে ছেড়ে দিলে সেটি অভিকর্ষ বলের কারণে নিচে এসে পড়বে। তোমরা জান অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলের উৎস হলো পৃথিবী, সেটি সবকিছুকে নিচের দিকে আকর্ষণ করে।

তাহলে, আমরা কিছু কিছু উদাহরণ থেকে জানতে পারলাম যে, বিশেষ বিশেষ বস্তুর ওপরে বল প্রয়োগ করে কাজ করলে, সেই কাজটুকু শক্তি হিসেবে জমিয়ে রাখা যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই শক্তির সাধারণ নাম 'বিভবশক্তি'। স্প্রিঙের ক্ষেত্রে এই শক্তি এসেছে বস্তুর 'স্থিতিস্থাপক' ধর্মের বিরুদ্ধে করা কাজ থেকে। তাই এর নাম 'স্থিতিস্থাপক বিভব শক্তি'। আবার, টেবিলে উঠিয়ে রাখা বস্তুর মাঝে শক্তি এসেছে 'অভিকর্ষ' বলের বিরুদ্ধে করা কাজ থেকে। তাই এর নাম 'অভিকর্ষজ বিভব শক্তি'।

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কোনো কিছুকে উপরে তোলা হলে তার মাঝে বিভবশক্তি জমা হয়, কিন্তু কতটুকু বিভবশক্তি জমা হয় সেটি কি বের করা সম্ভব? সেটা খুব কঠিন নয়, বস্তুটার উপরে যেটুকু কাজ করা হয় সেই কাজটুকুই বিভব শক্তি হিসেবে জমা হয়ে যায়। কাজের পরিমাপ কীভাবে করতে হয় এখন সেটাও আমরা জানি। যেটুকু বল প্রয়োগ করেছি তার সঙ্গে যেটুকু উপরে তুলেছি সেই দুটো গুণ দিলেই কাজের পরিমাণ বের হয়ে যাবে।

প্রথমে বলের পরিমাণটা বের করা যাক। বস্তুর ওজন আছে বলেই সবকিছু নিচে পড়তে থাকে, কাজেই বস্তুটার যেটুকু ওজন আমাদের ঠিক সেই পরিমাণ বল উপরের দিকে প্রয়োগ করা না হলে বস্তুটাকে উপরে তোলা যাবে না। আগের শ্রেণিতে ভর সম্পর্কে আলোচনা করার সময়ে তোমাদের বলা হয়েছিল যে বস্তুর ভরের উপর পৃথিবীর আকর্ষণটাই হচ্ছে ওজন অর্থাৎ যার ভর যত বেশি, তার ওজনও তত বেশি। তোমরা যখন মহাকর্ষ বল নিয়ে পড়বে তখন দেখবে বস্তুর ভর যদি হয় m kg, তাহলে তাকে 9.8 m/s² দিয়ে গুণ করা হলে সেই ভরের ওজনটা বের হয়ে যায়। শুধু তাই নয় তোমরা দেখবে এই 9.8 m/s² সংখ্যাটি হঠাৎ করে চলে আসেনি, এই সংখ্যাটি হচ্ছে মহাকর্ষ বলের কারণে সৃষ্ট হওয়া ত্বরণ। এই ত্বরণটিকে বলে অভিকর্ষজ ত্বরণ বা মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ এবং সংক্ষেপে এটাকে g দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

এবারে আমরা অভিকর্ষজ বিভব শক্তিটুকু বের করে ফেলতে পারব:

অভিকর্ষজ বিভব শক্তি = অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে করা কাজ = অভিকর্ষ বল x সরণ - ওজন সরণ = ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ সরণ

এখন, অভিকর্ষজ বিভব শক্তিকে E, ভরকে m, অভিকর্ষজ ত্বরণকে g আর সরণকে । দ্বারা প্রকাশ করলে লেখা যায়: E = mgh

অর্থাৎ m ভরের একটা বস্তুকে । উচ্চতায় তোলা হলে সেটিতে mgh বিভব শক্তি জমা হবে।

এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইটকে আমরা যত ওপরে তুলব, তত বেশি কাজ হবে অর্থাৎ ততই বেশি 'বিভবশক্তি' জমা হবে।

2.3 গতিশক্তি (Keinetic Energy)

আমরা বল প্রয়োগ করে ইট ঠেলে সরিয়ে নেওয়ার উদাহরণে আরও একবার ফিরে যাই। কল্পনা করে নাও মেঝেতে । ভরের একটা ইট রয়েছে এবং F বল প্রয়োগ করে তুমি সেটাকে বলের দিকে S দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছ। কাজেই বলতি W FS পরিমাণ কাজ করেছে। কিন্তু আমরা এতক্ষণে জেনে গেছি যদি কোনো বস্তুর উপরে কাজ করা হয় তাহলে সেখানে কাজটা শক্তি হিসেবে জমা হয়ে থাকে। কিন্তু ইটটাকে ঠেলে সরিয়ে নেওয়ার পর আমরা কিন্তু কোথাও শক্তি জমা হয়ে থাকার নিশানা দেখতে পাচ্ছি না! যদি মেঝেতে ঠেলে না নিয়ে। উচ্চতায় তুলে নিতাম তাহলে W কাজটা অন্তত mgh পরিমাণ অভিকর্ষজ বিভব শক্তি হিসেবে জমা হয়ে যেত।

একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কাজটা আসলে বৃথা যায়নি, তুমি যখন ইটটাকে মেঝেতে ঘষে নিয়ে গেছ তখন ঘর্ষণের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়েছে, হয়তো খানিকটা শব্দও তৈরি হয়েছে। কাজেই তুমি যে কাজ করেছ সেটি তাপ শক্তি কিংবা শব্দ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। শক্তির নিত্যতার কারণে সেটি কোনো না কোনো রূপে রূপান্তরিত হতেই হবে। এবারে তুমি কল্পনা করে নাও কোনো একটি উপায়ে তুমি পুরোপুরি ঘর্ষণমুক্ত একটি মেঝে তৈরি করেছ, যে মেঝেতে একটা ইটকে ঠেলে নিতে কোনো ঘর্ষণ হয় না। এবারে তুমি যদি F বল প্রয়োগ করে । ভরের ইটটাকে ১ দূরত্বে নিয়ে যাও তাহলে তো তোমার করা কাজ কোনো তাপ কিংবা শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হবে না, তাহলে কাজ যে শক্তিটি তৈরি করবে সেটি আমরা কোথায় খুঁজে পাব? একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে তুমি যখন বল প্রয়োগ করবে, তখন বস্তুটির ত্বরণ হবে এবং তার বেগ বাড়তে থাকবে। তুমি যখন ইটটাকে ছেড়ে দেবে সেটি থেমে না গিয়ে এই বেগে চলতে থাকবে।

একটি বস্তুর বেগের জন্য তার ভেতরে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে বলে গতিশক্তি এবং আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে শক্তিটি সবচেয়ে বেশি দেখে অভ্যস্ত, সেটি সম্ভবত এই গতিশক্তি। যেমন- একটা ইটের উপর একটা হাতুড়ি রেখে দিলে ইটটার কিছুই হয় না। কিন্তু তুমি যদি হাতুড়িটা প্রবল বেগে নিচে নামিয়ে আন তাহলে ইটটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে। স্থির হাতুড়ির মাঝে কোনো শক্তিই নেই কিন্তু গতিশীল হাতুড়ির মাঝে অনেক শক্তি। আমরা ইচ্ছে করলে বেগের জন্য যে গতিশক্তি তৈরি হয় তার পরিমাণটাও বের করে ফেলতে পারি। তার জন্য আমাদের জানতে হবে একটি ভরের উপর বল প্রয়োগ করা হলে তার কত ত্বরণ হয়। আমরা যখন অভিকর্ষজ বিভব শক্তি বের করেছি তখন দেখেছি ওজন বা অভিকর্ষ বলের পরিমাণ হচ্ছে mg, যেখানে m হচ্ছে ভর এবং g হচ্ছে অভিকর্ষজ ত্বরণ। এটি শুধু অভিকর্ষ বল কিংবা অভিকর্ষ ত্বরণের জন্য সত্যি নয়, এটি সকল বল এবং সকল ত্বরণের জন্য সত্য। কাজেই যদি m ভরের একটা বস্তুর উপরে F বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে তার ত্বরণ ও আমরা নিচের সূত্র দিয়ে বের করতে পারি:  F = ma

এবারে আমরা কাজ W-এর জন্য বস্তুটির ভেতরে সৃষ্ট গতিশক্তি E কত সেটা বের করতে পারি।

গতিশক্তি = বস্তুটির উপর করা কাজ

কিংবা E = W

F বল প্রয়োগ করাকালীন বস্তুটি ১ দূরত্ব অতিক্রম করে থাকলে কাজের পরিমাণ W = FS

কাজেই E = FS

F = ma বসিয়ে,

E = maS

আমরা গতি বিষয়ে তৃতীয় সমীকরণে দেখেছি: v² = u² + 2aS এবং উল্লেখ করা হয়েছিল এই সমীকরণের ভেতরে কিছু চমকপ্রদ বিজ্ঞান বের হওয়ার অপেক্ষায় লুকিয়ে আছে। এবারে সেটি বের হয়ে আসবে!

স্থির অবস্থা থেকে শুরু করলে u = 0

কাজেই v² = 2aS

কিংবা : aS = 1/2 v2

E = maS এ aS = 1/½ v² বসিয়ে আমরা পাই, E = 1/½ mv²

অর্থাৎ W কাজটুকু m ভরের বস্তুর ভেতরে 1/½ mv² পরিমাণ গতিশক্তি সৃষ্টি করেছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ কাজ করা হলে শক্তি নষ্ট হয় না, সেটি শক্তি সৃষ্টি করে!

তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ গতিশক্তি বেগের বর্গের উপর নির্ভর করে, অর্থাৎ বেগ যদি দ্বিগুণ হয়ে যায় তাহলে তার গতিশক্তি বেড়ে যায় চারগুণ। এজন্য বেশি বেগে যানবাহন চালালে বিপদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

আমরা এই অধ্যায়ের শুরুতেই শক্তির ধারণার সাথে 'শক্তির নিত্যতা' নামের একটি ব্যপার শিখেছি, অনেকভাবেই শক্তির নিত্যতার সূত্র দেখানো যায়, আমরা অভিকর্ষজ বল এবং গতিশক্তির মাঝে এই নিত্যতা কীভাবে কাজ করে সেটা দেখার চেষ্টা করি।

আমরা আরও কিছু চমকপ্রদ বিজ্ঞান বের করার জন্য আবার গতিবিষয়ক তৃতীয় সমীকরণ v² = u² + 2aS টি ব্যবহার করি। মনে করো একটি m, ভরের স্থির অবস্থা থেকে (অর্থাৎ, u = 0) অভিকর্ষের টানে h দূরত্বে নামার পর বস্তুটির বেগ হলো v, অর্থাৎ এখানে a = g এবং S = h লেখা যায়। তাহলে, গতির সমীকরণে এই মানগুলো বসিয়ে পাই

v² = 0² + 2gh

বা, v² = 2gh

বা, ½v² = gh (দুইদিকেই 2 দ্বারা ভাগ করে)

বা, ½mv² = mgh (দুইদিকেই m দ্বারা গুণ করে)

অর্থাৎ, বামপক্ষে পেলাম গতিশক্তি আর ডানপক্ষে পেলাম বিভবশক্তি। সমীকরণটি আরও জানাচ্ছে যেটুকু বিভবশক্তি খরচ হয়েছে, ঠিক সেটুকু গতিশক্তিই অর্জিত হয়েছে। এটিই হচ্ছে শক্তির নিত্যতা!

2.4 ভর ও শক্তির সম্পর্ক

পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস হচ্ছে সূর্য। এটি প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বৎসর থেকে আমাদের সৌরজগৎে আলো, তাপ এবং কখনো কখনো শক্তিশালী আয়ন কণা বিকিরণ করে এসেছে এবং আরও পাঁচ বিলিয়ন বৎসর এভাবে শক্তি বিকিরণ করে যাবে। এই শক্তির উৎস যদি রাসায়নিক বিক্রিয়া হতো তাহলে বহু আগেই সূর্যের সব জ্বালানি ফুরিয়ে যেত। কিন্তু সূর্যের শক্তির উৎস হচ্ছে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া সে কারণে এত দীর্ঘ সময় আমরা সূর্য থেকে এই বিপুল পরিমাণ শক্তি পেয়ে আসছি এবং ভবিষ্যতেও শক্তি পেতে থাকব।

সাধারণভাবে 1 গ্রাম কয়লা পোড়ালে রাসায়নিক শক্তি পাওয়া যায় আনুমানিক 3000 জুল, তার অনেকখানি আবার বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে যায়। সে তুলনায় । গ্রাম পদার্থ থেকে নিউক্লিয় শক্তি আসে 9,00,00,00,00,00,000 জুল (নয়ের পরে 13টা শূন্য)। তার কারণ নিউক্লিয় শক্তি আসে আইনস্টাইনের অতি বিখ্যাত E = mc² এই সমীকরণ দিয়ে। এখানে E হলো গিয়ে শক্তি, m হলো ভর আর c হলো আলোর বেগ। এই সহজ সমীকরণে ৫ সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রাখে কারণ এর মান 30,00,00,000 মিটার/সেকেন্ড। আর বর্গ করলে সেটা গিয়ে দাঁড়ায় 90,00,00,00,00,০০,০০,০০০ এ (নয়ের পরে 16টা শূন্য) যা মোটেই ছেলেখেলা নয়। রূপপুরে দেশের প্রথম নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল শক্তি আসবে E = mc² থেকেই।

ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করা হলে E = mc² হিসেবে অচিন্তনীয় পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় কথাটি সত্যি, কিন্তু তাই কাজটি খুব সহজ নয় কিংবা যে কোনো ভরকেই যখন খুশি শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় না। এর প্রযুক্তিটি অনেক কঠিন, এবং শুধু অল্প কিছু বিশেষ মৌলিক পদার্থ থেকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমেই এখন পর্যন্ত এই শক্তি বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।

দুই রকম নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় শক্তি পাওয়া যায়, যার একটি হচ্ছে ফিশান অন্যটি ফিউশান। ফিশান পদ্ধতিতে একটি বড়ো নিউক্লিয়াস ভেঙে দুটি ছোট নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় যেটুকু ভর কমে যায় সেটি E = mc² হিসেবে শক্তি হিসেবে বের হয়ে আসে। আমাদের রূপপুর নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই প্রক্রিয়ায় শক্তি সৃষ্টি করা হবে। ফিউশান প্রক্রিয়ায় দুইটি ছোট নিউক্লিয়াস একত্র হয়ে একটি বড়ো নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং যেটুকু ভর কমে যায় সেইটুকু E = mc² হিসেবে শক্তি হিসেবে বের হয়ে আসে। সূর্যে এই প্রক্রিয়ায় শক্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে ফিউশান প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ধারাবাহিকভাবে শক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে সাফল্য পাওয়া গেলে পৃথিবীর শক্তির প্রয়োজন পুরোপুরি মিটে যাবে বলে আশা করা যায়।

আমরা গোড়া থেকেই শক্তির রূপান্তরের কথা বলে আসছি, কাজেই তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ভরকে যদি শক্তিতে রূপান্তর করা যায় তাহলে উল্টোটা কি সত্যি? শক্তিকে কি ভরে রূপান্তর করা যায়? তোমরা জেনে নিঃসন্দেহে চমৎকৃত হবে যে শক্তিকেও বিশেষ অবস্থায় ভরে রূপান্তর করা যায়।

2.5 ক্ষমতার (Power) ধারণা

আমাদের চারপাশে আমরা নানা ধরনের কাজ হতে দেখি, মানুষ কিংবা যন্ত্র এই কাজগুলো করে থাকে। একই কাজ করতে একেক মানুষের (কিংবা যন্ত্রের) একেক রকম সময়ের প্রয়োজন হয়। কিছু কাজ 'দ্রুত' হয়ে থাকে এবং কিছু কাজ 'ধীরে' করা হয়। দ্রুত কাজের অর্থ, কাজ করতে কম সময় লাগছে। ধীরে কাজের অর্থ, একই কাজ করতে বেশি সময় লাগছে। এর উল্টোটাও সত্যি, একই সময়ে কতটুকু কাজ হলো সেটিও পরিমাপ করে কাজ করার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় সেজন্য কাজ করার ক্ষমতা পরিমাপ করার জন্য ক্ষমতা (Power) নামে একটি রাশি ব্যবহার করা হয়। মোট কাজকে মোট সময় দিয়ে ভাগ করলেই ক্ষমতা পাওয়া যাবে। কাজের পরিমাণই যেহেতু শক্তি, তাই শক্তি দিয়েও কাজ মাপা যায়। একক সময়ে পাওয়া শক্তির পরিমাণই হচ্ছে ক্ষমতা।

ক্ষমতা = কাজ/সময়      অথবা,        ক্ষমতা = শক্তি/সময়

ক্ষমতার একক ওয়াট (Watt) যাকে W দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বৈদ্যুতিক বাতিতে তোমরা নিশ্চয় 15 W কিংবা 30 W ইত্যাদি লেখা দেখেছ। আমরা এই অধ্যায়ের শুরুতেই বিভিন্ন শক্তির রূপান্তরের কথা জেনেছি। একটি বাতিতে 15 W লেখার অর্থ, বাতিটি প্রতি সেকেন্ডে 15 J বিদ্যুৎ শক্তি গ্রহণ করে তা থেকে আলোক শক্তি দেবে। বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোক শক্তির পাশাপাশি কিছু পরিমাণ শক্তি তাপ হিসেবে অপচয় হয়ে থাকে। ফিলামেন্টের বৈদ্যুতিক বাতির তুলনায় টিউব লাইটে কম তাপ শক্তির অপচয় হয় এবং এলইডি বৈদ্যুতিক বাতিতে তার চাইতেও কম তাপশক্তির অপচয় হয়ে থাকে।

60 ওয়াটের ফিলামেন্ট লাইট বাল্ব যে পরিমাণ আলো দেয়, 15 ওয়াটের টিউব লাইট কিংবা 6 ওয়াটের এলইডি লাইট বাল্ব প্রায় কাছাকাছি পরিমাণ আলো দেয়

Content added By

Promotion