SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - স্বাস্থ্য সুরক্ষা - Wellbeing - NCTB BOOK

'স্বাস্থ্যই সম্পদ' এ কথাটি আমরা সবাই শুনেছি তাই না? স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কি আমরা ভালো থাকি? কেমন যেন সবকিছু অন্যরকম হয়ে যায়। শরীর কিংবা মন ভালো না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। কারও সাথে কথা বলতেও ভালো লাগে না, শোনারও ধৈয্য থাকে না। এসব পরিস্থিতিতে কীভাবে ভালো থাকা যায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ের মাধ্যমে আমরা তাই তো শিখছি। প্রতিটি শ্রেণিতে এ বিষয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে আরও যোগ্য হয়ে উঠছি।

আমাদের দেশের অনেকেই পৃথিবীর বুকে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এম.এ. মুহিত, নিশাত মজুমদার বাংলাদেশী নাগরিক যাঁরা এভারেস্ট জয় করেছেন। অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাসের রহস্য উন্মোচন করেন। মাশরাফি, সাকিব, জাহানারা, সালমা আমাদের দেশের বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় যাঁদেরকে পুরো বিশ্ব চেনে। নারী সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতে বাংলাদে- শকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণা, সাবিনা, সানজিদাদের দল। আমরা অনেকেই তাঁদের মতো হতে চাই তাই না? এধরনের কাজে তাঁদের রয়েছে অনেক চেষ্টা, শ্রম। আমাদের চারপাশেও কিন্তু এমন অনেকে আছেন যাঁদের কাজের জন্য সবাই তাঁদের প্রশংসা করেন, ভালোবাসেন। তাঁদেরকে অনেকে শ্রদ্ধা করেন। তাঁদের মত হতে চান। তারা নিজেদেরকে ভালো রাখতে সুস্থ্য থাকতে কী করেন জানতে পারলে কেমন হয় বলোতো? তাহলে আমরা তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি জেনে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারতাম তাই না? হ্যাঁ এই কাজটিই আমরা করব।

আমরা এমন একজনের কথা ভাবব যাকে আমি পছন্দ করি, অনুসরণ করি, মনে মনে তার মতো হতে চাই। তিনি হতে পারেন একজন খেলোয়াড়, শিক্ষক, গায়ক, জেলে, কুমার, পরোপকারী বা সমাজসেবক অথবা যে কেউ। হতে পারেন জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে অথবা আমাদের এলাকার পরিচিত এমন কেউ। হতে পারেন নারী বা পুরুষ অথবা তৃতীয় লিঙ্গের কেউ। আমাদের এই পছন্দের মানুষটি নিজেকে ভালো ও সুস্থ রাখতে যে কাজগুলো করেন আমরা তা পর্যবেক্ষণ করব কিংবা তার তথ্য সংগ্রহ করব। এই কাজগুলো আমরা নিজের জীবনে চর্চা করব তাহলে এতদিন যে মনে মনে তার মতো হতে চেয়েছি, সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। নিজের স্বপ্ন পূরণে নিজেরা দায়িত্ব নেবো। ভাবতে পারছ আমরা যে সত্যি সত্যি নিজের স্বপ্নের মানুষ হতে যাচ্ছি?

তাহলে নিজের পছন্দের সেই মানুষটি যাকে অনুসরণ করি ও মনে মনে যার মতো হতে চাই, তাকে খুঁজে নেবো! তার সম্পর্কে কিছু তথ্য যেমন তিনি কী করেন, তার কোন অভ্যাস বা কাজগুলোর কথা আমি জানি যা তাকে ভালো রাখে বলে মনে করি ইত্যাদি জেনে নেবো। এরপর 'সুস্বাস্থ্য চর্চায় আমার পছন্দের ব্যক্তির কাজ' ছকটির প্রথম কলামে তা লিখব এবং সে অভ্যাস বা আচরণগুলো তার সুস্বাস্থ্য গঠনে কীভাবে প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে সহপাঠীদের সাথে মতবিনিময় করব।

সুস্বাস্থ্য চর্চায় আমার পছন্দের ব্যক্তির কাজ

পছন্দের ব্যক্তির কাজএই কাজের প্রভাব
  
  
  
  
  
  
  
  
  

এর সাথে সাথে নিজেদের ব্যাপারে সচেতন হতে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে লিপিবদ্ধ করব। এরপর তা আমাদের ভালো থাকাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা বুঝার চেষ্টা করব।

আমাদের দৈনন্দিন ভালো থাকার পরিস্থিতিগুলো সহপাঠীদের সাথে আলোচনা ও পর্যালোচনা করেছি। একই সাথে যে ধরনের পরিস্থিতিতে ভালো থাকতে পারি না এবং এর সাথে সম্পর্কিত পরিস্থিতিগুলো নিয়েও নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। তাহলে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী দেখতে পেলাম? শরীর, মন ও পারস্পরিক সম্পর্ক এর মধ্যে যে কোনো একটা খারাপ থাকলে আমাদের ভালো থাকা ব্যাহত হয়।

আমার পছন্দের একজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছি এবং তার দৈনন্দিন অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে তথ্য লিপিবদ্ধ করেছি। এরপর দলগত আলোচনা করে সুস্বাস্থ্য চর্চায় তাদের এই কাজের প্রভাব ও কী কারণে এই ধরনের প্রভাব তৈরি হয় বলে মনে করছি তা নিয়ে আলোচনা ও উপস্থাপন করেছি। 

নিজেদের এবং আমাদের পছন্দের ব্যক্তির কাজের পর্যালোচনা করে আমাদের যে উপলব্ধিগুলো হলো তা 'ভালো থাকার জন্য সহায়ক কাজ ও অভ্যাস' ছকে লিখি।

ভালো থাকার জন্য সহায়ক কাজ ও অভ্যাস

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এবার আমরা 'ভালো থাকার জন্য সহায়ক কাজ ও অভ্যাস' ছকে যে কাজগুলো লিখেছি তা শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী 'ভালো থাকা' চিত্রটিতে যুক্ত করি।

শারীরিকভাবে ভালো না থাকলে তা মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, আবার এই প্রভাব থেকে নিজের প্রতি বা অন্যদের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা কিংবা দায়িত্ব পালনে অনীহা কাজ করে। শরীর বা মন ভালো না থাকলে খেতে ইচ্ছে হয় না, খেলাধুলা কিংবা অন্যদের সাথে আনন্দ ও গল্প করার আগ্রহ কাজ করে না। আবার মা বাবা, অন্যান্য আপনজন কিংবা বন্ধু বা সহপাঠীর সাথে ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য হয় ফলে অনেক সময় যেমন মন খারাপ হয়, তেমনই শরীরে ও মনে শক্তি কমে আসে।

আমরা সবাই মিলে ভালো থাকার জন্য সহায়ক অভ্যাস ও কাজগুলোকে 'ভালো থাকা'র পোস্টারে যুক্ত করেছি। আমাদের প্রতিদিনের কাজগুলো আমাদের শরীর, মন ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখছে তা এখন স্পষ্ট তাই না? এখান থেকে আমরা বুঝতে পারছি নিজেকে ভালো রাখতে হলে আর কোথায় কোথায় আমাদের কাজ করা দরকার।

 এবার প্রথমে 'আমার দৈনন্দিন সময়' ছকে যে কাজগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলাম সেগুলোকে ছবিতে সংযুক্ত করি। এরপর ভালো থাকার জন্য আরও যে দৈনন্দিন চর্চাগুলো করতে চাই নিচের ছবিটির সাথে মিলিয়ে লিখে নিই।

যখন আমরা শরীর, মন ও পারস্পরিক সম্পর্কগুলো নিয়ে ভালো থাকি, তখনই আমরা সম্পূর্ণভাবে ভালো থাকি। এই ভালো থাকাকে ইংরেজিতে wellbeing বলে। আমরা মনে রাখব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্বাস্থ্য হল 'শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি সম্পূর্ণ অবস্থা; শুধুমাত্র রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়'। অনেকেই মনে করেন অসুস্থ না হলেই আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী; এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। আমরা যখন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যকে একসাথে ভালো রাখতে পারব তখনই কেবল সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হব।

এর পরের অভিজ্ঞতাগুলোর বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা সারা বছর ধরে ভালো থাকার বিভিন্ন উপায় শিখব এবং সেগুলোকে চর্চা করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হব।

 

Content added By