SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বাংলা - Bangla - সাহিত্য পড়ি সাহিত্য লিখি | NCTB BOOK

কোনো একটি বিষয় নির্ধারণ করে তার উপরে নাটক রচনা করো।
তোমার লেখা নাটকের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-

  • নাটকটির কাহিনি কী নিয়ে?
  •  কাহিনি তুলে ধরার জন্য কোন কোন ঘটনা এসেছে?
  •  ঘটনাগুলো আলাদা আলাদা দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না?
  •  নাটকে কোন কোন ধরনের চরিত্র আছে?
  •  চরিত্র অনুযায়ী সংলাপ দেওয়া হয়েছে কি না?
  •  নাটকের নামকরণ যথাযথ হয়েছে কি না?

নাটক কী

সংলাপের মাধ্যমে রচিত সাহিত্যের শাখাকে নাটক বলে। নাটক মূলত অভিনয়ের জন্য রচনা করা হয়। নাটকের মূল উপাদান ৪টি: কাহিনি, দৃশ্য, চরিত্র ও সংলাপ।
কাহিনি: নাটকে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে কাহিনি সাজানো হয় এবং সেই কাহিনি ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এই কাহিনি বাস্তবতানির্ভর কিংবা কল্পনামূলক হতে পারে। নাটকের কাহিনি সরলরেখায় চলে না, এখানে ঘাত-প্রতিঘাত ও দ্বন্দ্ব থাকে। এই ঘাত-প্রতিঘাত ও দ্বন্দ্ব মূলত জীবন থেকে নেওয়া।
দৃশ্য: নাটকের ঘটনাগুলো আলাদা আলাদা দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিটি দৃশ্য কোথায় ঘটছে, তা দৃশ্যের শুরুতে উল্লেখ করা থাকে। কয়েকটি দৃশ্য মিলে তৈরি হয় অঙ্ক। একটি নাটকে এক বা একাধিক অঙ্ক থাকে। প্রাচীন নাটকে পাঁচটি অঙ্ক দেখা যেত। এই পাঁচ অঙ্কে কাহিনি এভাবে সাজানো হতো: কাহিনির আরম্ভ, কাহিনির বিস্তার, কাহিনির চূড়ান্ত অবস্থা, কাহিনির পরিণতি এবং কাহিনির পরিসমাপ্তি।

চরিত্রঃ ঘটনা ফুটিয়ে তুলতে চরিত্রের প্রয়োজন হয়। নাটকে ভালো-মন্দ সব ধরনের চরিত্র থাকে। প্রতিটি চরিত্র ব্যক্তিত্ব ও আচরণের দিক দিয়ে আলাদা হয়। নাট্যকার চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তৈরি করেন।
সংলাপ: সংলাপ নাটকের প্রাণ। সংলাপের মাধ্যমে ঘটনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং কাহিনি এগিয়ে যায়। তাই সংলাপ রচনায় নাট্যকারকে যত্নশীল হতে হয়।
নাটক যেহেতু অভিনয়ের উদ্দেশ্যে রচিত হয়, তাই নাটকের সঙ্গে অভিনয়, মঞ্চ ও দর্শক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নাটকের চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে যারা নাটকের সংলাপ উচ্চারণ করেন এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, তাদের বলে অভিনেতা। নাটকের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে অভিনেতারা পোশাক পরেন এবং রূপসজ্জা করেন। মঞ্চে ও স্টুডিওতে নাটকের দৃশ্য অনুযায়ী কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করা হয়। মঞ্চ ও স্টুডিওতে আলোক প্রক্ষেপণ ও শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে। দর্শকের কাছে নাটকটি অধিক আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নাটকের মহড়া বা অনুশীলনের দরকার হয়।
বিষয় অনুযায়ী নাটক অনেক রকমের হতে পারে; যেমন- সামাজিক নাটক, ঐতিহাসিক নাটক, রাজনৈতিক নাটক ইত্যাদি। আবার নাটকের প্রকৃতি অনুযায়ী নাটককে ট্র্যাজেডি, কমেডি, প্রহসন ইত্যাদি ভাগেও ভাগ করা হয়ে থাকে।

নাটক পড়ি

মমতাজউদদীন আহমদ (১৯৩৫-২০১৯) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত নাট্যকার। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক 'কী চাহ শঙ্খচিল', 'স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা', 'সাত ঘাটের কানাকড়ি', 'বকুলপুরের স্বাধীনতা', 'রাজা অনুস্বারের পালা' ইত্যাদি।
তোমাদের জন্য মমতাজউদদীন আহমদের লেখা 'স্বাধীনতার সংগ্রাম' নাটকটি দেওয়া হলো। নাটকটি ১৯৭১ সালের ২১শে মার্চ রচিত হয়। 

স্বাধীনতার সংগ্রাম

মমতাজউদদীন আহমদ

চরিত্র

বর্গিওয়ালাঃ বয়স ৫৫

হকমত খাঁঃ বয়স ৩৫

দুধু মিঞাঃ বয়স ৩৫

বৃদ্ধঃ বয়স ৬০

ফারুকঃ বয়স ২৬

গায়কঃ বয়স ৩০

জহবুলঃ বয়স ২৮

বকতুঃ বয়স ৩৫

 

প্রথম দৃশ্য

[সময় সন্ধ্যা, রাজপথের মোড়। অকস্মাৎ সাদ্যআইন ঘোষিত হয়েছে। থমথমে পরিবেশ।]

বর্গি : এসব কে লাগিয়েছে, হকমত খাঁ?

হকুমতঃ দেখলে তো দুশমনের বুকের লহু শুষে লিতাম। এই দুষ্টু মিঞা তুমি দেখেছ?

দুখু : আমি দেখিনি।

বর্গি : দেখোনি তো খুব মরদের কাজ করেছ। কারফিউর মধ্যে দুশমন এসে মনের সুখে দেয়ালে পোস্টার সেঁটে গেল, আর তুমি দেখোনি? যেখানেই নজর পড়ছে, একই লেখা-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতা মাঙছে। কেন? আমরা কি স্বাধীন না? কী দুধু মিঞা, স্বাধীনতা কেন?

দুখু : আমি জানি না বর্গিওয়ালাজি।

বর্গি : তা জানবে কেন? সব তো আমাদের জানতে হবে। এ মুন্নুকে বন্যার পানি রোখা গেল না কেন, দায়ী এই বর্গিওয়ালা। সাইক্লোন তুফানে দশ লাখ মানুষ মরে গেল, দায়ী কে? এই বর্গিওয়ালা। তোমার সাড়ে সাত কোটি আদমের আওলাদ খেতে পায় না, আমি দায়ী? বাট হোয়াই? আমি কেন রে দাদা? আমার কলকারখানা আছে, ব্যাংক ইন্সুরেন্স করেছি, সে কি তুমি টাকা দিয়েছ? আমার মাথার মগজ খাটিয়ে, আল্লাহর মেহেরবানিতে টাকা করেছি, পুঁজি বানিয়েছি-করেছি তো তোমার বাপের কী? উঃ! তামাশা দেখো। বেশ আমি পুঁজিপতি। কিন্তু তাতেই সব দোষ আমার হয়ে গেল। আমি কি তোদের মতো দিনে রাতে দু সের চালের ভাত খাই? খাই তো আধ পোয়া আটার রুটি আর স্রেফ দুটো আন্ডা, রাতে আধা সের গোরুর দুধ। আর তোরা স্বাধীনতাওয়ালারা বস্তা বস্তা ভাত, মাছ, নুন, তেল, মরিচ খেয়ে দেশটাকে ছোবড়া ছোবড়া করে দিলি, সেদিকে তো নজর নাই। বলে কি না, আমরা সম্পদ চুষে খাচ্ছি। 

হুকুমত খাঁ, দুশমনদের শায়েস্তা করতে হবে।
হকমত দুশমনের সিনা ছিঁড়ে লিব বর্গিওয়ালাজি।

বর্গি : আলবত, আপনা জান কোরবান করে ওয়াতানের সামাল করো। এসব খুব বুড়ি বাত। এরা কীসের স্বাধীনতা চায় আঁ? আমরা তো ভাই ভাই। যত সব বেইমান, ধর্ম নাই, ইমান নাই, আজাদি লিবে। আমরা কি ইংরেজ? আমরা তো তোদের জানের ভাই বেরাদর।

হকমতঃ জাহাজে জাহাজে সিপাহি লিয়ে আসেন। এ মুল্লুকের ঘরে ঘরে দেশের দুশমন কা বাচ্চা তড়পাচ্ছে।

বর্গি : আর কত দিন তড়পাবে। এসব ফুসর ফাসুর আলাপ আলোচনার মধ্যে আমার বিশ্বাস নাই। ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ো। টেনে আনো, চাবুক চালাও, সব বিলকুল ঠিক হয়ে যাবে। দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেল না কি!

হকমত বর্গিজি ঐসব লেখা ছিঁড়ে ফেলে দিই?

বর্ণি : জরুর। এই দুখু মিঞা, যাও তামাম পোস্টার ছিঁড়ে নিয়ে এসো।

দুখুঃ : আমি?

বর্গি হ্যাঁ তুমি। তোমার ভালোবাসার ভাইরা তো টাঙিয়েছে। ছিঁড়ে ফেলে পাপ ক্ষয় করো। লেখার নকশা দেখো! অ আ ক খ। উর্দু জবান শিখব না। শিখো না। যখন দোজখের আগুনে জ্বলবি তখন বুঝবি। দুধু মিঞা, বেকুবের মতন দাঁড়িয়ে থেক না, পোস্টার ছিঁড়ে লিয়ে এসো। যাবে না? হকমত খাঁ।

হকমত দুখু মিঞা, এক দো তিন বলব। যদি না যাও, এক, দো-
[শুধু যাচ্ছে। দুজনের হাসি।]

বর্গি : সাবাস! কুত্তার বেজ রাইফেলের ধাক্কায় সোজা হয়ে গেল। এইতো এনেছ ছিঁড়ে, ধন্যবাদ। যাও দেয়ালের ঐদিকে আরো পোস্টার লেগে আছে, সবকিছু ছিড়ে এনে জ্বালিয়ে দাও। দেশের কাজ করো।

হকমত দুষ্টুকে একদিন এমন বসিয়ে দেবো বর্গিজি।

বর্গি : বেশি বাঁকা পথ ধরলে আলবত বসিয়ে দেবে। বেহুদারা সুযোগ পেলেই কামড়াতে চায়। কোনো রহম কোরো না। হকমত, যেমন করে পারো ওদের কোমর ভেঙে দাও।

হকমত হুকুম করেন তো আজ রাতের মধ্যেই-

বর্ণি : উহু, খোড়া আস্তে। ওদিকে ফুসুর ফাসুর তামাশা চলুক, আর এদিকে আমরা জাহাজ খালাস করি, আমাদের মালামাল সব পশ্চিমে চালান করে দিই। তারপর একদিন ঠিক সময়মতো সিগন্যাল এসে যাবে-তখন

হকমত দেরি হবে না তো?

বর্গি দেরি? সেনাবাহিনী আর আমরা একজোট হলে আল্লাহর গজবকেও তোয়াক্কা করি না হকমত খাঁ।

হকমত আল্লাহর গজব?

বর্গি : কেন করব। সব কিছু ঠিকঠাক করে নিলে তখন ফের আল্লাহর মেহেরবানির জন্য কান্নাকাটি করব, দু আনা চার আনা খয়রাত করব। এরা বলবে, বাহ! কেমন দিলওয়ালা লোক। আমাদের তারিফ করার জনা কেতাবে লিখতে বলব,

বর্গিজি প্রাইজ দিব দশ হাজার টাকা। মাশাল্লাহ তখন দেখো কেমন সুরসুর করে ছুটে আসবে। কিন্তু খুব সাবধান, এবার যদি আমি তুমি হেরে যাই, তাহলে আমিও শেষ তুমিও খতম।

হকমত আমরাও খতম?

বর্গি : না খেয়ে মরে যাবে। তোমাকে দিলের কথা বলে দিই। তোমার আমার বাঁচাতো এ মুল্লুকের জোরে। এদের মাটির মতন এমন সোনার মাটি কোথায় পাবে? পাট আর খান।

হকমত মাগার, আপনারা যে বলেন, বিদেশ থেকে চাল না দিলে এরা না খেয়ে মরে যাবে।

বর্গি : চুপ। সে সব বহুত কিসসা। বন্যা সমস্যা মিটে গেলে এদেশে ধানের বন্যা বয়ে যাবে।

হকমত তো বন্যা মিটিয়ে ফেলেন।

বর্গি : ৫: মিটিয়ে ফেলব? তাহলে তোমার আমার মরুভূমি আর নুনের মাটি আবাদ হবে কেমন করে। পাহাড় রাজধানী বানাব কী করে? তোমার সেনাবাহিনীর জন্য টাকা দেবে কে?

হকমত কেড়ে লিব দুশমনদের কাছ থেকে।

বর্গি : সাবাস, তাহলে এদেরকে দিনরাত দুশমনই বলতে থাকো। চুপ, দুখু আসছে।
[দুখু এলো।] 
এসো ভাই দুখু মিঞা, সব পুড়িয়ে দিয়েছ?

দুখু: হ্যাঁ 
হকমত কাজের কাজ করেছ। কে বলে তোমরা হুকুম মানো না। ইমান ঠিক রেখে কাজ করে যাও, আল্লাহ রহমত ঢেলে দেবে। দুখু মিঞা আর হকমত খাঁ ভাই ভাই। কোনো ফারাক নাই, কোনো অবিচার নাই। দুশমনকে খতম করো।
দুই : এই লাঠি দিয়ে? আমাদের অস্ত্র তো কেড়ে নিয়েছে।
বর্ষি: এই শোনো আহাম্মকের কথা। অস্ত্র কাড়বে কেন, তোমরাই খুশি দিলে জমা দিয়ে দিয়েছ। দেশের মধ্যে তোমাদের ভালোবাসার ভাই বেরাদর হট্টগোল করছে, তুমি শান্তি আনছ। যদি রাগের মাথায় আপন ভাইয়ের সিনাকে গুলি করে দাও, তাহলে? না ভাই না, মন খারাপ কোরো না।
হকমত দুখু ভাই, যদি দুশমন তোমাকে মারতে আসে, আমি তোমার জন্য জান কোরবান করে দেবো।
বর্ণি : দেখলে কত বড়ো দিলওয়ালা হকমত খাঁ। আর তুমি কিনা হিংসা করছ। আল্লাহকে কী জবাব দেবে? এজন্যই তো তোমরা জেনারেল হতে পারলে না। আল্লাহকে ডাকো, বলো আমার দিল খুব ছোটো, খামোখা আমি হিংসা করি, মাফ করে দাও। ভাইয়ে ভাইয়ে হিংসা। [বর্গির প্রস্থান]
হকমত দুধু মিঞা, তোমাদের খুব সুখ, কোনো ভাবনা নাই।
কেন?
হকমত তোমাদের মুল্লুকে কিছু নাই, খালি পানি আর পানি। পশ্চিম মুন্নুকের থেকে কাপড় আসছে, গম আসছে, গভর্নর আসছে। তোমরা মজা করে যাচ্ছ আর মিটিং করছ। 

দুখু : তোমরা পাঠাচ্ছ কেন, সব বন্ধ করে দাও।

 হকমত: তাহলে তো নিমকহারামের মতো কাঁদতে লাগবে।

বর্গি : কেতাবে লেখা আছে, ফিল্ড মার্শাল সাহাব লিখেছেন, তোমরা বেইমান, গাদ্দার। ফিল্ড মার্শাল কি ঝুট কথা বলবে?

দুখু : তোমাদের লোকটা আমাদের ইতিহাস জানে না, মিথ্যাবাদী, বানোয়াট।

 হকমত জবান বন্ধ কর। তোর লাঠি ভি কেড়ে লেবো। গোস্ত কেটে নুন ছিটিয়ে দেবো, বাপের নাম ভুলে যাবি। কোন?... কোন হারামি ওখানে?
[ঝকড়ুর প্রবেশ।]

বকতুঃ  হামি  বকতু সিপাহিজি। 

হকমতঃ বকতু সব কাম খতম করেছিস? কথা বল।
ঝকড়ুঃ না, মালিক।
হকমত না? কটা লাশ ট্রাকে উঠল?

ঝকড়ুঃ গুনতে গুনতে ভুলে গেলাম। একশোটা হবে। আরো একশোটা পড়ে আছে।
হকমত তো দুশোটা। বারো ঘণ্টাতে মাত্র দুশোটা দুশমনকে গুলি? হামার মুন্নুকের নওজোয়ানরা করছে কী! এত কম করে মারলে সাত কোটি দুশমন মারতে সাতশো সাল লেগে যাবে। পাখির বাচ্চার মতো ঠুস ঠুস করে মারবি তবে তো। আজাদি লিবে? যা ঝকড়ু বাকি লাশ ট্রাকে তুলে লাইনে চলে যা।

ঝকড়ুঃ আমি পারব নাই সিপাহিজি।
হকমতঃ  পারব নাই? বকতু 

ঝকড়ুঃ আমার দিল ফেটে গেল, এই দেখেন, মানুষের রক্তে হামার হাত দুখান লালে লাল হয়ে গেল, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল।

হুকুমত মাথা খারাপ হলে দারু শিয়ে লে।

ঝকড়ুঃ একটা লাশ, দশটা লাশ এমনি করে নব্বইটা লাশ উঠিয়েছি। এক বাড়িতে ঢুকে দেখি, তিনটা লাশ রক্তের মধ্যে ভাসছে। বেটাকে তুললাম, একটা জোয়ান বেটাকে তুললাম, ফের ঘরে ঢুকলাম, দেখলাম কি মায়ের সিনা ফাটিয়ে গুলি চলে গেছে। মা জননী শুয়ে আছে, আর বাচ্চাটা মায়ের বুকে লহর মধ্যে পড়ে আছে। বাচ্চাটা তখনও ছটফট করছে। আমি পারলান না, পালিয়ে এলাম। এমন লহ, এমন ছেলে, এমন মাকে গায়েব করতে পারলাম না। মালিক হামি পারব নাই। মায়ের লহতে লালে লাল এ হাত দুটা অবশ হয়ে গেল।

হকমত ঝকন্তু, তুই ফের যা।
ঝকড়ুঃ না মালিক যেতে বলিস না, তোর পায়ে ধরছি, আর না।
হকমত এই টাকা লিয়ে যা।

ঝকড়ুঃ  আমার টাকার নেশা, লোভের নেশা, লাশ টানার নেশা সব কেটে গেল। এখন আমার চোখের মধ্যে, এ পাখর সিনার মধ্যে হামার মা জননীকে দেখছি, মায়ের ছেলেকে দেখছি। তোরা এসব কাজ করিস না মালিক। আমি মানুষের লহ, পাবলিকের লহু সাফ করতে পারব না। না, পারব না।

হকমতঃ  ঝকড়ু, তুই যাবি না?

ঝকড়ুঃ তোর ঐ গুলি দিয়ে আমার বুক ফাটিয়ে দে, শেষ করে দে, হামাকে বাঁচিয়ে দে।

হকমত ঃ এদের সঙ্গে নাম দিয়েছিস? যা, লাশ লিয়ে ট্রাকে বসে থাক। হারামি।
[ঝকড়ুর প্রস্তান।]

দুখু মিঞা, ঝকডুর মেজাজ কে বিগড়াল? বলো।

দুখুঃ জানি না।

হকমত চুপ করো বেইমান। তুমি সব জানো। আর হামরাও জানি তোমাদের গাদ্দারি কেমন করে খতম করতে হয়। দুষ্টু মিয়া, আজতক তোমার মুন্নুকের কজন ভাইকে গুলি করে খতম করেছ?

দুখুঃ করিনি

হকমত: করোনি মাগার এখন থেকে করবে। তোমার ঐ লাঠি দিয়ে ঝকড়ুকে পিটিয়ে শেষ করতে হবে। কী, পারবে না? কী দেখছ আমার চোখে? হুকুম তামিল করো, যাও।

দুখুঃ তোমার রাইফেলটা দাও।

হকমতঃ রাইফেল? অস্ত্র দেবো নিমকহারামের হাতে। তোমার মুল্লুক থেকে সব লিয়ে চলে যাব। দা, চাকু সব চলে যাবে পশ্চিমে। তারপর ঘরে ঢুকে তোমাদের জানমাল সব কেড়ে লিবো। লাশ টেনে রাস্তায় ফেলে দেবো, গিদ্ধর কুত্তাতে খাবে তোমাদের মা বহিনকে।

দুখুঃ আর আমরা কী করব।

হকমত কী করবে? আমাদের পা ধরে মাপ চাইবে, ভিখ মাঙবে।... এই, কোন হো তুম?

[বৃদ্ধের প্রবেশ]

বৃদ্ধঃ  আমি নিরীহ মানুষ বাবা। বুড়ো মানুষ, ছুটতে ছুটতে আসছি। কোনো গাড়ি ঘোড়া পেলাম না। আমার খুব বিপদ, ঐ যে দেখো, আমাদের বাড়ি।

দুখুঃ এ কী করছেন আপনি? কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃদ্ধ : যখন বের হই, তখন ছিল না, হঠাৎ করে কারফিউ দিয়েছে। দেরি হয়ে গেল বাবা, ঘরে আমার স্ত্রী ওষুধের জন্য ছটফট করছে। সময়মতো ওষুধ পড়লে হয়তো বেঁচে যাবে, তোমাদের কোনো ক্ষতি করব না।

দুখুঃ ওর ঘরে খুব বেমার আছে হকমত খাঁ, দাওয়াই নিয়ে ঘরে যাচ্ছে। যান যান, আর কখনো কারফিউর মধ্যে রাস্তায় আসবেন না।

বৃদ্ধ : আল্লাহ তোমাদের ভালো করবে বাবা।

হকমত এই কোথায় যাবি?

বৃদ্ধঃ বিশ্বাস না হয় এই দেখো ওষুধ, ফলমূল। আমার ফারুকের মা ওষুধ না হলে বাঁচবে না। ওর কষ্ট দেখে থাকতে পারিনি, আর কখনো এ কাজ করব না। আমাকে যেতে দাও সিপাহিজি।

হুকমতঃ সাবাস, সাবাস বুড্ডা। খুব উমদা কিসসা বানিয়েছ। বিবির খুব বিমার, বিবি মরে যাবে? তোমার বিবি কবে মরবে? বিবি মরলে তোমার দিলের মধ্যে খুব ধড়ক করবে বুড্ডা?

দুখুঃ আহ্ তুমি এসব কী বলছ হকমত খাঁ।

হকমতঃ চোপরাও দুষ্টু মিয়া। বল তোর বিবি জোয়ান না বুড্ডা। 

বৃদ্ধ : আমার পাঁচটি ছেলেনেয়ে। বড়ো ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। 

হকমতঃ পরফেসার। ঐ পরফেসাররাই যে এ মুন্নুকের মধ্যে আগুন জ্বালিয়েছে। এই বুড্ডা পরফেসারের বাপ। তোর বুদ্ধি বিবি মারা গেলে আর একটি শাদি করবি।... এই প্যাকেটের মধ্যে কি রে বুড্ডা? বোমা?

বৃদ্ধ : না, না, দুটো আপেল, ডাক্তার বলে দিয়েছে।

হকমত: আপেল? বাহ রে, বুড়ার দিলে মহব্বত ভি আছে। এই আপেল হামার মুল্লুকের ফল। হামি খাবো, তোর বুদ্ধি খাবে না। [আপেল যেতে লাগল।]

বুড্ডা তুই কিছু খাবি না? বাপ রে বাপ, তোরা হামাদের জানের দোস্ত। তোকে ভি কিছু খেতে হবে ভাই। কী খাবি তুই, তোর বিবির দাওয়াই খা। ঢক ঢক করে খেয়ে লে। তুই খেলে ভোর বিবির বিমার ভালো হয়ে যাবে। খা বুড্ডা।

[রাইফেল দিয়ে ওষুধে গুঁতো দিলো। শিশি মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল। হকমত অমানুষিকভাবে হেসে উঠল।]

বৃদ্ধ : আমাকে তুমি মেরে ফেলো। তোমার গুলি দিয়ে আমার বুকটা ফাটিয়ে দাও। আল্লাহ, তুমি এখনো এত সহ্য করছ?

হকমতঃ এই আল্লাওয়ালা, কাঁদলে তোর জবান ছিঁড়ে লিবো। হামি যা বলব সেই রকম বল। বল আমরা পাপী, বল।
বৃদ্ধ : বলব না।

হকমতঃ বলবি না, আসল কথা বলতে শরম লাগছে। স্বাধীনতা চাও। আজাদি লিবে? হামরা তোদের মালিক, তোদের ধনদৌলত তামাম কিছুর মালিক। তোরা হামাদের কলোনির প্রজা। আমরা তোদের প্রেসিডেন্ট, হামরা ফিল্ড মার্শাল।

বৃদ্ধ : তোরা চোর লুটেরা ডাকাত, তোরা জানোয়ার।
হকমতঃ  চুপ কর। বৃদ্ধের গালে চড় মারল।

বৃদ্ধ : না, চুপ করব না। আর কত কাল চুপ করে থাকব। ধর্ম আর একতার নামে তেইশ বছর চুপ করে ছিলাম, আর নয়। যত জুলুম করিস না কেন, আর নয়। আর চুপ করে থাকব না।

[ফারুকের প্রবেশ]
ফারুকঃ বাবা, বাবা কোথায় তুমি।
[হকমত খাঁ ফারুককে গুলি করল।]

বৃদ্ধ : ফারুক, আমার ফারুক।

ফারুকঃ বাবা, আর দেরি কোরো না, মা ওষুধের জন্য কেমন করছে। মাকে বাঁচাও বাবা। তুমি যাও, দেরি কোরো না বাবা।

বৃদ্ধ : ফারুক, তুই আমার সঙ্গে যাবি না বাবা? ফারুক আমার, কথা বল বাবা, তোর জন্য যে আমি কলম কিনেছি বাবা, তুই যে বলেছিলি কবিতা লিখবি, বাংলাদেশের কবিতা। এই কলম নিয়ে এখন আমি কী করব?

ফারুকঃ বাবা, এ কলমে আমার বুকের রক্ত ভরে নাও। রক্তভরা কলমটা ছোটো ভাই মতিউরকে দিও। রক্ত দিয়ে মতিউর দেশের গান লিখবে।

ফারুক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।]

হকমতঃ এই দুখু মিয়া, ট্রাক থেকে ঝকডুকে ডেকে নিয়ে এসে লাশটা উঠিয়ে লিয়ে যাও।

 

দ্বিতীয় দৃশ্য 

[বধ্যভূমির এক প্রান্ত। রাত গভীর।]

বর্গি :
আমাদের পিয়ারা ওয়াতানকে ঝড় ঝাপটা আর আবোল আবোল হৈহুল্লোড় থেকে বাঁচবার জন্য জান খাতরা করে হকমত খাঁ আর তার সাথিরা যা যা করছে, সব ঠিক করছে। না হলে এ পিয়ারা ওয়াতান পয়মাল হয়ে যাবে। তোমরা কী বলো। আমি সাফ দিলের মানুষ, সোজা সরলভাবে বুঝি। আর তোমরা হলে বেকুব, আহম্মক, হল্লামাচানেওয়ালা। তোমাদের মুল্লুকের ভাই বেরাদর জান দিলো, তাতে কার কী হলো? কারো কিছু হলো না। বিশ্বাস করো, তোমাদের আহাম্মকি দেখে আমি দিনরাত চোখের আঁসু ফেলেছি। এত কেঁদেছি যে আমার বিবি সাহেব ব্লাড প্রেসারের রোগী, আমার দুঃখ দেখে রক্তের চাপে বেইশ হয়ে গেল। ভালো লাগে না ভাই, কিছু ভালো লাগে না। এসব ভালো কথা নয়। তবে তোমরা কিছু ভেব না ভাই, তোমাদের আত্মীয়স্বজনকে আমি দাঁড়িয়ে
থেকে দাফন করেছি। সুন্দর সাদা কাপড়ের কাফন দিয়ে আস্তে আস্তে তাজিমের সঙ্গে গোরের মধ্যে শুইয়ে দিয়েছি। সেই কাফনের কাপড় নিজের টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছি, লোবান বাত্তি ভি কিনেছি। তোমরা যদি আমাকে সে টাকা ফেরত দাও আমি লিবো না, হারগিজ লিবো না। কেন লিবো?

গায়কঃ তোমার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেবো।
হকমতঃ এই, বেহুদা।
বর্গি : হুকমত খাঁ, রাগ কোরো না। এই ভাই, তা তুমি তো হলে ফানকার। গান করো। তোমার মুখে এত থুথু কেন ভাইয়া?
গায়কঃ  অসহ্য ঘৃণা, মনুষ্যত্বহীন বিবেকহীনদের আমরা ঘৃনা করি। পৃথিবীটা সুন্দর। সেখানে আমার গান আর জীবন চেয়েছি, তোমরা আমাদের হত্যা করেছ। আমরা তোমাদের ধাংস করব।

বর্ণি : আর এখন আমি যদি বেয়োনেট দিয়ে তোমার গলাটা ফুটো করে দিই।

গায়ক আমি হাসতে হাসতে মৃত্যুকে গ্রহণ করব। আমার বাংলার স্বাধীনতার জন্য আমার মৃত্যু-আমার কী ভাগ্য:

বর্গি : তোমার ফুটা গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত গড়িয়ে পড়বে। ওসব পাগলামি বাদ দাও, তোমাকে ছেড়ে দেবো, যদি কসম করো আর কোনো দিন বাংলা বাংলা করবে না, মাসে মাসে নোটা টাকা পাবে।

গায়ক: [গান] আমি ভুলব না আর সহজেতে, সেই প্রাণে মন উঠবে মেতে।

বর্গি : হকমত, লিয়ে যাও।

বৃদ্ধ : আল্লাহর দোহাই, ওকে মেরো না, তোমরা অমানুষ হোয়ো না।

গায়ক: আপনি দুঃখ করবেন না। এই তো আমরা চেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের বাংলাদেশের জন্য আমি যে জীবন দিতে পারছি, এ আমার কত আনন্দ!
[গান] মৃত্যু মাঝে ঢাকা আছে যে অন্তহীন প্রাণ-

বৃদ্ধ : না, না নিয়ে যেয়ো না। আল্লাহ, কবে তোমার রহমত নেমে আসবে। [হকমত গায়ককে নিয়ে চলে গেল।)

বর্গি : আসবে না, কখনো আসবে না। বুড়া, কার জন্য কাঁদছ, আ?

[গুলির শব্দ।]

শুনতে পেলে। তোমার গায়ক খতম, শেষ হয়ে গেল। দুশমনের বংশ রাখব না। ককডু লাশ তুলে নে। 

[হকমতের প্রবেশ।]

হকমত: বর্গিজি।

বর্গিঃ  দুষ্টু মিয়া, কেমন লাগছে? দিল আওর সিনা শক্ত করো, ওয়াতান আর কওমের কাজে জুলফিকারের ধার আনো। তারপর কোনটা নওজোয়ান, কী নাম তোর?

জহবুলঃ জহরুল হক

বর্গি : জহরুল হক। বাহ সুন্দর নাম। মরবি না বাঁচবি?

জহরুল: আমার আঙুলের মধ্যে চারটা করে মোটা মোটা সুঁই ভরে দিয়েছে। দশ হাজার পাওয়ার লাইটের নিচে চোখ খুলে তিন দিন তিন রাত বসেছিলাম, দৃষ্টি অন্ধ হয়ে গেছে। আমার বুকে আর পিঠে তোমার সিপাহিরা শঙ্খ মাছের চাবুক মেরেছে। তবু আমি বেঁচে আছি, আমি বেঁচে থাকব, বাংলার স্বাধীনতার জন্য বেঁচে থাকব।

বর্গি : গায়কের মতো তোকে মরতে হবে।

জহরুল: আমি আবার বেঁচে উঠব। যতবার মারবে ততবার বাঁচব।

বৃদ্ধঃ সাবাস।
বর্গি : নওজোয়ান, কী চাও তুমি?

জহরুল: স্বাধীনতা। বাংলার স্বাধীনতা। পুঁজিপতি আর শোষকের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে চাই, তোমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়ে সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে চাই।

বর্গি : না। আমার টাকা আমার থাকবে, কাউকে দেবো না।
জহবুল: তাহলে আমার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকো।
বর্গি : হকমত খাঁ, নিয়ে যাও।
বৃদ্ধ : আমাকে নিয়ে চলো, ওকে ছেড়ে দাও।

জহরুল বলো বীর, বলো উন্নত মম শির, শির নেহারি- 

[হকমত জহরুলকে নিয়ে গেল।]

বৃদ্ধ : আমি জ্ঞানত কোনো দিন মিথ্যা বলিনি, আল্লাহর রহমতে অবিশ্বাস করিনি, কারো অমঙ্গল চাইনি। আমি বলছি আল্লাহর গজব পড়বে, তোরা ধ্বংস হবি, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবি।
[গুলির শব্দ]

আহ। আল্লাহ তুমি দেখো, দেখো সব। রোজ কিয়ামতের দিনে হিসাব মিলিয়ে নিয়ো, এদের ক্ষমা কোরো না।
বর্গি : ক্ষমা। তোর মুখে আল্লাহর নাম।

হকমত কানের মধ্যে নল ঢুকিয়ে গুলি করেছি, মগজ আসমানে উড়ে গেল।
বর্গি : বহুত খুব। এবার বুড্ডাকে নিয়ে যাও।
হকমত এই বুড্ডা।

বৃদ্ধ : চল

দুখুঃ  হকমত খাঁ।

হকমত খামোশ!
দুখুঃ ছেড়ে দাও।

বৃদ্ধঃ  দুঃখ কোরো না বাবা। আমার ছেলেরা মরছে, আমি বাঁচব কোন সুখে?
[হকমত বৃদ্ধকে নিয়ে গেল।]

দুখুঃ বর্গিজি, ছেড়ে দিতে বলেন। ওর কোনো দোষ নেই।

বর্গি : আর সব দোষ আমার? আমার ব্যাংক, কারখানা সব লুটে নেবে আর আমি চুপ করে সহ্য করব? এ দেশের মালিক আমি, আমার হুকুমে সব চলবে। শাসন, যুদ্ধ, ব্যবসা, বাণিজ্য সব আমি চালাব। এখন কী দেখছ, এই তো শুরু হলো

দুখু : আমি যদি নিরস্ত না হতাম, যদি একটা কিছু অস্ত্র থাকত, তাহলে, তাহলে-

বর্গি: তাহলে কী করতে?

দুখুঃ আমি জানি না আমি কী করতাম, উঃ দেশে আমার সাত কোটি মানুষ, তোমরা তোমাদের- [গুলির শব্দ।]

বর্গি : তোমার ভাই বেরাদরকে আমি চিনি, খুব ভালো করে তেইশ বছর ধরে দেখেছি।

দুখুঃ তুমি কিছু চেনো না, তুমি একাত্তরের বাংলাকে জানো না।
[হুকমতের প্রবেশ] 

হকমতঃ  বর্গিজি , বুড্ডাটার সিনা ফাটিয়ে দিয়েছি, বুড্ডাটা হাসছে। সফেদ দাড়ির মধ্যে লহ লেগেছে। কাঁচা লহর মধ্যে শুয়ে ইমানদারের মতন হাসছে, আমার খুব ভর লাগছে।
বাংলা
বর্গি : চুপ করো। ডর কীসের? তোমার হাতে অস্ত্র আছে। ককছু, যা বুড়ার লাশটা গাড়িতে উঠিয়ে লিয়ে নদীতে ফেলে দে। ভারী ভারী পাথর বেঁধে দিবি।
হকমতঃ যা ঝকড়ু, জলদি যা, বুড্ডার হাসি খুব খারাপ।  

ঝকড়ুঃ  মালিক, আমি যাব না।
বর্গিঃ যাবি না? বদমাশ।
হকমতঃ ককন্তু, জান লিয়ে লিবো।
ঝকড়ুঃ  লিয়ে নে, আমি যাব না।
হকমতঃ যাবি না ঝকডু?

ঝকড়ুঃনা।
বর্গি : এক হাজার টাকা দিব।
ঝকড়ুঃমালিক!
বর্গি : দু হাজার।
ঝকড়ুঃনা না।
বর্গি : দু হাজার টাকা, এই নে, ধর।
ঝকড়ুঃ মালিক!
বর্গি : নে হাতে নে, পকেটে ভরে নে।
[ঝকড়ুঃ হাত বাড়িয়েছে।)

দুখুঃ ঝকড়ু

ঝকড়ুঃ কিছু বোলো না তুমি। টাকা কে দেবে আমাকে?
বর্গিঃ মারহাবা ঝকড়ু, আরো বকশিশ পাবি।
ঝকড়ুঃ আপনার দয়া, মালিক।

বর্গি : হকমত খাঁ, ঝকডুকে নিয়ে যাও।

হকমত চল ঝকডু।
ঝকড়ুঃ আসেন সিপাহিজি।
বর্গি : যাও, জলদি করো। দুখু মিঞা, দেখলে তো টাকার জোরে কী হয়।
দুখু : ককত্ব, যাবি না।
হকমতঃ খবরদার, ওকে ডাকবে না।

দুখু : আমি ওকে মেরে ফেলব।
[ঝকড়ু ক্ষিপ্র বাঘের মতো হকমতকে জাপটে ধরল।]
ঝকড়ু জয় বাংলা। দুখু ভাই, আমি হকমতকে ধরেছি, তুমি বর্গিকে ধরো।
[দুখু বর্গিকে ধরেছে।]
দুখু : বর্গি, পকেটে হাত ভোরো না, ওটা আমাদের অস্ত্র।

ঝকডুঃ আরে হকমত খাঁ, ছুটতে পারবে না। লাশ টানা হাত, তোর কোমর ভেঙে ফেলব।
দুখু : পালাবে কোথায় বর্গি?

বর্গিঃ টাকা দেবো। এক লাখ, দশ লাখ। 

ঝকড়ুঃ টাকা দিয়ে আমার ইমান লিতে পারবি না বর্গি। এই হকমত, অস্ত্র ছেড়ে দে। না হলে এই দেখ। মুখ দিয়ে রক্ত এসে যাবে। ছাড়া ছাড়! হা দুষ্টু ভাই, অস্ত্র লিয়ে নাও।
বর্গিঃ দুষ্টু ভাই, আমাকে রহম করো। 

দুখুঃ তেইশ বছর সহ্য করেছি, ভালোবেসেছি, দয়া করেছি। কিন্তু তোমরা ভালো হবার নও। এখন প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তোমাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেব। তোমাদের পালাবার পথ গুঁড়ো করে দেব আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ। লজ্জায় অপমানে আর পরাজয়ের যন্ত্রণায় তোমাদের সৈন্যবাহিনী পাগল হয়ে যাবে।
(গ্রেনেড ও গুলির শব্দ।)

দুখুঃ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
[গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেশাত্মবোধক গানের সুর ভেসে আসছে] 

 

Content added || updated By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.