SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

On This Page
অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - হিন্দুধর্ম শিক্ষা - দ্বিতীয় অধ্যায় | NCTB BOOK

 

আমরা এর আগের শ্রেণিগুলোতেও যোগাসন করেছি। চলো, আমরা একটা মজার খেলার মাধ্যমে যোগাসন প্রদর্শন করি।

 

  • আমরা দল/ জোড়ায় ভাগ হয়ে প্রত্যেকে নিজের জানা একটি করে যোগাসনের নাম টুকরো কাগজে লিখি।
  • লটারির মাধ্যমে দলের একজন একটি করে কাগজ তুলি।
  • দলের সবাই লটারির মাধ্যমে প্রাপ্ত যোগাসনটি দলীয়ভাবে করে দেখাই। 'যোগ-পরিক্রমা' ছকে কয়েকটি যোগাসনের নাম ও উপকারিতা এককভাবে লিখে দল। জোড়ায় উপস্থাপন করি।

 

ছক ২.১: যোগ-পরিক্রমা

যোগাসনের নাম

উপকারিতা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

চলো, আমরা প্রত্যেকে 'উপস্থাপনা যাচাই' তালিকায় টিক চিহ্ন (√) দিয়ে অন্য দল/ জোড়ার উপস্থাপনা মূল্যায়ন করি।

 

 

এ মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নীরবে যে যার কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলছে। সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী, পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তন করছে চন্দ্র। দূর আকাশের চাঁদের টানে পৃথিবীর নদীতে জোয়ার-ভাটা আসে। চন্দ্র-সূর্যের অবস্থান বদলের কারণে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ হয়। আমরাও এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের অবিচ্ছিন্ন অংশ, একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত আছি। এই সম্পর্ককে অনুভব করার জন্য প্রয়োজন আত্মমগ্ন হওয়া। আত্মমগ্নতায় পরমব্রহ্মের উপলব্ধি আসে। এই আত্মমগ্নতা উপলব্ধি করার একটি মাধ্যম হলো যোগাসন।

 

স্বামী পরমানন্দ বলেছেন, "বাইরে খুঁজলে ঈশ্বরকে পাওয়া যাবে না, তিনি মানুষের অন্তরে আত্মারুপে বিরাজমান, নিজের ভেতরে তাঁকে প্রকাশ করার নামই সাধনা।"

 

বৈদিক নিয়মে বিভিন্ন যোগাসনের মাধ্যমে আত্মমগ্ন হওয়া যায়। যোগাসন আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে। এই যোগাসনের ধারণা বহু প্রাচীন। আমাদের

 

ধর্মগ্রন্থগুলোতে এ সম্পর্কে বিশদভাবে লেখা হয়েছে। যোগাসন বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের অষ্টাঙ্গযোগ সম্পর্কে জানতে হবে। অষ্টাঙ্গযোগের একটি ধাপ হলো যোগাসন।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা উপরের ছবির মতো বিন্দুর দিকে তাকিয়ে এবং একইভাবে আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে মনঃসংযোগ করতে পারি। এ কাজকে বিন্দু ত্রাটক ও অগ্নি ত্রাটক বলে। এতে মনে স্থিরতা আসে। সহজে আত্মমগ্ন হওয়া যায়।

চলো, আমরা শিক্ষকের সহায়তায় ধ্যান/ মেডিটেশন চর্চা করি

 

অষ্টাঙ্গযোগ

 

মহর্ষি পতঞ্জলি ১৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে যোগের তত্ত্ব ও অনুশীলনের ওপর কিছু সূত্র দেন। একে যোগসূত্র বলে। যোগসূত্রে অষ্টাঙ্গযোগের কথা বলা হয়েছে। অষ্টাঙ্গযোগে আটটি ধাপ রয়েছে। নিচে ধাপগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো।

১। যম: যম অর্থ সংযম। ইন্দ্রিয় এবং মনকে হিংসা, অশুভ ভাব থেকে সরিয়ে আত্মকেন্দ্রিক করা। অর্থাৎ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বস্তু ত্যাগ করা। যম পাঁচ ধরনের- 

(ক) অহিংসা- সবসময় নিজের ভেতরে বিদ্বেষহীন চিন্তা ও চেতনা ধারণ করা। এককথায় মনকে ভালোবাসায় পূর্ণ রাখা। শুধু জীবের প্রতি ভালোবাসা নয়, নিখিল বিশ্বের তথা প্রতিটি বস্তুর প্রতি ভালোবাসা।

(খ) সত্য- যেমন দেখছি, যেমন শুনছি এবং যেমন জানছি, ঠিক তেমনটাই মনে, কথায় ও কাজে প্রকাশ করাকে সত্য বলে। মানুষ যদি সত্য চিন্তা করে, যদি সত্য কথা বলে এবং সমগ্রজীবন যদি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

( গ) অস্তেয়- অস্তেয় অর্থ চুরি না করা। অপরের জিনিস না বলে অধিকার করাকে/নেওয়াকে স্তেয় (চুরি) বলে।

(ঘ) ব্রহ্মচর্য- ব্রহ্মচর্য শব্দের অর্থ ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ ও পবিত্র সংযত জীবনযাপন করা। জীবনে ব্রহ্মচর্যকে প্রতিষ্ঠা করলে দেহে শক্তি মেলে। মনে সাহস ও বুদ্ধি বিকশিত হয়।

(ঙ) অপরিগ্রহ- অপরিগ্রহ অর্থ হচ্ছে অগ্রহণ বা মুক্ত থাকা। অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু সংগ্রহ করা ও মজুত করা বা ভোগের লিঙ্গা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

২। নিয়ম: যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার অন্তর্গত শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের চর্চা করে আত্মশুদ্ধ হয় তা-ই নিয়ম। মহর্ষি পতঞ্জলি শৌচ, সন্তোষ, তপঃ, স্বাধ্যায় এবং ঈশ্বর-প্রণিধান এই পাঁচটি নিয়মের উল্লেখ করেছেন।

(ক) শৌচ- শুদ্ধতা তথা পবিত্রতাকে শৌচ বলে। শৌচ দুই রকমের বাইরের এবং ভেতরের। সাধকের প্রতিদিন জল দ্বারা শরীরের শুদ্ধি, সত্যাচরণ দ্বারা মনের শুদ্ধি, বিদ্যা আর তপস্যা দ্বারা আত্মার শুদ্ধি এবং জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধির শুদ্ধি প্রয়োজন।

(খ) সন্তোষ - সন্তোষ মানে সম্যক পরিতৃপ্তি। যখন যে অবস্থায় থাকা যায় সে অবস্থাকে সুখকর মনে করে আনন্দময় জীবনযাপন করা।

(গ) তপঃ - তপঃ মানে তপস্যা অর্থাৎ আত্ম-সংযম। এর মাধ্যমে দেহ, মন ও বাক্যে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা প্রদর্শন করা হয়।

(ঘ) স্বাধ্যায়- স্বাধ্যায় হচ্ছে আত্মোন্নয়নে সহায়তাকারী ও অনুপ্রেরণাদায়ী প্রাসঙ্গিক গ্রন্থাদি থেকে পাঠ গ্রহণ করা। কেননা শিক্ষা ও অধ্যয়নই পারে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিশুদ্ধ ও স্বচ্ছ করে গড়ে তুলতে।

(ঙ) ঈশ্বর-প্রণিধান- প্রণিধান অর্থ অর্পণ। সমস্ত কর্ম ও ইচ্ছা ঈশ্বরে অর্পণ করার নাম ঈশ্বর-প্রণিধান।

৩। আসন- আসন অর্থ স্থির হয়ে সুখে অধিষ্ঠিত থাকা। দেহ মনকে সুস্থ ও স্থির রাখার উদ্দেশ্যে যে বিভিন্ন দেহভঙ্গি তাই আসন।

৪। প্রাণায়াম- প্রাণায়াম অর্থ প্রাণের আয়াম। প্রাণ হলো শ্বাসরূপে গৃহীত বায়ু আর আয়াম হলো বিস্তার। সুতরাং প্রাণায়াম বলতে বোঝায় শ্বাস-প্রশ্বাসের বিস্তার। অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতিকে নিয়ন্ত্রণ এবং নিজ আয়ত্তে আনাই প্রাণায়াম। রেচক, পূরক ও কুম্ভক এই তিন প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রাণায়াম সম্পন্ন হয়। শাসগ্রহণকে বলে পূরক, শ্বাসত্যাগকে বলে রেচক এবং শ্বাসধারণকে বলে কুম্ভক।

৫। প্রত্যাহার- প্রত্যাহার অর্থ ফিরিয়ে নেওয়া। বাহ্যিক বিষয়বস্তু থেকে ইন্দ্রিয়সমূহকে ভিতরের দিকে ফিরিয়ে নেওয়াই প্রত্যাহার।

৬। ধারণা- মনকে বিশেষ কোনো বিষয়ে স্থির করা বা আবদ্ধ রাখার নাম ধারণা। ধারণা অর্থ একাগ্রতা। নিজ দেহের অঙ্গবিশেষেও যেমন- নাভি, নাকের অগ্রভাগ বা ভূ-যুগলের মধ্যস্থানে অথবা কোনো দেবমূর্তি বা যে- কোনো বস্তুতে মনকে নিবিষ্ট করা যেতে পারে।

৭। ধ্যান বা মেডিটেশন- ধ্যান অর্থ নিরবচ্ছিন্ন গভীর চিন্তা। নিরবচ্ছিন্নভাবে ঈশ্বরের চিন্তা করলে মন একসময় ঈশ্বরময় হয়ে ওঠে। ধ্যানে যোগীর দেহ শ্বাস-প্রশ্বাস ইন্দ্রিয় মন বিচারশক্তি অহংকার সবকিছু ঈশ্বরে লীন হয়ে যায়। তিনি এমন এক সচেতন অতীন্দ্রিয় অবস্থায় চলে যান যা ব্যাখ্যা করা যায় না। তখন পরম আনন্দ ছাড়া তাঁর আর কোনো অনুভূতি হয় না। তিনি তাঁর আপন অন্তরের আলো দেখতে পান।

৮। সমাধি- সমাধি অর্থ সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরে চিত্ত তথা হৃদয় সমর্পণ। এই সমপর্ণের মাধ্যমে মনঃশূন্য, বুদ্ধিশূন্য, অহংশূন্য নিরাময় অবস্থা প্রাপ্ত হন। তখন পরমাত্মার সঙ্গে তাঁর মিলন ঘটে। তখন তাঁর 'আমি' বা 'আমার' জ্ঞান থাকে না। কারণ তখন তাঁর দেহ, মন ও বুদ্ধি স্তব্দ থাকে। সাধক তখন প্রকৃত যোগ লাভ করেন।

জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার পরম আনন্দময় মিলনই সমাধি অবস্থা। সমাধি দুই প্রকার- সবিকল্প এবং নির্বিকল্প। সাধকের ধ্যানের বস্তু ও নিজের মধ্যে পার্থক্যের অনুভূতি থাকলে, তা হলো সবিকল্প সমাধি। আর সাধক যখন ধ্যানের বস্তুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান সে অবস্থাই হলো নির্বিকল্প সমাধি। এই সমাধি লাভ যোগসাধনার সর্বোচ্চ স্তর, যোগীর পরম প্রাপ্তি। চলো, আমরা অষ্টাঙ্গযোগ যেভাবে আমাদের জন্য কল্যাণকর তা 'প্রাণবায়ু' বেলুনে পাঁচটি পয়েন্টে লিখি।

যোগাসন

 

একটি বিশেষ ভঙ্গিতে মনঃসংযোগ করে কিছু সময়ের জন্য স্থির ভাবে অবস্থান করাকে যোগাসন বলা হয়। আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে যোগাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে যোগাসনকে মূলত দুটিভাগে ভাগ করা হয়। ধ্যানাসন ও স্বাস্থ্যাসন। যোগশাস্ত্রে প্রতিটি আসনেরই নাম রয়েছে। এই নামের সঙ্গে আসন যুক্ত করে উচ্চারণ করা হয়। যেমন- 'শব' নামের আসনটিকে উল্লেখ করা হয়েছে শবাসন (শব+আসন) নামে। এখন আমরা অতি পরিচিত কয়েকটি যোগাসন সম্পর্কে জানব।

 

সুখাসন

 

সুখ শব্দের সাধারণ অর্থ হলো- হর্ষ, আনন্দ, প্রীতি, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বস্তি, তৃপ্তি ইত্যাদি। সুখ পাওয়া যায় এমন ভাবগত অর্থ থেকে এই আসনের নামকরণ করা হয়েছে সুখাসন (সুখ+ আসন)।

 

পদ্ধতি

 

১. কোনো সমতল স্থানে, মেরুদণ্ড সোজা করে, দুই পা ছড়িয়ে বসতে হবে। 

২. এবার ডান পা ভাঁজ করে বাম উরুর দিকে নিয়ে আসতে হবে। 

৩. বাম পা ভাঁজ করে ভাঁজ করা ডান পায়ের নিচ থেকে বাম উরুর কাছে আনতে হবে। 

৪. এবার ডান হাত ডান হাঁটুর উপর এবং বাম হাত বাম হাঁটুর উপরে রাখতে হবে। 

৫. হাতের তালু থাকবে হাঁটুর দিকে ফেরানো এবং আঙুলগুলো হাঁটুর উপর ছড়ানো থাকবে।

৬. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এক মিনিট অবস্থান করতে হবে। 

৭. তারপর পা বদল করে একই প্রক্রিয়ায় আসনটি করতে হবে। 

৮. সর্বশেষে আসন ত্যাগ করে শবাসনে এক মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে।

পুরো আসনটি মোট তিন বার করতে হবে।

 

 

 

উপকারিতা

 

১। মনের একাগ্রতা, মনঃসংযোগ ও মনের স্থিরতা বৃদ্ধি পায়। 

২। ধ্যান ও প্রাণায়ামে এ আসন খুবই উপযোগী। মনের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে মনকে নিবিড়ভাবে এই আসন প্রশান্ত করে তোলে। 

৩। মানসিক উদ্বেগ, অনিদ্রা, ক্ষুধা ও বিষণ্ণতা দূর করে। 

৪। পিঠের ব্যথা উপশম ও মেরুদণ্ড সবল হয়। 

৫। পেটের পেশী সবল, পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি ও দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। 

৬। হাঁটুর নমনীয়তা বাড়ে। ফলে হাঁটু মুড়ে যাঁরা বসতে কষ্ট পান, তাঁদের অসুবিধা দূর হয়। এছাড়া হাঁটুর ব্যথা দূর হয়। 

৭। পায়ের পাতা প্রসারিত হয়, পেশী শিথিল হয় এবং শারীরিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়। মন শুদ্ধচিন্তা করার সহায়ক হয়। 

৮। পায়ের পাতা, হাঁটু ও গোড়ালির নমনীয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাঁটের বাতজনিত ব্যথা দূর হয়, দীর্ঘক্ষণ হাঁটা- চলার ক্ষেত্রে পা সক্রিয় থাকে।

 

পশ্চিমোত্তাসন

 

 

 

শরীরের ভঙ্গিমা পেছনের দিকে অর্থাৎ নিচু হয়ে পিছনের দিকে নুইয়ে করতে হয় বলে, এই আসনটি পশ্চিমোত্তাসন নামে পরিচিত। একে অনেকে উগ্রাসনও বলে। উগ্র শব্দের অর্থ হচ্ছে শিব। শিব সংহারকর্তা বলে শিবের বৈশিষ্ট্যময় এই আসনটি দ্রুত আয়ত্ব করা বেশ কঠিন, তবে ধীরে ধীরে তা রপ্ত হলে খুব অনায়াসে করা যায়।

পদ্ধতি-

১। প্রথমে দুটি পা সামনের দিকে সোজা করে বসতে হবে। 

২। দুই পা সোজা হলে দুহাতের আঙুলের সাহায্যে দুপায়ের দুটি বুড়ো আঙুল ধরতে হবে। 

৩। পায়ের আঙুল ধরার সময়, কোমর থেকে দেহের উপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে নিতে হবে। 

৪। শ্বাস-প্রস্বাস ধীরে ধীরে ত্যাগ করতে হবে। 

৫। এরপর আস্তে আস্তে দেহকে সামনের দিকে নুইয়ে আনতে হবে, যাতে মাথা দুহাঁটুর মাঝখানে স্পর্শ করে। 

৬। প্রথম অবস্থায় পুরোপুরি স্পর্শ না হলে অভ্যাসের মাধ্যমে ধাপে ধাপে তা আয়ত্তে আনা যায়। 

৭। পেটকে আসনরত অবস্থায় ভেতর দিকে সঙ্কুচিত করতে হবে, ফলে খুব সহজেই সামনের দিকে নুইয়ে পড়তে কষ্ট হবে না। 

৮। মাথা হাঁটু স্পর্শ করলে, মাথা দুটি হাতের মাঝখানে থাকবে। 

৯। প্রথম দিকে এই আসন শুধুমাত্র ৫ সেকেন্ড করাই উত্তম। তারপর আবার সোজা হয়ে বসতে হবে। এভাবে বারবার অভ্যাস করতে হবে। 

১০। প্রথমদিকে প্রতিদিন চার বার এবং ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত অভ্যাস করাই বিধেয়। এই আসন ভালোভাবে রপ্ত হলে ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে দিতে হবে।

উপকারিতা-

১। দেহের গ্রন্থিগুলি নমনীয, সবল ও সতেজ হয়। কোমরের ব্যথাবেদনার উপশম হয়। 

২। মূত্রাশয়, উদর, পিত্তাশয় প্রভৃতি বেশ সক্রিয় ও সবল হয়ে ওঠে। 

৩। দেহ শক্তিশালী, সুঠাম ও লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। 

৪। অন্ত্রের সঙ্কোচন ও প্রসারণের গতি বাড়ে। ফলে খাদ্যবস্তু দ্রুত শরীরের একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর ঘটে। 

৫। পেটে অনাকাঙ্ক্ষি চর্বি কমে আসে। 

৬। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ঠিক থাকে ও পরিপাকক্রিয়া সঠিকভাবে চলে। 

৭। মন ও চিন্তা-চেতনা উর্ধ্বমুখী হয়। 

৮। হেচকী তথা উর্ধশ্বাসজনিত কোনো রোগ থাকলে তা সহজেই নিরাময় হয়। 

৯। যাঁদের বেশিক্ষণ হাঁটতে পায়ে কষ্ট হয়, এ আসনের ফলে পায়ের পেশী ও স্নায়ুগুলো খুব সবল ও সতেজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘক্ষণ হাঁটলেও ক্লান্তি আসে না। পায়ের বাত নিরাময় হয়।

১০। এ আসনে খুব সহজেই শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আসে। মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে এ আসন নিয়মিত অভ্যাসে ভালো সুফল দেয়। 

১১। মেরুদণ্ড, পেট, হৃদপিন্ডের যথাযথ ব্যায়াম হয়। ফলে পেটে বাড়তি মেদ জমতে পারে না। মেরুদণ্ড সংকোচন-প্রসারণে নমনীয় হয় ও হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। 

১২। পেটে অসুখ হলে তা দ্রুত সারিয়ে তুলতে এ আসন অতি উত্তম। 

১৩। বহুমূত্র রোগ নিরাময় করে। 

১৪। মনোবল বৃদ্ধি করে ও শরীরের স্নায়ুবিক দুর্বলতা কমায়।

 

ভুজঙ্গাসন

 

ভুজঙ্গ অর্থ সাপ। এই আসনের দেহভঙ্গিমা সাপের মতো দেখায় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ভুজঙ্গাসন (ভুজঙ্গ+আসন)।

পদ্ধতি

১. সমতল স্থানে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। পায়ের দুই পাতা ও গোড়ালি জোড়া থাকবে।

২. দুই হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে বুকের দুই পাশে স্থাপন করতে হবে। 

৩. হাতের তালু মাটির দিকে ফেরানো থাকবে। 

৪. দুই হাতে ভর দিয়ে মাথাসহ শরীরের উর্ধ্বাংশ ধীরে ধীরে উপরে তুলতে হবে। 

৫. এবার হাত ও পেটের উপর ভর দিয়ে শরীরকে উর্ধ্বমুখী করে ত্রিশ সেকেন্ড অবস্থান করতে হবে। এই সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। 

৬. ত্রিশ সেকেন্ড পর আসন ত্যাগ করে, শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।

আসনটি মোট তিন বার করতে হবে।

 

উপকারিতা

 

১. মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। মেরুদণ্ডের বাত দূর হয়। 

২. কোমরের বাত ও ব্যথার উপশম হয়। 

৩. পিঠ ও কোমরের পেশি মজবুত হয়। 

৪. মেয়েদের ঋতুস্রাবের ব্যথা ও অনিয়ম দূর হয়। 

৫. যকৃৎ, প্লীহার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

৬. অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়। 

৭. উচ্চ-রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই আসন অত্যন্ত সুফল প্রদান করে থাকে।

  • চলো, আমরা প্রত্যেকে 'যোগ-অমৃত' তালিকায় দেওয়া যোগাসনগুলোর পদ্ধতি এবং উপকারিতা বিশ্লেষণ করে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখি।

 

  • যোগাসনের মাধ্যমে আমরা যা-কিছু অর্জন করতে পারি তা 'ধ্যানমান আত্ম-উপলব্ধি' ছকটির উপযুক্ত ঘরে টিক চিহ্ন দিয়ে প্রত্যেকে প্রকাশ করি।

 

 

জাতি-ধর্ম-বর্ণ-অঞ্চল নির্বিশেষে সারা বিশ্বেই মানুষ এখন শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা করছে। তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ইয়োগা সেন্টার, ইয়োগা ক্লাব ইত্যাদি। ইয়োগা ক্যাম্পেরও আয়োজন করা হয়। এমনকি ২১ জুনকে ঘোষণা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ইয়োগা ডে বা যোগ দিবস হিসেবে।

তোমরাও একটি 'ইয়োগা ক্লাব' গঠনের উদ্যোগ নাও। আর সুবিধাজনক একটি দিনে বিদ্যালয়ে 'ইয়োগা ডে' পালন করো। সেদিন ইয়োগা ক্যাম্পেরও আয়োজন করবে। সুস্থতা, স্থিরতা ও মনঃসংযোগের মাধ্যমে 'নিজের মাঝে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ি/ সৃষ্টিজগতের কল্যাণ করি' এই স্লোগান নিয়ে কাজ করে যাও।

  • চলো, শ্রেণির সবাই মিলে আলোচনা করে 'ইয়োগা ক্লাব গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর তালিকা' তৈরির কাজ করি। সবার মতামত মিলিয়ে প্রত্যেকে নিচের ছকে লিখে রাখি।

 

 

তালিকা ২.৫: ইয়োগা ক্লাব গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর তালিকা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  • ইয়োগা ডে'তে কী কী করা যায় তা নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে 'ইয়োগা ডে কর্মসূচি' ছকে তার পরিকল্পনা লিখি। তারপর দলগত আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করি।

 

ছক ২.৬: ইয়োগা ডে কার্যক্রম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Content added || updated By

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.