তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - প্রার্থনা ও বিশ্বশান্তি | NCTB BOOK

পাঠ: ৬

ধর্মীয় সম্প্রীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

 

 

'সহাবস্থান' বলতে একত্রিতভাবে থাকা বোঝায়। সহনশীলতা চর্চা সহাবস্থানের একটি ভালো উদাহরণ। আমরা বাংলাদেশে প্রধান চারটি ধর্মের লোক একত্রে বসবাস করছি। বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় উৎসবকালে আনন্দের সহভাগী হই। সকল ধর্মেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নিচে চারটি ধর্মের শিক্ষা সম্পর্কে বলা হলো-

 

খ্রীষ্টধর্মে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

 

বাইবেলে সহাবস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে, "যারা তোমাদের অত্যাচার করে তাদের অমঙ্গল চেয়ো না, বরং মঙ্গল চেয়ো”। (রোমীয় ১২:১৪)। "মন্দের বদলে কারও মন্দ কোরো না। সমস্ত লোকের চোখে যা ভালো সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। তোমাদের দিক থেকে যতদূর সম্ভব সমস্ত লোকের সঙ্গে শান্তিতে বাস করো" (রোমীয় ১২:১৭-১৮)। "...তোমাদের সঙ্গে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই কোরো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও চড় মারতে দিয়ো।" (মথি ৫:৩৯)। "সেইজন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বেদীর উপরে তোমার যজ্ঞ নিবেদন করার সময় যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কিছু বলবার আছে, তবে তোমার দান সেই বেদীর সামনে রেখে আবার মিলিত হও এবং পরে এসে তোমার যজ্ঞ নিবেদন করো। (মথি ৫:২৩-২৪)।

 

ইসলামধর্মে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

 

আল কুরআন হলো ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। এতে বলা হয়েছে, "হে মানবজাতি, আমরা তোমাদের সবাইকে এক পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।" এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকবে না। ইসলাম শব্দটি দ্বারা 'শান্তি' বোঝায়। ৬২২ খ্রীষ্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক ঘোষিত মদিনা সনদে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

হিন্দুধর্মে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

 

মহাত্মা গান্ধী অহিংসাকে তাঁর দর্শন ও জীবন যাপনের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ভগবদগীতা হিন্দু ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ যার সারকথা হলো অহিংসা। ভগবদগীতা হিন্দুধর্মের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। ভগবদগীতায় ন্যায় ও ধার্মিকতা রক্ষা এবং নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

 

বৌদ্ধধর্মে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

 

বৌদ্ধ ধর্মে ব্রাহ্মবিহার, মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একটি উদাহরণ। বৌদ্ধধর্মের মৌলিক শিক্ষাগুলো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রচার করে। প্রেম এবং ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেয়। বৌদ্ধরা ধর্মীয় সংঘাত মোকাবেলার জন্য সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির প্রক্রিয়া অনুশীলন করে। এছাড়াও ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে।

 

এই চারটি ধর্মের মৌলিক বিষয় জেনে আমরা অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারি। এতে করে সকলের সাথে মিলেমিশে শান্তিতে সহাবস্থান সহজ হবে।

 

ক) ভেবে উত্তর লিখি। 

i) যে কোন একটি ধর্মের সহাবস্থানের বিষয় লিখো। 

ii) ভাইয়ের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের বিষয়ে পবিত্র বাইবেলে কী লেখা আছে?

iii) যারা অত্যাচার করে তাদের বিষয়ে বাইবেলে কী লেখা আছে?

 

খ) বিদ্যালয়ে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। 

গ) শ্রেণিকক্ষে চার ধর্মের শিক্ষার্থীরা একত্রে একটি উৎসবের আয়োজন করি। 
 

এ পাঠে শিখলাম

 

- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে চারটি প্রধান ধর্মের শিক্ষা লাভ করেছি।

Content added || updated By
Promotion