তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - স্রষ্টা ও সৃষ্টি এবং উপাসনা ও প্রার্থনা | NCTB BOOK

 

 

উপাসনা

 

ঈশ্বর আছেন। কিন্তু কীভাবে আমরা তাঁকে জানব? কীভাবে তাঁকে উপলব্ধি করব? ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার জন্য তাঁর উপাসনা করতে হবে। উপাসনার অর্থ হলো ঈশ্বরকে স্মরণ করা। একমনে তাঁকে ডাকা। তাঁর আরাধনা করা। তাঁর গুণকীর্তন, স্তব-স্তুতি, পূজা, ধ্যান-জপ ইত্যাদির মাধ্যমে উপাসনা করা। দয়াময়, কৃপাময়, করুণাময় ইত্যাদি ঈশ্বরের গুণবাচক নাম। বারবার এই নামগুলো উচ্চারণ করব। সুর করে তাঁর নামগান করব। এভাবে উপাসনা করা যেতে পারে। আবার নীরবেও উপাসনা করা যায়। ঈশ্বরকে নিরাকার বা সাকার দুভাবেই উপাসনা করা যায়। সাকার উপাসনায় দেব-দেবীর প্রতিমা বা ছবির সামনে বসতে হয়। পূজা করতে হয়। যজ্ঞ করতে হয়। নিরাকার উপাসনা জপ, ধ্যান, গুণকীর্তনের মাধ্যমে করা হয়। উপাসনা একটি নিত্যকর্ম। প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় উপাসনা করতে হয়। উপাসনা করলে 

 

 

 

দেহ-মন পবিত্র হয়। উপাসনার সময় আমরা ঈশ্বরের প্রশংসা করি। তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে সোজা হয়ে উপাসনায় বসতে হয়। উপাসনায় বিশেষ আসনে বসতে হয়। যেমন পদ্মাসন, সুখাসন। নিয়মিত আসন অভ্যাসে শরীর সুস্থ থাকে।

 

বিপদে মোরে রক্ষা করো

এ নহে মোর প্রার্থনা-

বিপদে আমি না যেন করি ভয়।

দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে

নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,

দুঃখে যেন করিতে পারি জয়। 

সহায় মোর না যদি জুটে 

নিজের বল না যেন টুটে,

সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, 

লভিলে শুধু বঞ্চনা

নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।

আমারে তুমি করিবে ত্রাণ

এ নহে মোর প্রার্থনা-

তরিতে পারি শকতি যেন রয়।

                                                 (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

 

প্রার্থনা

 

উপাসনার একটি দিক প্রার্থনা। প্রার্থনা হলো ঈশ্বরের কাছে কিছু চাওয়া। ঈশ্বর মহান। আমরা তাঁর সৃষ্টি। প্রার্থনার সময় আমাদের এরূপ মনোভাব থাকা উচিত। ভালো হওয়ার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হয়। বলতে হবে- “হে ঈশ্বর! তুমি আমাকে ভালো পথে নিয়ে যাও। কল্যাণের পথ দেখাও। আলোর পথ দেখাও। তুমি সকল জীবের মঙ্গল করো।"

প্রার্থনা একা করা যায়। সমবেতভাবে করা যায়। নীরবে করা যায়। সরবে করা যায়। সমবেত প্রার্থনায় সবাই একত্রিত হয়। এতে সবার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

প্রার্থনায় ধীর-স্থির হয়ে বসতে হয়। হাত জোড় করে ঈশ্বরকে ডাকতে হয়। ঈশ্বরের গুণকীর্তন করতে হয়। নিজের ভালো চাইতে হয়। অন্যের ভালো চাইতে হয়। সকল জীবের কল্যাণ কামনা করতে হয়। ঈশ্বর যেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে ভালো রাখেন। সবাইকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। এই প্রার্থনা করতে হয়। কোনো শুভ কাজের শুরুতে কিংবা বিপদে পড়লে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয়। এছাড়া যে কোনো অবস্থায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা যায়।

উপাসনা ও প্রার্থনার মাধ্যমে মনোযোগ বাড়ে। আমাদের দেহ-মন ভালো থাকে। শরীর সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত উপাসনা ও প্রার্থনা করব।

উপাসনা ও প্রার্থনা ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। উপাসনা ও প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা সৎ ও ধার্মিক হতে পারি। ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারি। তাই উপাসনা ও প্রার্থনার গুরুত্ব অপরিসীম।

Content added || updated By
Promotion