নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - অর্থনীতি - জাতীয় আয় ও এর পরিমাপ | NCTB BOOK

মোট দেশজ উৎপাদন কত হবে তা নির্ভর করে দেশের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন, প্রযুক্তি, এসব সম্পদের পরিমাণ ও উৎপাদনশীলতার উপর। এ জন্য এদেরকে মোট দেশজ উৎপাদনের নির্ধারক বলা হয় ।


১. ভূমি (Land) : মোট দেশজ উৎপাদন ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে । প্রাকৃতিক সম্পদের পর্যাপ্ত ব্যবহার সম্ভব হলে এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উর্বর ভূমি থাকলে দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ মোট দেশজ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক।


২. শ্রম (Labour) : যেকোনো দেশের শ্রম মোট দেশজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। দক্ষ ও কর্মক্ষম শ্রম মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক। শ্রমিকের সংখ্যা যদি বাড়ে এবং সে যদি প্রযুক্তির ব্যবহার জানে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়, তবে মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক হয় ।


৩. মূলধন (Capital) : মূলধন মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নির্ধারক । আজকের উন্নত দেশসমূহে মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির মূলে মূলধন কাজ করে । আবার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ মূলধনের অভাবের কারণে মোট জাতীয় আয় ও মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে না । সুতরাং মূলধন মোট দেশজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক ।


৪. প্রযুক্তি (Technology) : প্রযুক্তির উপর মোট দেশজ উৎপাদন বহুলাংশে নির্ভর করে । প্রযুক্তির উন্নয়ন নানাভাবে হতে পারে । যেমন নতুন আবিষ্কার, যন্ত্রপাতির ডিজাইন ও দক্ষতার উন্নতি, নতুন মালামালের আবিষ্কার ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি খাতে চিরায়ত বীজের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । একইভাবে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স ইত্যাদি সবজির উৎপাদনও বেড়েছে। প্রযুক্তি মূলত উৎপাদন উপকরণের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে একই সমান উৎপাদন উপকরণ দিয়ে অধিক উৎপাদন সম্ভব হয়।
৫. সচলতা (Mobility) : একটি অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া বা অবনতিশীল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে সম্পদ সরিয়ে নতুন প্রসারমাণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষমতার উপর মোট দেশজ উৎপাদন নির্ভর করে । উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশে পাট চাষ কমিয়ে ধান, গম বা ভুট্টা চাষে ভূমি ও অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা যায়।