নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি | NCTB BOOK

বেঁচে থাকা, স্বাস্থ্যরক্ষা এবং শরীরের বৃদ্ধির জন্য মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য দেহের পুষ্টিসাধন করে। সুন্দর স্বাস্থ্য, সুস্থ মন, কাজে উৎসাহ ও পরিশ্রম করার প্রবণতা সুপুষ্টির লক্ষণ। পরিশ্রম করার জন্য শক্তির দরকার। পুষ্টিকর খাদ্য মানুষের পরিশ্রম করার জন্য শক্তির যোগান দেয়। খাদ্যের ছয়টি পুষ্টি উপাদান দেহে এসব কাজ করে দেহের পুষ্টি সাধন করে।খাদ্য উপাদানের কাজ : খাদ্য উপাদানের কাজের ভিন্নতা রয়েছে। এসব উপাদান দেহের গঠন, বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, তাপ ও কর্মশক্তি সরবরাহ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন ও সচল রাখা, রক্ত চলাচল, পুষ্টি পরিবহন, দেহবর্জ্য অপসারণ, দেহ শীতলীকরণ প্রভৃতি বহুমাত্রিক কাজ করে।

সুষম খাদ্য ও চাহিদা : খাদ্যের ৬টি উপাদান যখন আদর্শ অনুপাতে গ্রহণ করা যায়, সেই খাবারকে সুষম খাদ্য বলে। তবে বয়স ও লিঙ্গ ভেদে দৈহিক কাঠামো অনুযায়ী সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ও চাহিদাও ভিন্ন হয়। যেমন একটি শিশুর জন্য যতটুকু আমিষ, শর্করা ও অন্যান্য উপাদান সংবলিত খাদ্য প্রয়োজন, একজন কিশোর বা কিশোরীর প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি। আবার একজন শ্রমিক বা খেলোয়াড়ের খাদ্যের পরিমাণ তার থেকে আরও বেশি হবে।

পুষ্টিহীনতার ফলে সৃষ্ট রোগ : শিশুর খাদ্যে আমিষের পরিমাণ কম হলে মাংসপেশি গড়ে উঠার বদলে ক্ষয় পেতে থাকে। শরীরে পানি আসে, ফুলে যায় ও শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ রোগের নাম কোয়াশিওরকর । আমিষ, শর্করা, চর্বি প্রভৃতি পুষ্টির অভাবে শিশু মেরাসমাস রোগে আক্রান্ত হয়। এটা শিশুর আমিষ ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরির অভাবজনিত রোগ। লৌহ, আমিষ ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রক্তের রক্তকণিকা তৈরি করে। খাদ্যে এ সব উপাদানের ঘাটতি থাকলে রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া হয়। খাদ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি'র অভাব হলে শিশুর রিকেটস রোগ হয়। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড হয়। ভিটামিনে এ'র অভাব হলে রাতে দেখতে অসুবিধা হয়। থিয়ামিনের অভাবে বেরিবেরি রোগ, রিবোফ্লাবিনের অভাবে ঠোটে, জিহ্বায় ও মুখে ঘা, ভিটামিন সি'র অভাবে স্কার্ভি প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি হয়।

পুষ্টিহীনতার কারণ : পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। পরিবারের বাড়ন্ত শিশুদের চাহিদা বাদ দিয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাছের মাথা, দুধের সর, পনির, মাছ বা মাংসের বড় টুকরা পরিবেশন করা মারাত্মক ভুল। বয়স্ক লোকের যেমন আমিষ ও চর্বির চাহিদা কম হয় তেমনি এর বিপরীতে বাড়ন্ত শিশু, কিশোর-কিশোরীদের চাহিদা হয় অনেক বেশি। খাদ্য পরিবেশনে ভুল নীতির দরুণ পুষ্টিহীনতা খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

পুষ্টিহীনতার প্রতিকার

১। দামি খাদ্যের পরিবর্তে একই পুষ্টিমান ও উপাদানসমৃদ্ধ কম মূল্যের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।

২। খাদ্য সম্পর্কে কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা যেমন হাঁসের ডিম, বোয়াল মাছ, গজার মাছ, খাওয়া যাবে না, এরূপ ধারণা পরিহার করতে হবে। মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি

৩। বাবা-মাকে পুষ্টিমানযুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে হবে।

৪। অধিক সময় ধরে রান্না করলে অনেক শাক-সবজির খাদ্যগুণ নষ্ট হয় তা বাবা-মাকে জানাতে হবে।

৫। শাক-সবজি রান্নার আগে ধুয়ে নিতে হবে। কাটার পর ধোয়া চলবে না ।

৬। আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব পূরণের জন্য বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গাভী পালনের জন্য অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৭। বড় মাছের দাম বেশি বলে এগুলোর পরিবর্তে ছোট মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৮। খাদ্য উপাদান অনুসারে একটি তালিকা তৈরি করে সেখান থেকে দৈনন্দিন খাদ্য বাছাই করে পরিবারে

যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। পুষ্টি, পুষ্টিহীনতা, প্রতিকার প্রভৃতি বিষয়ে রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

কাজ-১ : তোমাদের এলাকায় যে সব খাদ্য স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় সে সকল খাদ্যের নাম দিয়ে একটি সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি কর।

কাজ-২ : পুষ্টিহীনতার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ ধারাবাহিকভাবে বোর্ডে লেখ এবং দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা কর।


 

Content added || updated By