সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা - বুঝে পড়ি লিখতে শিখি | NCTB BOOK

বিবরণমূলক লেখায় কোনো বস্তু, বিষয় বা ঘটনার বিবরণ থাকে। আর তথ্যমূলক লেখায় কোনো বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে বিবরণ ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে মত প্রকাশ করা হয় যেসব রচনায়, তাকে বিশ্লেষণমূলক লেখা বলে ।

নিচে একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা দেওয়া হলো। এটি আনিসুজ্জামানের লেখা। আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২০ সালে মারা যান। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে আছে ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘স্বরূপের সন্ধানে’, ‘বিপুলা পৃথিবী' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

কত কাল ধরে

আনিসুজ্জামান

বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস। হয়তো আরও বেশি সময়ের। এ ইতিহাসের সবটা আজও ভালো করে জানা নেই আমাদের। আলো-আঁধারের খেলায় অনেক পুরানো কথা ঢাকা পড়েছে।

ইতিহাস বলতে শুধু রাজ-রাজড়াদের কথাই বোঝায় না। বোঝায় সব মানুষের কথা। এককালে এদেশে রাজ- রাজড়া ছিল না, তখন মানুষের দাম ছিল বেশি। লোকজন নিজেরাই যুক্তি পরামর্শ করে কাজ করত, চাষ করত, ঘর বাঁধত, দেশ চালাত।

তারপর তেইশ-চব্বিশশ বছর আগে-রাজা এলেন এদেশে। সেই সঙ্গে মন্ত্রী এলেন, সামন্ত-মহাসামন্তের দল এলেন। কত লোক-লস্কর বহাল করা হলো, কত ব্যবস্থা, কত নিয়মকানুন দেখা দিলো।

এক কথায় তখন কারো গর্দান যেত, কেউ বড়োলোক হয়ে যেত কারও খুশির বদৌলতে। তখন থেকে ইতিহাসে বড়ো বড়ো অক্ষরে রাজাদের নাম লেখা হয়ে গেল, আর প্রজারা রইল পেছনে পড়ে।

তবু এদের কথা কিছু কিছু জানা যায়, পরিচয় পাওয়া যায় এদের জীবনযাত্রার।

হাজার বছর আগে সব পুরুষই পরত ধুতি, সব মেয়েই শাড়ি। শুধু সচ্ছল অবস্থা যাদের, তাদের বাড়ির ছেলেরা ধুতির সাথে চাদর পরত, মেয়েরা শাড়ির সাথে ওড়না ব্যবহার করত। এখনকার মতো তখনো মেয়েরা আঁচল টেনে ঘোমটা দিত, শুধু ওড়নাওয়ালিরা ঘোমটা দিত ওড়না টেনে। তবে ধুতি আর শাড়ি দুই-ই হতো বহরে ছোটো। তাতে নানা রকম নকশাও কাটা হতো। মখমলের কাপড় পরত শুধু মেয়েরা। নানা রকম সূক্ষ্ম পাটের ও সুতোর কাপড়ের চল ছিল। জুতো পরতে পেত না সাধারণ লোকে—শুধু যোদ্ধা বা পাহারাদাররা জুতো ব্যবহার করত। সাধারণে পরত কাঠের খড়ম। ছাতা-লাঠির ব্যবহার ছিল।

সাজসজ্জার দিকে বেশ ঝোঁক ছিল প্রাচীন বাঙালির। চুলের বাহার ছিল দেখবার মতো। বাবরি রাখত ছেলেরা। না হয় মাথার ওপরে চুড়ো করে বাঁধত চুল। এখন মেয়েরা যেমন ফিতে বাঁধে চুলে, তখন শৌখিন পুরুষেরাও অনেকটা তেমনি করে কোঁকড়া চুল কপালের ওপর বেঁধে রাখত। মেয়েরা নিচু করে ‘খোঁপা’ বাঁধত-নয়তো উঁচু করে বাঁধত ‘ঘোড়াচূড়’। কপালে টিপ দিত, পায়ে আলতা, চোখে কাজল আর খোঁপায় ফুল। নানা রকম প্রসাধনীও ব্যবহার করত তারা।

মেয়েরা তো বটেই, ছেলেরাও সে যুগে অলংকার ব্যবহার করত। সোনার অলংকার পরতে পেত শুধু ধনী লোকেরা। তাদের বাড়ির ছেলেরাও সুবর্ণকুণ্ডল পরত, মেয়েরা কানে দিত সোনার ‘তারঙ্গ'। হাতে, বাহুতে, গলায়, মাথায় সর্বত্রই সোনা-মণি-মুক্তা শোভা পেত তাদের মেয়েদের। সাধারণ পরিবারের মেয়েরা হাতে পরত শাঁখা, কানে কচি কলাপাতার মাকড়ি, গলায় ফুলের মালা।

ভাত বাঙালির বহুকালের প্রিয় খাদ্য। সরু সাদা চালের গরম ভাতের কদর সব চাইতে বেশি ছিল বলে মনে হয়। পুরোনো সাহিত্যে ভালো খাবারের নমুনা হিসেবে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তা এই : কলার পাতায় গরম ভাত, গাওয়া ঘি, নালিতা শাক, মৌরলা মাছ আর খানিকটা দুধ। লাউ, বেগুন ইত্যাদি তরিতরকারি প্রচুর খেত সেকালের বাঙালিরা, কিন্তু ডাল তখনো বোধহয় খেতে শুরু করেনি। মাছ তো প্রিয় বস্তুই ছিল—বিশেষ করে ইলিশ মাছ। শুঁটকির চল সেকালেও ছিল-বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। ছাগমাংস সবাই খেত-হরিণের মাংস বিয়ে বাড়িতে বা এ রকম উৎসবেই সাধারণত দেখা যেত। পাখির মাংসও তাই। ক্ষীর, দই, পায়েস, ছানা- এসব ছিল বাঙালির নিত্য প্রিয়। আম-কাঁঠাল, তাল-নারকেল ছিল প্রিয় ফল। আর খুব চল ছিল খাজা, মোয়া, নাড়ু, পিঠেপুলি, বাতাসা, কদমা এসবের। মশলা দেওয়া পান খেতেও সকলে ভালোবাসত।

সাধারণ লোকে মাটির পাত্রেই রান্নাবান্না করত। ‘জালা’, ‘হাঁড়ি’, ‘তেলানি’– সচরাচর এসব পাত্রের ব্যবহারই করা হতো।

সেকালের পুরুষেরা ছিল শিকারপ্রিয়। কুস্তি খেলারও চল ছিল বেশ। মেয়েরা সাঁতার দিতে ও বাগান করতে ভালোবাসত। মেয়েরা খেলত কড়ির খেলা ছেলেরা দাবা আর পাশা। ধনী লোকেরা ঘোড়া আর হাতির খেলা দেখত। যাদের সে ক্ষমতা ছিল না, তারা ভেড়ার লড়াই আর মোরগ-মুরগির লড়াই বাঁধিয়ে দিত। নাচগানের বেশ প্রসার ছিল। বীণা, বাঁশি, কাড়া, ছোটো ডমরু, ঢাক-এসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছিল।

যাতায়াতের প্রধান উপায় ছিল নৌকা। হাতির পিঠে ও ঘোড়া-গাড়িতে চড়ত শুধু অবস্থাপন্ন লোকেরা। গরুর গাড়ি সাধারণ লোকে ব্যবহার করত—তবে সব সময় নয়—বিশেষ উপলক্ষে। মেয়েরা ‘ডুলি’তে চড়ত। পালকির ব্যবহারও ছিল। ধনী লোকদের পালকি হতো খুব সাজানো-গোছানো, রাজবাড়িতে হাতির দাঁতের পালকিও থাকত।

বেশির ভাগ লোকই থাকত কাঠ-খড়-মাটি-বাঁশের বাড়িতে। ধনী লোকেরাই শুধু ইট-কাঠের বাড়ি করত।

ওপরের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার বলতে হয়েছে সকলে এক রকম ছিল না। কেননা, সেই পুরনো কাল আর নেই, যখন সবাই মিলে মিশে কাজ করত। রাজা এসে গেছেন সমাজে। তাই কেউ প্রভু, কেউ ভৃত্য। কেউ প্রভুর প্রভু, কেউ দাসের দাস! দুজন প্রাচীন সংস্কৃত কবির রচনায় তাই এমন দুটি ছবি পাওয়া যায়—সে দুটো ছবি যে একই দেশের, সে কথা মনে হয় না। একজন দিয়েছেন মেয়েদের বর্ণনা: কপালে কাজলের টিপ, হাতে চাঁদের কিরণের মতো সাদা পদ্মবৃন্তের বালা ও তাগা, কানে কচি রিঠা ফলের দুল, স্নানস্নিগ্ধ কেশে তিলপল্লব।

আরেকজন এঁকেছেন সংসারের ছবি: নিরানন্দে তার দেহ শীর্ণ, পরনে ছেঁড়া কাপড়। ক্ষুধায় পেট আর চোখ বসে গেছে শিশুদের, যেন এক মণ চালে তার একশ দিন চলে যায়।

রাজাদের দল এখন আর নেই। মৌর্য-গুপ্ত, পাল-সেন, পাঠান-মুঘল, কোম্পানি-রানি এদের কাল শেষ হয়েছে। আজকের দুই কবিও হয়তো দুই প্রান্তে বসে এমনি করে কবিতা লিখছেন। একজন লিখছেন সমৃদ্ধির কথা, বিলাসের কথা, আনন্দের কথা। আরেকজন ছবি আঁকছেন নিদারুণ অভাবের, জ্বালাময় দারিদ্র্যের, অপরিসীম বেদনার। সরু চালের সাদা গরম ভাতে গাওয়া ঘি-কতকাল ধরে কত মানুষ শুধু তার স্বপ্নই দেখে আসছে।

 

শব্দের অর্থ

গর্দান যাওয়া: মাথা কাটা।বদৌলতে: কারণে।
ঘোড়াচূড়: এক ধরনের খোঁপার নাম।মাকড়ি: একপ্রকার দুল।
ডুলি: ছোটো পালকি।লোক-লস্কর: সশস্ত্র লোক ও তাদের সহযোগী।
তাগা: বাহুতে পরার অলংকার।শীর্ণ: রোগা।
তারঙ্গ: কানে পরার অলংকার।সামন্ত: জমিদার।
তিলপল্লব: তিলগাছের কচি পাতা।সুবর্ণকুণ্ডল: সোনার দুল।
নিরানন্দ: আনন্দহীন।স্নানস্নিগ্ধ কেশ: ধোয়া চুল ।
পদ্মবৃন্ত: পদ্ম ফুলের বোঁটা। 

 

পড়ে কী বুঝলাম

ক. এই রচনাটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

খ. এই লেখা থেকে কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক বাক্য খুঁজে বের করো।……………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

গ. বিবরণমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?……………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

ঘ. তথ্যমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?……………………………………………………………………………………………

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

ঙ. এই লেখার উপর তোমার মতামত দাও ।……………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

 

বলি ও লিখি

‘কত কাল ধরে’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

 

লেখা নিয়ে মতামত

‘কত কাল ধরে’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।

‘কত কাল ধরে’ রচনায় যা আছেআমার মতামত ও জিজ্ঞাসা

 

 

 

 

 

তথ্য বিশ্লেষণ

‘কত কাল ধরে’ লেখাটির প্রায় পুরো অংশে লেখক এ অঞ্চলের প্রাচীন যুগের সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। নারী ও পুরুষ কোন ধরনের পোশাক ও অলংকার পরত, এখানকার মানুষ কোন ধরনের খাবার খেতো, তাদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয় কী ছিল, এগুলোর বিবরণ লেখক দিয়েছেন। এই বিবরণ দিতে গিয়ে লেখককে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়েছে।

 

উপাত্ত বিশ্লেষণ

ছক বা সারণিতে যেসব সংখ্যা বা বিষয় থাকে, সেগুলোকে বলে উপাত্ত। উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়। নিচের ছকে কিছু উপাত্ত আছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারে বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রয় নেওয়া মানুষকে শরণার্থী বলে। তাদের জন্য বহু সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ছকে উপাত্ত হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র ও শরণার্থীর সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।

ভারতের প্রদেশআশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যাশরণার্থীর সংখ্যা
পশ্চিমবঙ্গ৪৯২৭২,৩৫,৯১৬ জন
ত্রিপুরা২৭৬১৩,৮১,৬৪৯ জন
মেঘালয়১৭৬,৬৭,৯৮৬ জন
আসাম২৮৩,৪৭,৫৫৫ জন
বিহার৩৬,৭৩২ জন
মধ্যপ্রদেশ২,১৯,২৯৮ জন
উত্তর প্রদেশ১০, ১৬৯ জন
মোট৮২৫৯৮,৯৯,৩০৫ জন

 

উপরের উপাত্তের উপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণমূলক বাক্য রচনা করা যায়। যেমন, একটি বাক্য: পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থী ক্যাম্প ছিল। আবার, আরেকটি বাক্য হতে পারে এমন: উত্তর প্রদেশে ১০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

এভাবে এই ছকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও কয়েকটি বাক্য রচনা করো।

১…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

২…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৩…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৪…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৫…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৬…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৭…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৮…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

৯…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

১০…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

উপরে লেখা বিশ্লেষণমূলক বাক্যগুলোর ভিত্তিতে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করো। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

Content added || updated By