চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - ইবাদত | NCTB BOOK

সুস্থ শরীর ও সুন্দর মনের জন্য পাকসাফ থাকার প্রয়োজন । কিন্তু নানা কাজে নানাভাবে শরীর ময়লা হয়, অপবিত্র হয়। তাই অস্বস্তি লাগে। এই ময়লা ও অপবিত্রতা দূর করার উত্তম উপায় হলো গোসল করা। পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়াকে গোসল বলে।

গোসল করলে গায়ের ঘাম দূর হয়। দুর্গন্ধ দূর হয়। দেহমন পবিত্র হয়। মন ভালো থাকে। কাজে উৎসাহ আসে।

গোসলের নিয়ম 

আমরা গোসলের শুরুতে দুই হাত ধুয়ে নেব। গড়গড়াসহ কুলি করে মুখ পরিষ্কার করব। পানি দিয়ে নাক সাফ করব। পরে সারা শরীর ভালো করে তিনবার ধুয়ে ফেলব। এভাবে গোসল করব।

গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:

 ১) গড়গড়াসহ কুলি করা, 

২) পানি দিয়ে ভালোভাবে নাক সাফ করা।

৩) পানি দিয়ে সারা শরীর ধোয়া ।

খেয়াল রাখতে হবে সারা শরীরের কোনো অংশ যেন শুকনা না থাকে। নিয়মিত গোসল করলে শরীর ভালো থাকে। গোসল করা আল্লাহ তায়ালার হুকুম। এটাও একটা ইবাদত।

পরিকল্পিত কাজ : গোসলের ফরজ কাজগুলোর তালিকা তৈরি করবে।

আযান 

সালাত জামাআতের সাথে আদায় করতে হয়। মহানবি (স) জামাআতে সালাত আদায় করতে তাগিদ দিয়েছেন। জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য কীভাবে ডাকতে হয় কেউ তা জানত না। মহানবি (স) সাহাবিদের নিয়ে একদিন পরামর্শে বসলেন, আলোচনা চলল। কেউ বললেন, সালাতের সময় হলে ঘণ্টা বাজানো হোক। কেউ বললেন, শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে ডাকা হোক। কেউ বললেন, আগুন জ্বালানো হোক। আরও অনেকেই অনেক কথা বললেন। মহানবি (স) কোনোটাই পছন্দ করলেন না ৷

গভীর রাত। সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ গভীর ঘুমে মগ্ন। স্বপ্ন দেখেন, একজন ফেরেশতা তাঁকে আযানের বাক্যগুলো শুনাচ্ছেন। ভোরে তিনি ঐ বাক্যগুলো মহানবি (স)-কে শুনালেন। আশ্চর্যের কথা, হযরত উমর (রা)ও একই স্বপ্ন দেখেন। বাক্যগুলো মহানবি (স)- এর খুব পছন্দ হলো। তিনি বললেন,‘এটা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। মহানবি (স) হযরত বিলাল (রা)-কে আযান দিতে বললেন। হযরত বিলালের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো প্রথম আযান। হযরত বিলাল হলেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন।

আযানের বাক্যগুলো হলো:

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,                                            اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,                                             اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ                                                أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ                                                 أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ                                            اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ                                            اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

হাইইয়া আলাস সালাহ, হাইইয়া আলাস সালাহ                              حَى عَلَى الصَّلوةِ - حَيَّ عَلَى الصَّلوة 

হাইইয়া আলাল ফালাহ, হাইইয়া আলাল ফালাহ                             حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ . حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ 

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার                                                اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُر

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ                                                                           لا إله إلا الله 

অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় ।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। (দুইবার)

 আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসুল। (দুইবার)

 সালাত আদায়ের জন্য এসো, সালাত আদায়ের জন্য এসো।

 কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য এসো, কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য এসো।

আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই ৷

ফজরের আযানে হাইইয়া আলাল ফালাহ-এর পর ঘুম ভাঙানো ডাক দেয়া হয়। বলতে হয়:

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম   

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম  

অর্থ : ঘুম থেকে সালাত উত্তম, ঘুম থেকে সালাত উত্তম ।

আযানের এই মর্মস্পর্শী ডাক শুনে কোনো মুমিনব্যক্তি বসে থাকতে পারে না। প্রকৃত মালিকের দরবারে হাজির হয়ে তাঁর সামনে মাথা নত না করে সে কিছুতেই শান্তি পায় না। 

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন :

                                           বাজল কিরে ভোরের শানাই 

                                               নিদমহলা আঁধার পুরে।

                                              শুনাই আযান গগনতলে

                                              অতীত রাতের মিনার চূড়ে 

কবি কায়কোবাদ বলেন :

 কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি

 মর্মে মর্মে সেই সুর

 বাজিল কী সুমধুর

 আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী ৷

একক কাজ : শিক্ষার্থীরা আযানের বাক্যগুলো বাংলায় মার্কার দিয়ে পোস্টার পেপারে লিখবে। আযানের শেষে এই দোয়া পড়তে হয় :

اللهُم رَبِّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلوةِ الْقَائِمَةِ أَتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ

وَالدَّرَجَةِ الرّفِيعَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُودَانِ الَّذِى وَعَدْتَهُ - إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ .

আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াসসালাতিল কাইমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাতা ওয়াদ্দারাজাতার রাফিয়াতা ওয়াবআসছু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযী ওয়া আদতাহ্র। ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীয়াদ।

মুয়াজ্জিন প্রতিদিন পাঁচবার আযান দেন। রেডিও-টেলিভিশনে আযান প্রচার করা হয়। আমরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনব। আমরা আযান শুনে সালাতের জন্য তৈরি হব। সময়মতো সালাত আদায় করব।

Content added By

Promotion