অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - NCTB BOOK

আলোক রশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তীর্যকভাবে আপতিত হলে মাধ্যম পরিবর্তনে এর গতিপথের ভিন্নতা দেখা যায়। এটি হলো আলোর প্রতিসরণ। এই অধ্যায়ে আমরা দৈনন্দিন জীবনে সংঘটিত আলোর প্রতিসরণের বিভিন্ন ঘটনা, পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন এবং এর প্রয়োগ হিসাবে অপটিক্যাল ফাইবারের সাথে পরিচিত হব। এছাড়া ম্যাগনিফাইং গ্লাসের কাজ, মানব চক্ষু ও ক্যামেরার কার্যক্রম তুলনা নিয়ে আলোচনা করব।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

   • দৈনন্দিন জীবনে সংঘটিত প্রতিসরণের ঘটনাগুলো চিত্র অঙ্কন করে ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • ম্যাগনিফাইং গ্লাসের কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • চশমার কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • ক্যামেরা এবং চোখের কার্যক্রম তুলনা করতে পারব
   • আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কার্যক্রমে আলোর অবদান উপলব্ধি করতে পারব।

Content added By

তোমরা কি কখনো কোনো গ্লাসের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তোমাদের নিজের ছবি দেখার চেষ্টা করেছ? গ্লাস থেকে আলোর প্রতিফলনের ফলে তোমরা কি একটা অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব দেখেছ? এই প্রতিবিম্বটা কি কোনো আয়নায় তৈরি তোমাদের প্রতিবিম্ব থেকে ভিন্ন? এটাকে অনেক বেশি আবছা লাগে কেন বলতে পার? গ্লাস হলো স্বচ্ছ মাধ্যম। অধিকাংশ আলোই এর মধ্য দিয়ে চলে যায়, কেবল খুবই কম অংশ প্রতিফলিত হয় বলেই প্রতিফলিত প্রতিবিম্বটি এতটা আবছা দেখা যায়। তাহলে আলো যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে চলে গেল তখন এর গতিপথ কেমন? চলো আমরা এবার এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তবে প্রথমে তোমরা নিচের কাজটি করে নাও।

চিত্র ১১.১ : আলোর প্রতিসরণ

 

কাজ : আলোর প্রতিসরণের ধারণা

প্রয়োজনীয় উপকরণ : একটি পেন্সিল, একটি কাচের গ্লাস, পানি

পদ্ধতি : একটি কাচের গ্লাসে ৩/৪ অংশ পূর্ণ করে পানি নাও। এবার বলতে পারবে একটি পেন্সিলকে একটু কাত করে চিত্রের মতো পানির ভিতর রাখলে পানির ভিতরে পেন্সিলের অংশটুকু কেমন দেখাবে ?
তুমি পানির মধ্যে পেন্সিলটিকে পর্যবেক্ষণ করো। তোমার পর্যবেক্ষণকৃত ফলাফল লেখ। আমরা জানি কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়লেই কেবল ঐ কস্তুকে দেখতে পারি। তুমি নিশ্চয়ই পেন্সিলটিকে পানির মধ্যে খাটো, মোটা এবং পানির তল বরাবর এটি ভেঙ্গে গেছে বলে মনে করছে।

উপরের কাজটির ক্ষেত্রে পানির ভিতরে পেন্সিলের নিচের অংশ থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ছে। এর পূর্বে এটি এক স্বচ্ছ মাধ্যম পানি থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যম বায়ুতে এসে তোমাদের চোখে পড়ছে। দুইটি ভিন্ন মাধ্যমে আলো যদি একই সরল রেখায় চলত তাহলে পেন্সিলটিকে নিশ্চয়ই সোজা দেখাত। কিন্তু তোমরা দেখতে পেলে এটিকে পানির তলে ভেঙ্গে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে আলো যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি তার গতিপথের দিক পরিবর্তন করে। আলোক রশ্মির এই দিক পরিবর্তনই হলো আলোর প্রতিসরণ। একটি নির্দিষ্ট স্বচ্ছ মাধ্যমে আলো সরল রেখায় চলে কিন্তু অন্য মাধ্যমে প্রবেশের সাথে সাথেই এটি মাধ্যমের ঘনত্ব অনুসারে দিক পরিবর্তন করে। এখানে উল্লেখ্য যে লম্বভাবে আলো এক মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় এর গতিপথের কোনো দিক পরিবর্তন হয় না।

Content added By

আলোক রশ্মি প্রতিসরণের সময় যে নিয়মগুলো মেনে চলে তা বোঝার জন্য প্রথমেই পরীক্ষাটা করে নাও৷

: কাচের সাপেক্ষে আলোর প্রতিসরণ

 

কাজ : কাচফলকে আলোর প্রতিসরণ

প্রয়োজনীয় উপকরণ : আলপিন, কাচফলক, ড্রইং বোর্ড

পদ্ধতি : প্রথমেই ড্রইং বোর্ডে একটি সাদা কাগজ আটকিয়ে নাও। কাচফলকটিকে সাদা কাগজের কেন্দ্রে রাখ এবং এর চারদিকে দাগাঙ্কিত কর। এবার কাচফলকটি সরিয়ে নাও এবং একটি আপতিত রশ্মি AB আঁক। মোটামুটি ৫ সে মি দূরত্বে AB রেখার উপর P এবং Q বিন্দুতে দুটি পিন খাড়াভাবে রাখ। কাচফলকটি পুনরায় পূর্বের স্থানে রাখ এবং পিন যে প্রান্তে রেখেছ তার উল্টো দিক থেকে পিন দুটিকে দেখার চেষ্টা করো  (শিক্ষকের নির্দেশনা প্রয়োজন)।

এবার কাচফলকের অপর প্রান্তে R এবং S বিন্দুতে আরও দুটি পিন খাড়াভাবে রাখ যেন কাচফলকের মধ্য দিয়ে P, Q, R ও S একই লাইনে আছে বলে মনে হয়। R এবং S বিন্দু দুটি চিহ্নিত করে পুনরায় কাচফলক সরিয়ে CD লাইন টান। পাশাপাশি BC প্রতিসরিত রশ্মি, অভিলম্ব MM এবং NN আঁক। চাঁদা দিয়ে আপতন কোণ ABN, প্রতিসরণ কোণ CBN´ এবং নির্গত কোণ DCM চিহ্নিত করে মাপ।

চিত্র ১১.৩ : ঘন থেকে হালকা মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ

উপরের কাজটি করে তোমরা কী পর্যবেক্ষণ করতে পারছ? এখানে আলোক রশ্মি হালকা মাধ্যম (বায়ু) থেকে ঘন মাধ্যমে (কাচ) প্রবেশ করেছে। কোণগুলোকে মেপে দেখা যাচ্ছে আপতন কোণ i প্রতিসরণ কোণ r অপেক্ষা বড় এবং আপতন কোণ i ও নির্গত কোণ e সমান। তাহলে তোমরা কী সিদ্ধান্ত নিতে পার :

আলোক রশ্মি যখন হালকা মাধ্যমে থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি অভিলম্বের দিকে সরে আসে। এই ক্ষেত্রে আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণ আপেক্ষা বড় হয়।

আলোকরশ্মি প্রথমে একটি মাধ্যম থেকে (যেমন বায়ু) অন্য মাধ্যমে (কাচ) প্রতিসরিত হয় এবং পুনরায় একই মাধ্যমে (বায়ু) নির্গত হলে আপতন কোণ ও নির্গত কোণ সমান হয়।

• আপতিত রশ্মি, প্রতিসরিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে দুই মাধ্যমের বিভেদ ভলে অঙ্কিত অভিনয় একই সমতলে থাকে। এছাড়াও উপরের পরীক্ষাটির ন্যায় অনুরূপ পরীক্ষণ থেকে দেখা গেছে যে, আলোক রশ্মি যখন ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়। এই ক্ষেত্রে আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণ অপেক্ষা ছোট হয়। অপর পক্ষে আলোক রশ্মি যখন অভিলম্ব বরাবর আপতিত হয় তখন আপতন কোণ, প্রতিসরণ কোণ ও নির্গত কোণের মান শূন্য হয়। এক্ষেত্রে আপতিত রশ্মির দিক পরিবর্তন হয় না।

Content added || updated By
চিত্র ১১.৪ আলর প্রতিসরণ

তোমরা এখন নিচের কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রতিসরণের বাস্তব প্রয়োগ দেখতে পাবে।

(১) একটি সোজা লাঠিকে কাত করে পানিতে ডুবালে উপর থেকে তাকালে পানির ভিতর লাঠির অংশটি কেমন দেখাবে। পর্যবেক্ষণ করে দেখ লাঠিটি ছোট, মোটা এবং উপরে দেখা যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আসলে প্রতিসরণের ফলে এমন হচ্ছে। চিত্র অনুসারে এখানে ঘন মাধ্যম পানি থেকে আলো প্রতিসরিত হয়ে হালকা মাধ্যমে তোমার চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে। লাঠিটির নিমজ্জিত অংশের প্রতিটি বিন্দু উপরে উঠে আসে। ফলে লাঠিকে খানিকটা উপরে, দৈর্ঘ্যে কম এবং মোটা দেখায়।

চিত্র ১১.৫ লালোর প্রতিসরণের ফলে মুদ্রার অবস্থানের পরিবর্তন

(২) একটি স্টিলের মর্গ বা চিনামাটির বাটি নাও। এরপর মা বা বাটিতে একটি মুদ্রা রাখ। এখন তোমার চোখকে এমন স্থানে রাখ যেন তুমি মুদ্রাটিকে দেখতে না পাও। এবার অন্য একজনকে ধীরে ধীরে মা বা পাত্রে পানি ঢালতে বলো। কী হবে এবং কেন হবে তা বলতে পারবে? পর্যবেক্ষণ করে দেখবে আস্তে আস্তে ভূমি মুদ্রাটিকে দেখতে পাবে। এটি প্রতিসরণের ফলে সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিসরণের ফলে আলো ঘন মাধ্যম পানি থেকে হালকা মাধ্যম বায়ুতে তোমার চোখে প্রতিসরিত হওয়ায় তুমি মুদ্রাটির অবাস্তব প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছ।

চিত্র ১১.৬ : আলোর প্রকিসরণের ফলে মাছের অবস্থানের পরিবর্তন

(৩) তুমি কি কখনো মাছ শিকার করেছ? সাধারণত পানিতে যে জায়গায় মাছটি দেখা যার আসলে কি মাছটি ঐ জায়গায় থাকে? মোটেই না? আসলে যে মাছটি আমরা দেখি এটি হলো তার অবাস্তব প্রতিবিম্ব। প্রকৃতপক্ষে মাছ থাকে আরেকটু দূরে এবং পতীরে। যদি ভূমি চেঁটা বা কোচ দিয়ে মাছ মারতে চাও তাহলে এটিকে মারতে হবে আরও নিচে ও দূরে।

(৪) তুমি নিশ্চয়ই বর্ষাকালে দেখেছ যে পুকুর ঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষার স্বচ্ছ পানির জন্য পুকুর ঘাটের সিঁড়িটা কোথায় দেখা যায় ? আসলে এটিকে যেখানে দেখা যায় এটি থাকে তার চেয়ে একটু নিচে। ফলে অনেকেই বুঝতে না পেরে পড়ে যায়। এমন ঘটনা আরও দেখতে পাবে তোমরা যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপের পাশে অবস্থিত ছেঁড়া দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে থাক। ওখানকার স্বচ্ছ পানিতে নিচের পাথর ও শৈবাল অনেক কাছে মনে হয়। এটা হয় মূলত আলোর প্রতিসরণের জন্যই।

Content added By

আলোক রশ্মি যখন ঘন স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে হালকা স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন প্রতিসরিত রশ্মি আপতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়। ফলে প্রতিসরণ কোণ আপতন কোণের চেয়ে বড় হয়। এভাবে আপতন কোণের মান ক্রমশ বাড়তে থাকলে প্রতিসরণ কোণও অনুরূপভাবে বাড়তে থাকে।

কিন্তু ঐ নির্দিষ্ট দুটি মাধ্যমের জন্য আপতন কোণের কোনো একটি মানের জন্য (এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ৯০° অপেক্ষা কম) প্রতিসরণ কোণের মান ৯০° হয় অর্থাৎ প্রতিসরিত রশ্মিটি বিভেদ তল বরাবর চলে আসে। এ ক্ষেত্রে ঐ আপতন কোণকে আমরা সংকট কোণ বলি। এখন আপতন কোণের মান যদি সংকট কোণের চেয়ে বেশি হয় তখন কী হবে? প্রতিসরণ কোণের মান তো আর ৯০° এর বেশি হতে পারে না?

পরীক্ষা করে দেখা গেছে ঐ ক্ষেত্রে আলোক রশ্মি আর প্রতিসরিত না হয়ে বিভেদ তল থেকে একই মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে আসবে। এক্ষেত্রে বিভেদ তল প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে এবং এই প্রতিফলন সাধারণ প্রতিফলনের নিয়মানুসারে হয়। এই ঘটনাকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলা হয়। অর্থাৎ ঘন মাধ্যম থেকে আপতিত রশ্মি তখন দুই মাধ্যমের বিভেদ তলে সাধারণ প্রতিফলনের নিয়মানুসারে সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়ে আবার ঘন মাধ্যমেই ফিরে আসে।

চিত্র অনুসারে PO আপতিত রশ্মির জন্য আপতন কোণ সংকট কোণের চেয়ে ছোট, যার প্রতিসরিত রশ্মি হলো OP। QO আপতিত রশ্মিটির জন্য আপতন কোণ সংকট কোণের সমান। যার প্রতিসরিত রশ্মি হলো OQ রশ্মি এবং এটি বিভেদ তল বরাবর প্রতিসরিত হয়েছে অর্থাৎ প্রতিসরণ কোণ ৯০° । RO রশ্মিটির জন্য আপতন কোণ সংকট কোণের চেয়ে বড়। এক্ষেত্রে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয়েছে OR রশ্মিটি প্রতিফলিত রশ্মি।

এখন প্রশ্ন হলো এর সাথে সাধারণ প্রতিফলনের পার্থক্য কোথায়? সাধারণ প্রতিফলনের সময় দেখা যায় আলোর কিছু না কিছু অংশ প্রতিসরিত হয়; কিন্তু অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্ষেত্রে সমস্ত আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয়।

 

পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত

১. আলোক রশ্মি কেবলমাত্র ঘন থেকে হালকা মাধ্যমে যাওয়ার সময় এটি ঘটে।
২. ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ অবশ্যই এর মাধ্যম দুটির সংকট কোণের চেয়ে বড় হতে হবে।

Content added By

অপটিক্যাল ফাইবার

অপটিক্যাল ফাইবার হলো একটি খুব সরু কাচত। এটা মানুষের চুলের মতো চিকন এবং নমনীর। ভালোক রশ্মিকে বহনের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। আলোক রশ্মি যখন এই কাচভর মধ্যে প্রবেশ করে তখন এর দেয়ালে পুনঃপুন পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটতে থাকে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে আলোক রশ্মি কাচরজ্জুর অপর প্রান্ত দিয়ে বের না হওয়া পর্যন্ত। সাধারণত মানবদেহের ভিতরের কোনো অংশ (যেমন পাকস্থলী, কোলন ইত্যাদি দেখার জন্য) যে আলোক নলটি ব্যবহার করে এটি একগুচ্ছ অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বরে গঠিত। এছাড়া অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের আরেকটি ক্ষেত্র হলো টেলিযোগাযোগ। এতে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করার ফলে একই সাথে অনেকগুলো সংকেত প্রেরণ করা যায়। সংকেত যত দূরই যাক না কেন এর শক্তি হ্রাস পায় না।

 

ম্যাগনিফাইং গ্লাস

কোনো উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে কোনো কম্ভুকে স্থাপন করে লেন্সের অপর পাশ থেকে বস্তুটিকে দেখলে কস্তুটির একটি সোজা, বিবর্ধিত ও অবাস্তব বিশ্ব দেখা যায়। এখন এই বিশ্ব চোখের যত কাছে গঠিত হবে চোখের বীক্ষণ কোণও তত বড় হবে এবং বিশ্বটিকেও বড় দেখাবে। কিন্তু বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুর চেয়ে কাছে গঠিত হলে সেই বিষ আর স্পষ্ট দেখা যায় না।

চিত্র ১১.৮ : ম্যাগনিফাইং গ্লাস

সুতরাং বিশ্ব যখন চোখের নিকট বিন্দু অর্থাৎ ষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্বে গঠিত হয় তখনই তা খালি চোখে সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে যে সমস্ত লেখা বা কস্তু চোখে পরিষ্কার দেখা যায় না তা স্পষ্ট ও বড় করে দেখার জন্য স্বল্প ফোকাস দূরত্বের একটি উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত ফ্রেমে আবদ্ধ এই উত্তল লেন্সকে বিবর্ধক কাচ বা পঠন কাচ বা সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে। এই যন্ধে খুব বেশি বিবর্ধন পাওয়া যায় না।

শিক্ষকের সহায়তায় তোমরা এ ধরনের ম্যাগনিফাইং গ্লাস দেখতে পার।

Content added || updated By

চোখ আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অন্যতম। চোখ দিয়ে আমরা দেখি। মানব চক্ষুর কার্যপ্রণালি ছবি তোলার ক্যামেরার মতো। চিত্রে মানব চক্ষুর বিশেষ বিশেষ অংশ দেখানো হয়েছে। প্রধান অংশগুলোর বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো (চিত্র ১১.৯)।

(ক) অক্ষিগোলক (Eye ball) : চোখের কোটরে অবস্থিত এর গোলাকার অংশকে অক্ষিগোলক বলে। একে চক্ষু কোটরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সীমার চারদিকে ঘুরানো যায়৷

চিত্র ১১.৯ : চোখের অভ্যন্তরীণ গঠন

(খ) শ্বেতমণ্ডল (Sclera) : এটা অক্ষিগোলকের বাহিরের সাদা, শক্ত ও ঘন আঁশযুক্ত অস্বচ্ছ আবরণবিশেষ। এটি চক্ষুকে বাহিরের বিভিন্ন প্রকার অনিষ্ট হতে রক্ষা করে এবং চোখের আকৃতি ঠিক রাখে।

(গ) কর্নিয়া (Cornea) : শ্বেতমণ্ডলের সামনের অংশকে কর্নিয়া বলে। শ্বেতমণ্ডলের এই অংশ স্বচ্ছ এবং অন্যান্য অংশ অপেক্ষা বাহিরের দিকে অধিকতর উত্তল।

(ঘ) কোরয়েড বা কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid) : এটি কালো রঙের একটি ঝিল্লি হিউমার দ্বারা গঠিত শ্বেতমণ্ডলের ভিতরের গাত্রের আচ্ছাদনবিশেষ। এই কালো রঙের জন্য চোখের ভিতরে প্রবিষ্ট আলোকের প্রতিফলন হয় না।

(ঙ) আইরিস (Iris) : এটি কর্নিয়ার ঠিক পিছনে অবস্থিত একটি অস্বচ্ছ পর্দা। পর্দাটি স্থান ও লোকবিশেষে বিভিন্ন রঙের নীল, গাঢ়, বাদামি, কালো ইত্যাদি হয়ে থাকে।

(চ) মণি বা তারারা (Pupil) : এটি কর্নিয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মাংসপেশিযুক্ত একটি গোলাকার ছিদ্রপথ। মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণে তারারস্ত্রের আকার পরিবর্তিত হয়।

(ছ) স্ফটিক উত্তল লেন্স (Crystalline Convex lens) : এটি কর্নিয়ার পিছনে অবস্থিত জেলির মতো নরম স্বচ্ছ পদার্থে তৈরি একটি উত্তল লেন্স।

(জ) অক্ষিপট বা রেটিনা (Retina) : এটি গোলকের পিছনে অবস্থিত একটি ঈষদচ্ছ গোলাপি আলোকগ্রাহী পর্দা। রেটিনার উপর আলো পড়লে ঐ স্নায়ুতন্ত্রতে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগায়।

(ঝ) অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার (Aqueous humour and vitreous humour : লেন্স ও কর্নিয়ার মধ্যবর্তী স্থান এক প্রকার স্বচ্ছ জলীয় পদার্থে ভর্তি থাকে। একে বলা হয় অ্যাকুয়াস হিউমার। লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী অংশে এক প্রকার জেলি জাতীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে। একে বলা হয় ভিট্রিয়াস হিউমার।

আলোকচিত্রগ্রাহী ক্যামেরা (Photographie Camera )

তিন ১১.১০ - আলোকচিত্রগ্রাহী ক্যামেরার পঠন

এই যন্ত্রে আলোকিত কস্তুর চিত্র লেন্সের সাহায্যে আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটের উপর গ্রহণ করা হয়। এই কারণে যন্ত্রটি আলোক-চিত্রগ্রাহী ক্যামেরা সংক্ষেপে ক্যামেরা নামে পরিচিত। ক্যামেরার বিভিন্ন অংশ হলো : (১) ক্যামেরা বাক্স (২) ক্যামেরা দেন (৩) রন্ধ্র বা ডায়াফ্রাম (৪) সাটার Q (৫) পর্দা (৬) আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেট এবং (৭) স্লাইজ

ক্রিয়া (Action) : কোনো বস্তুর ছবি তোলার পূর্বে ক্যামেরায় ঘষা কাচের পর্দাটি বসিয়ে যন্ত্রটিকে লক্ষবস্তু PQ এর দিকে ধরে সাটার খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর ক্যামেরা বাক্সের দৈর্ঘ্য কমিয়ে বাড়িয়ে এমন অবস্থায় রাখা হয় যাতে লক্ষবস্তুর উল্টা প্রতিবিঘ্ন pq পর্দার উপর গঠিত হয়। ডারাফ্রামের সাহায্যে প্রতিবিম্বটি প্রয়োজন মতো উচ্ছ্বল করা হয়। এরপর খা কাচের পর্দা সরিয়ে সাটার কম করা হয় এবং ঐ স্থানে আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটসহ স্লাইড বসানো হয়। এখন স্লাইডের ঢাকনা সরিয়ে নিয়ে সাটার ও ভারাক্রামের মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটের উপর আলোক আপতিত হতে দিয়ে পুনরায় ডায়াফ্রাম কদ্ধ করা হয়। এই প্রতিক্রিয়াকে এক্সপোজার বা আলোক সম্পাত (exposure) বলে। এই আপতিত আলোকে আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটের রৌপ্য প্রবশে রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে। এইবার স্লাইডের মুখের ঢাকনা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটটিকে স্লাইড হতে বের করে ডেভেলপার (developer) নামক এক প্রকার রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। সিলভার হ্যালাইড ডেভেলপার বারণ (reduction) প্রক্রিয়ায় রৌপ্য ধাতবে পরিণত করে। লক্ষবস্তুর যে অংশ যত উজ্জ্বল, প্লেটের সেই অংশে তত রূপা জমা হয় এবং তত বেশি কালো দেখায়। আলোর তীব্রতা ও উন্মোচনকালের উপর রূপার স্তরের পুরত্বের ভারতমা নির্ভর করে। এখন প্লেটটিকে পানিতে ধুরে হাইপো (Sodium thiosulphate) নামক দ্রবণে ডুবানো হয়। এতে প্লেটের যে যে অংশে আলো পড়ে না সেই সকল অংশের সিলভার হ্যালাইড গলে যায়। অতঃপর পরিষ্কার পানি দ্বারা প্লেটটি ধুয়ে ফেলা হয়। এভাবে প্লেটে লক্ষবস্তুর একটি নেগেটিভ চিত্র পাওয়া যায়।

নেগেটিভ হতে প্রকৃত চিত্র অর্থাৎ পজিটিভ মুদ্রিত করার জন্য নেগেটিভের নিচে সিলভার হ্যালাইড দ্রবণের প্রলেপ দেওয়া ফটোগ্রাফের কাগজ স্থাপন করে অল্প সময়ের জন্য নেগেটিভের উপর আলোক সম্পাত করতে হয়। এরপর পূর্বের মতো হাইপোর দ্রবণে ফটোগ্রাফের কাগজ ডুবিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পজিটিভ পাওয়া যায়।

ক্যামেরার সাথে মানব চক্ষুর তুলনা

ক্যামেরাচক্ষু

১) এতে একটি রুদ্ধ আলোক প্রকোষ্ঠ থাকে যার ভিতর দিক কালো রঙে রঞ্জিত। কালো রঙের জন্য ক্যামেরার ভিতর প্রবিষ্ট আলোকের প্রতিফলন হয় না।

২) ক্যামেরার সাটারের সাহায্যে লেন্সের মুখ যেকোনো সময়ের জন্য খোলা রাখা যায়।

৩) ডায়াফ্রামের বৃত্তাকার ছিদ্র পথ ছোট বড় করে প্রতিবিম্ব গঠনের উপযোগী প্রয়োজনীয় আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

৪) লেন্সের একটি নির্দিষ্ট ফোকাস দূরত্ব থাকে।

৫) এটির অভিসারী লেন্সের সাহায্যে লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব গ্রহণ করা যায় ৷

৬) আলোক চিত্রগ্রাহী প্লেটে লক্ষবস্তুর একটি বাস্তব, | উল্টা ও খাটো প্রতিবিম্ব ফেলা হয়।

১) চোখের অক্ষিগোলকের কৃষ্ণ প্রাচীর রুদ্ধ আলোক প্রকোষ্ঠের মতো ক্রিয়া করে। এই প্রাচীরের জন্য চোখের ভিতর আলোকের প্রতিফলন হয় না।

২) চোখের পাতার সাহায্যে চক্ষু লেন্সের মুখ যেকোনো সময়ের জন্য খোলা রাখা যায়।

৩) আপতিত আলোকের তীব্রতা ভেদে কর্নিয়ার ছিদ্র পথে আপনা আপনি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে প্রতিবিম্ব গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আলোক প্রবেশ করতে দেয়৷

৪) লেন্সের ফোকাস দূরত্ব এর সাথে যুক্ত পেশি বন্ধনীর সাহায্যে পরিবর্তন করা যায়।

৫) কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমার, চক্ষু লেন্স, ভিট্রিয়াস হিউমার একত্রে একটি অভিসারী লেন্সের মতো ক্রিয়া করে লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করে থাকে।

৬) আলোক সুবেদী অক্ষিপটে লক্ষবস্তুর বাস্তব, উল্টা ও খাটো প্রতিবিম্ব গঠিত হয় ।

নতুন শব্দ : আলোর প্রতিসরণ, পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন, সংকট কোণ

 

এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-

- একটি নির্দিষ্ট স্বচ্ছ মাধ্যমে আলো সরল রেখায় চলে কিন্তু অন্য মাধ্যমে প্রবেশের সাথে সাথেই মাধ্যমের ঘনত্ব অনুসারে এর দিক পরিবর্তন হয় ৷

লম্বভাবে আলো এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় এর গতিপথের কোনো দিক পরিবর্তন হয় না। 

আলোক রশ্মি যখন হালকা মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি অভিলম্বের দিকে সরে আসে। আলোক রশ্মি যখন ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন এটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়।

পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের সময় ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ অবশ্যই এর মাধ্যম দুটির সংকট কোণের
চেয়ে বড় হতে হবে।

মানব চক্ষুর কার্যপ্রণালি আলোক চিত্রগ্রাহী ক্যামেরার মতো।

Content added || updated By