একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

পৃথিবীর প্রাচীনতম ও সহজ প্রকৃতির ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে একমালিকানা ব্যবসায় পরিচিত । একক মালিক কম পুঁজি নিয়ে যেকোনো জায়গায় স্বাধীনভাবে নিজ সিদ্ধান্তে আইনানুগ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই এ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। এতে ঝুঁকির পরিমাণও অত্যন্ত কম। তাই ব্যবসা সংগঠনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমরা দেখি, ব্যবসায় শুরুর প্রাথমিক পর্যায় থেকেই একমালিকানা ব্যবসায় যাত্রা শুরু করে আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বেও জনপ্রিয়তার সাথে সফলভাবে টিকে আছে। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নতিতে একমালিকানা সংগঠন ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে পারছে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা জানতে পারব—

  • মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ধারণা ।
  • একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য।
  • একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব।
  • একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ।
  • বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি একমালিকানা ব্যবসায় টিকে থাকার কারণসমূহ ।

সূত্র: ক্যামব্রিয়ান পাবলিকেশন্স

Content added || updated By
ক. সমবায় সংগঠন
খ. একমালিকানা ব্যবসায়
গ. যৌথ মূলধনী ব্যবসায়
ঘ. অংশীদারি ব্যবসায়
ক. স্বল্প পুঁজি ও একক সামর্থের সীমাবদ্ধতার জন্য
খ. একক মুনাফা ভোগ করায়
গ. প্রত্যক্ষ সম্পর্কের জন্যে
ঘ. অনিশ্চিত স্থায়িত্বের জন্যে

সময়ের সিঁড়ি বেয়ে মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা পূরণের জন্য যুগে যুগে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ব্যবসায় সংগঠন। ব্যবসায়ের মালিকানা, প্রকৃতি, আয়তন, কার্যক্ষেত্র ইত্যাদি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে। নিম্নে মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায় সংগঠনের প্রকারভেদ দেখানো হলো—

একমালিকানা ব্যবসায়ের ধারণা (Concept of Sole Proprietorship Business)

সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসায় বলে। একক মালিকানায় পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এজন্য এটিকে সবচেয়ে প্রাচীনতম ব্যবসায় সংগঠন বলা হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে যখন কোনো ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে মূলধন যোগাড় করে কোনো ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করে এবং উক্ত ব্যবসায়ে অর্জিত সকল লাভ নিজে ভোগ করে বা ক্ষতি হলে নিজেই তা বহন করে, তখন তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে। একমালিকানা ব্যবসায় গঠন অত্যন্ত সহজ। যে কোনো ব্যক্তি নিজের উদ্যোগে স্বল্প অর্থ নিয়ে এ জাতীয় কারবার শুরু করতে পারেন এবং অধিক অর্থও বিনিয়োগ করতে পারেন। আইনের চোখে একমালিকানা ব্যবসায়ের গঠন ও পরিচালনায় তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। গ্রামে-গঞ্জে, হাট- বাজার বা রাস্তার পাশে কিংবা নিজ বাড়িতে যে কেউ ছোট-খাটো ব্যবসা শুরু করতে পারে। তবে শহরে বা পৌরসভা এলাকায় উদ্যোক্তাকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে ব্যবসা আরম্ভ করতে হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায় সংগঠন একমালিকানার ভিত্তিতে গঠিত। শুধু তাই নয় ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় ৮০% ব্যবসায় এক মালিকানাভিত্তিক। আমাদের দেশের সাধারণ মুদি দোকান, চায়ের দোকান, অধিকাংশ খুচরা দোকান একক মালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ।

অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারণা (Concept of Partnership Business)

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে মুনাফা বণ্টনের নিমিত্তে যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। ব্যবসায় জগতে একমালিকানা সবচেয়ে প্রাচীন ও জনপ্রিয় হলেও একক মালিকের মূলধনের স্বল্পতা, অসীম দায়, ব্যবসায়ের ক্ষুদ্র আওতা ইত্যাদি সীমাবদ্ধতার জন্য ব্যবসায়ের পরিধি আরো বৃদ্ধি ও ঝুঁকি কমিয়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসায় করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে অংশীদারি ব্যবসায়ে কিছু কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। বিশেষ করে মুনাফা বণ্টন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দায়িত্ব ও কর্ম বিভাজন, সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে অংশীদারি চুক্তিপত্র ও অংশীদারি আইন প্রণয়ন করতে হয়। বাংলাদেশের অংশীদারি ব্যবসায় ‘১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন' দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন হবে। তবে অংশীদারি ব্যবসায়টি যদি ব্যাংকিং ব্যবসায় হয় তখন সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ১০ এর বেশি হবে না ।

কোম্পানি সংগঠনের ধারণা (Concept of Company Organisation)

একমালিকানা ব্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে ব্যবসায়ের যে অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল কালক্রমে তা আর একমালিকানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। একমালিকানা ব্যবসায়ের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিশেষ করে মূলধনের স্বল্পতা ও একক পরিচালনা ও ক্ষুদ্র আয়তনের জন্য অংশীদারি ব্যবসায়ের উৎপত্তি হয়। কিন্তু অংশীদারি ব্যবসায়ও মূলধনের সীমাবদ্ধতা, আইনগত সীমাবদ্ধতা, স্থায়িত্বহীনতা ও অসীম দায়ের ভার থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এক সময় মানুষের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবসায়ের আওতা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলশ্রুতিতে আইনের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় অধিক মূলধন ও বৃহদায়তনের যৌথ মূলধনী ব্যবসায় যা কোম্পানি সংগঠন নামেও পরিচিত। কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সম্মিলিতভাবে পুঁজি সরবরাহ করে সীমাবদ্ধ দায়ের ভিত্তিতে যে ব্যবসায় গঠন করে তাকে কোম্পানি সংগঠন বা যৌথ মূলধনী কোম্পানি বলে ।

যৌথ মূলধনী ব্যবসায় আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট ও পরিচালিত হয়। সর্বপ্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ব্রিটেনে ১৮৪৪ সালে যা `The joint stock Company Act 1844' নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ১৮৫০ সালে। ১৯১৩ সালে ভারতীয় কোম্পানি আইন আবার নতুন করে পাস হয়। স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেক বছর যাবৎ ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইন চালু ছিল । কোম্পানি আইনের ব্যাপক সংষ্কার করে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে নতুন কোম্পানি আইন প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল কোম্পানি ব্যবসায় ১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যৌথভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোন ব্যবসায় গঠন করলে তাকে কোম্পানি সংগঠন বলে। এ ব্যবসা নিজ নাম ও সীলমোহর দ্বারা পরিচালিত এবং সদস্যদের থেকে ভিন্ন অস্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে ।

সমবায় সমিতির ধারণা (Concept of Co-operative Society)

সমবায়ের শাব্দিক অর্থ হলো সম্মিলিত উদ্যোগ বা প্রচেষ্টায় কাজ করা। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও চিন্তা থেকেই সমবায়ের উৎপত্তি। শিল্পবিপ্লব ও প্রযুক্তিনির্ভর বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠনের বিকাশের ফলে পূঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার ভিত যত মজবুত হতে থাকে, এর প্রভাবে সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যও দেখা দিতে থাকে। স্বল্পবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পেশাজীবী ও ব্যবসায়িরা আর্থিকভাবে দূরবস্থার সম্মুখীন হতে থাকে। পুঁজিবাদি সমাজের সৃষ্ট এ জাতীয় অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দূরবস্থা থেকে মুক্তির প্রয়াসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমবায় সংগঠন গড়ে উঠে। সর্বপ্রথম সমবায় আন্দোলনের সূচনা হয় পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও জাপানে। তবে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রপথিক সংগঠন হচ্ছে ১৮৪৪ সালে উত্তর ইংল্যান্ডের রচডেল নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত রচডেল সমবায় সমিতি (Rochdale Equitable Pioneers Society)। ২৮ জন তাঁত শ্রমিকের ২৮ স্টার্লিং পাউন্ড পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ সমবায় সমিতিকে বিশ্বের সর্বপ্রথম সমবায় ব্যবসায় হিসেবে গণ্য করা হয়। সমাজের শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত ও স্বল্পবিত্তের কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে সমধিকারের ভিত্তিতে নিজেদের আর্থিক উন্নতির জন্য যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে । মুনাফা অর্জন নয়, সদস্যদের কল্যাণসাধনই সমবায় সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য ।

রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ধারণা (Concept of the State Enterprise)

সাধারণ অর্থে সরকার কর্তৃক গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে । এরূপ ব্যবসায় রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আবার ব্যক্তিমালিকানাধীন যেকোনো ব্যবসায়কে রাষ্ট্রের প্রয়োজনের জাতীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ে নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক সম্পদসহ সকল সম্পদের সুসম বণ্টন ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এবং বিশেষ কিছু জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাছাড়া দেশরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র নির্মাণ শিল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার উদ্দেশ্যেও প্রতিষ্ঠা ও পরিচালিত হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় বেশ কিছু ব্যবসায় পরিচালিত হয়ে থাকে ।

ব্যবসায় জোটের ধারণা (Concept of Business Combination)

ব্যবসায় জোট মূলত কোম্পানি সংগঠনেরই ব্যাপকতর ও বর্ধিত রূপ। উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ধনি দেশসমূহের কোম্পানি মালিকগণ নিজেদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা হ্রাস, একচেটিয়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য সম্মিলিত হয়ে জোট গঠন করেন। ট্রাস্ট, কার্টেল, হোল্ডিং কোম্পানি, পুল প্রভৃতি এ ধরনের জোটের বিভিন্ন রূপ। জোট গঠনের ফলে সমাজে ধনি-দরিদ্রের পার্থক্য ব্যাপকতর হয় এবং শ্রেণি সংগ্রামের ধারণা দৃঢ়মূল হতে থাকে ।

যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়ের ধারণা (Concept of Joint Venture Business)

দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে কোনো ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করা হলে তাকে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায় বলে। উন্নয়নশীল ও ধনি দেশগুলোর উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে এরূপ ব্যবসায় বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এরূপ ব্যবসায়ের বিশেষ সুবিধা হলো, এতে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি পুঁজি ও প্রযুক্তির সহজ আগমন ঘটে, অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয় এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের সাহচর্যে দেশীয় উদ্যোক্তাগণ দক্ষতা অর্জন করতে পারে। ফলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হয় ।

 

Content added By

এক মালিকানা ব্যবসায়ের স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যান্য ব্যবসায় থেকে একে পৃথক করে রাখে। এক মালিকানা ব্যবসায় হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীনতম ব্যবসায়। একমালিকানা ব্যবসায়ে আইনগত তেমন ঝামেলা নেই এবং যে কেউ ইচ্ছে করলে স্বল্প পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করতে পারে।

নিম্নে একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করা হলো—

  • এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান গঠন করা খুবই সহজ ও সরল। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময়ে এ প্রকার কারবার গঠন করতে পারে । এরূপ কারবার স্থাপন করার জন্য সরকারি আইন ও নিয়মের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না।
  • এ জাতীয় ব্যবসায়ের মূলধন মালিক নিজেই সরবরাহ করে। সে নিজস্ব সঞ্চয় হতে মূলধনের সংস্থান করতে পারে অথবা প্রয়োজন হলে নিজের দায়িত্বে অপরের নিকট হতে ঋণ করে মূলধনের অভাব পূরণ করতে পারে।
  • ব্যবসায়ের সকল ঝুঁকি মালিক একাই বহন করে। মালিকই ব্যবসায়ের প্রকৃত অধিকারী। সুতরাং তাকেই ব্যবসায়ের সমস্ত ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বহন করতে হয় ।
  • ব্যবসায় পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব হলো মালিকের। অবশ্য মালিক স্বয়ং ব্যবস্থাপনার নীতি ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের প্রত্যক্ষ পরিচালনার দায়িত্ব কর্মচারীর উপর ছেড়ে দিতে পারে।
  • ব্যবসায়ের আয়তন ক্ষুদ্র হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাউকে ডাকতে হয় না। মালিক যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে ।
  • হিসাব তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। মালিক তার নিজের মতো করে হিসাব সংরক্ষণ করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রাখা হয় ।
  • এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের একক কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়ায় যেকোনো বিষয়ে সে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এজন্য এ ধরনের ব্যবসায়ে অধিকতর নমনীয়তা লক্ষ্য করা যায় ।
  • একমালিকানা ব্যবসায়ে মালিক নিজেই ব্যবসায় পরিচালনা করে বিধায় ক্রেতা, সরবরাহকারি, কর্মচারী ইত্যাদি পক্ষের সাথে তার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাই প্রত্যক্ষ সম্পর্ক যেখানে ব্যবসায়িক স্বার্থে অত্যাবশ্যক, সেখানে এ ধরনের ব্যবসায়ই সর্বাপেক্ষা উত্তম ।
  • এরূপ ব্যবসায়ের কোনো আইনগত পৃথক সত্তা নেই। কারবার হতে মালিককে পৃথক করে দেখা হয় না।
  • এরূপ ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। মালিক ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় ব্যবসায় গুটিয়ে ফেলতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে যতদিন খুশি ততদিন পর্যন্ত সে কারবার চালু রাখতে পারে।
Content added By

বর্তমানে গতিশীল বিশ্বের জটিল অর্থনৈতিক সমাজে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আগের দিনে আত্মনির্ভরশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষ যখন শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস উৎপাদন করে তাদের প্রয়োজন মিটাতো তখন একমালিকানা ব্যবসায়ের ততটা গুরুত্ব ছিল না। কিন্ত কালের বিবর্তনে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি, বৃহদায়তন উৎপাদন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি করণে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিন্মে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো: 

১। সহজ গঠন (Easy Formation): একমালিকানা ব্যবসায়ের গঠন প্রণালি অত্যন্ত সহজ । বৃহদায়তন ব্যবসায়ের গঠন ও পরিচালনা পদ্ধতি খুবই জটিল এবং আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। এ কারণে এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সবাই পছন্দ করে।

২। কম ঝুঁকি (Small risk): একমালিকানা ব্যবসায় দায় অসীম হলেও ঝুঁকির পরিমাণ কম । সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে ঝুঁকিকে সাফল্যের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করা যায় ।

৩। মূলধনের স্বল্পতা (Limited capital): বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র। তাদের সঞ্চয় ও মূলধনের পরিমাণ খুবই কম। তাই একমালিকানা ব্যবসায় তাদের পছন্দের তালিকায় অগ্রাধিকার পায় ।

৪। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি (Increase of saving and investments): শহর ও গ্রামগঞ্জে ব্যাপক জনগোষ্ঠী এরূপ ব্যবসায় গড়ে তোলার মানসে তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একত্রিত করে এ ধরনের ব্যবসায় গঠন করে থাকে। যা দেশের জন্য মূলধন গঠন এবং বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

৫। জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Raising standard of living): জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়ে থাকে। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য সরবরাহ করে এ ব্যবসায় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

৬। অনুন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা (Undeveloped economy): বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা মোটেই উন্নত নয়। অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য প্রধানত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করা হয়। বৃহদায়তন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি ও প্রযুক্তির ঘাটতি থাকায় ক্ষুদ্ৰায়তনের একমালিকানা ব্যবসায়ই এদেশে জনপ্রিয় ।

৭। ব্যাপক সেবা প্রদান (Rendering of greater service): স্বল্প মূলধন নিয়ে অতি সহজে এ ব্যবসায় শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র গড়ে ওঠে। তাই প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাসামগ্রী সহজে ভোক্তা সাধারণের হাতে তুলে দিয়ে এ ব্যবসায় ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করতে পারে।

৮। কর্মসংস্থান (Employment): এককভাবে প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কম সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হলেও সমষ্টিগতভাবে অধিক সংখ্যক লোকের বেকার সমস্যা দূরীকরণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

৯। সম্পদের সুসম বণ্টন (Proper distribution of wealth): একমালিকানা ব্যবসায় দেশের যেকোনো স্থানে গড়ে উঠতে পারে বলে সম্পদের সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

১০। জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি (Increase of national income and wealth): সম্পদের সুসম বণ্টনের ফলে ব্যক্তিগত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। পরিশেষে বলা যায় যে, একমালিকানা ব্যবসায়ে মানুষের রুচি, পছন্দ, ইচ্ছা ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেয়া হয় বলে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি এটি আজও টিকে আছে । তাই একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম ।

Content added By

একমালিকানা ব্যবসায়ের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা আছে যে কারণে এ জাতীয় ব্যবসায় সকলের নিকট জনপ্রিয়। যেসব ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় অধিক উপযোগী নিয়ে সেই ক্ষেত্রগুলো আলোচনা করা হলো—

  • স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ (Investment of small capital):
চিত্র: স্বল্পপুঁজির ব্যবসা ।

কিছু কিছু কারবার আছে যেগুলোর গঠন ও পরিচালনার জন্য খুব সামান্য পুঁজি হলেই চলে। এরূপ কারবার একমালিকানা ব্যবসায়ের জন্য উপযুক্ত। যেমন: মুদিখানা, পান-বিড়ির দোকান, চায়ের দোকান, সেলুন, ফেরিওয়ালা ইত্যাদি।

  • পরিবর্তনশীল চাহিদার পণ্যদ্রব্য (Goods of flexible demand): যেসব পণ্যের রুচি ও চাহিদা নিয়মিত পরিবর্তনশীল সেক্ষেত্রে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য যোগানের জন্য একমালিকানা ব্যবসায়ই প্রযোজ্য। যেমন- প্রসাধনী সামগ্রী, জুয়েলারি, সৌখিন পণ্য ইত্যাদি ।
  • ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায় (Small Scale Business) : সব ধরনের ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠান একমালিকানা ব্যবসায়ের অধীনে পরিচালিত হয়। যেমন—ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, খুচরা কারবার ইত্যাদি। 
  • পচনশীল পণ্য (Perishable Goods) : পচনশীল ব্যবসায় সাধারণত একমালিকানার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। এ ধরনের পণ্যদ্রব্য দ্রুত বাজারজাতকরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন—মাছ, মাংস, দুধ, ফলমূল, শাক-সবজি, ডিম ইত্যাদি।
  • পেশাদারি ব্যবসায় (Professional business) :
চিত্র: পেশাদারি ব্যবসায়ী


পেশাদারি ব্যবসায়সমূহ প্রায়ই একমালিকানার ভিত্তিতে গঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে । যেমন—ডাক্তারি, আইন ব্যবসায়, প্রতিনিধি ব্যবসায়, চার্টার্ড একাউন্টিং ফার্ম ইত্যাদি। 

  • প্রত্যক্ষ সেবাদান (Direct services): যেসব ব্যবসা থেকে ভোক্তারা প্রত্যক্ষ সেবা চায় সেগুলো একক মালিকানার ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়া উত্তম। যেমন—কনফেকশনারি ব্যবসায়, চুল কাটা সেলুন, লন্ড্রি প্রভৃতি কারবার।
  • স্থানীয় সীমিত চাহিদা (Local limited demand) : যেসব পণ্যের চাহিদা স্থানীয়ভাবে সীমাবদ্ধ সেগুলোর উৎপাদন ও বণ্টনের জন্য একমালিকানা ব্যবসায় সর্বোত্তম ।
  • কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় (Business of agricultural goods): কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একমালিকানা ব্যবসায় হয়। যেমন—ধানের ব্যবসায়, পাটের ব্যবসায় ইত্যাদি । 
  • ভোগ্যপণ্যের দোকান (Consumer goods shop): সব ধরনের নিত্য ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দোকান একমালিকানা ব্যবসায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। যেমন-মনিহারি দোকান, মুদি দোকান ইত্যাদি ।
  • পরিবহন ও জ্বালানি ব্যবসায় (Business of transportation and fuel): পণ্যদ্রব্য ও যাত্রী সাধারণ পরিবহনে নিযুক্ত কারবার প্রতিষ্ঠানসমূহ একমালিকানার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন—বাস, ট্রাক, লঞ্চ, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি ।
চিত্র: পরিবহন ব্যবসায় ।
  • প্রকাশনা ব্যবসায় (Publication business): প্রকাশনা ব্যবসায় যেমন—খবরের কাগজ, বইপত্র, ম্যাগাজিন, সাপ্তাহিক, সাময়িকী ইত্যাদি। খুচরা ব্যবসায় সাধারণত একমালিকানা কারবারের ভিত্তিতেই গঠিত হয় ।
  • ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন (Show of individual skill): যেসব ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সার্থকতা অর্জন করতে হয় সেগুলো একমালিকানা কারবারের অধীনে পরিচালিত হওয়া উচিত। যেমন—শিল্পকর্ম, আলোকচিত্র ইত্যাদি ব্যবসায় ।
  • স্বাধীন জীবিকা (Free occupation): স্বল্প ঝুঁকিতে স্বাধীনভাবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত কারবার একমালিকানার ভিত্তিতে সংগঠিত হয়। যেমন—কামার, কুমার, তাঁতী ইত্যাদি ।
  • স্বল্প ঝুঁকির ব্যবসায় (Business of minimum risk): এমন কিছু ব্যবসায় আছে যেখানে ঝুঁকির পরিমাণ একেবারেই কম। কম আয়ের একক মালিক এ ধরনের ব্যবসায়কে বেশি পছন্দ করে। যেমন—ওষুধের দোকান।

পরিশেষে বলা যায়, স্বল্পপুঁজি, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সহজ স্থানান্তর ইত্যাদি কারণে একমালিকানা ব্যবসা অনেক ক্ষেত্রে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের তুলনায় অধিক উপযোগী। এ কারণে একমালিকানা ব্যবসায় উপরিউক্ত ক্ষেত্রসমূহে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে টিকে আছে ।

Content added By

বৃহদায়তন উৎপাদন ও লাভ অর্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা ভোগ করলেও ক্ষুদ্রায়তন একমালিকানা ব্যবসায় বিশেষ কতকগুলো ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছে। এ কারণে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি একমালিকানা ব্যবসায় আজও দক্ষতার সাথে টিকে আছে। নিন্মে এ কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—

১। গঠন সুবিধা (Easy of formation): একমালিকানা ব্যবসায় গঠন করতে কোনোরূপ আইনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। যেকোনো লোক অল্প মূলধনে এরূপ ব্যবসায় গঠন করতে পারে । যেকোনো লোক অল্প মূলধনে এরূপ ব্যবসায় গঠন করতে পারে। কিন্তু বৃহদায়তন একমালিকানা প্রতিষ্ঠান গঠন করা কষ্টসাধ্য বলে অনেক লোক বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পক্ষপাতি নয়। এ কারণেই বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি একমালিকানা ব্যবসায় টিকে আছে ।

২। বিশেষ ক্ষেত্রের সুবিধা (Suitability of special field): বৃহাদায়তন ও ক্ষুদ্রায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্য ক্ষেত্রের প্রকৃতি ভিন্ন। কিছু ব্যবসা আছে যাতে বৃহদায়তন ব্যবসায় নিষ্প্রয়োজন যেমন-পান বিড়ির দোকান, মুদির দোকান, সেলুন প্রভৃতি ।

৩। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ (Opportunity to act independently): মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের চাকরি করতে পছন্দ করে না । তারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে চায় । এরূপ মনোভাব একমালিকানা ব্যবসায় প্রতিফলিত হতে দেখা যায় ।

৪। অবস্থান (Location): বৃহদায়তন ব্যবসায় সাধাণত শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপিত হয় । গ্রামের আনাচে- কানাচে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রায়তন একমালিকানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্ছনীয়।

৫। আস্থা ও বিশ্বাস (Confidence and trust): এ ধরনের ব্যবসায়ের মালিক একজন মাত্র ব্যক্তি। তাই বৃহদায়তন ব্যবসায়ের মতো অন্যের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রয়োজন পড়ে না । 

৬। স্বল্প ব্যয় (Economy of cost ) : একমালিকানা ব্যবসায় সাধারণত মালিক নিজে বা পরিবারের লোকজন নিয়ে পরিচালনা করে থাকেন। ফলে ব্যবসায়ের সর্বস্তরে ব্যয় সংকোচন সম্ভব হয়। কিন্তু বৃহদায়তন ব্যবসায় এরূপ ব্যয় সংকোচন সম্ভব নয়। ফলে একমালিকানা ব্যবসায় বৃহদায়তন ব্যবসায়ের পাশাপাশি সাফল্যজনকভাবে টিকে থাকে ।

৭। সীমিত উৎপাদন ও চাহিদাসম্পন্ন দ্রব্যের জন্য উপযোগী (Suitable for products having limited production and demand): যেসব পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা সীমিত এবং স্থানীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ সেসব পণ্যের উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় অধিক উপযোগী।

৮। সহজ পরিচালনা (Easy administration): সীমিত আয়তন ও সীমিত পণ্যের ব্যবসায় হওয়ায় একমালিকানা ব্যবসায় পরিচালনা করা সহজ হয়। কেননা বৃহদায়তন ব্যবসায়ের মতো পরিচালনাগত আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না।

৯। স্বল্প ঝুঁকি (Limited risk): অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় বলে বৃহদায়তন ব্যবসায়ের তুলনায় ঝুঁকিও কম থাকে ।

১০। চাহিদার নমনীয়তা (Flexibility of demand): বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতার চাহিদা ও রুচি দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। এরূপ পরিবর্তিত রুচির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বৃহদায়তন ব্যবসায় অপেক্ষা ক্ষুদ্রায়তন একমালিকানা ব্যবসায় অধিক উপযোগী । 

পরিশেষে বলা যায়, বৃহদায়তন উৎপাদন ও বণ্টনের যুগেও একমালিকানা ব্যবসায় বাণিজ্য কার্যকর ভুমিকা রাখছে। বৃহদায়তন ব্যবসায়ে প্রতিযোগী না হয়ে তার সহযোগী হিসেবে একমালিকানা ব্যবসায়ের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Content added By