একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বনে গাছ বড় হয়, সেবা যত্নের তেমন প্রয়োজন হয় না। সাগরে মাছ পাওয়া যায়, খাদ্য-খানা দেয়া ও যত্ন আবশ্যক হয় না। কিন্তু যখন বনায়ন করা হয়, মাছ চাষ করা হয় তখন অনেক সেবা- যত্নের প্রয়োজন পড়ে । ফরেস্ট অফিসার লাগে, ফিশারি অফিসার লাগে এবং আরও কত কিছুর প্রয়োজন পড়ে- যার সহযোগিতা ব্যতিত এ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় না। তাই আজকের দিনে কার্যকর সহায়ক সেবা ছাড়া কোনো জিনিসই সঠিকভাবে গড়ে তোলা, লালন-পালন ও পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আরও বেশি প্রযোজ্য। একটা দেশে ব্যবসায় কতটা স্বচ্ছন্দ্বের সাথে গড়ে উঠবে, পরিচালিত হবে-তার সাথে এই সহায়ক সেবা সম্পর্কযুক্ত। ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের আগামী দিনে ব্যবসায় গড়তে ও ব্যবসায় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে এই সহায়ক সেবাগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং কী, কোথায়, কিভাবে ও কতটা পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জ্ঞান লাভ অপরিহার্য ।

চিত্র : ব্যবসায়ে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক ভবন

এ অধ্যায় পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা (শিখন ফল)

১. সহায়ক সেবার ধারণা ও প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করতে পারবে

২. বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে

৩. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ব্যাখ্যাকরতে পারবে

৪. এসএমই ফাউন্ডেশন (SME) থেকে প্রাপ্ত সহায়তাব্যাখ্যা করতে পারবে

৫. বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ব্যাখ্যা করতেপারবে

৬. শিল্প ও বণিক সমিতি এবং বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে

৭. রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত সহায়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে

৮. ব্যবসায় সহায়তা দানকারী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করতে পারবে

Content added By

স্বপন ইন্টারমিডিয়েট পাস করে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। কী করবে যখন ভাবছিল তখন তার এক বড় ভাই তাকে পরামর্শ দিল যুবক ও যুব মহিলাদের সরকার নানান বিষয়ে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়। সে হাঁস-মুরগী পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নিলো এবং বাড়ির পাশের ছোট জায়গায় খামার গড়ার কথা ভাবলো । কিন্তু টাকার প্রয়োজন। আত্মকর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণ দিল। ফার্ম গড়ার পর মুরগীর নিয়মিত টীকা দেয়ার জন্য সে স্থানীয় একটা এনজিওএর সাথে যোগাযোগ করে তারও ব্যবস্থা করলো। এখন জনাব স্বপনের ফার্ম ভালই চলছে । এক্ষেত্রে যুব অধিদপ্তর, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও এনজিও প্রতিষ্ঠান সবাই তার ব্যবসায়ে সহায়ক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। যাদের সহযোগিতা বাতিরেকে স্বপনের পক্ষে এই ফার্ম গড়ে তোলা ও ভালোভাবে চালানো সম্ভব ছিল না।

একটা ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যে সেবার প্রয়োজন পড়ে তাকেই ব্যবসায়ের সহায়ক সেবা বলে। ব্যবসায়ের সাথে ঝুঁকি জড়িত। তদুপরি ব্যবসায় শিখতে হয়, বুঝতে হয়। এখানে নানান ধরনের নিয়ম ও বাধ্য-বাধ্যকতা থাকে। তাই কাউকে ব্যবসায়ে নামতে এবং এক্ষেত্রে সফলতা পেতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা বা সেবার প্রয়োজন পড়ে। এরূপ সেবা প্রাপ্তি যত সহজ হয় ততই নতুন নতুন উদ্যোক্তা এসে ব্যবসায়ে নামে। পুরনো ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যায়। এতে দেশের সামগ্রিক ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত হয় ।

চীনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প গঠনে সহযোগিতা করার জন্য সরকারি বিভিন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রতিটা এলাকায় বা অঞ্চলে কাজ করে। কেউ শিল্প গড়তে চাইলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তার জন্য কোন ধরনের ব্যবসায়, কোন এলাকায় করা উচিত হবে এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়। অতঃপর প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে তা সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিলে তারা শিল্প এলাকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি বরাদ্দ, লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি কাজ করে দেয়। অতঃপর গ্যাস, পানি, বিদ্যুতসহ ইউটিলিটি সার্ভিসের লোকজন এসে অনেকটা স্ব-উদ্যোগেই এগুলোর ব্যবস্থা করে। ব্যাংক ঋণ দেয়। দ্রুত সময়ে শিল্প তার কাজ শুরু করতে পারে। এ ব্যবস্থা চীনকে দ্রুত অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত করতে সহায়তা করেছে।

Content added By

বর্তমান বিশ্বে শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতিই জাতীয় উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । পৃথিবীর যেই দেশ এক্ষেত্রে এগিয়ে তারাই প্রকৃতপক্ষে চালকের আসনে আসীন। তাই প্রতিটা দেশ ব্যবসায় ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে । এজন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানান ধরনের ব্যবসায় সহায়ক সেবা প্রদত্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেবা ও তা প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিম্নে ধারণা দেয়া হলোঃ

সেবার ধরনবাংলাদেশে এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

১. উদ্দীপনামূলক সেবা (Stimulatory Service):
একজন সম্ভাব্য উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় গঠনে আগ্রহী করতে ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে যে সকল সেবা সুবিধার প্রয়োজন হয় তাকে উদ্দীপনামূলক সেবা বলে। একজন ব্যক্তি তার লব্ধ জ্ঞান ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় কী করবে । এ নিয়ে ভাবে। কিন্তু সেই ভাবনা সংঘবদ্ধ হতে সময় নেয়। কী করলে কী | হবে, তার বাস্তবতায় সেটা কতটা করা সম্ভব-এগুলো তার মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং এক ধরনের ভয় ও সংকোচের সৃষ্টি করে। সে সময়ে তাকে ব্যবসায় গঠনে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে, সাহস দিয়ে ও করণীয় নির্দেশ করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে ধরনের সেবা দেয়া হয় তা-ই উদ্দীপনামূলক সেবা ।

যুব অধিদপ্তর, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা অধিদপ্তর, মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা সংস্থা, এনজিও ইত্যাদি ।

২. সমর্থনমূলক সেবা (Supporting service):
একজন উদ্যোক্তা ব্যবসায় গঠনে আগ্রহী হওয়ার পর বাস্তবে তা গঠনে যে ধরনের সেবা সহায়তার প্রয়োজন হয় তাকে সমর্থনমূলক সেবা বলে। ব্যবসায় গঠন করতে চাইলেই তা করা যাবে, নতুন একজন ব্যক্তির পক্ষে তা ততটা সহজসাধ্য নয়। প্রথমেই তার পুঁজির প্রয়োজন পড়ে। শিল্প গড়তে বিভিন্ন সংস্থা থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। ঋণ নেয়ার জন্য প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। অবকাঠামোগত সুবিধা পেতে বিদ্যুত, গ্যাস, পানি ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। দোকান করতে চাইলেও পুঁজি ও নানাবিধ সহযোগিতার দরকার হয়। যা সমর্থনমূলক সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে। শুধুমাত্র শুরুতেই নয় ব্যবসায়ের বিভিন্ন পর্যায়েও তার প্রয়োজন হয়ে থাকে ।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (NGO), বাণিজ্যিক, ব্যাংক, সরকারি লাইসেঞ্জিং কর্তৃপক্ষ, সরকারি । সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ( রাস্তা পানি, বিদ্যুত, গ্যাস) ইত্যাদি ।

৩. সংরক্ষণমূলক সেবা (Sustaining service):
ব্যবসায় পরিচালনায় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরে রাখার জন্য যে ধরনের সেবার প্রয়োজন হয় তাকে সংরক্ষণমূলক সেবা বলে। একজন | ব্যবসায়ী যখন সামনে এগোয় তখন তার উদ্যোগকে সুরক্ষা দিতে, তার প্রচেষ্টাকে আরও স্বার্থক করতে নানাবিধ সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। ব্যবসায় ভালো করলে প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের নাম ব্রান্ডিং করতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে। একজন লেখক, প্রশাসক, গায়ক ইত্যাদি | সৃষ্টিধর্মী কাজে কপিরাইট আইন নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। স্থানীয় বণিক সভার সহযোগিতার দরকার হয়। কৃষি ফার্ম, মৎস ফার্ম ইত্যাদি গড়তে সরকারি বিভিন্ন বিভাগ বা সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। যা সংরক্ষণমূলক সেবা হিসবে গণ্য। কর অবকাশ, ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি এ ধরনেরই সেবা ।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, BSTI, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ বাণিজ্য কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি, বাংলাদেশ তত বোর্ড, বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ইত্যাদি ।

 

Content added By

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী কাল থেকে যেই সরকারি সংস্থা এই ভূখণ্ডে বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ায় সহায়তা করতে শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বৈষয়িক ও সমর্থনমূলক সহায়তা প্রদান করে চলেছে তাকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বলে। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত । বিসিকের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় শিল্প সহায়ক কেন্দ্র, শিল্প নগরী, নৈপুণ্য বিকাশ কেন্দ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও নকশা কেন্দ্রের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

চিত্র : বিসিক শিল্প নগরীর একটা বজ্রকলে কাপড় তৈরি করছেন এক মহিলা কর্মী

২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত জেলা শহরের কাছে বিসিেিকর ৭৪টি শিল্প নগরী রয়েছে। যাতে শিল্প প্লটের মোট সংখ্যা ৯,৭৮৫টি। উক্ত সময় পর্যন্ত ৫,৬৯৮টি শিল্প ইউনিটের বিপক্ষে পুটগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৪,২৭৮টি শিল্প ইউনিট উক্ত সময়ে উৎপাদনরত ছিল। কর্মরত শিল্প ইউনিটে এ সময়ে কর্মরত জনশক্তির সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ। বিসিক উপকূলীয় এলাকায় লবণ চাষীদের উৎপাদন কাজেও সহায়তা করছে। সাভার ও কেরাণীগঞ্জে দু'টি চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলার কাজ এগুচ্ছে। মুন্সীগঞ্জে ওষুধ শিল্প পার্ক এবং সিরাজগঞ্জে বিসিক শিল্প পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যাবলি নিম্নরূপ :

  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ ও উৎসাহ দান;
  • এরূপ শিল্পের জন্য অবকাঠামো গঠন, সংস্কার ও অবকাঠামোগত সুবিধার রক্ষণাবেক্ষণ;
  • এরূপ শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ;
  • নতুন নতুন প্রকল্প নির্বাচন, মূল্যায়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ;
  • প্রতিষ্ঠিত শিল্পসমূহের কাঁচামাল ও ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা দান; 
  • এ সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত মান উন্নয়নে সহায়তা দান;
  • এ সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত দ্রব্যের বিপণনে সহায়তা দান; 
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের রেজিস্ট্রেশন প্রদান;
  • এরূপ শিল্পের ব্যবস্থাপনার ও জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দান এবং
  • সরকার প্রদত্ত ও ঋণকৃত অর্থ দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজে লাগানো ।
Content added By

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যেই ব্যাংক স্বল্প সুদে বা লাভে আমানত সংগ্রহ, ঋণদান ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা সুবিধা প্রদান করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। এই ব্যাংক স্বল্প মেয়াদি ঋণের ব্যবসায়ী। দেশের ব্যবসায় খাতে ঋণ সহায়তা দানে এই ব্যাংক অনন্য প্রতিষ্ঠান । বাংলাদেশে বিশেষায়িত ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় খাতে ঋণ দিলেও তাদের কার্যক্রম সীমিত। যেখানে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সর্বত্র শাখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব মানুষকে আর্থিক সেবা দিয়ে চলেছে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এরূপ ব্যাংকের সহায়তাসমূহ নিম্নরূপ :

  • ঋণদান;
  • SME ঋণ বিতরণ ;
  • ব্যাংকিং সেবা সহায়তা প্রদান;
  • স্বচ্ছলতার সনদ প্রদান;
  • প্রত্যয়পত্র খোলার সুযোগ;
  • শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয়ে সহায়তা ইত্যাদি ।

দেশের ছয়টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক এর শাখা সংখ্যা ২০১৫ এর ডিসেম্বরে ছিল ৩,৬৯০টি এবং উক্ত সময়ে ৩৯টি বেসরকারি দেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক এর মোট শাখা সংখ্যা ছিল ৪২২৭টি। উল্লেখ্য, এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ৫৬টি যার মধ্যে ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক; বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা ছিল ১,৪০৬টি এবং ৯টি বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ছিল ৭৫টি। এতে দেখা যায় ব্যবসায়ে সহায়তা দানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাসমূহের কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত, সংহত এবং কার্যকর।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে SME (Small) & Medium Enterprise) লোন চালু করেছে। যা সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে কার্যত বাস্তবায়িত হচ্ছে । বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাসমূহ তাদের বিভিন্ন শাখা এবং প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বা ঘোষিত এস.এম.ই শাখার মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

উল্লেখ্য ২০১৪-২০১৫ সালে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ মিলে ৭,০৯,০২৪টি এসএমই-এর অনুকূলে সর্বমোট ১,১০,২৮৭.৯৩ কোটি টাকা এসএমই ঋণ বিতরণ করেছে। অন্যদিকে ৯৩,৯৮৭টি, নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সর্বমোট ৩,৯৬৭.৯২ কোটি টাকার এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যার অংশবিশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন করেছে।

Content added By

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠাসমূহকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সহায়তায় সরকার বিশেষ যে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে তাই এসএমই ফাউন্ডেশন নামে পরিচিতি । SMES বলতে Small and Medium Enterprises বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহকে বুঝায় । ২০০৬ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে অমুনাফাভোগী (Non-profit) প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। যা ইতোমধ্যেই দেশের ছোট ও মাঝারি শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানসমূহকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে এক নজীর সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র ঋণ প্রদানই নয় উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দান, সমর্থনমূলক বিভিন্ন সহায়তা প্রদান ও নারী উদ্যোক্তাদেরকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠান অনন্য ভূমিকা রাখছে।

ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৩১ থেকে ১২০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও কারখানা বিল্ডিং বাদে ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা তাকেই ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান বলে । অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে ১২১ থেকে ৩০০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও কারখানা বিল্ডিং বাদে ১৫ কোটি টাকার অধিক থেকে ৩০ কোটি টাকা তাকে মাঝারি প্রতিষ্ঠান বলা হয়ে থাকে। সেবা ও অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বেলায় যেখানে ১০ থেকে ৫০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও সংশ্লিষ্ট দালান বাদে ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা তাকে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান এবং যেই প্রতিষ্ঠানে ৫১ থেকে ১২০ জন কর্মী কাজ করে অথবা মূলধনের পরিমাণ ভূমি ও দালান বাদে ২ কোটির অধিক থেকে ১৫ কোটি টাকা তাকে মাঝারি প্রতিষ্ঠান বলে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক এক জরীপে দেখা গেছে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯০%ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত । দেশের সমগ্র শিল্পে নিয়োজিত জনশক্তির ৯০% ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের আওতাধীন। দেশের সমগ্র জনশক্তির ২৫% এ খাতের সাথে জড়িত। SME ফাউন্ডেশন করার পর এ খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় পুনঃঅর্থায়ন করায় দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিতে যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে ।

চিত্র: ঢাকার পান্থপথ এলাকায় SME ফাউন্ডেশনের কার্যালয়

SME ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক এসএমই খাতে বিতরিত ঋণের পরিমাণ ছিল ১,১০,২৮৭.৯৩ কোটি টাকা। এ সময়ে সর্বমোট ৭,০৯,০২৪টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। উল্লেখ্য SME ঋণ বিতরণে ১৫% ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। একই সময়কালে ৯৩,৯৮৭টি এসএমই নারী উদ্যোক্তার বিপরীতে ৩,৯৬৭.৯২ কোটি টাকা ঋণ প্রদত্ত হয়। এসএমই ঋণের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ৫০ হাজার টাকা। প্রদত্ত ঋণ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য নিম্নে প্রদত্ত হলো:

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে যে তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন করা হয়অর্থায়নকৃত এন্টারপ্রাইজের সংখ্যা (খাতভিত্তিক) বিভিন্ন মেয়াদি মোট ঋণ (কোটি টাকা)
শিল্পবাণিজ্যসেবামোট
ক. বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল৯,৫০২১৩,৮০৩৩,৭৫২২৭,০৫৭২,৬৩৯.৫৯
খ. আই. ডি.এ. তহবিল (বিশ্ব ব্যাংকের) ১,৩৬৮১,৩০৬৪৮৬৩,১৬০৩১২.৬১
গ. এডিবি তহবিল ১ ও ২ (এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের)৪,৫৬৫৯,৫৩১২,৮১৩১৬,৯০৯১,০৮১.৮৯
ঘ. জাইকা তহবিল৩৭৯০৯১২৫৫১৩৩৮৯.৬২
মোট১৫,৮১৪২৪,৬৪৯৭,০৭৬৪৭,৫৩৯৪,৪২৩.৭১

ব্যবসায় প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী এসএমই লোনের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা । ঋণের মেয়াদ প্রকল্প অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তবে তা চলতি মূলধনের ক্ষেত্রে ১ বছর এবং মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি খাতে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত মঞ্জুর করা হয়ে থাকে । এরূপ ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের যে সকল যোগ্যতা বিবেচনা করা হয় তা হলো-

  • ঋণ প্রত্যাশী উদ্যোক্তার কমপক্ষে দু'বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়;
  • উদ্যোক্তাকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হয়; 
  • উদ্যোক্তার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হয়;
  • ঋণ প্রত্যাশীকে সুস্থ, শিক্ষিত ও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিশ্রুতিশীল হতে হয়;
  • ঋণ খেলাপী, দেউলিয়া, উম্মাদ ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি এরূপ ঋণের আবেদন করতে পারে না,
  • মহিলা উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয় এবং ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জামানতে প্রদান করা হয়ে থাকে ইত্যাদি ।
Content added || updated By

সমাজের কমবিত্তসম্পন্ন, অসহায় ও পশ্চাদপদ শ্রেণির মানুষকে আর্থিক, বৈষয়িক, শিক্ষাগত, স্বাস্থ্যগত আইনগত ইত্যাদি নানান বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ সারাবিশ্বে এনজিও নামে পরিচিত । উল্লিখিত শ্রেণির মানুষকে সংঘবদ্ধ করে তাদের উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে উদ্যোগী, প্রত্যয়ী ও দক্ষ করে গড়ে তোলাও এরূপ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। দেশ ও বিদেশ থেকে দান, অনুদান ও ঋণ সংগ্রহ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিদেশী সংস্থা বা সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে এরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থসংস্থান করে। প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণদান, পরামর্শ প্রদান, প্রশিক্ষণদানসহ নানান সহায়তা দিয়ে এ সকল প্রতিষ্ঠান উদ্দীপনামূলক ও সমর্থনমূলক সেবা সহায়তা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে এনজিও ব্যুরোর অধীনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল ২,২০৯টি। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) প্রতিষ্ঠা করেছে। যার মাধ্যমে জুন ২০১৩ পর্যন্ত ৭১৯ প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সনদ প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে ব্রাক, আশা, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, কারিতাস, টিএমএসএস, শক্তি, ব্যুরো বাংলাদেশ, এসএসএস ইত্যাদি নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কোম্পানি আইনের অধীনে অলাভজনক সংস্থা (Non- profit Organization) হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দেশের প্রধান কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

চিত্র : NGO থেকে ঋণ নিয়ে সফল হয়েছেন এমন একজন নারী উদ্যোক্তা

ব্রাক / BRAC / Bangladesh Rural Advancement Committee

BRAC বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এনজিও প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে জনাব ফজলে হোসেন আবেদের নেতৃত্বে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু । দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ঋণদান কর্মসূচি ছাড়াও এ সংস্থা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে । বাংলাদেশের সকল জেলায় এ প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি বিস্তৃত। ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত সংস্থাটির মোট ক্রমপুঞ্জিভূত ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১,৬৬,০৯৯.২৬ কোটি ও ১,০৪,৮৮২.২৩ কোটি টাকা। বিতরিত ঋণ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিল ৫৩,৩৭,৯৫১ জন। যার মধ্যে মহিলা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৬,৭১,০৪৪ জন। প্রতিষ্ঠানটি প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নে যে সকল ক্ষেত্রে ঋণ দেয় তার মধ্যে কাপড় বুনন, হাঁস-মুরগী পালন, আসবাবপত্র তৈরি, তৈল উৎপাদন, গুড়, দড়ি, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানে ইচ্ছুক যুবক ও যুব মহিলাদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে । প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এ প্রতিষ্ঠান পরামর্শক সুবিধা প্রদান করে। আধুনিক ডিজাইন ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে গ্রামীণ শিল্পজাত পণ্যের মান উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প; যেমন- হস্তজাতশিল্প সামগ্রী, সিল্ক, জামদানি, নকশী কাঁথা ইত্যাদির উন্নয়নেও ব্রাক কাজ করছে। ব্রাকের নিজস্ব ডেইরি ফার্মে উৎপাদিত আড়ং দুধ বাজারজাত করা হয়। বড় শহরগুলোতে ব্রাকের নিজস্ব বিপণন কেন্দ্র 'আড়ং' সবার নিকট সু পরিচিত।

আশা / ASA

বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯৭৮ সালে আশা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ১৯৯২ সালে বিশেষায়িত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে। আশার উদ্ভাবনমূলক স্বল্প ব্যয় সাপেক্ষ ও টেকসই ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি মডেল হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। উল্লেখ্য, গ্রামীণ ব্যাংক অনুমোদিত ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান; এনজিও নয়। তাদের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি অত্যন্ত প্রসারিত। তবে বাংলাদেশে যত এনজিও কাজ করছে আশা ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে অত্যন্ত সফল প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর ক্রমপুঞ্জিভূত ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ১,০২,৯০৫.০০ কোটি টাকা এবং আদায় ৮৯,৬১১ কোটি টাকা। গ্রামীণ জনপদে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করে তাদের ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সহায়ক সেবা দিয়ে চলেছে ।

প্রশিকা / Proshika 

প্রশিকা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এনজিও। ১৯৭৫ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে প্রশিকার উন্নয়ন কার্যক্রম সূচিত হয় এবং ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর পরিসরে কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের বিকাশে শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প, তাত শিল্প, হস্ত শিল্প, গবাদি পশুপালন, মৌমাছি চাষ, চারা উৎপাদনসহ অনেক নতুন নতুন উপজীবিকা সৃষ্টিতে প্রশিকা ভূমিকা রেখেছে। এজন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণদান, তত্ত্বাবধান ইত্যাদি কাজ প্রতিষ্ঠানটি করে থাকে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী প্রশিকা ৫৯টি জেলায় ২৪,১৩৯টি গ্রাম ও ২,৩৮০টি বস্তিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এ সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৭,৯৪,৭৫৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্রমপুঞ্জিভূত ৫,৪০৫.৫৭ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এ সময় পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত আদায়ের পরিমাণ ছিল ৫,৯৩৬.৩৩ কোটি টাকা ।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ / Shanirvar Bangladesh

১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের একটা বিশেষ সেল (Cell) হিসেবে সমাজ উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করলেও ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করে সদস্যদের আস্থাবর্ধক বিভিন্ন কাজে লাগানোর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। এ পর্যন্ত ৫০টি জেলার ১৫৯টি উপজেলায় এর কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে । প্রতিষ্ঠানটি আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে শুরু থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫,১৪,৪০০ জন বিত্তহীন ঋণগ্রহীতাকে ২০৮৩.১২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এবং খাল আদায় করেছে ১,৮১৩.৬২ কোটি টাকা ।

ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ / Thengamara Mohila Sabuj Sangha TMSS 

বগুড়া জেলাকে কেন্দ্র করে ১৯৮০ সালে TMSS বেসরকারি সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বিস্তৃত । প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই দারিদ্র্য দূরীকরণ, আর্থ- সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত দরিদ্র ও বিত্তহীন। মহিলাদের মধ্যে কাজ করে। তাদেরকে ঋণ সহায়তা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি দোকান পরিচালনা, হাস-মুরগি প্রতিপালন ও খামার পরিচালনা, মাছ চাষ, নার্সারি প্রতিষ্ঠা ও কুটির শিল্পের বিভিন্ন কাজে সহায়তা দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৬৩টি জেলার ৩৭,৪০,৭৪৮ জন মহিলাকে এ সংস্থার আওতায় সংঘবদ্ধ করে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত ৯,৪৫৩.৫১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এবং ক্রমপুঞ্জিভূত ৮,৩৫৯.৪৫ কোটি টাকা ঋণ আদায় করেছে।

মাইডাস / Micro Industries Development Assistance Services / MIDAS

ক্ষুদ্র শিল্পে নিয়োজিত প্রান্তিক শিল্প মালিকদের আর্থিক, কারিগরি ও প্রশিক্ষণ সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার জন্য ১৯৮১ সালে NGO ব্যুরোতে নিবন্ধন নিয়ে ১৯৮২ সালে থেকে MIDAS তার কাজ শুরু করে। ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা ও মালিকদের ঋণদান, এর সাথে সম্পৃক্তদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, তথ্য ও পরামর্শ প্রদান, নতুন নতুন ব্যবসায় ক্ষেত্র ও উপায়-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা, নতুন ব্যবসায় ও পদ্ধতিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট জনপ্রিয়করণ, ক্ষুদ্র শিল্পোৎপাদকদের পণ্য ও সেবা বাজারজাতকরণে সহায়তা দান ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতে সমর্থ হয় । পরবর্তীতে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্য মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড (MFL) নামে একটা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন করে। প্রতিষ্ঠানটি তার ছয়টি কার্যক্রমের মধ্যে MIDI কর্মসূচির অধীনে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৫০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। এছাড়া SED কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে ঋণ প্রদান করে ।

 

Content added || updated By

কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের, এলাকার বা দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীগণ নিজেদের স্বার্থরক্ষা ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য একত্রিত হয়ে যৌথ প্রচেষ্টায় ও পরিচালনায় যে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তাকে শিল্প ও বণিক সমিতি বলে । বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে শিল্প ও বণিক সমিতি রয়েছে । একইভাবে বিভিন্ন ধরনের শিল্পমালিক; যেমন- গার্মেন্টস সামগ্রী প্রস্তুতকারক, বজ্রমালিক, প্লাস্টিক সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রভৃতি বিশেষ ধরনের শিল্প মালিকগণ তাদের জন্য শিল্প ও বণিক সমিতি গড়ে তুলেছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে জেলা পর্যায়ের শিল্প ও বণিক সমিতি । সারাদেশের শিল্প ও বণিক সমিতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (FBCCI) শিল্প ও বণিক সমিতি যেভাবে শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়তা করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

  • সদস্যদের স্বার্থ সংরক্ষণে নিজেদের মধ্যকার ঐক্য প্রয়াসকে সুসংহত করে এবং যে কোনো বিরোধ মীমাংসায় ভূমিকা রাখে;
  • সদস্যদের মুখপাত্র হিসেবে তাদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ, সুবিধা-অসুবিধা সরকারকে অবহিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করে; 
  • ব্যবসায় বান্ধব নীতি ও বাজেট প্রণয়নে সরকারের সাথে আলোচনা এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত ও পরামর্শ দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করে;
  • বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করে তা সদস্যদের সরবরাহ করে এবং এ বিষয়ে মাঝে-মাঝে পত্রিকা ও সাময়িকীও প্রকাশ করে;
  • ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতার উন্নয়নের জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে;
  • দেশে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর বাজার সম্প্রসারণের জন্য দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পণ্যসজ্জা, মেলা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে;
  • বিদেশী ক্রেতাদের সুবিধার্থে দেশীয় পণ্যের উৎপাদনস্থল সংক্রান্ত প্রভব লেখ (Certificate of Origin) এই প্রতিষ্ঠান ইস্যু করে;
  • আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেনের বিষয়ে দু'দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো বিরোধ হলে তা নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করে ইত্যাদি ।
Content added By

১৯৭৭ সালে মাত্র ১৯ জন তৈরি পোষাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক মিলিত হয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সুরক্ষার জন্য যে সমিতি গড়ে তোলে তাই আজকের দিনের বৃহদায়তন ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ । ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে এই সমিতির নিয়মিত সদস্য ছিল ৩১৯৬ জন। ২০১১ এর জুন শেষে গার্মেন্টস শিল্পের সংখ্যা ছিল ৫,১৫০টি। ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে এই খাত দেশের মোট রপ্তানি আরে ৪০.৮% অর্জন করে যার আর্থিক মূল্য ছিল ১,১০৪ কোটি ডলার । BGMEA এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো-

  • পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংঘবদ্ধ ও ঐক্য সংহত করা;
  • দেশে এবং বিদেশে পোষাক মেলার আয়োজন ও অংশগ্রহণে এর সদস্যদেরকে সংগঠিত করা;
  • বিদেশী ক্রেতা, ব্যবসায় সংঘ এবং বণিক সভাসমূহের সাথে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা; আন্তর্জাতিক বাজারে পোষাকের বাণিজ্য এবং বাণিজ্য মেলাসমূহ তদারক করা;
  • তৈরি পোষাক প্রস্তুতকারী ও এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা; গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা;
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সাথে কোটা নির্ধারণ এবং সংরক্ষণে সরকারি প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা;
  • পোষাক রপ্তানিকারক সদস্যদের সাথে ক্রেতাগণের উদ্ভূত যে কোনো বিবাদ মীমাংসায় সাহায্য করা; 
  • BGMEA এর সদস্য কারখানাসমূহ কর্তৃক আমদানিকৃত কাঁচামালের ছাড়করণের অনুমতি প্রদানের জন্য Utilization Declaration ও রপ্তানি ফরমায়েশ (Export Order) ইস্যু করা; 
  • পোষাক তৈরি কারখানাসমূহে সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড নিবারণের জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ নিশ্চিত করা; 
  • সদস্য পোষাক শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদেরকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য প্রদান করা;
  • শ্রমিক কর্মী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়াবলির মীমাংসা এবং মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রমিক সংগঠনসমূহের সাথে নিয়মিত বৈঠক করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি নীটওয়্যার শিল্পও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীটওয়্যার শিল্পের জন্য বাংলাদেশ নীটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (BKMEA) BGMEA এর পাশপাশি কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে নীটওয়্যার খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১,২৪২.৭ কোটি ডলার যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ছিল ৪১.৫%।

Content added By

রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদকে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশে সরকারি মালিকানায় যে আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) নামে পরিচিতি। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী কালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে Trade Promotion and Commercial Intelligence নামে যে বিভাগ ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো নাম ধারণ করে। ১৯৭৭ সালে একে আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠিত করা হয় । ব্যুরো দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুরু থেকেই নানান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে । এর প্রধান কার্যসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো;

  • বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য দ্রব্যাদির আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি ও চাহিদা বৃদ্ধিকল্পে নিম্নোক্ত কার্যাবলি। সম্পাদন করা :
  1. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ;
  2. বিদেশস্থ বাংলাদেশী দূতাবাসে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন; 
  3. EU ভুক্ত দেশসমূহসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাংলাদেশী পণ্যের স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন;
  4. ঢাকায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক রপ্তানি মেলার আয়োজন ইত্যাদি ।
  • দেশীয় রপ্তানিকারকদের সাথে বিদেশী ক্রেতাদের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা দান; 
  • রপ্তানি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও রপ্তানিকারকদের সরবরাহ করা;
  • আন্তর্জাতিক বাজার বিষয়ে গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা করা;
  • উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদেরকে উৎপাদন ও রপ্তানি বিষয়ক নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করা;
  • রপ্তানিযোগ্য পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে সহায়তা করা; 
  • রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থ সংগ্রহে উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সহায়তা করা;
  • আমদানি ও রপ্তানি নীতি প্রণয়নে সরকারকে সহায়তা দেয়া; 
  • রপ্তানির ক্ষেত্রে শীর্ষ রপ্তানিকারকদের রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা ইত্যাদি ।
Content added || updated By

সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দেয়া এবং নিজেদের সামষ্টিক কল্যাণকে অর্থবহ করে তোলার প্রয়াস ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে প্রাচীন কাল থেকেই লক্ষণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যাটো ও ওয়ারশ্- দু'টি সামরিক জোটে ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ভাগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিন দশক না যেতেই এই লড়াইয়ে ভাটা পড়ে । সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইকে পাশে রেখে বাণিজ্যিক শ্রেষ্ঠত্বের ও স্বার্থের লড়াই প্রবল হয়ে দেখা দেয় । গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ব্যবসায় জোট। ব্যবসায়কে উৎসাহিত করার জন্য গড়ে ওঠে চুক্তিনির্ভর বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। নিম্নে এরূপ কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।

সাপটা (South Asian Preferential Trade Agreement / SAPTA ) সাফটা (South Asian Free Trade Agreement / SAFTA)

সার্কভুক্ত দেশসমূহ নিজের মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তাকেই দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি সংক্ষেপে SAPTA বলে। শুরুতে সার্ক SAARC ভুক্ত দেশসমূহ ছিল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান এই সংস্থায় যোগ দেয়ায় এখন এর সদস্য সংখ্যা ৮। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় ১ম সার্ক সম্মেলনের পর থেকে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে । ১৯৯৫ সালের মে মাসে। ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত সার্কের অষ্টম সম্মেলনে SAPTA চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ১৯৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়।

সহযোগিতাকে আরও অর্থবহ করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত বাণিজ্য এলাকা South Asian Free Trade Area (SAFTA) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেনসিটিভ লিস্ট, রুলস অব অরিজিন, কারিগরি সহায়তার ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং শুল্ক হ্রাসের ফলে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের রাজস্ব ক্ষতিপূরণের চূড়ান্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনার পর সকল দেশের অনুসমর্থনের মাধ্যমে তা ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি হতে কার্যকর হয়েছে।

SAFTA চুক্তির দুটি প্রধান বিষয়ের একটি হলো সেনসিটিভ লিস্টের পণ্যের সংখ্যা কমানো এবং সেনসিটিভ লিস্টের বাইরের পণ্যের ক্ষেত্রে ট্যারিফের হার ০%-৫% এর মধ্যে নামিয়ে আনা। ভারত ৯ নভেম্বর ২০১১ থেকে তাদের সেনসিটিভ তালিকার পণ্যের সংখ্যা ৪৮০ থেকে কমিয়ে ২৫ করেছে। পাকিস্তান সেনসিটিভ তালিকা বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে ৫% শুল্কহার নির্ধারণ করেছে । প্রতিটা দেশ তাদের সেনসিটিভ তালিকায় ঘোষিত পণ্যের সংখ্যা ২০% হ্রাস করেছে। ভারত দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক বা MOU (Memorandum of Understanding) এর অধীনে বাংলাদেশকে পোশাক পণ্যে শুল্ক মুক্ত এবং কোটামুক্ত সুবিধা দিয়েছে। যা নিঃসন্দেহে SAFTA-এর একটা অগ্রগতি। উল্লেখ্য ২০০৭ সালের ১৪তম সার্ক সামিটে আফগানিস্তান সাফটা চুক্তিতে নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে সাফটার আওতায় বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের সংস্থা - আসিয়ান ( ASEAN)

আঞ্চলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের সম্মিলিত প্রয়াসে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রসমূহের সংস্থা সংক্ষেপে আসিয়ান ( Association of South East Asian Nations / ASEAN) গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি রাষ্ট্র; যথা- ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রীগণ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আসিয়ান গঠনের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এটি ব্যাংকক ঘোষণা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ব্যাংকক ঘোষণার ভিত্তিতে ১৯৭৬ সালের • ২৪শে ফেব্রুয়ারি আসিয়ান গঠন সংক্রান্ত চূড়ান্ত দলিল তৈরি করে পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ ইন্দোনেশিয়ার বালিতে উক্ত দলিলে স্বাক্ষর করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে ষষ্ঠ সদস্য হিসেবে ব্রুনাই, ১৯৯৫ সালে সপ্তম সদস্য হিসেবে ভিয়েতনাম, ১৯৯৭ সালে অষ্টম ও নবম সদস্য হিসেবে মায়ানমার ও লাওস এবং পরে দশম সদস্য হিসেবে কম্বোডিয়া এতে যোগদান করে। মার্চ ২০১১তে পূর্ব তিমুর নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেয়ায় এখন এর সদস্য সংখ্যা ১১।

সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানটি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সমন্বয়ে অবাধ বাণিজ্য এলাকা স্থাপনের প্রয়াস চালায় এবং ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ ASEAN Free Trad Area (AFTA) গঠন করে। এটি এখন বিশ্বের ৮নং বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল । ২০১৫ সালের মধ্যে উক্ত সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে ASEAN Economic Community / ABC গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আশা করছে যে, এতে তাদের আন্তঃবাণিজ্য ব্যাপকভাবে বাড়বে। এক দেশ থেকে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও কারিগরি সুবিধা অন্যদেশে হস্তান্তরিত হবে। শুল্ক বাধা উঠে যাওয়ার কারণে এখানের সব দেশই উপকৃত হতে পারবে। ASEAN এর একটা বড় দিক হলো সংস্থাটি অন্য দেশ ও বিভিন্ন সংস্থার সাথে চুক্তি সম্পাদন করে- যা সদস্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ASEAN ও চীনের চুক্তি, জাপানের সাথে চুক্তি, EU-এর সাথে চুক্তি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এতে সংস্থাটির সামর্থ্যেরই প্রমাণ মেলে ।

বিমসটেক / Bay of Bengal Initiative for Multi Sectoral, Technical and Economic Cooperation / BIMSTEC 

১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংককে একটা উপআঞ্চলিক জোট হিসেবে সংস্থাটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রথমে ৪টি দেশ এতে যোগ দেয় এবং দেশগুলোর নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী এর নাম দেয়া হয় BIST EC (Bangladesh, India, Srilanka and Thailand Economic Cooperation)। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্যাংককে অনুষ্ঠিত সংস্থার দেশগুলোর মন্ত্রীদের একটা বিশেষ সভায় মায়ানমারকে পঞ্চম দেশ হিসেবে সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এর নামকরণ করা হয় BIMSTEC । পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালে নেপাল ও ভুটানকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এর নামের নতুন পূর্ণাঙ্গ রূপ নির্ধারিত হয় Bay of Bengal Initiative for Multi Sectoral, Technical and Economic Cooperation ।

বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ১০টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে প্রতিটা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের ভার একেকটা দেশের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সকল দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দানকারী দেশ কী ভূমিকা রেখেছে তা পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে । ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৯ নভেম্বর ১৯৯৮
এর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সহযোগিতার ৬টি খাত চিহ্নিত করে দায়িত্ব ভাগ করা হয়:

  • বাংলাদেশের নেতৃত্বে ব্যবসায় ও বিনিয়োগ; 
  • ভারতের নেতৃত্বে পরিবহণ ও যোগাযোগ;
  • মায়ানমারের নেতৃত্বে শক্তি সম্পদ;
  • নেপালের নেতৃত্বে পর্যটন;
  • শ্রীলংকার নেতৃত্বে প্রযুক্তি ও
  • থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে মৎস ।

২০০৫ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সহযোগিতার আরও নতুন ৭টি খাত চিহ্নিত করে তার নেতৃত্বদানের ভার পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন দেশের ওপর অর্পণ করা হয়। সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ হলো-

  • মায়ানমারের নেতৃত্বে কৃষি;
  • থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য;
  • নেপালের নেতৃত্বে দারিদ্র্য দূরীকরণ;
  • ভারতের নেতৃত্বে সন্ত্রাস দমন ও অপরাধ প্রবণতা রোধ;
  • বাংলাদেশের নেতৃত্বে পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা;
  • ভুটানের নেতৃত্বে সংস্কৃতি ও
  • থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে দেশসমূহের মধ্যে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে যোগাযোগ (Public to public contact) 

এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) ২০০৫ সাল থেকে বিমসটেকের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই ADB দেশগুলোর মধ্যে পরিবহণ, অবকাঠামো ও কৌশলগত সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে BTILS (BIMSTEC Transport Infrastructure & Logistic Study) প্রজেক্টের আওতায় সমীক্ষার কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিকট পাঠিয়েছে। যা কার্যকর হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উপকৃত হবে । এ ছাড়াও বিমসটেকভুক্ত দেশসমূহ নিজেদের মধ্যে একটা মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা / World Trade Organization (WTO)

দীর্ঘ আলোচনা, চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও উন্নয়নের ধারার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাণিজ্যকে সকলের জন্য কল্যাণকর করতে যেই প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়েছে তার নাম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা WTO I দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার উত্তরণ এবং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সুসংহত করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি কিউবার রাজধানী হাভানায় ২৩টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে General Agreement on Tariff's & Trade / GATT প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারই নবতর সংস্করণ WTO । ১৯৯৪ সালে মরক্কোর রাজধানী মারাকাশে GATT এর যে সম্মেলন হয় তাতে ১২৮টি দেশ GATT চুক্তি অনুমোদন করে এবং সেখানেই WTO এর মতো সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় । যার আলোকে ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে WTO কাজ শুরু করে । এর প্রধান অফিস বা সচিবালয় সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কার্যাবলি নিম্নরূপ : 

  • সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি করা;
  • GATT সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তিসহ উরুগুয়ে রাউন্ডে গৃহীত সকল চুক্তি ও বিধানাবলির বাস্তবায়ন করা;
  • বিশ্ব ব্যাপী বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার একটি ফোরাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। 
  • উন্নয়নশীল দেশসমূহের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণে বিভিন্ন কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচির আয়োজন করা;
  • বিশ্বের অন্যান্য আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও গোষ্ঠীগত সংস্থাসমূহের সাথে সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করা;
  • সংস্থা কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে গৃহীত বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতিমালার কালান্তিক পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে সংশোধনমূলক নতুন নীতিমালা নির্ধারণ করা ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা অর্থনৈতিক পরাশক্তিসমূহের সক্রিয় অংশগ্রহণে শুরু থেকেই একটা শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি, আইটিসি, আংকটাডসহ বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব বাণিজ্য উদারীকরণ এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহ (Least Developed Countries / LDC) WTO এর ফ্রেমের আওতায় থেকেই ধনিক দেশগুলোর সাথে দরকষাকষির মাধ্যমে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে । যার ফলশ্রুতিতে দেশগুলোর মধ্যে যেমনি সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, একে অপরের সমস্যাগুলো বুঝতে পারছে তেমনি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা দূরীকরণে সম্মিলিত প্রয়াস নিতে পারছে । 

বাংলাদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ডব্লিউটিও সেল WTO সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে । এ সেল স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সমন্বিত করে WTO এর সম্মেলনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তা দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের
পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার জন্য এই সেল নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যার ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এই সুবিধা লাভ করেছে । অন্যান্য দেশেও অনেকাংশে এ সুবিধা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন WTO এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পর্কযুক্ত ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন / European Union/EU

ইউরোপীয়ান কমিউনিটি (EC) ১৯৯২ সালে তাদের মধ্যকার অর্থনেতিক বন্ধনকে মজবুত করে নিজেদেরকে একটা অর্থনেতিক পরাশক্তি হিসেবে গড়ার অভিপ্রায়ে ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি (EEC) গঠন করে । অনেকে এই নতুন বন্ধন কর্মসূচিকে নতুন ইউরোপ ও সন্দেহের বিষয় হিসেবে গণ্য করেন। বিশেষত বাইরের জগতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকেই নতুন জোটের অভ্যুদয়কে নিজেদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে শুরু করে । এরূপ জোট গঠনের ফলে দ্রুত যে সকল সুবিধা অর্জিত হয় তা হলো-

  • ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি (EEC) থেকে তা দ্রুত ইউরোপীয়ান কমিউনিটি(EC) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) তে পর্যবেশিত হয়;
  • সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে সফল আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে;
  • ব্যবসায় বাধাসমূহ দ্রুত অপসারণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রায় ৩০০টি আইনগত সংস্কার সাধন করে;
  • সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পণ্য, সেবা, মূলধন ও জনশক্তির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করে;
  • সবদেশ একই বহিঃশুল্ক হার ধার্য করে; 
  • নিজেদের মধ্যে একটা সাধারণ মুদ্রা চালু করে যা ইউরো নামে পরিচিত;
  • সদস্য দেশের যে কোনো ছাত্র বা শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা বা উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য অন্যদেশে অবাধে যাতায়াত সুবিধা লাভ করে এবং 
  • এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধুমাত্র অর্থনেতিক জোট এবং অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবেই নয় শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেও ইউরোপকে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হয়েছে।

১৯৯২ সালে EC ভুক্ত ১২টি দেশ সমন্বয়ে EEC গড়ে ওঠে। দেশগুলো ছিল ১. বেলজিয়াম ২. ডেনমার্ক ৩, ফ্রান্স ৪. জার্মানী ৫. গ্রীস ৬. আয়ারল্যান্ড ৭. ইতালি ৮. লুক্সেমাবর্গ ৯. নেদারল্যান্ড ১০. পর্তুগাল ১১. স্পেন ও ১২. যুক্তরাজ্য । ১৯৯৫ সালে EEC সম্প্রসারিত হয় এবং তখন আরও ৩টি দেশকে সদস্যপদ দেয়া হয় । নতুন সদস্য দেশগুলো হলোঃ ১. অস্ট্রিয়া ২. ফিনল্যান্ড ও ৩. সুইডেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আরও ১০টা দেশকে EU (পরবর্তীতে গৃহীত নাম)এর পূর্ণ সদস্য হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দেশগুলো হলো ১. সাইপ্রাস ২. গ্রীস ৩. এস্তোনিয়া ৪. হাঙ্গেরি ৫. লাটভিয়া ৬. লিথুনিয়া ৭. মাল্টা ৮. পোল্যান্ড ৯. স্লোভাকিয়া ও ১০. স্লোভেনিয়া । পরে আরও তিনটি দেশ; রুমানিয়া, চেক রিপাবলিক ও ক্রোয়োশিয়া যোগ দেয়। অর্থাৎ EU এর বর্তমান সদস্য দেশের সংখ্যা ২৮ । অবশ্য ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্য EU থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা কার্যকর হলে এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে ২৭ ।

Content added By