নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - মাদকাসক্তি ও এইডস | NCTB BOOK

মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তি বা নেশাকে বোঝায়। যে সব দ্রব্য সেবন বা পান করলে তীব্র নেশার সৃষ্টি হয় সেগুলো মাদকদ্রব্য। কোনো কোনো ঔষধকে ব্যবহারগত কারণে মাদকদ্রব্য বলা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ অতিরিক্ত সেবন করলে এবং এর প্রতি আসক্তি জন্মালে সেটাও মাদকদ্রব্যের আওতায় পড়ে। অতএব যেসব দ্রব্য সেবন করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং সেগুলোর প্রতি সেবনকারীর প্রবল আসক্তি জন্মে সে সব দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। যেমন- বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, মদ, গাঁজা, ভাং, হেরোইন, আফিম, পেথিডিন, ফেনসিডিল, ঘুমের ঔষধ ইত্যাদি। যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকদ্রব্যের প্রতি তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়। তারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। যদি কোনো কারণবশত তারা মাদক গ্রহণ করতে না পারে তাহলে তাদের মধ্যে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক উপসর্গের সৃষ্টি হয়। যেমন- মেজাজ খিটখিটে হয়, ক্ষুধা ও রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, আচরণে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে।
ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য

১. ঔষধ সেবন করলে রোগমুক্তি ঘটে, মাদক সেবনে শরীরের নানা রোগের সৃষ্টি হয়।
২. ঔষধ গ্রহণের মাত্রা নির্ধারিত থাকে, মাদকের মাত্রা নির্ধারিত থাকে না ।
৩. অসুখ সেরে গেলে ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু মাদকে আসক্ত হলে সহজে ছাড়া যায় না

বাংলাদেশে যে সকল মাদকদ্রব্য প্রচলিত আছে সেগুলো হলো হেরোইন, আফিম, পেথিডিন, ফেনসিডিল, গাঁজা জাতীয়— মারিজুয়ানা, ভাং, চরস, ইয়াবা এবং ঘুমের ঔষধ, মদ এবং তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য। তামাক গাছের পাতা থেকে তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য তৈরি হয়। তামাক পাতায় নিকোটিন থাকে যা এক ধরনের মাদক। তামাক পাতা দিয়ে বিড়ি, সিগারেট, চুরুট,পানের জর্দা, গুল, নস্যি ইত্যাদি তৈরি করা হয় ।

মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যম : যারা মাদকসেবী তারা নানা পদ্ধতি ও মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সেবন করে। যেমন ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো, ট্যাবলেট, পাউডার বা সিরাপ হিসেবে খাওয়া, পানীয় হিসেবে পান করা, ধূমপানের মাধ্যমে গ্রহণ করা। ধূমপানেরও আবার নানা ধরন আছে। যেমন—সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, হুঁকা ইতাদি ।


তামাক ও মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল : তামাক ও মাদকদ্রব্য সেবন বলতে প্রধানত ধূমপানকে বোঝায়। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে পৃথিবীতে প্রতি ৮ সেকেন্ডে শুধু ধূমপানজনিত কারণে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে। যারা ধূমপান করে তারাও ধূমপায়ী ব্যক্তির ছেড়ে দেওয়া ধোঁয়া থেকে অন্যরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য সেবনের কুফলসমূহ হচ্ছে-

১. মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। যেমন- শেখার ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করে, চাপ সহ্য করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। তাছাড়া মানসিক পীড়ন বাড়িয়ে দেয়।

২. পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে। মাদকসেবী পরিবারের সদস্যদের সাথে উগ্র আচরণ করে, পরিবারের শান্তি বিনষ্ট করে।

৩. শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। মাদকদ্রব্য সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস , খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয় ৷ করে,

৪. কিছু কিছু মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি-এর সংক্রমণের আশংকা বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যনালি ও ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনির রোগ, রক্তচাপ প্রভৃতি বহুবিধ রোগের সৃষ্টি করে।

৫. আর্থিক ক্ষতি হয়। নেশার টাকা যোগাতে গিয়ে সংসারে অভাব ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।

কাজ-১ : মাদক সেবনকারীদের মাদকের উপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়। এই নির্ভরশীলতার ফলে কী কী ঘটে উল্লেখ কর।

১.

২.

৩.

8.

কাজ-২ : মাদকদ্রব্য গ্রহণের ৪টি কুফল লেখ ।

১.

২.

৩.

৪.

 

Content added || updated By