নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (পুরোনো সংস্করণ) - চতুর্থ অধ্যায় | NCTB BOOK

কারক : ‘কারক' শব্দটির অর্থ – যা ক্রিয়া সম্পাদন করে।
বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে।
কারক ছয় প্রকার :
১. কর্তৃকার                   ২. কর্ম কারক   
৩. করণ কারক            ৪. সম্প্রদান কারক
৫. অপাদান কারক      ৬. অধিকরণ কারক

একটি বাক্যে ছয়টি কারকের উদাহরণ—
* বেগম সাহেবা প্রতিদিন ভাঁড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের চাল দিতেন ।
এখানে

১. বেগম সাহেবা ক্রিয়ার সঙ্গে                   কর্তৃসম্বন্ধ
 ২.চাল                                                     কর্ম সম্বন্ধ
 ৩.হাতে                                                   করণ সম্বন্ধ
 8. গরিবদের                                             সম্প্রদান সম্বন্ধ

৫. ভাঁড়ার থেকে                                       অপাদান সম্বন্ধ
৬.প্রতিদিন                                               অধিকরণ সম্বন্ধ


বিভক্তি : বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের সঙ্গে যে সকল বর্ণ যুক্ত হয়,
তাদের বিভক্তি বলে। যেমন – ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ + এ বিভক্তি), মা (মা + ০ বিভক্তি), শিশুকে (শিশু + কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ + ০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। বিভক্তিগুলো ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
বিভক্তি চিহ্ন স্পষ্ট না হলে সেখানে শূন্য বিভক্তি আছে মনে করা হয়।
বাংলা শব্দ-বিভক্তি
০ শূন্য বিভক্তি (অথবা অ-বিভক্তি), এ, (য়), তে (এ), কে, রে,) র, (এরা এ কয়টিই খাঁটি বাংলা শব্দ বিভক্তি। এ ছাড়া বিভক্তি স্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দও কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন—দ্বারা, দিয়ে, হতে, থেকে ইত্যাদি।
বাংলা শব্দ-বিভক্তি সাত প্রকার : প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী এবং সপ্তমী।
একবচন এবং বহুবচন ভেদে বিভক্তিগুলোর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন-

 

বিভক্তি যোগের নিয়ম
(ক) অপ্রাণী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে 'রা' যুক্ত হয় না; গুলি, গুলো যুক্ত হয় যেমন- পাথরগুলো, গরুগুলি।
(খ) অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তর ‘কে’ বা ‘রে’ বিভক্তি হয় না, শূন্য বিভক্তি হয়। যথা : - কলম দাও।
(গ) স্বরান্ত শব্দের উত্তর ‘এ’ বিভক্তির রূপ হয় - ‘য়’ বা ‘য়ে’। ‘এ’ স্থানে ‘তে’ বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে। যেমন – মা+এ =মায়ে, ঘোড়া + এ = ঘোড়ায়, পানি + তে = পানিতে।
(ঘ) অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের উত্তর প্রায়ই ‘রা’ স্থানে ‘এরা’ হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির 'র' স্থলে 'এর' যুক্ত হয়। যেমন – লোক + রা লোকেরা। বিদ্বান (ব্যঞ্জনান্ত) + রা = বিদ্বানেরা। মানুষ +এর মানুষের = = লোক + এর =লোকের। কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ ‘র’ যুক্ত হয়, ‘এর’ যুক্ত হয় না। যেমন – বড়র, মামার, ছেলের।

কর্তৃকারক
বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তা ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক।
ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কর্তৃকারক। যেমন – খোকা বই পড়ে। (কে পড়ে? খোকা – কর্তৃকারক)। মেয়েরা ফুল তোলে। (কারা তোলে? মেয়েরা – কর্তৃকারক)। -
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ
ক. কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে :
১. মুখ্য কর্তা : যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে সে মুখ্য কর্তা। যেমন ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। -
২. প্রযোজক কর্তা : মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায়, তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন – শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন ।
৩. প্রযোজ্য কর্তা : মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলা হয়। ওপরের বাক্যে 'ছাত্র' প্রযোজ্য কর্তা। তদ্রুপ – রাখাল (প্রযোজক) গরুকে (প্রযোজ্য কর্তা) ঘাস খাওয়ায়।
৪. ব্যতিহার কর্তা : কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে একজাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে । যেমন
বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়।
রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত ।
খ. বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে। যেমন-
১. কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে) : পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
২. ভাববাচ্যের কর্তা (ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে) : আমার যাওয়া হবে না। ৩. কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা (বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়) : বাঁশি বাজে। কলমটা লেখে ভালো।


কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
ক) প্রথমা শূন্য বা অ বিভক্তি : হামিদ বই পড়ে।
খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি : বশিরকে যেতে হবে।
গ) তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি : ফেরদৌসী কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।
ঘ) ষষ্ঠী বা র বিভক্তি : আমার যাওয়া হয়নি ।

(ঙ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি
                             গায়ে মানে না, আপনি মোড়ল ।
                              বাপে না জিজ্ঞাসে, মায়ে না সম্ভাষে ৷ পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়। বাঘে-মহিষে খানা একঘাটে খাবে না।
য়-বিভক্তি :         ঘোড়ায় গাড়ি টানে।
তে-বিভক্তি :      গরুতে দুধ দেয় ৷
                       বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কীসে?
কর্মকারক
যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্মকারক বলে। কর্ম দুই প্রকার : মুখ্য কর্ম, গৌণ কর্ম। যেমন—
বাবা আমাকে (গৌণ কর্ম) একটি কলম (মুখ্য কর্ম) কিনে দিয়েছেন। সাধারণত মুখ্য কর্ম বস্তুবাচক ও গৌণ কর্ম প্রাণিবাচক হয়ে থাকে। এছাড়াও সাধারণত কর্মকারকের গৌণ কর্মে বিভক্তি যুক্ত হয়, মুখ্য কর্মে হয় না।
কর্মকারকের প্রকারভেদ
ক) সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম : নাসিমা ফুল তুলছে।
খ) প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম : ছেলেটিকে বিছানায় শোয়াও
গ) সমধাতুজ কর্ম : খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।
ঘ) উদ্দেশ্য ও বিধেয় : দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর অপেক্ষিত কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম এবং অপেক্ষিত কর্মটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম। যেমন-
দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মোরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি, হলুদকে (উদ্দেশ্য কর্ম) বলি হরিদ্রা (বিধেয় কর্ম)।

কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
(ক) প্রথমা বা শূন্য বা অ বিভক্তি : ডাক্তার ডাক
আমাকে একখানা বই দাও। (দ্বিকর্মক ক্রিয়ার মুখ্য কর্ম)

 রবীন্দ্রনাথ পড়লাম, নজরুল পড়লাম, এর সুরাহা খুঁজে পেলাম না।

(গ্রন্থ অর্থে বিশিষ্ট গ্রন্থকার প্রয়োগে)



(খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি :   তাকে বল।

                      রে বিভক্তি : আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা'।

(গ) ষষ্ঠী বা র বিভক্তি : তোমার দেখা পেলাম না ।
(ঘ) সপ্তমীর এ বিভক্তি : ‘জিজ্ঞাসিবে জনে জনে।' (বীপ্সায়)


করণ কারক
‘করণ' শব্দটির অর্থ : যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়
ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা সহায়ককেই করণ কারক বলা হয় ৷
বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘কীসের দ্বারা’ বা ‘কী উপায়ে’ প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায়, তা-ই করণ কারক। যেমন -
নীরা কলম দিয়ে লেখে। (উপকরণ – কলম) ‘জগতে কীর্তিমান হয় সাধনায়। ' (উপায় – সাধনা)
করণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার

(ক) প্রথমা বা শূন্য বা অ বিভক্তি         ছাত্ররা বল খেলে। (অকর্মক ক্রিয়া )   

                                                         ডাকাতেরা গৃহস্বামীর মাথায় লাঠি মেরেছে। (সকর্মক ক্রিয়া)
(খ) তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি : লাঙ্গল দ্বারা জমি চাষ করা হয়।
দিয়া বিভক্তি                     : মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন ।
(গ) সপ্তমী বিভক্তি বা এ বিভক্তি    : ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে।

                                                শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায় ৷
তে বিভক্তি         : ‘এত শঠতা, এত যে ব্যথা,
                             তবু যেন তা মধুতে মাখা। ' – নজরুল। লোকটা জাতিতে বৈষ্ণব।
য় বিভক্তি : চেষ্টায় সব হয়।
             এ সুতায় কাপড় হয় না ।


সম্প্রদান কারক
যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে (সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী) সম্প্রদান কারক বলে। বস্তু নয়— ব্যক্তিই সম্প্রদান কারক ।

(অনেক বৈয়াকরণ বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদান কারক স্বীকার করেন না; কারণ, কর্মকারক দ্বারাই সম্প্রদান কারকের কাজ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা যায়।)

সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
(ক) চতুর্থী বা কে বিভক্তি : ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। (স্বত্বত্যাগ করে না দিলে কর্মকারক হবে। যেমন — ধোপাকে কাপড় দাও।)
(খ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি : সৎপাত্রে কন্যা দান কর। সমিতিতে চাঁদা দাও। ‘অন্ধজনে দেহ আলো'।

জ্ঞাতব্য : নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে সেখানে চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন-‘বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল। 


অপাদান কারক
যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয়, তাকেই অপাদান কারক বলে। যেমন-
বিচ্যুত              গাছ থেকে পাতা পড়ে । মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে।
গৃহীত               সুক্তি থেকে মুক্তো মেলে । দুধ থেকে দই হয়।
জাত:             : জমি থেকে ফসল পাই । খেজুর রসে গুড় হয়।
বিরত :             পাপে বিরত হও।
দূরীভূত :           দেশ থেকে পঙ্গপাল চলে গেছে।
রক্ষিত :              বিপদ থেকে বাঁচাও।
আরম্ভ                সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু ।
ভীত                 :বাঘকে ভয় পায় না কে?


অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তি ছাড়াও হইতে, হতে, থেকে, দিয়া, দিয়ে ইত্যাদি অনুসর্গ ব্যবহৃত হয় ।


অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ
(ক) প্রথমা বা শূন্য বা অ বিভক্তি : বোঁটা আলগা ফল গাছে থাকে না। ’
                                                ‘মনে পড়ে সেই জ্যৈষ্ঠ দুপুরে পাঠশালা পলায়ন।’
(খ) দ্বিতীয়া বা কে বিভক্তি

(গ) ষষ্ঠী বা এর বিভিক্ত : বাবাকে বড্ড ভয় পাই ।
(ঘ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি : যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়।
                                 : বিপদে মোরে করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা ।
                                   লোকমুখে শুনেছি। তিলে তৈল হয়।
                 য় বিভক্তি : টাকায় টাকা হয় ।

বিভিন্ন অর্থে অপাদানের ব্যবহার

(ক) স্থানবাচক     : তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন।
(খ) দূরত্বজ্ঞাপক : ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম দুশো কিলোমিটারেরও বেশি।
(গ) নিক্ষেপ        : বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে।


অধিকরণ কারক
ক্রিয়া সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারকে সপ্তমী অর্থাৎ ‘এ’ 'য়'
‘তে’ ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। যথা-
 আধার (স্থান)  : আমরা রোজ স্কুলে যাই। এ বাড়িতে কেউ নেই ।
 কাল (সময়)    :প্রভাতে সূর্য ওঠে।


অধিকরণ তিন প্রকার

১. কালাধিকরণ।
২. আধারাধিকরণ।
৩. ভাবাধিকরণ।
যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, তবে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয় বলে একে ভাবে সপ্তমী বলা হয়। যেমন –
সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।


আধারাধিকরণ তিন ভাগে বিভক্ত : ১. ঐকদেশিক, ২. অভিব্যাপক এবং ৩. বৈষয়িক।
১. ঐকদেশিক : বিশাল স্থানের যে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন পুকুরে মাছ আছে। (পুকুরের যে কোনো একস্থানে
বনে বাঘ আছে। (বনের যে কোনো এক অংশে) আকাশে চাঁদ উঠেছে। (আকাশের কোনো এক অংশে) সামীপ্য অর্থেও ঐকদেশিক অধিকরণ হয়। যেমন-
ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে (ঘাটের কাছে)। ‘দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী,
ভিক্ষা দেহ তারে (দুয়ারের কাছে), রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা ।
২. অভিব্যাপক : উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক
আধারাধিকরণ বলে। যেমন-
তিলে তৈল আছে। (তিলের সারা অংশব্যাপী)
নদীতে পানি আছে। (নদীর সমস্ত অংশ ব্যাপ্ত করে।)

৩. বৈষয়িক : বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারও কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক
অধিকরণ হয়। যেমন : রাকিব অঙ্কে কাঁচা, কিন্তু ব্যাকরণে ভালো।
আমাদের সেনারা সাহসে দুর্জয়, যুদ্ধে অপরাজেয়।


অধিকরণ কারকে অন্যান্য বিভক্তি
(ক) প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি : আমি ঢাকা যাব। বাবা বাড়ি নেই ।
(খ) তৃতীয়া বিভক্তি :           খিলিপান (এর ভিতরে) দিয়ে ওষুধ খাবে।
(গ) পঞ্চমী বিভক্তি             বাড়ি থেকে নদী দেখা যায় ৷
(ঘ) সপ্তমী বা তে বিভক্তি :  এ বাড়িতে কেউ নেই।


অধিকরণে অনুসর্গের ব্যবহার
ঘরের মধ্যে কে রে? তোমার আসন পাতিব হাটের মাঝে।


পরিশিষ্ট
১। বিভিন্ন কারকে শূন্য বিভক্তি
(ক) কর্তৃকারকে রহিম বাড়ি যায়।
(খ) কর্মকারকে ডাক্তার ডাক।
(গ) করণে ঘোড়াকে চাবুক মার
(ঘ) অপাদানে গাড়ি স্টেশন ছাড়ে।
(ঙ) অধিকরণে                                         সারারাত বৃষ্টি হয়েছে।


২. বিভিন্ন কারকে সপ্তমী বা এ বিভক্তি       


(ক) কর্তৃকারকে              লোকে বলে। পাগলে কী না বলে ।

(খ) কর্মকারক                এ অধীনে দায়িত্বভার অর্পণ করুন।
(গ) করণে                     এ কলমে ভালো লেখা হয় ।
(ঘ) অপাদানে ‘              আমি কি ডরাই সখি ভিখারি রাঘবে?”
(ঙ) অধিকরণে              এ দেহে প্রাণ নেই।

 
                                                                                           সম্বন্ধ পদ
ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে যে নামপদ বাক্যস্থিত অন্য পদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। যেমন— মতিনের ভাই বাড়ি যাবে।

এখানে ‘মতিনের' সঙ্গে ‘ভাই’-এর সম্পর্ক আছে, কিন্তু ‘যাবে’ ক্রিয়ার সাথে সম্বন্ধ নেই। জ্ঞাতব্য : ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ পদের সম্বন্ধ নেই বলে সম্বন্ধ পদকে কারক বলা হয় না ।
সম্বন্ধ পদের বিভক্তি
(ক) সম্বন্ধ পদে ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে থাকে। যথা : আমি + র = আমার (ভাই), খালিদ + এর = খালিদের (বই)।
(খ) সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে কার > কের বিভক্তি যুক্ত হয়। যথা— আজি + কার কালি + কার = আজিকার > আজকের (কাগজ) । পূর্বে + কার = পূর্বেকার (ঘটনা) কালিকার > কালকার > কালকের (ছেলে)। =
কিন্তু ‘কাল' শব্দের উত্তর শুধু ‘এর’ বিভক্তিই যুক্ত হয়। যেমন : কাল + এর = কালের। বাক্য : সে কত কালের কথা।
সম্বন্ধ পদের প্রকারভেদ
সম্বন্ধ পদ বহু প্রকারের হতে পারে। যেমন-
(ক) অধিকার সম্বন্ধ        রাজার রাজ্য, প্রজার জমি ।
(খ) জন্ম-জনক সম্বন্ধ  : গাছের ফল, পুকুরের মাছ।
(গ) কার্যকারণ সম্বন্ধ      অগ্নির উত্তাপ, রোগের কষ্ট ।
(ঘ) উপাদান সম্বন্ধ        রূপার থালা, সোনার বাটি।
(ঙ) গুণ সম্বন্ধ            মধুর মিষ্টতা, নিমের তিক্ততা।
(চ) হেতু সম্বন্ধ            ধনের অহংকার, রূপের দেমাক ।

(ছ) ব্যাপ্তি সম্বন্ধ :        রোজার ছুটি, শরতের আকাশ ।
(জ) ক্রম সম্বন্ধ :           পাঁচের পৃষ্ঠা, সাতের ঘর
(ঝ) অংশ সম্বন্ধ            হাতির দাঁত, মাথার চুল
(ঞ) ব্যবসায় সম্বন্ধ     পাটের গুদাম, আদার ব্যাপারি ।
(ট) ভগ্নাংশ সম্বন্ধ       একের তিন, সাতের পাঁচ।
(ঠ) কৃতি সম্বন্ধ           নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’ মাইকেলের ‘মেঘনাদবধ কাব্য' ।
(ড) আধার-আধেয়   : বাটির দুধ, শিশির ওষুধ।

(ঢ) অভেদ সম্বন্ধ       : জ্ঞানের আলোক, দুঃখের দহন 

(ণ) উপমান—উপমেয় সম্বন্ধ      ননীর পুতুল, লোহার শরীর ।
(ত) বিশেষণ সম্বন্ধ :                সুখের দিন, যৌবনের চাঞ্চল্য।
(থ) নির্ধারণ সম্বন্ধ                সবার সেরা, সবার ছোট।
(দ) কারক সম্বন্ধ
                 (১) কর্তৃ সম্বন্ধ            রাজার হুকুম ৷          

                 (২) কর্ম সম্বন্ধ           প্রভুর সেবা, সাধুর দর্শন ৷

                (৩) করণ সম্বন্ধ          চোখের দেখা, হাতের লাঠি ।     
                (৪) অপাদান সম্বন্ধ    বাঘের ভয়, বৃষ্টির পানি ।
                (৫) অধিকরণ সম্বন্ধ   ক্ষেতের ধান, দেশের লোক। 


সম্বোধন পদ
‘সম্বোধন' শব্দটির অর্থ আহবান। যাকে সম্বোধন বা আহবান করে কিছু বলা হয়, তাকে সম্বোধন পদ বলে। যেমন— ওহে মাঝি, আমাকে পার করো। সুমন, এখানে এসো।
জ্ঞাতব্য : সম্বোধন পদ বাক্যের অংশ। কিন্তু বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ থাকে না বলে সম্বোধন পদ কারক নয়।
১. অনেক সময় সম্বোধন পদের পূর্বে ওগো, ওরে, হে, ওগো, অয়ি প্রভৃতি অব্যয়বাচক শব্দ বসে সম্বোধনের সূচনা করে। যেমন “ওগো, তোরা জয়ধ্বনি কর।” “ওরে, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’ ‘অয়ি নিরমল উষা, কে তোমাকে নিরমিল?”
২. অনেক সময় সম্বন্ধসূচক অব্যয়টি কেবল সম্বোধন পদের কাজ করে থাকে।
সম্বোধন পদের পরে অনেক বিস্ময়সূচক চিহ্ন দেওয়া হয়। এই ধরনের বিস্ময়সূচক চিহ্নকে সম্বোধন চিহ্ন বলা হয়ে থাকে ।
কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন চিহ্ন স্থানে কমা (,) চিহ্নের প্রয়োগই বেশি হয়। যেমন ওরে খোকা, যাবার সময়ে একটা কথা শুনে যাস্ ।

Content added By