আরিফ একদিন তার মার সাথে বসে টিভিতে জলপাইয়ের আচার তৈরির প্রক্রিয়া দেখছিল। তার মা তাকে বলল, বর্তমানে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম কৃষিজ উৎপাদন ও পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে তথ্য সরবরাহে ভূমিকা রাখছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি অফিস প্রায় প্রতি মাসে অথবা প্রয়োজন অনুসারে মাঝে মাঝে কৃষকদের নিয়ে যে সভা বা বৈঠক করে তাকে উঠোন বৈঠক বলে।
উঠোন বৈঠক আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ তথা কৃষি তথ্য সরবরাহ ও কৃষি সেবার একটি অত্যন্ত কার্যকর কৌশল। এই কৌশলের একটি প্রধান সুবিধা হলো যে এতে সকল ধরনের নারী-পুরুষ কৃষক স্থানীয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতে পারে। তারা সেখানে • নিঃসংকোচে তথ্য বিনিময় করতে পারে।
ফাহাদ বিভিন্ন কৃষি তথ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিষয়ক নানান তথ্য ও সেবা দিয়ে কৃষকদের সাহায্য করে থাকে। ফাহাদ তার বাগানের ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের তথ্য নেয়। এই ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের তথ্য বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল কৃষি ফার্ম, পলিটেকনিক ও কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ও কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেও সরবরাহ করা হয়। এ সকল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি 'এ টু আই' প্রকল্প, কৃষি তথ্য সংস্থা, কৃষি তথ্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের সেন্টারসমূহ হতেও সে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এছাড়াও সে কৃষিতথ্য সংগ্রহের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম ইন্টারনেটের থেকেও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে উল্লিখিত উৎসগুলো ছাড়াও ফাহাদ অভিজ্ঞ কৃষক, উঠোন বৈঠক বা কৃষক সভা থেকেও ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
ফাহাদ তাই এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
ফাহাদকে তথ্য সার্ভিস সংস্থা প্রক্রিয়াজাত করে ফল ও শাকসবজি সংরক্ষণ করতে পরামর্শ দেয়।
বিভিন্ন উপায়ে ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা যায়। যেমন- চিনি ও অ্যাসিড সংযোজন করে জ্যাম, জেলি, মোরব্বা ও ক্যান্ডি তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি সংরক্ষণ করা। প্রক্রিয়াজাতকৃত এইসব খাদ্যকে বেশ সুগন্ধযুক্ত ও দর্শনীয় করার জন্য অনেক রকম খাদ্য রং ও এসেন্স মিশ্রিত করা হয়।
জেলি তৈরির সময় ফলের রস ব্যবহার করা হয়। মিহি চালনী বা কাপড়ের সাহায্যে ফলের শাঁসকে ছেঁকে নেওয়া হয় বলে ফলের আঁশ বাদ পড়ে যায়। জ্যাম তৈরির সময় ফলের পাল্প ব্যবহার করা হয়। যে সকল ফল বা সবজিতে পেকটিন কম সে ক্ষেত্রে পালপের সাথে পেকটিন যোগ করে নেওয়া হয়। এছাড়া জ্যাম ও জেলির সাথে সাইট্রিক অ্যাসিডও মিশিয়ে নেওয়া হয়। ফল বা সবজির বড় টুকরা চিনির সিরায় ডুবিয়ে সিরা নিংড়িয়ে মোরব্বা তৈরি করা হয়। রকমারি মশলা মেশানো ফল বা সবজিকে খাওয়ার তেল বা ভিনেগারে ডুবিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে আচার তৈরি করা হয়। মশলা হিসেবে আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, মেথি, কালজিরা ব্যবহার করা হয়। লবণ ও চিনি মিশিয়ে চাটনি তৈরি করা যায়। বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে চাটনির স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়ানো হয়।
উল্লিখিত যেকোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করেই ফাহাদ তার ফল ও শাকসবজিগুলো প্রক্রিয়াজাত করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবে।
বসতবাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে, রেললাইনের পাশে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আশেপাশেসহ বিভিন্ন সামাজিক এলাকায় যে বন গড়ে উঠে তাকে সামাজিক বন বলে। সামাজিক বনে বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ লাগানো হয়। সামাজিক বন মানুষের ফলের চাহিদা পূরণ, ভূমিক্ষয় রোধ হয়, কুটির শিল্প তৈরির কাঁচামাল, ঘরবাড়ি তৈরির কাঠ ও জ্বালানি কাঠ পায়। এছাড়াও সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। অতএব বলা যায়, সামাজিক বন জনগণের উপকার করে।
আরিফ তার মায়ের সাথে বসে টিভিতে জলপাইয়ের আচার এর প্রস্তুত প্রণালী দেখছিল। তার দেখা প্রণালীটি নিম্নরূপ-
প্রথমে বাছাইকৃত জলপাই ধুয়ে স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। বিভিন্ন উপকরণ রসুন, আদা, মরিচ, হলুদ, সরিষার গুঁড়া, মেথির গুঁড়া, জিরার গুঁড়া, লবণ পরিমাণমতো নিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে। কাটা জলপাইগুলো সিদ্ধ করে তেল দিয়ে কড়াইয়ে ভেজে নিতে হবে। এবার আদা ও রসুনের খোসা ছাড়িয়ে ১০০ মিলি ১% অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রবণ সহযোগে পেস্ট তৈরি করে তাতে হলুদ ও মরিচের গুঁড়া দিয়ে দিতে হবে। মিশ্রিত পেস্ট কড়াইয়ের তেলে কষিয়ে নিয়ে এতে ভাজা জলপাইয়ের টুকরা ও অন্যান্য মশলা একসাথে যোগ করতে হবে। অবশেষে অ্যাসিটিক অ্যাসিড যোগ করে সামান্য সময় জ্বাল দিতে হবে।
উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় জলপাইয়ের সুস্বাদু আচার তৈরি করা হয়।