তাওহিদের পর ইসলামের দ্বিতীয় মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে রিসালাত। রিসালাত অর্থ বার্তাবহন। যে ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে নিয়ে পৌঁছায়, তাকে বলা হয় বার্তাবাহক বা রাসুল। কিন্তু ইসলামি পরিভাষায় যিনি আল্লাহর বাণী তাঁর বান্দাদের কাছে নিয়ে পৌঁছান এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের সৎপথে পরিচালিত করেন, তাঁকে নবি বা রাসুল বলা হয়। নবি-রাসুলের কাজ বা দায়িত্বকে রিসালাত বলে।
আমরা জানি, যিনি গাড়ি তৈরি করেন তিনিই এর কলকজা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। কীভাবে গাড়ি চালালে ভালো থাকবে, দুর্ঘটনা ঘটবে না, তা তিনিই ভালো জানেন। সবাই তার কথামতো গাড়ি চালায়। তার কথামতো না চালালে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মানুষ মারা যায় ।
মানুষ, পৃথিবী ও আকাশের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। তিনিই সবকিছুর লালনপালন করেন । তিনিই জানেন কিসে রয়েছে মানুষের মঙ্গল। কোন পথে চললে মানুষের সুখ হবে, শান্তি হবে, তাও তিনি জানেন। কীভাবে জীবনযাপন করলে দুঃখ থেকে বাঁচা যায়,কষ্ট থেকে বাঁচা যায়, তাও তিনি জানেন। তিনি মহাজ্ঞানী। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জ্ঞান রাখেন।
কোন পথে মানুষের কল্যাণ, কোন পথে মানুষের সুখ, কোন পথে মানুষের ভবিষ্যৎ হবে মঙ্গলময়, কোন পথে রয়েছে মানুষের ক্ষতি- এসব বিষয় আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা পাঠালেন নবি ও রাসুল ।
নবি-রাসুলগণ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তাঁরা নিষ্পাপ। আল্লাহর নিকট থেকে ওহির মাধমে তাঁরা জ্ঞান লাভ করতেন। ওহি মানে আল্লাহর বাণী। হযরত জিবরাইল (আ) ওহি নবি-রাসুলগণের কাছে নিয়ে আসতেন।
নবি-রাসুলগণের জীবনের লক্ষ্য ছিল মানুষের কল্যাণ সাধন করা। আর আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে মানুষের জীবন গঠন করা। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর পথে, কল্যাণের পথে ডাকতে অনেক কষ্ট করেছেন। কিছুতেই তাঁরা থেমে যান নি। অবিচলভাবে কাজ করে গিয়েছেন ৷
নবি-রাসুলগণের মূল শিক্ষা ছিল :
১. তাওহিদ : আল্লাহ এক। তাঁর কোনো শরিক নেই।
২. রিসালাত : আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানো।
৩. দীন : আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে জানানো।
৪. আখলাক : চারিত্রিক গুণ ও ভালো ব্যবহারের নিয়ম-কানুন শিক্ষাদান।
৫. শরিয়ত : হালাল-হারাম ও জায়েজ-নাজায়েজের শিক্ষা প্ৰদান ৷
৬. আখিরাত : মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে জানানো।
পৃথিবীর প্রত্যেক এলাকার মানুষকে এই কথাগুলো শেখানোর জন্য নবি-রাসুলগণ এসেছেন। তাঁরা ছিলেন পথপ্রদর্শক।
অর্থ : প্রত্যেক জাতির জন্য পথপ্রদর্শক এসেছেন। (সূরা রা'দ, আয়াত: ৭)
হযরত আদম (আ) থেকে আমাদের মহানবি (স) পর্যন্ত বহু নবি-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁরা সকলেই আল্লাহর তাওহিদের কথা বলেছেন। তাঁর বিধানসমূহ মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। কথায়, কাজে এবং আচার-ব্যবহারে তাঁরা ছিলেন আদর্শ ও চরিত্রবান। যারা তাঁদের আদর্শ গ্রহণ করেছে তারা নাজাত পেয়েছে। আল্লাহর রহমত লাভ করেছে। আর যারা তাঁদের বিরোধিতা করেছে, তাঁদের কথা মানেনি তারা হয়েছে ধ্বংস।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবি। তাঁর পরে আর কোনো নবি আসেন নি। আসবেনও না। এজন্য তাকে বলা হয় খাতামান্নাবিয়্যীন। খাতামান্নাবিয়্যীন অর্থ সর্বশেষ নবি।
পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ইমানের নৈতিক উপকার সম্পর্কে একটি তালিকা তৈরি করবে।
আরও দেখুন...