ধারণা করা হয় গারো জনগোষ্ঠী প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে ভিকাত থেকে এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন।
ভাষা : গারোদের নিজস্ব ভাষার নাম আচিক বা গারো ভাষা ।
ধর্ম : গারোদের আদি ধর্মের নাম সাংসারেক। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ গারো খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী।
সমাজ ব্যবস্থা : পারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক, অর্থাৎ নারীরাই পরিবারের প্রধান এবং সম্পত্তির অধিকারী। মাতার সূত্র ধরেই তাঁদের দল, গোত্র ও বংশ গড়ে ওঠে।
খাদ্য : গারোদের প্রধান খাবার ভাত, মাছ, মাংস ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। তাঁদের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার বাঁশের কোড়ল দিয়ে তৈরি করা হয় যা খেতে অনেক সুস্বাদু।
ৰাঁড়ি : পূৰ্বে গারো জনগোষ্ঠীর লোকেরা নদীর তীরে লম্বা এক ধরনের বাড়ি তৈরি করতেন যা নকমান্দি নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে তারা অন্যদের মতোই করোগেটেড টিন এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বাড়ি তৈরি করেন।
পোশাক : গারো নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম সবান্দা ও দসারি। পুরুষেরা শার্ট, লুঙ্গি, ধুতি ইত্যাদি পরিধান করেন ।
উৎসব : গারোদের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের নাম ওয়ানগালা। এই সময়ে তাঁরা সূর্য দেবতা সালজং এর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নতুন শস্য উৎসর্গ করেন। সাধারণত নতুন শস্য ওঠার সময় অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে উৎসবটি হয়। উৎসবের শুরুতে তাঁরা উৎপাদিত শস্য অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করেন এবং বিভিন্ন ধরনের বাদ্য বাজনা বাজিয়ে এই উৎসবটি পালন করা হয়।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্পর্কে যা জানো আলোচনা কর।
পারো জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার যে পরিবর্তন এসেছে সেগুলোর মধ্যে দুইটি উল্লেখ কর।
১৮৭২ সালে গারো জনগোষ্ঠী ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। গারোদের হাতে ছিল শুধু মিল্লাম আর ইংরেজদের হাতে ছিল বন্দুক। সে সময়কার দুইজন পারো বীর যোদ্ধা টগান নেংমিনজা ও সোনারাম সাংমা। মনে কর এই যুদ্ধ নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটির জন্যে একটি পোস্টার আঁক ।
উপযুক্ত শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর :
ধারণা করা হয় পারো জনগোষ্ঠী…………………..….. থেকে এসেছেন এবং তাদের আদি ধর্মের নাম.……………………….…।
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় খাসি জনগোষ্ঠী বাস করেন। অতীতে সিলেটে জন্মস্তা বা জৈন্তিয়া নামে একটি রাজ্য ছিল। ধারণা করা হয়, খাসি জনগোষ্ঠী ঐ রাজ্যে বাস করছেন।
ভাষা : গারোদের মতো খাসি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা আছে। তবে লিখিত কোনো বর্ণমালা নেই। তাঁদের ভাষার নাম মনথেমে।
সমাজ ব্যবস্থা : এই জনগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থাও পারো সমাজের মতোই মাতৃতান্ত্রিক । পারিবারিক সম্পত্তির বেশিরভাগের উত্তরাধিকারী হয় পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে। খাসি জনগোষ্ঠী কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন । তাঁরা প্রচুর পান ও মধুর চাষও করেন ।
খাদ্য : খাসিদের প্রধান খাদ্য ভাত, মাংস, শুঁটকি মাছ, মধু ইত্যাদি। তাঁরা পান-সুপারিকে খুবই পবিত্র মনে করেন। বাড়িতে অতিথি এলে পান-সুপারি এবং চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
পোশাক : খাসি মেয়েরা কাজিম পিন নামক ব্লাউজ ও লুঙ্গি পরেন। আর ছেলেরা পকেট ছাড়া শার্ট ও লুঙ্গি পরেন, যার নাম ফুংগ মারুং।
ধর্ম : খাসিরা বিভিন্ন দেবতার পূজা করেন। তাঁদের প্রধান দেবতার নাম উব্লাই নাংথট যাকে তাঁরা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা মনে করেন।
উৎসব : সকল ধরনের অনুষ্ঠান যেমন- পূজা পার্বণ, বিয়ে, খরা, অতিবৃষ্টি, ফসলহানি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে নাচ, গান করা হয়। এই উপলক্ষে খাসি জনগোষ্ঠী উৎসবের আয়োজন করেন।
আসি জনগোষ্ঠী সম্পর্কে যা জানো তা শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর।
পারো ও খাসিদের জীবনযাত্রা তুলনা করে তিনটি বাক্য লেখ।
উপরের ছবিটি ২০০৮ সালে খাসিয়াপুঞ্জিতে গাছ কাটার প্রতিবাদে আয়োজিত একটি জনসভার। গাছ কাটলে পরিবেশের উপর কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে?
বাক্যটি সম্পূর্ণ কর :
গারোদের মতো বাসিদের সমাজ ব্যবস্থা --------------------------------।
পার্বত্য অঞ্চলের আরেকটি জনগোষ্ঠী ম্রো। তাঁরা মিরানমার সীমান্তের কাছে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করেন।
ভাষা : ম্রোদের নিজস্ব ভাষা আছে এবং তার লিখিত রূপও আছে। ইউনেস্কো ম্রো ভাষাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। সঠিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে এই ভাষা হারিয়ে যেতে পারে।
ধর্ম : ম্রো জনগোষ্ঠীর ধর্মের নাম তোরাই। এছাড়াও 'ক্রামা' নামে আরেকটি ধর্মমত আছে। ম্রোরা সাধারণত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাঁদের কেউ কেউ খ্রিষ্ট ধর্মও গ্রহণ করেছেন।
সমাজ ব্যবস্থা : ম্রো পরিবারের প্রধান হলেন পিতা। তাদের রয়েছে গ্রামভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।
বাড়ি : ম্রোরা তাঁদের বাড়িকে বলে কিম। সাধারণত বাঁশের বেড়া ও ছনের চাল দিয়ে মাচার উপর তাঁরা বাড়ি তৈরি করেন।
খাদ্য : ম্রোদের প্রধান খাদ্য ভাত, পুঁটকিমাছ ও বিভিন্ন ধরনের মাংস। তাঁদের অন্যতম সুস্বাদু খাবারের নাম নাপ্পি ।
পোশাক : ম্রো মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম ওয়াংলাই। পুরুষরা খাটো সাদা পোশাক পরেন ।
উৎসব : জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু ইত্যাদি অনুষ্ঠানে মোৱা বিভিন্ন আচার উৎসব পালন করেন। ম্রো সমাজের একটি রীতি অনুযায়ী শিশুর বয়স ৩ বছর হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই কান ছিদ্র করে দেওয়া হয় ।
ম্রো জনগোষ্ঠী সম্পর্কে যা জানো তা শিক্ষকের সহায়তার আলোচনা কর ।
খাসি ও গারো জনগোষ্ঠীর সাথে ম্রো জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক তিনটি বাক্য লেখ।
এটি একটি থ্রো বাড়ি। বাড়িটির দেয়াল, মাচা, এবং ছাদে কোন কোন উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে তা লেখ।
বাক্যটি সম্পূর্ণ কর :
ম্রো জনগোষ্ঠীর বসবাস যে দেশটির সীমানা ঘেঁষে………………………………………………………………………………………।
পার্বত্য অঞ্চলের আরেকটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নাম ত্রিপুরা। চাকমা ও মারমাদের পর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এই জনগোষ্ঠী বাস করেন ।
ভাষা : ত্রিপুরাদের ভাষার নাম ককবরক।
সমাজ ব্যবস্থা : ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী সমাজে দলবদ্ধভাবে বাস করেন। দলকে তাঁরা দা বলে। তাঁদের মোট ৩৬টি দফা আছে। এর মধ্যে ১৬টি বাংলাদেশে বাকি ২০টি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে রয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী ত্রিপুরারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অধিকারী। তবে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছেলেরা বাবার সম্পত্তি ও মেয়েরা মায়ের সম্পত্তি লাভ করে থাকেন।
ধর্ম : ত্রিপুরারা সনাতন ধর্মের অনুসারী। তবে বেশিরভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং শিব ও কালী পূজা করেন। তাঁরা নিজন কিছু দেব-দেবীর উপাসনাও করেন । যেমন-গ্রামের সকল লোকের মঙ্গলের জন্য তাঁরা 'কের' পূজা করেন।
বাড়ি : ত্রিপুরাদের ঘরগুলো সাধারণত উঁচুতে হয় ও ঘরে উঠার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়।
পোশাক: ত্রিপুরা মেয়েদের পোশাকের নিচের অংশকে রিনাই ও উপরের অংশকে রিসা বলা হয়। মেয়েরা নানারকম অলংকার, পুঁতির মালা আর কানে নাভং নামে একপ্রকার দুল পরেন । ছেলেরা ধুতি, গামছা, লুঙ্গি, জামা পরেন।
উৎসব : ত্রিপুরা সমাজে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে উপলক্ষে নানা ধরনের আচার- অনুষ্ঠান পালিত হয়। তাঁদের নববর্ষের উৎসব বৈসু। এসময় ত্রিপুরা নারীরা মাথায় ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান ও আনন্দ করেন।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থা, ধর্ম ও পোশাক সম্পর্কে শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর।
গারো, খাসি, ম্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর পোশাকের নাম একটি হকে লেখ ।
* মনে কয় তোমার একজন ত্রিপুরা বন্ধু আছে সে তোমাকে তাদের নববর্ষের উৎসব 'বৈসু' তে আমন্ত্রন করেছে, তুমি এ উৎসবে গিয়ে কী কী করবে?
বাক্যটি সম্পূর্ণ কর :
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বড় অংশ বসবাস করে ভারতের……………………………………………………………………………………।
ওরাঁও জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে বসবাস করেন।
ভাষা : ওরাঁওদের ভাষার নাম কুখ ও সাদ্রি ।
সমাজ ব্যবস্থা : ওরাওঁ সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। ওরাঁওদের গ্রাম প্রধানকে মাহাতো বলা হয়। তাঁদের নিজস্ব আঞ্চলিক পরিষদ আছে যা পাইতো নামে পরিচিত। এই পরিষদে কয়েকটি গ্রামের প্রতিনিধিরা থাকেন।
ধর্ম : ওরাঁও জনগোষ্ঠী বিভিন্ন দেবতার পূজা করেন। তাঁদের প্রধান দেবতা ধার্যেস যাঁকে তাঁরা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা মনে করেন ।
উৎসব : ওরাঁওদের প্রধান উৎসবের নাম কারাম। ভাদ্র মাসে উদিত চাঁদের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে কারাম উৎসব পালন করা হয়। এছাড়াও তাঁরা প্রতি মাসে ও ঋতুতে বিভিন্ন ধর্মীয় ব্রত অনুষ্ঠান পালন করেন।
পোশাক: পুরুষেরা ধুতি, লুঙ্গি, শার্ট ও প্যান্ট পরেন। মেয়েরা মোটা কাপড়ের শাড়ি ও ব্লাউজ পরেন ।
খাবার: ওরাঁওদের প্রধান খাবার ভাত। এছাড়াও তাঁরা গম, ভুট্টা, মাছ, মাংস ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খেয়ে থাকেন।
মানব বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশের সংস্কৃতি কীভাবে শক্তিশালী হয়েছে শিক্ষকের সহায়তায় আলোচনা কর। গণতান্ত্রিক আচরণ কীভাবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করতে সহায়তা করছে?
এই অধ্যায়ে পাঁচটি জনগোষ্ঠী সম্পর্কে যা যা শিখেছ সেগুলো একত্র করে একটি ছক তৈরি কর। কাজটি ছোট দলে কর।
বাংলাদেশের একটি মানচিত্রে ছবি দিয়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আবাসস্থল চিহ্নিত কর ।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাও ।
১. কোন জনগোষ্ঠী তিকাত থেকে এসেছেন?
ক. গারো খ. ম্রো গ. ওরাঁও ঘ. খাসি
২. নিচের কোন জনগোষ্ঠী সিলেটে বসবাস করেন ?
ক. গারো খ. ম্রো গ. ওরাঁও ঘ. খাসি