প্রায় চার হাজার বছর আগের কথা। ইরাক দেশের বাবেল শহরে এক পুরোহিত পরিবারে হযরত ইবরাহীম (আ) জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার লোকেরা মূর্তিপূজা করত। মানুষকে প্রতারিত করত। পুরোহিতগণ রাজা-বাদশাহের সহযোগিতায় জনগণের ওপর অত্যাচার করত। তারা ভাগ্যের ভালোমন্দ জানার জন্য গণকদের শরণাপন্ন হত। গণকদের প্রতি ছিল তাদের অগাধ বিশ্বাস। তারা চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সবকিছুর পূজা করত ।
হযরত ইবরাহীম (আ) বাল্যকাল থেকেই মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি দেখলেন, চন্দ্র-সূর্য প্রতিদিন একই দিকে উদয় হয় এবং অস্ত যায়। মূর্তিতো নিজেদের হাতে গড়া। দেশের বাদশাহ আমাদের মতো একজন সাধারণ মানুষ। মানুষ কেন এদের পূজা করবে? এদের কাছে মাথা নত করবে? আমাদের জীবন-মৃত্যু, সুখ-দুঃখ এদের কারো হাতে নেই। আমরা এদেরকে 'রব' বলে স্বীকার করব কেন? বস্তুত আমাদের ‘রব’ একমাত্র আল্লাহ, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তাঁর হাতেই সকলের জীবন-মৃত্যু। আমরা একমাত্র সেই আল্লাহরই ইবাদত করি।
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর আমলে সেখানকার বাদশাহ ছিল নমরুদ। নমরুদ ছিল নির্মম অত্যাচারী বাদশাহ। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পিতার নাম ছিল আজর। আজর ছিলেন মূর্তি উপাসক। হযরত ইবরাহীম (আ) স্বীয় পিতা ও অন্য সবাইকে বোঝালেন মূর্তি পূজা করা ঠিক নয়। কিন্তু তারা মানল না। তারা তাঁর বিরুদ্ধে বাদশাহ নমরুদের কাছে নালিশ করল। বাদশাহ নমরূদের দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো – হযরত ইবরাহীম (আ) কে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। তাদের এ ভয়াবহ সিদ্ধান্তে তিনি একটুও বিচলিত হলেন না। আল্লাহর ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল।
নমরূদ হযরত ইবরাহীম (আ) কে মেরে ফেলার জন্য বিশাল অগ্নিকুণ্ড তৈরি করল। আর সেই জ্বলন্ত আগুনে তাকে ফেলে দেওয়া হলো। কিন্তু আল্লাহর আদেশে আগুন ঠাণ্ডা হয়ে গেল। হযরত ইবরাহীম (আ) অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে রেহাই পেলেন। তাঁর কোনো ক্ষতি হলো না। কোনো কষ্ট হলো না। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বাঁচালেন। তাঁকে রক্ষা করলেন। রাখে আল্লাহ মারে কে! আল্লাহ বললেন :
”হে আগুন। ইবরাহীমের জন্য তুমি ঠাণ্ডা হয়ে যাও। আরামদায়ক হয়ে যাও।”
হযরত ইবরাহীম (আ) মানুষকে আবার আল্লাহর পথে ডাকা শুরু করলেন। এবারেও তাঁর কথা কেউ শুনল না। বরং তাঁর ওপর অত্যাচার শুরু করল। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বদেশ ইরাক ত্যাগ করে সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে চলে গেলেন। সেখানে তিনি আল্লাহর দীন প্রচার করতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ‘রব’ নেই, মাবুদ নেই। তোমরা সকলে আল্লাহর ইবাদত কর। এভাবেই তাঁর যৌবনকাল অতিবাহিত হলো।
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর জীবনের শেষ ভাগ। ৮৬ বছর বয়স। আল্লাহর রহমতে তাঁর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দুই পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ) এবং হযরত ইসহাক (আ) নবি ছিলেন। একদা হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর আদেশে শিশু ইসমাইল ও তাঁর মা হাজেরাকে মক্কায় নির্বাসন দিয়ে আসলেন। জনমানবহীন পাহাড় ঘেরা মরু উপত্যকা মক্কা। আল্লাহর কুদরতে সেখানে পাথর ফেটে পানি বের হলো। সৃষ্টি হলো জমজম কূপ। পানির খবর পেয়ে সেখানে মানুষ বসবাস করতে লাগল। গড়ে উঠল জনবসতি। স্থাপিত হলো মক্কানগরী ।
আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহীম (আ) কে আদেশ দিলেন : 'তোমার প্রিয় বস্তুকে আমার নামে কুরবানি দাও।' তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আল্লাহকে খুশি করার জন্য তিনি তাঁর প্রিয়তম পুত্র ইসমাঈল (আ) কে কুরবানি দেবেন। তিনি পুত্রের গলায় ছুরি চালালেন। ঠিক এ সময় আল্লাহ খুশি হয়ে জান্নাত থেকে এক দুম্বা পাঠালেন। ইসমাঈল (আ)-এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে গেল । আল্লাহ এই কুরবানি প্রথা কিয়ামত পর্যন্ত চালু রাখলেন। হযরত ইবরাহীম (আ) এবং পুত্র ইসমাঈল (আ) মিলে এখানেই কাবাগৃহ নিৰ্মাণ করেন। তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবি। তাঁকে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু বলা হয়।
হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেসব ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আমরাও আমাদের জীবনে সেগুলো বাস্তবায়িত করব।
পরিকল্পিত কাজ :
শিক্ষার্থীরা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সময়ের লোকদের কার্যকলাপ খাতায় লিখবে।
আরও দেখুন...