কোনো উৎস যেমন জড়িৎকোষ থেকে ধারকে শক্তি সঞ্চয় করে পুনরায় তা ব্যবহার করা হয় । যে কোনো আকৃতির দুটি পরিবাহীর মধ্যবর্তী স্থানে কোনো অন্তরক পদার্থ যেমন- বায়ু, কাচ, প্লাস্টিক ইত্যাদি স্থাপন করে ধারক তৈরি করা হয়। পরিবাহী দুটিকে ধারকের পাত এবং অন্তরক পদার্থকে ডাইইলেকট্রিক বলে।
সমান্তরাল পাত ধারক, গোলীয় ধারক, লিডেন জ্যার প্রভৃতি ধারক সচরাচর ব্যবহৃত হয়।
যখন কোনো শক্তি উৎস যেমন তড়িৎকোষ কোনো ধারকের পাতে তড়িতাধান প্রেরণ করে, তখন ধারক শক্তি সঞ্চয় করে। একটি ধারককে কোনো তড়িৎকোষের সাথে ২.১৩ চিত্রানুযায়ী সংযুক্ত করলে কোষের ঋণাত্মক প্রান্তে সংযুক্ত ধারকের A পাতে কোষ থেকে ইলেকট্রন এসে জমা হয় এবং ধারকের B পাত থেকে একই হারে ইলেকট্রন কোষের ধনাত্মক প্রান্তে স্থানান্তরিত হতে থাকে । A পাতে ইলেকট্রন জমা হওয়ার কারণে এটি ঋণাত্মক আধানে আহিত হয় এবং B পাত থেকে ইলেকট্রন চলে যাওয়ায় এটি ধনাত্মক আধানে আহিত হয়। লক্ষণীয় যে, ধারক আহিত করার সময় এর এক পাত থেকে অন্তরক পদার্থের মধ্যদিয়ে অন্য পাতে কোনো ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় না। আহিত করার সময় ধারকের উভয় পাতে সমপরিমাণ বিপরীত আধানের উদ্ভব হয়। পাতদ্বয়ে আধান বৃদ্ধির ফলে এদের মধ্যবর্তী বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি পায় এবং ধারকের এই ভোল্টেজ উৎস ভোল্টেজের বিপরীতমুখী হওয়ায় তড়িৎ প্রবাহকে বিঘ্নিত করে। ধারকের ভোল্টেজ V, উৎস ভোল্টেজ Vo, এর সমান হলে তড়িৎ প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং ধারকটি সম্পূর্ণ আহিত হয়েছে বলা হয়। এ সময় ধারকটি বর্তনীতে একটা খোলা চাৰি (open key) হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এ অবস্থার পাতদ্বয়ে আধানের পরিমাণ যথাক্রমে + Q ও - Q এবং ধারকে সঞ্চিত আধানের পরিমাণ Q । আহিত ধারকটিকে এখন শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
এখন কোষের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ধারকের পাতদ্বয় একটি পরিবাহী তার দ্বারা সংযুক্ত করে দিলে ইলেকট্রন পুনরায় A পাত থেকে B পাতে প্রবাহিত হবে। B পাতটি সম্পূর্ণ আধান নিরপেক্ষ না হওয়া পর্যন্ত প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং অল্প সময়ের জন্য হলেও ধারক থেকে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায় এবং এই সময় শেষে ধারকের পাত আধানশূন্য হয়। অর্থাৎ ধারকটি তখন ক্ষরিত (discharged) হয়। লক্ষণীয় যে, ক্ষরণকালে Q পরিমাণ আধান এক পাত থেকে অন্য পাতে প্রবাহিত হয়।
মান : ধারকের প্রত্যেক পাতে Q পরিমাণ আধান প্রদান করায় যদি পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য V হয়, তাহলে ধারকের ধারকত্ব হবে,
... (2.25)
ধারকত্বের একক : কোনো ধারকের দুই পাতের বিভব পার্থক্য 1 ভোল্ট (IV) বজায় রাখতে যদি প্রত্যেক পাতে 1 কুলম্ব (1 C) আধানের প্রয়োজন হয় তাহলে সেই ধারকের ধারকত্বকে ফ্যারাড (1F) বলে ।
:-
এক ফ্যারাড (1F) বেশ বড় একক বিধায় এর চেয়ে অনেক ছোট একক মাইক্রোফ্যারাড (F) সচরাচর ব্যবহার করা হয়। ফ্যারাডের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগকে মাইক্রোফ্যারাড বলে। অর্থাৎ = 10-6F। এছাড়া ন্যানো ফ্যারাড (nF), পিকোফ্যারাড (pF) এককও ব্যবহার করা হয়।
1nF =10-9 F এবং 1pF = 10-12 F
কোনো ধারকের ধারকত্ব 5 F বলতে বোঝায় ধারকের দুই পাতের মধ্যে 1V বিভব পার্থক্য বজায় রাখতে প্রত্যেক পাতে 5 C আধান প্রদান করতে হয়।
কোনো বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করলে যেমন এর তাপমাত্রা বাড়ে তেমনি কোনো পরিবাহীকে আধান প্রদান করলে এর বিভব বাড়ে। যত বেশি আধান দেয়া হয় বিভবও তত বেশি বাড়ে। তাপবিজ্ঞানে কোনো বস্তুর তাপমাত্রার একক বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় তাকে তাপ ধারকত্ব বলে। অনুরূপভাবে স্থির তড়িতে যে রাশি পাওয়া যায় তাই আধান ধারকত্ব।
ব্যাখ্যা : কোনো পরিবাহীর বিভব V পরিমাণ বাড়াতে যদি Q পরিমাণ আধানের প্রয়োজন হয়, তবে বিভব একক পরিমাণে বাড়াতে পরিমাণ আধানের প্রয়োজন হয়। সুতরাং আধাম ধারকত্ব,
ধরা যাক, ব্যাসার্ধের একটি গোলক A-কে K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কবিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে স্থাপন করা হলো। এতে + q পরিমাণ আধান দিয়ে ধনাত্মকভাবে আহিত করা হলো। এর ফলে এর বিভব V হলো। অতএব, এর ধারকত্ব,
গোলকে স্থাপিত আধান গোলক পৃষ্ঠের সর্বত্র সমভাবে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে গোলকের পৃষ্ঠ থেকে বলরেখাসমূহ লম্বভাবে সকল দিকে নির্গত হবে [চিত্র ২.১৪ (ক)]।
এ সকল বলরেখাকে পেছন দিকে বাড়ালে এগুলো গোলকের কেন্দ্রে মিলিত হবে। আবার যদি ধরা যায়, ৭ আধান গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত আছে, তাহলেও বলরেখাগুলো ঠিক একই রূপ হবে [চিত্র ২.১৪ (খ)]। সুতরাং q একক আধান গোলকের পৃষ্ঠে বণ্টিত থাকলে এবং q একক আধান গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত থাকলে বলরেখা একই রূপ হয়। অতএব, একক আধান গোলকের পৃষ্ঠে স্থাপিত হলেও এই আধানকে গোলকের কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত বলে বিবেচনা করা যায়। তাই গোলকের পৃষ্ঠে বিভব তথা গোলকের বিভব,
.
বিভবের এই মান ধারকত্বের উপরিউক্ত সমীকরণে বসিয়ে আমরা পাই, C =
গোলকটি যদি বায়ুতে বা শূন্যস্থানে অবস্থিত হয়, তাহলে
K = 1, সুতরাং C =
এ থেকে দেখা যায় যে, গোলকের ধারকত্ব এর ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক।
দুটি সমান্তরাল পরিবাহক পাত দ্বারা এই ধারক তৈরি করা হয়। একই আকৃতির এবং একই ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট দুটি পাত সমান্তরালভাবে পাশাপাশি রেখে কোনো অন্তরক মাধ্যম দ্বারা যদি বিচ্ছিন্ন করা হয় তাহলে একটি সমান্তরাল পাত ধারক তৈরি হয় [চিত্র ২.১৫]। একটি তড়িৎকোষের সাথে সংযোগ দিয়ে ধারকটিকে আহিত করা হয় ।
ধরা যাক,
A = ধারকের প্রত্যেক পাতের ক্ষেত্রফল ।
d = পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব।
E = পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা।
Q = প্রত্যেক পাতে মোট আধান।
V = পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য ।
= প্রত্যেক পাতে আধান ঘনত্ব ।
সুতরাং ধারকের ধারকত্ব ... (2.27)
ধারকের পাত দুটি খুব কাছাকাছি অবস্থিত বলে মধ্যবর্তী স্থানে বলরেখাগুলো পরস্পর সমান্তরাল হতে দেখা যায় [চিত্র ২.১৬]। সুতরাং পাত দুটির মধ্যবর্তী স্থানে তড়িৎ প্রাবল্য সর্বত্র সুষম হবে, কারণ ধনাত্মক পাতের একক ক্ষেত্রফল থেকে যত সংখ্যক বলরেখা নির্গত হবে মধ্যবর্তী স্থানের যে কোনো একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে তত সংখ্যক বলরেখা অতিক্রম করবে।
সুতরাং পাতদ্বয়ের পৃষ্ঠের তড়িৎ প্রাবল্য এবং পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানের তড়িৎ প্রাবল্য একই হবে। কিন্তু আমরা আধান ঘনত্বের সাথে প্রাবল্যের সম্পর্ক থেকে জানি, কোনো পাতের পৃষ্ঠে তড়িৎ প্রাবল্য । সুতরাং সমান্তরাল পাত ধারকের পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে তড়িৎ প্রাবল্য হবে,
বা,
(2.27) সমীকরণে এই মান বসিয়ে আমরা পাই,
পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী মাধ্যমে বায়ু হলে, (শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতা) ধরা যায়। সেক্ষেত্রে
:-
ধারকের ধারকত্ব এর ক্ষেত্রফল A এর সমানুপাতিক, মধ্যবর্তী মাধ্যমের তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক K এর সমানুপাতিক, পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব d এর ব্যস্তানুপাতিক ।
সংযুক্ত ধারকগুলো একত্রে একটি ধারকের ন্যায় ক্রিয়া করে। ধারকের সংযোগ দু প্রকার; যথা -
ব্যাখ্যা : ধরা যাক, কোনো বর্তনীতে A, B, D, E ....... ইত্যাদি অনেকগুলো ধারক একত্রে ব্যবহার করা হলো। ধারকগুলোর দুই প্রান্তের তথা বর্তনীর যে দুই বিন্দুর সাথে এগুলোকে যুক্ত করা হয়েছে, সেই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য এবং আধান হলো যথাক্রমে V এবং Q । একত্রে এই সকল ধারককে এক কথায় বলা হয়, ধারকের সংযোগ বা সমবায় । ধরা যাক, এই ধারকগুলোর ধারকত্ব যথাক্রমে C1, C2, C3, C4 ... ইত্যাদি। এখন যদি এতগুলো ধারক ব্যবহার না করে একটি মাত্র ধারক দ্বারা এগুলোকে এমনভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় যাতে তার দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য V হয় এবং আধান Q বজায় থাকে, তবে এই একটি মাত্র ধারককে ঐ সংযোগ বা সমবায়ের তুল্য ধারক বলা হয় । আর এই প্রতিস্থাপিত ধারকের ধারকত্ব যদি C হয় তবে ঐ সংযোগের বা সমবায়ের তুল্য ধারকত্বই হবে C
কোনো তড়িৎ কোষ থেকে যদি + Q আধান প্রথম ধারকের প্রথম পাতে প্রদান করা হয় তাহলে তা অন্য পাতের ভেতরের পৃষ্ঠে - Q আধান আবিষ্ট হবে এবং + Q আধান দ্বিতীয় ধারকের
প্রথম পাতে প্রবাহিত হবে। এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। সুতরাং প্রতিটি ধারকের এক পাত + Q এবং অন্যপাত - Q আধান লাভ করে। যদি ধারকগুলোর পাতদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য যথাক্রমে V1, V2, V3 ইত্যাদি হয়, তবে শ্রেণি সংযোগের প্রথম পাত এবং শেষ পাতের বিভব পার্থক্য হবে,
V = V₁ + V₂+ V3 ... (2.30)
যদি ধারকগুলোর ধারকত্ব যথাক্রমে C1, C2, C3 হয় তবে
.. (2.31)
এখন যদি ধারকের সংযোগের পরিবর্তে এমন একটি ধারক ব্যবহার করা হয় যার দুটি পাতের বিভব পার্থক্য V এবং তার আধান Q হয় তবে তার ধারকত্ব তথা সংযোগের তুল্য ধারকত্ব Cs, হবে,
বা, .. (2.32)
সুতরাং শ্রেণি সংযোগের তুল্য ধারকত্বের বিপরীত রাশি ধারকগুলোর ধারকত্বের বিপরীত রাশির সমষ্টির সমান ।
দেখা যায় যে, শ্রেণি সংযোগে তুল্য ধারকত্ব সংযোগের যে কোনো ধারকের ধারকত্বের চেয়ে ক্ষুদ্রতর।১ যখন কতগুলো বড় ধারক থেকে একটি ছোট ধারক তৈরির প্রয়োজন হয় তখন এরূপ সংযোগ ব্যবহার করা হয়।
২.১৮ চিত্রে তিনটি ধারকের সমান্তরাল সংযোগ দেখানো হলো, যেখানে ধনাত্মক পাতসমূহ কোষের ধনাত্মক প্রান্তে এবং ঋণাত্মক পাতগুলো কোষের ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তড়িৎকোষ থেকে + Q আধান প্রদান করা হলে, এ আধান ধারকগুলো তাদের ধারকত্ব অনুসারে ভাগ করে নেয়। যদি ধারকগুলোতে আধানের পরিমাণ যথাক্রমে Q1,Q2 ও Q3 হয় তবে মোট আধান হবে,
Q = Q1 + Q2 + Q3… (2.34)
যেহেতু প্রতিটি ধারকের দুটি পাত কোষের দুটি প্রান্তের সাথে যুক্ত, সুতরাং প্রতিটি ধারকের বিভব পার্থক্য একই হবে । ধরা যাক, এই বিভব পার্থক্য V। যদি ধারকগুলোর ধারকত্ব যথাক্রমে C1, C2, C3, হয়, তবে
Q1=C1 V, Q2=C2 V, এবং Q3=C3 V… (2.35)
এখন যদি ধারকের সংযোগের পরিবর্তে এমন একটি ধারক ব্যবহার করা হয় যার দুটি পাতের বিভব পার্থক্য V এবং যাতে আধান Q হয় তবে তার ধারকত্ব তথা সংযোগের তুল্য ধারকত্ব Cp হবে
Cp =
Q = Cp V
একটি আহিত ধারক প্রচুর পরিমাণে শক্তি তড়িৎ বিভব শক্তি হিসেবে সঞ্চয় করে। একটি আহিত ধারকের শক্তি হলো একে আহিত করতে প্রয়োজনীয় মোট কাজের পরিমাণ। আবার একে ক্ষরিত হতে দেয়া হলে ঐ শক্তি ফিরে পাওয়া যায়।
ধরা যাক, কোনো ধারকের ধারকত্ব C। আহিত করার সময় এর পাতে Q পরিমাণ আধান দেওয়ায় এর পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য হলো V এবং আহিত করতে U পরিমাণ কাজ করতে হলো। সুতরাং ধারকটিতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ U। এখন ধারকের পাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আধান dQ প্রদান করতে যদি dU পরিমাণ কাজ হয় এবং এর ফলে ধারকটির শক্তি dU পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে,
dU = VdQ
বা,
আহিত করার সময় ধারকটিতে Q = 0 থেকে Q = Q পরিমাণ আধান প্রদান করা হলে এর শক্তি U = 0 থেকে U = U তে উন্নীত হয়। সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণকে এ সীমার মধ্যে যোগজীকরণ করে মোট কাজের পরিমাণ পাওয়া যাবে।
একটি আহিত ধারকে সঞ্চিত শক্তি নির্ভর করে ধারকে সঞ্চিত আধান, ধারকের দুই পাতের বিভব পার্থক্য এবং ধারকের ধারকত্বের ওপর। একটি নির্দিষ্ট ধারকে সঞ্চিত শক্তি তার আধানের বর্গের সমানুপাতিক ।
নিম্ন বিভবে তড়িতাধান জমা করার জন্য ধারক ব্যবহৃত হয়। বেতার, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনে ধারক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দু প্রকারের ধারক বেশি ব্যবহৃত হয়। স্থিরমান ধারক ও পরিবর্তনশীল ধারক।
এ প্রকার ধারকে অনেকগুলো টিনের পাত পর পর সাজানো থাকে। টিনের পাতগুলোর মাঝে অভ্রের পাত বা মোমে ডুবানো কাগজ বা সিরামিক বসানো থাকে। টিনের একটি অন্তর একটি পাত একত্রে সংযুক্ত থাকে যাতে প্রতিটি পাতের উভয় পৃষ্ঠই আলাদা পাত হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এক সেট পাত P বিন্দুতে এবং অপর সেট পাত R বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে [চিত্র ২.১৯]।
P ও R বিন্দুর একটি ভূ-সংযুক্ত থাকে। এর সাহায্যে অল্প জায়গার মধ্যে বিরাট ক্ষেত্রফলের দুটি চ্যাপ্টা পাতের একটি তুল্য ধারক পাওয়া যায়। এখানে অভ্র, সিরামিক বা মোমে ডুবানো কাগজ অন্তরক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। স্থায়িত্ব বৃদ্ধি এবং শক্তিক্ষয় হ্রাস করার জন্য অন্তরক হিসেবে আজকাল কাগজের পরিবর্তে পাতলা পলিস্টারিনের স্তর ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে অবশ্য ইলেকট্রোলাইটিক ধারকের ব্যবহার বেশ বাড়ছে।
দুই সেট ধাতব পাত দ্বারা পরিবর্তনশীল ধারক তৈরি করা হয়। এর এক সেট স্থির থাকে। অপর সেট একটি দণ্ডের সাথে আটকানো থাকে। দণ্ডটি ঘুরালে এই সেটটি স্থির সেটের ফাঁকে ঘুরতে পারে [চিত্র ২.২১]। এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক মাধ্যম হচ্ছে বায়ু। দণ্ডটি ঘুরালে পাতগুলোর কার্যকর ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয়। সুতরাং ধারকত্বের পরিবর্তন হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনিং-এর কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।
দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রকার বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রোনিক যন্ত্রপাতিতে ধারক ব্যবহৃত হয়। রেডিও, টিভি, ফোন, ফ্যান, টিউবলাইট প্রভৃতিতে আমরা ধারকের ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাই।(খ) পরিবর্তনশীল ধারক : দুই সেট ধাতব পাত দ্বারা পরিবর্তনশীল ধারক তৈরি করা হয়। এর এক সেট স্থির থাকে। অপর সেট একটি দণ্ডের সাথে আটকানো থাকে। দণ্ডটি ঘুরালে এই সেটটি স্থির সেটের ফাঁকে ঘুরতে পারে [চিত্র ২.২১]। এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক মাধ্যম হচ্ছে বায়ু। দণ্ডটি ঘুরালে পাতগুলোর কার্যকর ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয়। সুতরাং ধারকত্বের পরিবর্তন হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনিং-এর কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।
আমরা জানি, এক শ্রেণির পদার্থ আছে, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে যাদের মধ্য দিয়ে আধান মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে । এদেরকে বলা হয় পরিবাহী। ধাতব পদার্থসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্গত। আরেক শ্রেণির পদার্থ আছে যাদের বলা হয় অপরিবাহী বা অন্তরক বা ডাইইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম, যাদের মধ্য দিয়ে আধান চলাচল করতে পারে না । রাবার, অ্যাম্বার, কাচ ইত্যাদি এদের মধ্যে পড়ে।
আমরা জানি, কোনো পরিবাহীর বা একাধিক পরিবাহীর সমন্বয়ে গঠিত কোনো সমাবেশের বিভব বৃদ্ধি করলে এটি আধান ধরে রাখতে পারে। এই পরিবাহী বা সমাবেশকে বলা হয় ধারক। দেখা গেছে যে, একটি সমান্তরাল পাত ধারকের দুই পাতের মাঝখানে কোনো ডাইইলেকট্রিক রাখলে ধারকের ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে ডাইইলেকট্রিকের মধ্যে এমন কী আছে যা ধারকের ধারকত্ব বাড়িয়ে দেয়? ডাইইলেকট্রিকের উপস্থিতিতে ধারকত্ব বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে একই আধানের জন্য ভোল্টেজ তথা বিভব পার্থক্য কমে যাওয়া। যেহেতু বিভব পার্থক্য হচ্ছে ধারকের তড়িৎ ক্ষেত্রের যোগজ, কাজেই আমরা বলতে পারি ধারকের পাতের আধান একই থাকলেও ধারকের অভ্যন্তরে তথা দুই পাতের মাঝে তড়িৎ ক্ষেত্র হ্রাস পায়।
আবার ধারকের দুই পাতের মাঝখানে পরিবাহী মাধ্যম থাকলেও তড়িৎ ক্ষেত্র হ্রাস পায়, কেননা ধারকের পাতের মুখোমুখি পরিবাহীর দুই পৃষ্ঠে আবিষ্ট আধানের উদ্ভব হয়। কিন্তু সমপরিমাণ ডাইইলেইট্রিকের জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের হ্রাস অনেক বেশি হয়, কেননা ডাইইলেকট্রিক মাধ্যমে কোনো মুক্ত আধান থাকে না। আর যদি দুই পাতের মধ্যবর্তী স্থান ডাইইলেকট্রিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ করা হয়, তাহলে তড়িৎ প্রাবল্য শূন্য হয়। এর থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাইইলেকট্রিকের অভ্যন্তরে আধানের সামান্য সরণ হয় ফলে ডাইইলেকট্রিকের দুই পৃষ্ঠে আবিষ্ট আধানের উদ্ভব ঘটে।
=ডাইইলেকট্রিক পূর্ণ ধারকের ধারকত্ব/ডাইইলেকট্রিক শূন্য ধারকের ধারকত্ব