রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলেছিল পাকিস্তান সরকার । ১৯৭১ সালের জুন মাসে লে. জেনারেল টিক্কা খান 'পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স' জারি করেন । শুরুতে আনসার, মুজাহিদদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয় । পরে পাকিস্তানপন্থী অনেকে এই বাহিনীতে যোগ দেয় । এই বাহিনী গঠনে জেনারেল নিয়াজির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । রাজাকারদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল এক সপ্তাহ । রাজাকারদের ট্রেনিং দিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী । দখলদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে । রাজাকার বাহিনী ছাড়াও আলবদর নামে আরও একটি ভয়ঙ্কর বাহিনী ছিল । জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলা হয় । অন্যান্য ইসলামী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলশামস বাহিনী গঠিত হয় । বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান দায়িত্ব ছিল আলবদর বাহিনীর ওপর । তাই এই বাহিনী ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও হিংস্র প্রকৃতির। আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিল জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির (মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) মতিউর রহমান নিজামী। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় প্রথম যে সংগঠনের জন্ম হয় তা হলো 'শান্তি কমিটি'। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয় । পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং জামায়াতে ইসলামী, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, জামায়াতে ওলামায়ে ইসলাম, মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলের উৎসাহ ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তি কমিটি বিস্তার লাভ করে । অত্যাচার, নির্যাতন ও গণহত্যায় এই সংগঠন দখলদার বাহিনীর বিশ্বস্ত সহচর ছিল । কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা খয়েরুদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ‘ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটি গঠিত হয় । এই কমিটিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম, মৌলভি ফরিদ আহম্মদ, এএসএম সোলায়মানসহ অনেকে ছিল ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘পোড়ামাটি নীতি' অনুযায়ী বাংলাদেশের সব সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে । যে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ঘর-বাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাদের লক্ষ্য ছিল এই ভূখণ্ডের মানুষদের হত্যা করে কেবল ভূমির দখল নেওয়া। পাকিস্তানি বাহিনীকে এসব মানবতাবিরোধী অপকর্মে সহায়তা করেছে এদেশীয় কিছু দালাল চক্র ।