শব্দ Sound

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | | NCTB BOOK
14

শব্দ এক প্রকার শক্তি। কোন কম্পমান বস্তুর দ্বারা সৃষ্ট অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গই হল শব্দ। যেমন গীটারের তার, মানুষের বাকযন্ত্র, মাইক্রোফোনের পর্দা ইত্যাদি হতে উৎপন্ন তরঙ্গ শব্দ । 

শব্দ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম অত্যাবশ্যক। শব্দ তরঙ্গ যখন বায়ু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে আমাদের কানে প্রবেশ করে তখন স্নায়ু মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে এক প্রকার অনুভূতি জাগায়, যার ফলে আমরা শুনতে পাই। বায়ু বা গ্যাসীয় পদার্থ ছাড়া তরল ও কঠিন পদার্থও শব্দের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যেমন রেল লাইনে কান পাতলে বহুদূর হতে আগত ট্রেনের শব্দ শোনা যায়। শূন্য মাধ্যমে শব্দের উৎপত্তি ও সঞ্চালন কোনটিই সম্ভব নয়।

সংজ্ঞা : শব্দ এক প্রকার শক্তি যা একটি কম্পনশীল বস্তু হতে উৎপন্ন হয়ে ঐ বস্তু সংলগ্ন একটি নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে পৌঁছে শ্রুতির অনুভূতি জন্মায় বা জন্মাবার চেষ্টা করে। কম্পমান বস্তুটিকে স্বনক বা শব্দের উৎস (Source of sound) বলে।

 

১৭.১৪ শব্দের উৎপত্তি 

Production of sound

শব্দ উৎপত্তির মূল উৎসই বস্তুর কম্পন। বস্তুতে যতক্ষণ কম্পন থাকে ততক্ষণই এর শব্দ নিঃসরণ হয়। এ শব্দ নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে পৌঁছে শ্রবণের অনুভূতি জন্মায়। 

উদাহরণস্বরূপ : একটি সুরশলাকা বা সুরেলী কাঁটাকে [চিত্র ১৭.১২] আঘাত করলে সুরেলী কাঁটা কম্পিত হবে ও শব্দ উৎপন্ন হবে। সুরেলী কাঁটা হাত দ্বারা স্পর্শ করলে কম্পন বন্ধ হবে। ফলে শব্দ নিঃসরণও বন্ধ হবে। চিত্রে সুর নিঃসরণকালে একটি সুরশলাকার এক বাহুর সংস্পর্শে রক্ষিত একটি ঝুলন্ত পিথবল সুরশলাকার কম্পনের দরুন বার বার ধাক্কা খেয়ে সরে যাচ্ছে বুঝানো হয়েছে [চিত্র ১৭.১২]

চিত্র :১৭.১২

 

আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকেও শব্দের উৎপত্তি ও প্রকৃতি বুঝতে পারি। যেমন কোন ধাতব পদার্থ মেঝেতে পড়ে গেলে বা ধাতব পদার্থকে কোন ধাতব দণ্ড দিয়ে আঘাত করলে শব্দের সৃষ্টি হয়; কিন্তু হাত বা শক্ত কিছু দিয়ে চেপে ধরলে শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে কিংবা বাদ্যযন্ত্রের তারে টান দিয়ে বা ঢাক-ঢোলের চামড়ার পর্দা কাঁপিয়ে শব্দ সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে কম্পন থেকেই শব্দ সৃষ্টি হয়। এই কম্পন মাধ্যমে তরঙ্গের সৃষ্টি করে যা আমাদের কানের পর্দাকেও আন্দোলিত করে এবং আমরা শব্দ শুনতে পাই।

   সিদ্ধান্ত : কোন বস্তুর কম্পনের দরুন শব্দ উৎপন্ন হয়। সর্বপ্রকার শব্দ উৎপত্তির মূল উৎস বস্তুর কম্পন। কম্পনের ফলে যান্ত্রিক শক্তি হতে শব্দ উৎপন্ন হয়।

 

১৭.১৫ শব্দ একটি অগ্রগামী অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ

Sound is a longitudinal travelling wave

আমরা জানি, তরঙ্গ দু'রকমের — অনুপ্রস্থ এবং অনুদৈর্ঘ্য। শব্দ এক প্রকার তরঙ্গ। নিম্নের কারণগুলো প্রমাণ করে যে শব্দ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।

১। তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য বস্তুর কম্পন প্রয়োজন। শব্দ সৃষ্টির জন্যও বস্তুর কম্পন প্রয়োজন। 

 ২। তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের প্রয়োজন হয়, শব্দ সঞ্চালনের জন্যও স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।

 ৩। তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম স্থানান্তরিত হয় না। শব্দের সঞ্চালনের সময়ও মাধ্যমের কণাগুলোর স্থানান্তর ঘটে না।

৪। একস্থান হতে অন্যস্থানে সঞ্চালিত হতে তরঙ্গের কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়,শব্দ সঞ্চালনের জন্যও সময় প্রয়োজন হয় ।

৫। তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। শব্দের বেগও মাধ্যমের উপর নির্ভর করে। 

 ৬। প্রত্যেক তরঙ্গের যেমন প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার এবং অপবর্তন ঘটে শব্দের বেলায়ও তা ঘটে।

  ৭। শব্দতরঙ্গের ক্ষেত্রে মাধ্যমের সঙ্কোচন ও প্রসারণ ঘটে যা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য। 

   ৮। গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের (সমবর্তন (polarization) হয় না। সমবর্তন কেবল আড় তরঙ্গের ক্ষেত্রে ঘটে। এতে প্রমাণিত হয় যে শব্দ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।

  ৯। শব্দ কঠিন, তরল ও বায়বীয় মাধ্যমে সঞ্চালিত হতে পারে যা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে ঘটে। 

  উপরের ঘটনাসমূহ হতে প্রমাণিত হয় যে, শব্দ উৎসের কম্পনের ফলে শব্দ উৎপন্ন হয় এবং অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গাকারে বায়ু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে আমাদের কানে পৌঁছায় এবং আমরা তা শুনতে পাই । অতএব, শব্দ একটি অগ্রগামী অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।

১৭.১৬ দুটি মাধ্যমে একটি শব্দের বেগের মধ্যে সম্পর্ক 

   Relation between velocities of a sound in two media

   মনে করি A ও B দুটি মাধ্যম।

ধরি কোন একটি শব্দের বেগ ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যথাক্রমে A মাধ্যমে vA এবং λA ও B মাধ্যমে যথাক্রমে vB এবং λB। যদি শব্দের কম্পাঙ্ক ‘n’ হয়, তবে

A মাধ্যমে শব্দের বেগ vA=nλA  (18)

এবং B মাধ্যমে শব্দের বেগ vB=nλB  (19)

(18) নং সমীকরণকে (19) নং সমীকরণ দ্বারা ভাগ করে পাই,

    vAvB=λAλB     (20)

    এটাই হল দুটি মাধ্যমে শব্দের বেগের মধ্যে সম্পর্ক।

কোন এক মাধ্যমে দুটি শব্দের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক :

 মনে করি একটি মাধ্যমে দুটি তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে। একটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য λ1 এবং কম্পাঙ্ক n1। অপরটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য λ2 এবং কম্পাঙ্ক n2 |

মাধ্যমে তরঙ্গের বেগ v হলে,

প্রথম তরঙ্গের ক্ষেত্রে v =n1  λ1।    (22)

এবং দ্বিতীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রে v = n2λ2

এখন (22) ও (23) সমীকরণ হতে পাই,

n1  λ1n2λ2

বা, y1y2=n2n1

এটিই হল তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক।

 

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Promotion