সম্পদের শ্রেণিবিভাগ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - গৃহসম্পদ | NCTB BOOK

প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু সম্পদের অধিকারী। তাই সম্পদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ও সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সম্পদের শ্রেণি বিভাগ সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন ।

সম্পদকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় –

 মানবীয় সম্পদ

২। বস্তুগত সম্পদ

সম্পদ

মানবীয়

সময়

শক্তি

জ্ঞান

দৃষ্টিভঙ্গি

সামর্থ্য ও দক্ষতা

অর্থ

জমি, ঘর-বাড়ি

অলংকার

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা

১। মানবীয় সম্পদ যা মানুষের গুণ, চর্চা বা অনুশীলনের মধ্যমে বৃদ্ধি পায় তাকে মানবিক সম্পদ বলে। যেমন : সময়, বিদ্যা, শক্তি, দক্ষতা, জ্ঞান ইত্যাদি। প্রতি পরিবারে একাধিক সদস্য থাকে। প্রত্যেক সদস্যের

সামর্থ্য অনুযায়ী সময়, শক্তি, জ্ঞান, দক্ষতার যদি সুষ্ঠু ব্যবহার করা যায় তবে পরিবারটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। পরিবারের সদস্যদের দক্ষতা, পারদর্শিতা, মনোভাব গৃহ ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে এবং অমানবীয় বা বস্তুবাচক সম্পদের অপচয় হ্রাস করে এবং সমৃদ্ধি ঘটায়। যেমন— বাজেট করে চলা। বাজেট করে চললে অর্থকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়। অর্থের অপচয় হ্রাস পায় ।

আবার সময় তালিকা করে চললে সব কাজ সময়মতো শেষ করে জীবনে সফলতা অর্জন করা যায়। গৃহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ও বস্তুগত সম্পদ বৃদ্ধিতে মানবীয় সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে মানবীয় সম্পদগুলোর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো ।

সময় (Time) – গার্হস্থ্য অর্থনীতিবিদগণ সময়কে মানবীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সময় ছোট- বড়, ধনী-গরিব সব মানুষের জন্যই সমান। সবার জন্যই ২৪ ঘন্টা সময় নির্ধারিত। যে এর সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারে সে জীবনে সফল হয় ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।

শক্তি (Energy) – শক্তি দুই ধরনের হয়। শারীরিক শক্তি ও মানসিক শক্তি। যে কোনো কাজ করার জন্য দুই ধরনের শক্তির প্রয়োজন হয়। উপযুক্ত অভ্যাস, অনুশীলন ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা দ্বারা শক্তি ব্যয় করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে সফলতা অর্জন করা যায়।

জ্ঞান (Knowledge) – গৃহকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ হচ্ছে জ্ঞান। পুষ্টিবিষয়ক

জ্ঞান, বস্ত্র বিষয়ক জ্ঞান, শিশু পালনের জ্ঞান, গৃহপরিচালনা সম্পর্কিত জ্ঞান, ধর্মীয় জ্ঞান, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক

জ্ঞানই একজন মানুষকে পরিবারে ও কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

দৃষ্টিভঙ্গি (Out look) – ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য দেখা যায়। চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, বিশ্বাস ইত্যাদি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টি। শৈশবে শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে পিতা-মাতার চিন্তাধারা থেকে। তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই জীবনকে পরিচালিত করে।

সামর্থ্য ও দক্ষতা (Ability and Skill) – পরিবারের সদস্যদের সামর্থ্য ও দক্ষতা পরিবারের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। তাই সামর্থ্য ও দক্ষতা পরিবারের সম্পদ। যে পরিবারের সদস্যদের সামর্থ্য ও দক্ষতা যত বেশি সে পরিবার তত উন্নত। তবে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের সামর্থ্য ও দক্ষতা এক রকম নয়। সামর্থ্য ও দক্ষতা অনুযায়ী পরিবারের সকল কাজ ভাগ করে নিলে কাজের মান ভালো হয় এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

কাজ – মানবিক সম্পদের গুরুত্ব লেখ।

 

২। বস্তুগত সম্পদ : যে বস্তু ও সেবা চাহিদা পুরণে সহায়ক তাই বস্তুগত সম্পদ। যেমন : টাকা, জমি, বাড়িঘর ইত্যাদি। আবার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি, যেমন— রাস্তা-ঘাট, বাজার, স্কুল-কলেজ, সুবিধা ইত্যাদি আমাদের চাহিদা পূরণ করে এবং গৃহজীবনকে সহজ করে। পরিবহন

২০১৮

অর্থ (Money) – অর্থ একটি বস্তুগত সম্পদ। এর বিনিময় মূল্য আছে এবং হস্তান্তরযোগ্য, পরিমাপযোগ্য । মানুষের জীবনে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থ দ্বারা আমরা দ্রব্য ও সেবাকর্ম ক্রয় করে থাকি। এর সুষ্ঠু ব্যবহার জীবনে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দান করে।

 

 

জমি, বাড়ি ও অলংকার (Land, House and Ornament) – এর বিনিময় মূল্য আছে। পরিমাপ করা যায়। মালিকানা হস্তান্তর করা যায়। তবে এর ব্যবহারে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। অপরিকল্পিতভাবে সম্পত্তি গড়ে তুললে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা (Social and National Facilities) - সমাজ থেকে আমরা যেসব সুযোগ- সুবিধা লাভ করি তাই সামাজিক সম্পদ। রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্কুল-কলেজ, বাজার ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুবিধা অধিকার সূত্রে মানুষ পেয়ে থাকে। পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি পারিবারিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করে। এইগুলো একটি দেশের জনগণ অধিকার সূত্রে ভোগ করার সুযোগ পায়

Content added By
Promotion