পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র - গতিবিদ্যা
Please, contribute to add content into গতিবিদ্যা.
Content

কোনো বস্তুর গতি বর্ণনার জন্য প্রথমেই আমাদের একটি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা বা প্রসঙ্গ কাঠামো পছন্দ করে নিতে হয়। যে দৃঢ় বস্তুর সাপেক্ষে কোনো স্থানে কোনো বিন্দু বা বস্তুকে সুনির্দিষ্ট করা হয় তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।

কোনো টেবিল, ঘরের মেঝে, রাস্তা, পার্ক, পৃথিবীপৃষ্ঠ, সূর্য, ছায়াপথ যে কোনো কিছুকে প্রসঙ্গ কাঠামো বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এদের সব সময়ই সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

একমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো : একমাত্রিক বা রৈখিক গতির ক্ষেত্রে যে সরলরেখা বরাবর বস্তুটি গতিশীল প্রথমেই তার একটি বিন্দুকে মূলবিন্দু এবং একটি দিককে ধনাত্মক ধরে নিতে হয়। সেই সরলরেখাটিকে X, Y বা Z যেকোনো একটি অক্ষ হিসেবে নামকরণ করা হয়। সাধারণত আমরা ভূ-পৃষ্ঠ বরাবর সরলরৈখিক গতির ক্ষেত্রে একমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামোতে অক্ষটিকে X-অক্ষ ধরে থাকি। আর খাড়া উপর নিচ বরাবর একমাত্রিক কাঠামোতে Y অক্ষ ধরে থাকি। কিন্তু এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এ প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে যাবতীয় পরিমাপ করতে হয়।

দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো : কোনো বস্তু যদি একটি সমতলে গতিশীল থাকে তাহলে তার গতিকে দ্বিমাত্রিক গতি বা সমতলীয় গতি বলা হয়। দ্বিমাত্রিক গতি বর্ণনার জন্য আমাদের দুটি অক্ষের তথা দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামোর প্রয়োজন হয়। দ্বিমাত্রিক স্থানে সুবিধাজনক যেকোনো একটি বিন্দুকে মূল বিন্দু ধরে, ঐ বিন্দুকে ছেদকারী পরস্পর লম্ব দুটি সরলরেখা আঁকা হয়। সাধারণত যেকোনো একটি সরলরেখাকে X-অক্ষ এবং অপরটিকে Y-অক্ষ ধরা হয়। টেবিলের বা ঘরের কোনো দেয়াল বা মেঝেতে পিঁপড়ার গতি দ্বিমাত্রিক গতির উদাহরণ।

ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো কোনো বস্তু যদি কোনো স্থানে (space) গতিশীল থাকে তাহলে তার গতিকে ত্রিমাত্রিক গতি বা স্থানিক গতি বলা হয়। ত্রিমাত্রিক গতি বর্ণনার জন্য আমাদেরকে তিনটি অক্ষের তথা ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামোর প্রয়োজন হয়। ত্রিমাত্রিক স্থানে সুবিধাজনক যেকোনো একটি বিন্দুকে মূল বিন্দু ধরে ঐ বিন্দুকে ছেদকারী পরস্পর লম্ব তিনটি সরলরেখা বিবেচনা করা হয়। এ সরলরেখা তিনটিকে X, Y ও Z অক্ষ ধরা হয়। কোনো কক্ষে একটি উড়ন্ত মাছির গতি ত্রিমাত্রিক গতির উদাহরণ।

বিভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর অবস্থান ও গতি বিষয়ক বিভিন্ন রাশির মান বিভিন্ন হতে পারে। 

করে দেখো তোমার পড়ার টেবিলের উপর একটি বই রাখো। মনে কর, তুমি এর একটি কোণার অবস্থান নির্দেশ করতে চাও। এখন তুমি তোমার টেবিলকে একটি প্রসঙ্গ কাঠামো এবং এর একটি কোণাকে মূল বিন্দু ধরে একটি দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো বিবেচনা করতে পারো। আবার, তোমার ঘরের একটি কোণাকে মূল বিন্দু গণ্য করে আরেকটি প্রসঙ্গ কাঠামো ধরতে পারো। এখন এ দুই প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বই-এর কোণার স্থানাঙ্ক বের কর।

স্থানাঙ্কগুলোর মান ভিন্ন হওয়ার কারণ প্রসঙ্গ কাঠামো ভিন্ন। তুমি যদি অন্য কোনো প্রসঙ্গ কাঠামো বিবেচনা করতে তাহলে অন্য মান পেতে ।

৩.২। জড় এবং অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো

Inertial and noninterial Reference Frame

জড় প্রসঙ্গ কাঠামোকে গ্যালিলীয় প্রসঙ্গ কাঠামো বা নিউটনীয় প্রসঙ্গ কাঠামোও বলা হয়। এ প্রসঙ্গ কাঠামোতে নিউটনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় গতিসূত্র খুব ভালো খাটে । একে অন্য কথায় এভাবে বলা যায়, জড় প্রসঙ্গ কাঠামো হলো সে প্রসঙ্গ কাঠামো যার মধ্যে নিউটনের গতিসূত্র অর্জন করা যায়। এরা পরস্পরের সাপেক্ষে ধ্রুব বেগে গতিশীল।

সংজ্ঞা : পরস্পরের সাপেক্ষে ধ্রুব বেগে গতিশীল যে সব প্রসঙ্গ কাঠামোতে নিউটনের গতিসূত্র অর্জন করা যায় তাদেরকে জড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে। 

চিত্র :৩.১

চিত্র ৩.১-এ জড় প্রসঙ্গ কাঠামো দেখানো হয়েছে।

 

  অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো: যে সকল প্রসঙ্গ কাঠামো পরস্পরের সাপেক্ষে অসম বেগে গতিশীল অর্থাৎ যে সকল প্রসঙ্গ কাঠামোর ত্বরণ থাকে তাদেরকে অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।

লিফট, রকেট, কৃত্রিম উপগ্রহ, ইত্যাদিকে আমরা প্রসঙ্গ কাঠামো বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এগুলো হবে অজড় কাঠামো, কেননা এগুলো সমবেগে চলে না। এদের ত্বরণ হয়।

Content added || updated By
নিউটনের প্রথম সূত্র প্রযোজ্য হয়
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র প্রযোজ্য হয়
নিউটনের উভয় সূত্র প্রযোজ্য হয়
কোনোটিই নয়

কোনো বস্তু স্থিতিশীল না গতিশীল তা বোঝার জন্য বস্তুর আশপাশ থেকে আর একটা বস্তুকে নিতে হয় যাকে বলা হয় প্রসঙ্গ বস্তু। এ প্রসঙ্গ বস্তু ও আমাদের আলোচ্য বস্তুর অবস্থান যদি সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে তাহলে আলোচ্য বস্তুটি প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে স্থির বলে ধরা হয়। আলোচ্য বস্তু ও প্রসঙ্গ বস্তু যদি একই দিকে একই বেগে চলতে থাকে তাহলেও কিন্তু সময়ের সাথে বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের কোনো পরিবর্তন হবে না, যদিও প্রকৃতপক্ষে বস্তুটি গতিশীল। চলন্ত ট্রেনের কামরার দুই বন্ধু যদি মুখোমুখি বসে থাকে, তবে একজনের সাপেক্ষে অন্যের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। সুতরাং বলা যেতে পারে, একজনের সাপেক্ষে অন্যজন স্থির। কিন্তু যদি ট্রেন লাইনের পাশে দাঁড়ানো কোনো ব্যক্তি তাদেরকে দেখেন তবে ঐ ব্যক্তির সাপেক্ষে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থাৎ লাইনের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির সাপেক্ষে তারা উভয়ই গতিশীল।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কোনো বস্তু প্রকৃতপক্ষে স্থির কিনা তা নির্ভর করছে প্রসঙ্গ বস্তুর উপর। প্রসঙ্গ বস্তু যদি প্রকৃতপক্ষে স্থির হয় তাহলে তার সাপেক্ষে যে বস্তু স্থিতিশীল রয়েছে সেও প্রকৃতপক্ষে স্থির। এ ধরনের স্থিতিকে আমরা পরম স্থিতি বলতে পারি। অর্থাৎ প্রসঙ্গ বস্তুটি যদি পরম স্থিতিতে থাকে তাহলেই শুধু কোনো বস্তু তার সাপেক্ষে স্থির থাকলে সে বস্তুকে পরম স্থিতিশীল বলা যেতে পারে। সেরূপ পরম স্থিতিশীল প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর গতিকে আমরা পরম গতি বলি । কিন্তু এ মহাবিশ্বে এমন কোনো প্রসঙ্গ বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়, যা প্রকৃতপক্ষে স্থির রয়েছে। কারণ পৃথিবী প্রতিনিয়ত সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, সূর্যও তার গ্রহ, উপগ্রহ নিয়ে ছায়াপথে গতিশীল। কাজেই আমরা যখন কোনো বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলি তা আমরা কোনো আপাত স্থিতিশীল বস্তুর সাপেক্ষে বলে থাকি। কাজেই আমরা বলতে পারি, এ মহাবিশ্বে সকল স্থিতিই আপেক্ষিক সকল গতিই আপেক্ষিক। কোনো গতিই পরম নয়, পরম নয় কোনো স্থিতিই।

৩.৪। আপেক্ষিক গতি Relative Motion

কোনো বস্তু স্থির না সচল তা বোঝার জন্য আমরা কোনো স্থির বস্তুর সাথে তুলনা করে থাকি। যেহেতু এ মহাবিশ্বে পরম স্থিতিশীল কোনো বস্তু পাওয়া যায় না তাই আমাদেরকে কোনো বস্তুর গতি অপর গতিশীল বস্তুর গতির সাথে তুলনা করে বুঝতে হয়। তাই বলা যায়, এ মহাবিশ্বে সকল গতিই আপেক্ষিক। পাশাপাশি থেমে থাকা দুটি ট্রেনের একটি চলতে শুরু করলে গতিশীল ট্রেনের যাত্রীর কাছে মনে হবে যেন পাশের ট্রেনটি বিপরীত দিকে চলতে শুরু করেছে। আসলে ট্রেন দুটির মধ্যবর্তী পারস্পরিক গতির জন্য এরূপ মনে হয়। চলমান যাত্রীর সাপেক্ষে থেমে থাকা গাড়ির এই মনে হওয়া গতিই হচ্ছে আপেক্ষিক গতি। সুতরাং আমরা বলতে পারি, দুটি চলমান বস্তুর একটির সাপেক্ষে অপরটির গতিকে আপেক্ষিক গতি বলে ।

এমনকি প্রসঙ্গ কাঠামোর উপর ভিত্তি করে কোনো বস্তুর এ আপেক্ষিক গতির প্রকৃতি বা গতিপথও ভিন্ন হতে পারে উদাহরণ হিসেবে সুষম বেগে গতিশীল কোনো ট্রেনের কথা বিবেচনা করা যাক। ট্রেনে বসে থাকা একজন যাত্রী ট্রেনের জানালা দিয়ে একটি পাথর ফেলে দিলেন। এ যাত্রীর নিকট মনে হবে যে পাথরটি খাড়া নিচের দিকে পড়ছে। কিন্তু রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পর্যবেক্ষকের নিকট মনে হবে যে পাথরটি পরাবৃত্তাকার (parabolic) পথে পড়ছে।

৩.৫। গতি বিষয়ক কতগুলো রাশি 

Few Quntities relating Motion

অবস্থান ভেক্টর (Position Vector)

 

সংজ্ঞা : প্রসঙ্গ কাঠামোর মূলবিন্দুর সাপেক্ষে যে ভেক্টর দিয়ে কোনো বিন্দুর অবস্থান নির্দেশ করা হয় তাকে অবস্থান ভেক্টর বলে। 

ব্যাখ্যা : একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে প্রসঙ্গ কাঠামোর মূলবিন্দু থেকে ধনাত্মক X-অক্ষ বরাবর x দূরত্বে কোনো বিন্দু অবস্থিত হলে তার অবস্থান ভেক্টর হবে,

r=xi^

ত্রিমাত্রিক বা সাধারণ ক্ষেত্রে অবস্থান ভেক্টর হলো r=xi^ +yj ^+zk^  (3.1)

মাত্রা ও একক : অবস্থান ভেক্টরের মাত্রা হচ্ছে দৈর্ঘ্যের মাত্রা L এবং এর একক হচ্ছে মিটার (m)।

সরণ (Displacement )

কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হলে সরণ ঘটে।

সংজ্ঞা : কোনো বস্তুর অবস্থান ভেক্টরের পরিবর্তনকে সরণ বলে।

 ব্যাখ্যা : কোনো বস্তুর শেষ অবস্থান ভেক্টর rf এবং আদি অবস্থান ভেক্টর ri এর পার্থক্যই হচ্ছে সরণ r

r=rf-ri  … (3.2)

X-অক্ষ বরাবর একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে সরণের মান হবে x =xf-xi

 সরণ একটি ভেক্টর রাশি।

কোনো বস্তুর আদি অবস্থান ও শেষ অবস্থানের মধ্যবর্তী ন্যূনতম দূরত্ব অর্থাৎ সরলরৈখিক দূরত্বই হচ্ছে সরণের মান এবং সরণের দিক হচ্ছে বস্তুর আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থানের দিকে।

মাত্রার একক : এর মাত্রা L এবং একক m

বেগ ও দ্রুতি (Velocity and Speed)

কোনো বস্তুর অবস্থান ভেক্টর থেকে আমরা জানতে পারি বস্তুটি প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন দিকে কত দূরে অবস্থিত, সরণ থেকে জানতে পারি বস্তু কোন দিকে কত দূরত্ব অতিক্রম করেছে। আর বেগ থেকে আমরা জানতে পারবো বস্তুটি প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন দিকে কত দ্রুত যাচ্ছে। বেগের সংজ্ঞার আগে গড় বেগের সংজ্ঞা আলোচনা করা যাক। 

গড় বেগের সংজ্ঞা: যেকোনো সময় ব্যবধানে বস্তুর গড়ে প্রতি একক সময়ে যে সরণ হয় তাকে বস্তুটির গড় বেগ বলে।

ব্যাখ্যা : t সময় ব্যবধানে বস্তুর সরণ r  হলে গড় বেগ

v¯=rt

X-অক্ষ বরাবর একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে গড় বেগ হবে

v¯=xt

গড় বেগ একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো বস্তু কত দ্রুত এবং কোন দিকে চলছে তা নির্দেশ করে। এখন আমরা বেগের সংজ্ঞা দেব—যা নির্দেশ করবে কোনো একটি বিশেষ মুহূর্তে বস্তুটি কত দ্রুত এবং কোন দিকে চলছে। যেহেতু এ বেগ কোনো গতিশীল বস্তুর কোনো একটি বিশেষ ক্ষণের বেগ নির্দেশ করে এজন্য এ বেগকে তাৎক্ষণিক বেগও বলা হয়। 

বেগ বা তাৎক্ষণিক বেগের সংজ্ঞা: সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে সময়ের সাথে বস্তুর সরণের হারকে বেগ বা তাৎক্ষণিক বেগ বলে।

বেগের মাত্রা ও একক : বেগের মাত্রা হলো LT এবং একক ms-1

দ্রুতির সংজ্ঞা : বস্তু একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে দ্রুতি বলে। 

 কোনো বস্তুর বেগের মানই হচ্ছে তার ও পতিক্রম করে তাকে প্রতি দ্রুতির পরিমাপ। 

  দ্রুতির মাত্রা ও একক যথাক্রমে বেগের মাত্রা ও এককের অনুরূপ।

বেগ ও সময়: 

কোনো বস্তুর বেগ সময়ের উপর নির্ভর করতে পারে আবার নাও করতে পারে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর বেগ সমবেগ হতে পারে আবার অসমবেগও হতে পারে। সময়ের উপর বেগ নির্ভর না করলে তা হবে সমবেগ আর নির্ভর করলে তা হবে অসমবেগ।

সমবেগ : 

 যদি কোনো বস্তুর গতিকালে তার বেগের মান ও দিক অপরিবর্তিত থাকে তাহলে সেই বস্তুর বেগকে সমবেগ বলে। অর্থাৎ কোনো বস্তু যদি নির্দিষ্ট দিকে সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে তাহলে বস্তুর বেগকে সমবেগ বলে।

উদাহরণ : শব্দের বেগ, আলোর বেগ প্রভৃতি সমবেগের প্রকৃষ্ট প্রাকৃতিক উদাহরণ। শব্দ নির্দিষ্ট দিকে সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে আর তা হচ্ছে 0 C তাপমাত্রায় বায়ুতে প্রতি সেকেন্ডে 332m। শব্দ কোনো নির্দিষ্ট দিকে প্রথম সেকেন্ডে 332 m, দ্বিতীয় সেকেন্ডে 332m এবং এরূপে প্রতি সেকেন্ডে 332 m করে চলতে থাকে। এখানে শব্দের বেগের মান ও দিক একই থাকায় শব্দের বেগ 332ms-1 হলো সমবেগ।

সমবেগ সম্পন্ন কোনো বস্তুর গতি সমবেগ গতি বা সুষম গতি। সুতরাং শব্দের গতি, আলোর গতি প্রভৃতি সুষম গতি ।

অসম বেগ : কোনো বস্তুর গতিকালে যদি তার বেগের মান বা দিক বা উভয়ই পরিবর্তিত হয় তাহলে সেই বেগকে অসম বেগ বলে।

উদাহরণ : আমরা সচরাচর যে সব যানবাহনের বা বস্তুর গতি দেখে থাকি সেগুলোর গতি অসম বেগ গতি ।

আপেক্ষিক বেগ:

দুটি চলমান বস্তুর একটির সাপেক্ষে অপরটির বেগকে আপেক্ষিক বেগ বলে।

আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় পদ্ধতি : দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক বেগ নিচের পদ্ধতিতে বের করা যায়। যদি দুটি বস্তু A এবং B উভয়ের স্থান পরিবর্তিত হয়, তাহলে B-এর সাপেক্ষে A-এর আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করতে গেলে A-এর বেগের সাথে B-এর সমান ও বিপরীতমুখী বেগ যোগ করতে হবে। এ দুটি বেগের লব্ধিই হবে B-এর সাপেক্ষে A-এর আপেক্ষিক বেগ।

(ক) যখন বস্তু দুটি একই দিকে যায় : 

ধরা যাক, A ও B বস্তু দুটি যথাক্রমে v1 ও v2 বেগে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছে। তাহলে B-এর সাপেক্ষে A এর আপেক্ষিক বেগ হবে (V1 - V2 )

একই রকমভাবে A-এর সাপেক্ষে B-এর আপেক্ষিক বেগ হবে (V2 - V1) বা ( - V1- V2 ) । যদি A এর বেগ B এর চেয়ে বেশি হয় তবে A দেখবে, B পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে (v1 - v2) বেগে যাচ্ছে যদিও এর প্রকৃত বেগ পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে। 

(খ) যখন বস্তু দুটি বিপরীত দিকে যায় : 

ধরা যাক, A ও B বস্তু দুটি যথাক্রমে v1 এবং v2 বেগে বিপরীত দিকে চলছে। এ অবস্থায় B-এর সাপেক্ষে A-এর আপেক্ষিক বেগ হবে v1 - ( - v2 ) = (V1+ v2)। একইভাবে A-এর সাপেক্ষে B-এর আপেক্ষিক বেগ হবে v2 - ( - V1) = (v2 + v1)। অর্থাৎ প্রত্যেকে দেখবে যেন অপর বস্তুটি বস্তুদ্বয়ের মিলিত বেগ নিয়ে চলছে ।

চিত্র : ৩.২

(গ) যখন বস্তু দুটি যেকোনো দুই দিকে যায় :

ধরা যাক, দুটি বস্তু A ও B যথাক্রমে v1 ও v2 বেগ সহকারে α কোণে আনত অবস্থায় OP ও Q অভিমুখে চলছে (চিত্র ৩.২) । OA ও OB যথাক্রমে ঐ বেগ দুটির মান ও দিক প্রকাশ করছে। এখন B এর সাপেক্ষে A এর আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করতে হলে BO রেখাকে B পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো যেন OB = OB' হয়। এখন OB তাহলে- v2 এর মান ও দিক নির্দেশ করছে।

এবার OACB সামান্তরিকটি পূর্ণ করে ভেক্টরের সামান্তরিক সূত্র প্রয়োগ করলে OC কর্ণই হবে v1 ও -v2 এর লব্ধি ভেক্টরের মান ও দিক । অর্থাৎ OC কর্ণই B এর সাপেক্ষে A এর আপেক্ষিক বেগের মান ও দিক নির্দেশ করবে। আপেক্ষিক বেগ v হলে

v=v21+v22+2v1v2 cos (180°-α)

একই রকমভাবে A এর সাপেক্ষে B এর আপেক্ষিক বেগ নির্ণয় করতে হলে AO কে A' পর্যন্ত এমনভাবে বর্ধিত করতে হবে যেন OA = OA' হয় (চিত্রে দেখানো হয়নি)। তাহলে OA' হবে vi এর ঋণাত্মক ভেক্টর। এবার OBC'A' সামান্তরিকটি সম্পূর্ণ করে OC" কর্ণ আঁকলে এই কর্ণের মান ও দিক A এর সাপেক্ষে B এর আপেক্ষিক বেগ নির্দেশ করবে।

বৃষ্টির ফোঁটা চলন্ত গাড়ির সামনের কাচকে ভিজিয়ে দেয়, কিন্তু পেছনের কাচকে ভিজায় না

ধরা যাক, O বিন্দুতে একটি গাড়ি OA বরাবর vcবেগে গতিশীল (চিত্র : ৩.৩)। ঐ স্থানে বৃষ্টি খাড়া নিচের দিকে OB বরাবর দুই বেগে vrপড়ছে । এখন আপেক্ষিক বেগের সংজ্ঞানুসারে গাড়ির সাপেক্ষে বৃষ্টির বেগ v=vr-vcসামান্তরিকের সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় v করতে হলে OA রেখাকে পেছন দিকে OC পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো যেন OA = OC হয়। তাহলে OC নির্দেশ করবে vc  এর মান ও দিক । এবার OCDB সামান্তরিকটি পূর্ণ করে ভেক্টরের সামান্তরিকের সূত্র প্রয়োগ করলে OD কর্ণই হবে  vr ও  vcএর লব্ধি  v এর মান ও দিক । অর্থাৎ OD কর্ণ গাড়ির সাপেক্ষে বৃষ্টির বেগের মান ও দিক নির্দেশ করবে ।

চিত্র : ৩.৩

সুতরাং আপেক্ষিক বেগের কারণে গতিশীল গাড়ি তথা গাড়ির আরোহীরা দেখবেন বৃষ্টি খাড়া নিচের দিকে না পড়ে উল্লম্বের সাথে অনুভূমিকের দিকে ৪ কোণ করে তির্যকভাবে আসছে। ফলে গাড়ির সামনের কাচে বৃষ্টি তির্যকভাবে পড়বে এবং কাচকে ভিজাবে। কিন্তু পেছনের কাচের সামনে গাড়ির ছাদ থাকায় বৃষ্টি তির্যকভাবে ছাদে পড়বে, কাচে পড়তে পারবে না। ফলে পেছনের কাচকে ভিজাবে না।

বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় হাঁটলে ছাতা হেলিয়ে ধরতে হয়

বৃষ্টির মধ্যে পথিক দাঁড়িয়ে থাকলে বৃষ্টি খাড়াভাবে তার গায়ে পড়বে, ফলে বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে ছাতা মাথার ওপরে খাড়া সোজা করে ধরে রাখতে হবে। কিন্তু যদি পথিক হাঁটা শুরু করেন তখন তার সাপেক্ষে বৃষ্টির আপেক্ষিক বেগ আর খাড়া নিচের দিকে থাকবে না । তিনি দেখবেন বৃষ্টি উল্লম্বের সাথে কোণ করে তির্যকভাবে সামনের দিক থেকে আসছে । ফলে বৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে উল্লম্বের সাথে কোণ করে সামনের দিকে ছাতা ধরতে হবে । তিনি যত দ্রুত হাঁটবেন, বৃষ্টির আপেক্ষিক বেগ উল্লম্বের সাথে তত বেশি কোণ উৎপন্ন করবে। ফলে ছাতাকে বেশি কোণে হেলিয়ে ধরতে হবে ।

আমরা দেখি বৃষ্টির মধ্যে দ্রুতগামী মোটর সাইকেল আরোহীর কাছে বৃষ্টি প্রায় সামনের দিক থেকে আসছে এবং তাকে সামনের দিকে বেশি ভিজিয়ে দেয়। কারণ আরোহীর বেগ বেশি থাকায় তার সাপেক্ষে বৃষ্টির আপেক্ষিক বেগ উল্লম্বের সাথে বেশি কোণ উৎপন্ন করে।

বায়ু প্রবাহের দিকে দৌড়ালে বাতাসের বেগ কম মনে হয়

মনে করি কোনো একদিকে বাতাস vaবেগে প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বায়ু প্রবাহের দিকে vp বেগে দৌড়াচ্ছেন । সুতরাং উক্ত ব্যক্তির সাপেক্ষে বাতাসের আপেক্ষিক বেগ v  হবেv  = va -  vp যেহেতু দুটি বেগের দিক একই, - সুতরাং ভেক্টরের যোগ বিয়োগের নিয়ম অনুসারে তাদের বিয়োগ ফলের মান হবে বেগ দুটির মানের বিয়োগ ফলের সমান, 

v= va -  vp 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে দৌড়বিদের সাপেক্ষে বাতাসের আপেক্ষিক বেগ বাতাসের বেগের চেয়ে কম । তাই বাতাসের প্রবাহের দিকে দৌড়ালে বাতাসের বেগ কম মনে হয় ।

ত্বরণ (Acceleration )

কোনো বস্তুর ত্বরণ দ্বারা বস্তুটির বেগের মান বা দিক বা উভয়ই কত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানা যায়। ত্বরণ সময়ের সাথে বস্তুর বেগের পরিবর্তনের হার নির্দেশ করে। বেগের মতো আমরা ত্বরণের সংজ্ঞার আগে গড় ত্বরনের সংজ্ঞা আলোচনা করবো।

গড় ত্বরণের সংজ্ঞা : যেকোনো সময় ব্যবধানে বস্তুর গড়ে প্রতি একক সময়ে বেগের যে পরিবর্তন হয় তাকে বস্তুটির গড় ত্বরণ বলে।

 t সময় ব্যবধানে বস্তুর বেগের পরিবর্তন v হলে গড় ত্বরণ

a¯=vt

X-অক্ষ বরাবর একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে গড় ত্বরণ হবে

a=vt

গড় ত্বরণ একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর বেগ কোন দিকে কত পরিবর্তিত হয়েছে তা নির্দেশ করে। এখন আমরা ত্বরণের সংজ্ঞা দেব — যা নির্দেশ করবে কোনো একটি বিশেষ মুহূর্তে বস্তুটির বেগ কোন দিকে কত পরিবর্তিত হচ্ছে। যেহেতু এ ত্বরণ গতিশীল বস্তুর কোনো একটি বিশেষ ক্ষণের ত্বরণ নির্দেশ করে এজন্য এ ত্বরণকে তাৎক্ষণিক ত্বরণও বলা হয়।

Content added || updated By

অবস্থান ও সময়

কোনো গতিশীল বস্তুর অবস্থান বা স্থানাঙ্ক X সময় t এর উপর নির্ভর করে। এ নির্ভরশীলতা জানা থাকলে আমরা যে কোনো মুহূর্তে বস্তুটির অবস্থান বের করতে পারি।

 ধরা যাক, কোনো বস্তুর অবস্থান x কে সময় t এর অপেক্ষকরূপে নিম্নোক্ত সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

x = 18m + (12ms-1 ) t - (1.2ms-2 ) t2  ... … (3.10)

সময় ও অবস্থান সারণি

(3.10) সমীকরণে t এর যে কোনো মান বসালে ঐ সময়ে বস্তুটির অবস্থান পাওয়া যায়। 1 = 0.0 থেকে 1 = 8.0 s পর্যন্ত  1 s অন্তর অন্তর বস্তুর অবস্থান ৩.১ সারণিতে প্রদত্ত হলো।

সারনি ৩.১

একটি সোজা, মসৃণ ও ঢালু রাস্তা বরাবর উপরের দিকে গতিশীল কোনো গাড়ির ইঞ্জিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে গাড়িটি ক্রমাগত ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে, এক সময় মুহূর্তের জন্য থামে এবং পুনরায় ঢাল বরাবর নিচে নামতে থাকে। এ রকম একটি গাড়ির গতি বিশ্লেষণ করে তার অবস্থান কে সময়। এর অপেক্ষকরূপে (3.10) সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে এর অবস্থান ৩.১ সারণিতে দেখানো হয়েছে। এখানে গাড়িটির গতিপথ বরাবর x পরিমাপ করা হয়েছে এবং ঢাল বরাবর উপরের দিককে ধনাত্মক ধরা হয়েছে।

অবস্থান-সময় লেখচিত্র

একটি ছক কাগজের X-অক্ষের দিকে সময় এবং Y-অক্ষের দিকে অবস্থান নিয়ে অবস্থান-সময় লেখচিত্র অঙ্কন করা হয়। ৩.১ সারণির উপাত্তের জন্য X বনাম t লেখচিত্র ৩-৪ক চিত্রে দেখানো হলো। এ লেখচিত্র থেকে যেকোনো সময়তে বস্তুর অবস্থান x নির্ণয় করা যায়। যেমন : ৩.৪ খ চিত্রে OM = 1 এর জন্য অবস্থান ON = x পাওয়া যায়।

চিত্র :৩.৪ (ক) (খ)

অবস্থান সময় লেখচিত্র থেকে বেগ নির্ণয়

x বনাম লেখচিত্র থেকে বস্তুর যেকোনো মুহূর্তের t বেগ নির্ণয় করা যায়। কোনো বক্ররেখার কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শকের ঢালকেই ঐ বিন্দুতে বক্ররেখার ঢাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। x বনাম লেখচিত্রে t  এর সাপেক্ষে x এর অন্তরক dxdt দ্বারা এই ঢাল প্রকাশ করা হয় । যেহেতু V = dxdt, তাই কোনো বিশেষ মুহূর্তে x বনাম । dt লেখচিত্রের ঢাল দ্বারা ঐ মুহূর্তের বেগ পাওয়া যায়। ৩.৫ চিত্রে t সময়ে লেখচিত্রের P বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক APB এর ঢাল দ্বারা ঐ মুহূর্তের বেগ v পাওয়া যায়,

v= BCAC

চিত্র :৩.৫

৩.৭। বেগ-সময় লেখচিত্র 

Velocity-Time Graph

বেগ ও সময়

কোনো বস্তুর গতিকালে যদি তার বেগের মান বা দিক বা উভয়ই পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ বেগ যদি সময়ের অপেক্ষক হয় তাহলে সেই বেগকে বলা হয় অসমরবেগ। 

আমরা সচরাচর যে সব গতিশীল বস্তু দেখি তাদের বেগ অসমবেগ।

 একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে সময়ের অপেক্ষক হিসেবে বেগ v এর জন্য একটি সমীকরণ নির্ণয় করা যাক। যেহেতু

V = dxdt,  তাই (3.10) সমীকরণকে t এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করে অসমবেগ v পাই। 

 V = dxdtddt

= 0 + 12m s-1 - 2 x ( 1.2 ms-2 )t 

:- v = 12m s-1 - (2.4m s-2 )t …... (3.11)

সময় ও বেগ সারণি

(3.11) সমীকরণে t = 0 s থেকে শুরু করে প্রতি 1 s অন্তর অন্তর t এর মান বসিয়ে t = 8 s পর্যন্ত বস্তুর বেগ হিসাব করে ৩.২ সারণিতে স্থাপন করা হলো।

বেগ-সময় লেখচিত্র

একটি ছক কাগজের X অক্ষের দিকে সময় t এবং Y-অক্ষের

দিকে বেগ v নিয়ে বেগ বনাম সময় লেখচিত্র অঙ্কন করা হয়।

চিত্র :৩.৬

 এ লেখচিত্র থেকে যেকোনো সময় t তে বস্তুর বেগ v নির্ণয় করা যায়।

(৩.২) সারণির উপাত্তের জন্য v বনাম t লেখচিত্রটি ৩.৬ চিত্রে দেখানো হলো। চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে বেগ v কমে যাচ্ছে। চিত্র থেকে আরো দেখা যায় এক সময় v শূন্য অতিক্রম করছে। এর থেকে বোঝা যায় এ সময় বস্তুটি তার বিপরীত যাত্রা শুরুর পূর্বে মুহূর্তের জন্য স্থির ছিল।

বেগ-সময় লেখচিত্র থেকে ত্বরণ নির্ণয়

V  বনাম t লেখচিত্র থেকে বস্তুর যেকোনো মুহূর্তের ত্বরণ নির্ণয় করা যায়। কোনো বক্ররেখার কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শকের ঢালকেই ঐ বিন্দুতে বক্ররেখার ঢাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। v বনাম t লেখচিত্রে t এর সাপেক্ষে vএর অন্তরক dvdt দ্বারা এই ঢাল প্রকাশ করা হয়। 

যেহেতু a = dvdt তাই কোনো বিশেষ মুহূর্তে v বনাম t লেখচিত্রের ঢাল দ্বারা ঐ মুহূর্তের ত্বরণ a পাওয়া যায়। ৩.৭ চিত্রে আরেকটি বনাম লেখচিত্র দেখানো হলো। এটি কিন্তু ইতোপূর্বে আলোচিত বস্তুর সাথে সম্পর্কিত নয়। ৩-৭ চিত্রে সময়ে লেখচিত্রের P বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক APB এর ঢাল দ্বারা ঐ মুহূর্তের ত্বরণ a পাওয়া যায়,

a=BCAC

চিত্র :৩.৭

৩.৮। গতি বর্ণনায় অন্তরীকরণ ও যোগজীকরণের ব্যবহার : গতির সমীকরণ প্রতিপাদন 

Uses of Differentiation and Integration in describing Motion: Deduction of Equations of Motion

দ্বিতীয় অধ্যায়ে অন্তরীকরণ ও যোগজীকরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে আমরা অন্তরীকরণ ও যোগজীকরণের ধারণা রৈখিক গতি বর্ণনায় ব্যবহার করবো।

গতির সমীকরণ

Equations of Motion

সমত্বরণ গতি একটি সরল গতি। ধরা যাক, কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট দিকে সমত্বরণে গতিশীল। বস্তুটি যে সরলরৈখিক পথে গতিশীল সে দিকে X-অক্ষ বিবেচনা করা যাক। কণাটি সমত্বরণে চলে বলে তার ত্বরণ a = ধ্রুবক ।

গতিশীল কোনো বস্তুর গতির ক্ষেত্রে গতির আদি শর্তাদি অর্থাৎ আদি অবস্থান xo ও আদি বেগ vo ছাড়াও গতির চারটি চলক আছে। এগুলো হলো অবস্থান x, বেগ, ত্বরণ a এবং গতিকাল বা সময় । এগুলো পরস্পর সম্পর্কিত। এ চারটি চলকের যে কোনো দুটি জানা থাকলে বাকি দুটি নির্ণয় করা যায়। এ জন্য চারটি সমীকরণ আছে, প্রত্যেকটি সমীকরণে আদি শর্তাদি ব্যতীত তিনটি চলক থাকে, যার দুটি জানা থাকলে তৃতীয়টি বের করা যায়। এ সমীকরণগুলোই গতির সমীকরণ নামে পরিচিত। নিম্নে এ সমীকরণগুলো প্রতিপাদন করা হলো।

প্রথম সমীকরণ: শেষ বেগ, ত্বরণ ও গতিকালের সম্পর্ক

V = Vo + at

ধরা যাক, একটি বস্তু X - অক্ষ বরাবর a সমত্বরণে গতিশীল। আরো ধরা যাক, সময় গণনার শুরুতে অর্থাৎ যখন 1 = 0 তখন এর আদি বেগ t অন্য যেকোনো সময় t তে এর বেগ vo 

যেহেতু সময়ের সাপেক্ষে বেগের অন্তরককে ত্বরণ বলে,

:-a = dvdt 

(খ) দ্বিতীয় সমীকরণ : অবস্থান বা সরণ, শেষবেগ ও গতিকালের সম্পর্ক

x=xo+vo+v2t, s=vo+v2t

ধরা যাক, একটি বস্তু X অক্ষ বরাবর সমরণে গতিশীল। আরো ধরা যাক, সময় গণনার শুরুতে অর্থাৎ যখন r = 0 তখন এর আদি অবস্থান xo এবং আদি বেগ vo । অন্য যেকোনো সময়তে t=t এর অবস্থান x এবং এর বেগ v গড় বেগের সংজ্ঞা থেকে আমরা জানি, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময় ব্যবধানের বেগ ও সময় ব্যবধানের গুণফলের সমষ্টি নিয়ে তাকে মোট সময় ব্যবধান দিয়ে ভাগ করে ঐ সময় ব্যবধানের গড় বেগ পাওয়া যায়।

Content added || updated By

কোনো বস্তুকে অনুভূমিকের সাথে তির্যকভাবে কোনো স্থানে নিক্ষেপ করা হলে তাকে প্রক্ষেপক বা প্রাস বলে। সমত্বরণে বক্রগতির একটি চমৎকার উদাহরণ হলো নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতি তথা প্রক্ষেপক বা প্রাসের গতি। এ গতি হলো বাতাসে তির্যকভাবে নিক্ষিপ্ত বস্তুর দ্বিমাত্রিক গতি। তির্যকভাবে নিক্ষিপ্ত ঢিল, বুলেটের গতি ইত্যাদি প্রাস গতির উদাহরণ। এ সকল ক্ষেত্রে আমরা বাতাসের বাধা উপেক্ষা করি। 

অবস্থান ও বেগ

ধরা যাক, যে বিন্দু থেকে বস্তুটি নিক্ষেপ করা হয় সেটি প্রসঙ্গ কাঠামোর মূলবিন্দু। প্রসঙ্গ কাঠামোর ধনাত্মক X-অক্ষ ধরা হয় বস্তুটি যে দিক দিয়ে অনুভূমিক দূরত্ব অতিক্রম করে সেদিকে এবং ধনাত্মক Y- অক্ষ উল্লম্ব বরাবর খাড়া উপরের দিকে। সুতরাং বস্তুটির আদি অবস্থানে xo = 0 এবং yo = 0 বস্তুটিকে নিক্ষেপ করা হলে এর উপর কেবল অভিকর্ষজ ত্বরণ খাড়া নিচের দিকে ক্রিয়া করে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বস্তুটির ত্বরণ হয় Y-অক্ষ বরাবর এবং - g যেখানে g = 9.8ms -1

ধরা যাক, t = 0 সময়ে প্রাসটিকে O বিন্দু থেকে vo বেগে অনুভূমিকের সাথে θ° কোণে নিক্ষেপ করা হলো। (চিত্র ৩.৯)। সুতরাং X ও Y অক্ষ বরাবর আদি বেগের উপাংশগুলো হলো যথাক্রমে,

চিত্র :৩.৯

vxo=vo cosθ

vvo =Vo sinθo...  (3.26)

ধরা যাক, বস্তুটি t সেকেন্ডে  p অবস্থানে পৌঁছাল (চিত্র ৩.১০) যেখানে তার বেগ v এবং এটি অনুভূমিকের সাথে θ কোণ উৎপন্ন করে।  v  বেগের অনুভূমিক ও উল্লম্ব উপাংশ যথাক্রমে-

vx=vxo=vo cosθ….. (3.27)

[যেহেতু X-অক্ষ বরাবর ত্বরণ শূন্য।

এবং vy = vyo - gt

 = vvo =Vo sinθo-gt…(3.27b)

চিত্র :৩.১০

সুতরাং t সময়ে বা P অবস্থানে প্রাসের বেগ vএর মান হলো

v=v=vx2+v2y

এবং বেগ v যেহেতু X-অক্ষ তথা অনুভূমিকের সাথে θ কোণ উৎপন্ন করে, সুতরাং

θ =tan θ=vyvx

আবার, অবস্থান ভেক্টর r এর অনুভূমিক ও উল্লম্ব উপাংশ

OQ=x=vxot=(vo cosθo)t

সুতরাং যে কোনো মুহূর্ত t তে অবস্থান ভেক্টর r এর মান হলো,

r=r=x2+y2

এবং অবস্থান ভেক্টর r যদি অনুভূমিক তথা X - অক্ষের সাথে θ° কোণ উৎপন্ন করে, তাহলে

tanθ' =xy

গতিপথ বা চলরেখ (Trajectory )

ধরা যাক, একটি বস্তু vo আদিবেগে এবং অনুভূমিকের সাথে  θo কোণে নিক্ষেপ করা হলো। আদি বেগের অনুভূমিক ও উল্লম্ব উপাংশ যথাক্রমে,

vxo=vo cosθ

vvo =Vo sinθo

 

চিত্র :৩.১১

ধরা যাক, নিক্ষেপের সময় পরে প্রাসটির অবস্থান P বিন্দুতে (চিত্র ৩.১)।

ধরা যাক, OQ = x এবং QP=y

তাহলে, OQ = 1 সময়ে অতিক্রান্ত অনুভূমিক

দূরত্ব।

:- x =vxo=vo cosθ

আবার, QP=t সময়ে অতিক্রান্ত উল্লম্ব দূরত্ব।

:- y=vo sin θo t-12gt2

কোনো বস্তুর গতিপথ বা সঞ্চারপথ বা চলরেখ-এর সমীকরণ হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে তার স্থানাঙ্কগুলোর সম্পর্ক নির্দেশক সমীকরণ। (3.31 ) ও (3.32) সমীকরণ থেকে t এর অপেক্ষক হিসেবে স্থানাঙ্ক x ও y পাওয়া যায়। এখন এ সমীকরণ দুটি থেকে t অপসারণ করলে x ও y এর সম্পর্ক পাওয়া যাবে। (3.31 ) সমীকরণ থেকে আমরা t এর জন্য রাশিমালা পাই,

t=xvo cosθο

t-এর এ মান (3.32) সমীকরণে বসিয়ে আমরা পাই,

y=vo sinθοxvo cosθο12gxvo cosθο2

এ সমীকরণ যেকোনো মুহূর্তে x ও y অর্থাৎ অবস্থান ভেক্টরের অনুভূমিক ও উল্লম্ব উপাংশের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে । এ সমীকরণই হচ্ছে প্রাসের গতি পথ বা চল রেখের সমীকরণ। এ সমীকরণে vo, θo এবং g ধ্রুবক বলে tan θo এবং g2vosin θο2 ধ্রুবক।

 সুতরাং tan θ= b এবং g2vosin θο2 = c লিখলে উপরিউক্ত সমীকরণ দাঁড়ায় y = bx - cx2

যা একটি পরাবৃত্তের (parabola) সমীকরণ। অতএব, গ্রাসের গতিপথ বা চলরেখ হচ্ছে একটি পরাবৃত্ত বা প্যারাবোলা।

 

সর্বাধিক উচ্চতায় ওঠার সময় 

  প্রাসের ক্ষেত্রে তথা নিক্ষিপ্ত বস্তুর ক্ষেত্রে যেকোনো মুহূর্তে তার বেগের উল্লম্ব উপাংশের জন্য (3.19a) সমীকরণ থেকে আমরা পাই,

Vy = Vyo - gt

সর্বাধিক উচ্চতায় বস্তুর বেগের উল্লম্ব উপাংশ শূন্য হয়, অর্থাৎ vy = 0। এ শর্ত উপরিউক্ত সমীকরণে ব্যবহার করে t এর যে মান tm পাওয়া যায়, তাই হবে সর্বাধিক উচ্চতার ওঠার সময়। সুতরাং এ সমীকরণ থেকে

0=vo sinθο -gt

সুতরাং দেখা যায় যে, সর্বাধিক উচ্চতায় ওঠার সময় tm বস্তুর আদি বেগের উল্লাস্থ উপাংশের অর্থাৎ vosin θoএর সমানুপাতিক ।

সর্বাধিক উচ্চতা

(3.22a) সমীকরণ থেকে আমরা জানি, প্রাসের ক্ষেত্রে তথা নিক্ষিপ্ত বস্তুর ক্ষেত্রে যেকোনো মুহূর্তে তার বেগের উল্লখ উপাংশ এবং সরণের উল্লম্ব উপাংশের মধ্যে সম্পর্ক হলো,

v2y=v2yo-2gy

সর্বাধিক উচ্চতায় বস্তুর বেগের উল্লম্ব উপাংশ শূন্য হয়, অর্থাৎ vy= 0 । এ শর্ত উপরিউক্ত সমীকরণে ব্যবহার করে । এর যে মান পাওয়া যাবে তাই হবে ym বা hm (চিত্র : ৩১২)। সুতরাং উক্ত সমীকরণ থেকে

0= (vo sinθο )2-2ghm

চিত্র :৩.১২

যেহেতু কোনো স্থানে g একটি ধ্রুব রাশি, অতএব hmvosinθo2

সুতরাং দেখা যায়, একটি প্রাস সর্বাধিক যে উচ্চতায় উঠবে তা বস্তুর আদি বেগের উল্লম্ব উপাংশের অর্থাৎ  এর বর্গেরvvo =Vo sinθo  সমানুপাতিক।

উড্ডয়ন কাল বা বিচরণকাল (Time of Flight )

(3.21a) সমীকরণ থেকে আমরা জানি, প্রাস বা নিক্ষিপ্ত বস্তুর ক্ষেত্রে তার অবস্থান ভেক্টরের উল্লম্ব উপাংশ এবং সময়ের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে

y=vyot-12gt2

নিক্ষিপ্ত বস্তুর বা প্রাসের নিক্ষেপের পর আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসতে যে সময় লাগে তাকে উড্ডয়নকাল বলে। বস্তু ভূ- পৃষ্ঠে ফিরে আসলে y = 0 হয়। এ শর্ত উপরিউক্ত সমীকরণে বসালে t এর যে মান পাওয়া যায় তাই হবে উড্ডয়ন কাল । উড্ডয়ন কাল T হলে এ সমীকরণ থেকে আমরা পাই,

0=vo sinθoT-12gt2

যেহেতু T = 0 ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যে মুহূর্তে বস্তুটি নিক্ষেপ করা হচ্ছে তাই নির্দেশ করে,

সুতরাং দেখা যায় যে, উড্ডয়ন কাল বস্তুর আদি বেগের উল্লম্ব উপাংশের অর্থাৎ, vvo =Vo sinθo   এর সমানুপাতিক

Content added || updated By

কোনো বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষের প্রভাবে ভূমিতে পৌঁছায়। একই উচ্চতা থেকে একই সময় একটি ভারী ও একটি হাল্‌কা বস্তু ছেড়ে দিলে এগুলো একই সময়ে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাবে কি? সপ্তদশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত সকলের ধারণা ছিল ভারী বস্তু হাল্‌কা বস্তুর চেয়ে আগেই মাটিতে পৌঁছাবে। কথিত আছে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও পিসার হেলানো মিনারের ছাদ থেকে বিভিন্ন ওজনের বস্তুকে একই সময়ে পড়তে দিয়ে দেখান যে এগুলো প্রায় একই সময় ভূ- পৃষ্ঠে পৌঁছায়।

নিজে কর : এক হাতে একটি কলম এবং অপর হাতে এক টুকরা কাগজ নাও। হাত দুটি উঁচু করে একই উচ্চতা থেকে একই সময়ে কলম ও কাগজ ছেড়ে দাও।

কী দেখলে ? কলম ও কাগজ দুটিই ঘরের মেঝেতে পৌঁছেছে-কিছু এক সাথে নয়। কলমটি কাগজের আগেই মাটিতে পৌঁছায়। বাতাসের বাধার জন্যই এরূপ হয়। বাতাসের মধ্যে বস্তুদ্বয় থাকার জন্য এদের ওজনের বিপরীত দিকে বাতাসের প্লবতা কাজ করে। কলমের চেয়ে কাগজের উপর প্রবতা বা ঊর্ধ্বমুখী বল বেশি হওয়ায় কাগজ দেরীতে মাটিতে পৌঁছায়। বাতাসের বাধা না থাকলে এগুলো অবশ্যই একই সময়ে মাটিতে পৌঁছাতো। যেহেতু বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না, তাই কাগজ ও কলমের উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ একই ।

পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র বের করেন। এগুলোকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলে। এ সূত্রগুলো একমাত্র স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

পড়ন্ত বস্তুর সূত্রাবলি

পড়ন্ত বস্তুর সূত্রগুলো স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ বস্তু পড়ার সময় স্থির অবস্থান থেকে পড়বে—এর কোনো আদি বেগ থাকবে না। বস্তু বিনা বাধায় মুক্তভাবে পড়বে অর্থাৎ এর উপর অভিকর্ষজ বল ছাড়া অন্য কোনো বল ক্রিয়া করবে না। যেমন- বাতাসের বাধা এর উপর কাজ করবে না। সূত্রগুলো এরূপ :

প্রথম সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে।

এ সূত্রানুসারে স্থির অবস্থান থেকে কোনো বস্তু ছেড়ে দিলে তা যদি বিনা বাধায় মাটিতে পড়ে তাহলে মাটিতে পড়তে যে সময় লাগে তা বস্তুর ভর, আকৃতি বা আয়তনের উপর নির্ভর করে না। বিভিন্ন ভরের, আকারের ও আয়তনের বস্তুকে যদি একই উচ্চতা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এগুলো যদি বিনা বাধায় মুক্তভাবে পড়তে থাকে তাহলে সবগুলোই একই সময়ে মাটিতে পৌঁছাবে।

দ্বিতীয় সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত বেগ ঐ সময়ের সমানুপাতিক।

অর্থাৎ অর্জিত বেগ  পতনকাল । বা, YI

কোনো বস্তুকে যদি স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়তে দেওয়া হয় তবে প্রথম সেকেন্ড পরে যদি এটি। বেগ অর্জন করে তবে দ্বিতীয় সেকেন্ড পরে এটি 2v বেগ অর্জন করবে। সুতরাং t1,t2,t3…..সেকেন্ড পরে যদি বস্তুর বেগ যথাক্রমে V1,V2, V3…. ইত্যাদি হয় তবে এ সূত্রানুসারে,

v1t1=v2t2=v3t3…...  = ধ্রুবক।

তৃতীয় সূত্র : স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা ঐ সময়ের বর্গের সমানুপাতিক।

অর্থাৎ অতিক্রান্ত দূরত্ব   ( পতনকাল)2। বা, h t2

কোনো বস্তুকে যদি স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়তে দেওয়া হয় তবে এক সেকেন্ডে যদি এটি h দূরত্ব অতিক্রম করে তবে দুই সেকেন্ডে এটি h x 22 বা 4h দূরত্ব, তিন সেকেন্ডে এটি h x 32 বা 9h দূরত্ব অতিক্রম করবে।

সুতরাং t1, t2, t3 ... সেকেন্ডে যদি বস্তুর অতিক্রান্ত দূরত্ব যথাক্রমে, h1, h2, h3 .... .... ইত্যাদি হয় তবে

h1t12=h2t22=h2t32... = ধ্রুবক ।

মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতির সমীকরণ

   পড়ন্ত বস্তুর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, টেবিল থেকে হঠাৎ কোনো কলম নিচে পড়ে গেল। এ কলমের গতি বর্ণনায় আমরা বাতাসের বাধা উপেক্ষা করি। যদি বস্তুর উপর বাতাসের বাধা নগণ্য হয় তাহলে বস্তুর যে ত্বরণ হয়, তা পুরোপুরি পৃথিবীর আকর্ষণের অর্থাৎ অভিকর্ষের ফলেই হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমরা বস্তুটিকে বলি মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তু। অভিকর্ষের ফলে বস্তুর যে ত্বরণ হয় তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে । পদার্থবিজ্ঞানে এ অভিকর্ষজ ত্বরণ এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে যে, এর মানের জন্য আলাদা প্রতীক g ব্যবহার করা হয়। মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ভূ- পৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলে এ ত্বরণের মান মোটামুটি ধ্রুব থাকে। যদিও ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন স্থানে এর মানের সামান্য পরিবর্তন হয়, তবুও আমাদের হিসাব নিকাশের সময় g = 9.8ms -2 মান যথেষ্ট সঠিক g সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা মহাকর্ষ অধ্যায়ে করা হয়েছে।

কোনো বস্তু উপর থেকে নিচে পড়ুক বা কোনো বস্তুকে উপরের দিকে নিক্ষেপ করা হোক, বস্তুর উপর কেবল অভিকর্ষের ফলে ত্বরণ নিচের দিকে ক্রিয়া করলেই আমরা তাকে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তু বলি। মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতি হচ্ছে একমাত্রিক সুষম গতির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতি বর্ণনায় উল্লম্ব বরাবর Y-অক্ষ ধরা হয়।

সাধারণত খাড়া উপরের দিকে Y অক্ষ ধনাত্মক ধরা হয়। সুতরাং ঊর্ধ্বমুখী সরণ, ঊর্ধ্বমুখী বেগ এবং ঊর্ধ্বমুখী ত্বরণ ধনাত্মক এবং নিম্নমুখী সরণ, নিম্নমুখী বেগ এবং নিম্নমুখী ত্বরণ ঋণাত্মক ধরা হয়। 

তাহলে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর ত্বরণ হয়,

a= -g

এখানে ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ এক্ষেত্রে ত্বরণের অভিমুখ নিচের দিকে এবং g একটি ধনাত্মক সংখ্যা।

যেহেতু মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতি একটি সুষম গতি, তাই আমরা এর গতি বর্ণনায় (3.12 ), ( 3.14), (3.16) এবং (3.18) সমীকরণগুলো ব্যবহার করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আমরা ত্বরণ a= - g এবং সরণ s = উচ্চতা h বসাই। তাহলে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে গতির সমীকরণগুলোর রূপ হয়।

v=vo-gt

h=vo+v2t

h=vot-12gt2

v2=vo2-2gh

Y- অক্ষ বরাবর গতি বোঝার সুবিধার্থে যদি আমরা রাশিগুলোর সংকেতে y পাদাঙ্ক ব্যবহার করি, অর্থাৎ অবস্থান বা সরণ h এর পরিবর্তে y, আদি বেগ vo   এর পরিবর্তে vyo, শেষ বেগ v এর পরিবর্তে vy লিখি, তাহলে উপরিউক্ত সমীকরণগুলোর রুপ হবে,

vy=vyo-gt

y=vyo+vy2t

y=v2yo-2gy

vy2=v2yo-2gy

কোনো বস্তুকে খাড়া উপরের দিকে নিক্ষেপ করলে অভিকর্ষের প্রভাবে এক সময় সেটি নিচে নামতে শুরু করে। উপরে ওঠার সময় এর বেগ হ্রাস পেতে থাকে, এক সময় বেগ শূন্য হয়, তারপর নিচে নামার সময় আবার বেগ বাড়তে থাকে। সর্বাধিক উচ্চতায় বস্তুর বেগ তথা শেষ বেগ v = 0 হয়। উপরিউক্ত সমীকরণগুলোতে v =0 বসিয়ে আমরা সর্বাধিক উচ্চতা, সর্বাধিক উচ্চতায় পৌঁছাতে অতিবাহিত সময়, বস্তুটির উড্ডয়নকাল ইত্যাদি নির্ণয় করতে পারি।

 

Content added || updated By

কোনো বস্তু যদি কোনো বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে গতিশীল হয়, তখন তার গতিকে বৃত্তাকার গতি বলে।

 

কৌণিক সরণ (Angular Displacement)

ধরা যাক, একটি বস্তু ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক সময়ে A অবস্থান থেকে B অবস্থানে পৌঁছালো (চিত্র : ৩.১৪)। বস্তুটির এ অবস্থানের পরিবর্তনকে আমরা দু'ভাবে বর্ণনা করতে পারি ।

চিত্র : ৩.১৪

১. বস্তুটির বৃত্তের পরিধি বরাবর অতিক্রান্ত দূরত্ব AB = S দ্বারা চিহ্নিত করে। বৃত্তচাপ S-কে আমরা রৈখিক দূরত্ব বলতে পারি। যদিও বৃত্তচাপ 5 একটি বক্রপথ কিন্তু বৃত্তচাপ মাপার জন্য আমরা রৈখিক একক অর্থাৎ মিটার ব্যবহার করে থাকি বলে এটি রৈখিক দূরত্ব।

 ২. বস্তুটি বৃত্তের কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করে তার সাহায্যে আমরা বস্তুটির অবস্থান বর্ণনা করতে পারি। এখানে ৪ কৌণিক সরণ বা কৌণিক দূরত্ব। পরিমাপের জন্য রেডিয়ান ব্যবহার করা হয়। একে ডিগ্রিতেও মাপা যেতে পারে। কোণকে রেডিয়ানে প্রকাশ করলে আমরা পাই,

চিত্র : ৩-১৫

কোণ = চাপ/ব্যাসার্ধ

:-θ=Sr

বা,S=θr 

যেহেতু কোণ হচ্ছে চাপ/ব্যাসার্ধ, কাজেই কোণের মাত্রা হবে  

(3.43) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, S = r হলে (চিত্র ৩.১৫), θw = 1 একক হয়। এ একককে রেডিয়ান (rad) বলা হয়। কোণ পরিমাপের এসআই একক হচ্ছে রেডিয়ান।

রেডিয়ানের সংজ্ঞা : কোনো বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমান বৃত্তচাপ বৃত্তের কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে 1 রেডিয়ান বলে।

এখন কোনো বস্তু যদি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার পথে একবার ঘুরে আসে তাহলে কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ

 θ=2πrr =পরিধি /ব্যাসার্ধ =2π radian

সুতরাং বৃত্তাকার পথে 1 বার ঘুরে আসা আর বৃত্তের কেন্দ্রে 2π rad কোণ অতিক্রম করা একই কথা।

কৌণিক বেগ (Angular Veloci) 

কৌণিক বেগের সংজ্ঞার আগে গড় কৌণিক বেগের সংজ্ঞা আলোচনা করা যাক।

গড় কৌণিক বেগের সংজ্ঞা : কোনো বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে চলমান কোনো বস্তুর যেকোনো সময় ব্যবধানে গড়ে প্রতি একক সময়ে যে কৌণিক সরণ হয় তাকে বস্তুটির গড় কৌণিক বেগ বলে । 

ব্যাখ্যা : ধরা যাক t সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর কৌণিক সরণ হলো θ । (চিত্র : ৩:১৬) তাহলে

গড় কৌণিক বেগ ω=θt

কৌণিক বেগ বা তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগের সংজ্ঞা : সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে কোনো বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে চলমান কোনো বস্তুর সময়ের সাথে কৌণিক সরণের হারকে কৌণিক বেগ বলে । 

ব্যাখ্যা : t  সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর কৌণিক সরণ  θ হলে, কৌণিক বেগ

ω=limt0θt

অর্থাৎ সময়ের সাপেক্ষে কৌণিক সরণের অন্তরককে কৌণিক বেগ বলে ।

বস্তু একক সময়ে বৃত্তের কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করে তাই কৌণিক বেগের মান বা কৌণিক দ্রুতি ।

চিত্র :৩.১৬

বৃত্তাকার পথটি সম্পূর্ণ একবার ঘুরে আসতে বস্তুটির যে সময় লাগে তাকে পর্যায় কাল বলে। কোনো বস্তুর পর্যায় কাল T হলে,

ω=2πt

বস্তু প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করে তাকে কম্পাঙ্ক বলে।

কৌণিক বেগের মাত্রা : কৌণিক বেগের মাত্রা হচ্ছে এর মাত্রা হচ্ছে কোন/সময়।

কৌণিক বেগের দিক :

রৈখিক বেগের ন্যায় কৌণিক বেগও একটি ভেক্টর রাশি। একটি ডানহাতি স্কুর সাহায্যে কৌণিক বেগের দিক নির্দেশ করা যায়। বৃত্তের কেন্দ্রে অভিলম্বভাবে একটি ডানহাতি ব্লু স্থাপন করে বৃত্তাকার পথে বস্তুটি যে ক্রমে (order) ঘুরছে সে ক্রমে স্কুটি ঘুরালে স্ক্রু যে দিকে অগ্রসর হবে সেটিই হবে কৌণিক বেগের দিক (চিত্র ৩.১৭ক)।

বই-এর সমতলে বৃত্তাকার পথে চলার সময় বস্তুটি যদি ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে যায় তাহলে কৌণিক বেগের দিক হবে বৃত্তাকার পথের কেন্দ্রের মাঝ দিয়ে আঁকা অভিলম্ব বরাবর বাইরের দিকে তথা উপরের দিকে OP বরাবর (চিত্র : ৩-১৭খ)। আর যদি বস্তুটি ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে ঘুরে তাহলে কৌণিক বেগের দিক হবে অভিলম্ব বরাবর ভেতরের দিকে তথা নিচের দিকে।

চিত্র :৩.১৭

রৈখিক দ্রুতি ও কৌণিক দ্রুতির সম্পর্ক " v=rш অর্থাৎ কোণের কোনো মাত্রা নেই ।

আমরা জানি, r ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে চলমান কোনো বস্তুর অতিক্রান্ত রৈখিক দূরত্ব s এবং কৌণিক দূরত্ব θ হলে

S=rθ

উভয় পক্ষকে সময়ের সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করে পাই,

dsdt=ddt(r,θ)=rdθdt

কৌণিক ত্বরণ (Angular Acceleration )

কৌণিক বেগের পরিবর্তন হলে কৌণিক ত্বরণ হয়। কৌণিক ত্বরণের সংজ্ঞার আগে গড় কৌণিক ত্বরণের সংজ্ঞা আলোচনা করা যাক ।

গড় কৌণিক ত্বরণের সংজ্ঞা : যেকোনো সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর গড়ে প্রতি একক সময়ে কৌণিক বেগের যে পরিবর্তন হয় তাকে গড় কৌণিক ত্বরণ বলে ।

ব্যাখ্যা : ∆t সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তন যদি ∆ш  হয়, তাহলে গড় কৌণিক ত্বরণ,

α=ωt…... (3.52)

কৌণিক ত্বরণ বা তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণের সংজ্ঞা : সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে সময়ের সাথে বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে কৌণিক ত্বরণ বলে।

  ব্যাখ্যা : ∆t  সময় ব্যবধানে কোনো বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তন   ∆ш হলে, কৌণিক ত্বরণ

ω=limt0θt

কিন্তু ω=limt0θtহচ্ছে t এর সাপেক্ষে ш এর অন্তরক অর্থাৎ dωdt

অর্থাৎ সময়ের সাপেক্ষে বস্তুর কৌণিক বেগের অন্তরককে কৌণিক ত্বরণ বলে।

Content added || updated By

কোনো বস্তু যখন সমদ্রুতিতে সরলপথে চলে তখন তার গতিকে সুষম গতি বলে। এ সুষম গতিতে বস্তুর কোনো ত্বরণ থাকে না। কেননা বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে। যেহেতু বেগ একটি ভেক্টর রাশি, তাই এর মান কিংবা দিক যেকোনো একটির অথবা উভয়টির পরিবর্তন হলেই বেগের পরিবর্তন হয় তথা ত্বরণ হয়। আবার বেগের মানই হচ্ছে দ্রুতি। সুষম গতির ক্ষেত্রে বস্তু সম্প্রতিতে চলে বলে বেগের মানের পরিবর্তন হয় না, আর সরল পথে চলে বলে বেগের দিকের পরিবর্তন হয় না, তাই সুষম গতিতে সরল পথে চলন্ত বস্তুর কোনো ত্বরণ থাকে না।

চিত্র :৩.১৯

যখন কোনো বস্তু সমদ্রুতিতে বৃত্তের পরিধি বরাবর ঘুরতে থাকে তখন ঐ বস্তুর গতিকে সুষম বৃত্তাকার গতি বলে। ঐ রূপ গতিতে বস্তু সম্প্রতিতে। চলে বলে বস্তুর বেগের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না, কিন্তু বেগের দিকের পরিবর্তন হয়। কেননা বৃত্তাকার পথের কোনো বিন্দুতে বেগের দিক বৃত্তের পরিধির উপর ঐ বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক বরাবর (চিত্র : ৩:১৯)। পরিধির বিভিন্ন বিন্দুতে স্পর্শকের অভিমুখ বিভিন্ন বলে বেগের দিক প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে অর্থাৎ বেগেরও পরিবর্তন হচ্ছে অবিরত। সুতরাং বস্তুর ত্বরণ হচ্ছে। তাই বৃত্তাকার পথে সমদ্রুতিতে চললেও বস্তুর ত্বরণ থাকে এ ত্বরণ বৃত্তাকার পথের ব্যাসার্ধ বরাবর কেন্দ্রের দিকে ক্রিয়া করে বলে একে কেন্দ্রমুখী ত্বরণ বলা হয়।

 কেন্দ্রমুখী ত্বরণ : 

সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে বৃত্তাকার পথে চলমান কোনো বস্তুর সময়ের সাথে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বরাবর এবং বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে বেগের পরিবর্তনের হারকে কেন্দ্রমুখী ত্বরণ বলে । যেহেতু এ ত্বরণ ব্যাসার্ধ বরাবর বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে ক্রিয়া করে এজন্য এ ত্বরণকে ব্যাসার্ধমুখী ত্বরণও বলে। আবার, এ ত্বরণ বেগের দিকের সাথে লম্ব বরাবর অর্থাৎ স্পর্শকের সাথে লম্বভাবে ব্যাসার্ধের দিকে ক্রিয়া করে বলে একে লম্ব ত্বরণও বলে।

কেন্দ্রমুখী ত্বরণের মান

৩.২০ ক চিত্রে সুষম বৃত্তাকার গতিতে ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে গতিশীল একটি বস্তু দেখানো হলো। A বিন্দুতে এর বেগ vA বৃত্তটির ঐ বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক বরাবর। ক্ষুদ্র সময়  ∆t পরে বস্তুটি B বিন্দুতে এলো। এ সময় এর বেগ vB বৃত্তের B বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক বরাবর। ধরা যাক, কৌণিক সরণ θ খুবই ক্ষুদ্র।

৩.২০ খ চিত্র হচ্ছে একটি ভেক্টর রেখচিত্র যেখানে বেগ  vAএবং vB  দেখানো হয়েছে।  এবংvB  এর মধ্যবর্তী কোণও হচ্ছে θ । বেগের পরিবর্তন v =  vB -  vAকে  QRদ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। যেহেতু  θ কোণটি খুবই ছোট, কাজেইন v  এর অভিমুখ   vAএবং vB   উভয়ের সাথেই প্রায় লম্ব। অর্থাৎ A বিন্দুতে AO বরাবর তথা বৃত্তের কেন্দ্র বরাবর বস্তুটির বেগের পরিবর্তন বা ত্বরণ হয়। এ ত্বরণকে কেন্দ্রমুখী ত্বরণ বলা হয়।

৩.২০ খ চিত্রে, যেহেতু ∆θ কোণটি খুব ক্ষুদ্র, তাই ∆θ= চাপ/ব্যাসার্ধ 

চিত্র :৩.২০

এখানে v হচ্ছে   vA এবং  vB এর মান। বস্তুটি সুষম দ্রুতিতে ঘুরছে বলে উভয় মানই সমান।

এখন কেন্দ্রমুখী ত্বরণ a হলে,

a= limt0

এ কেন্দ্রমুখী ত্বরণের দিক বৃত্তের কেন্দ্রের অভিমুখে।

(3.55) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যেকোনো দৃঢ় বস্তুর কোনো কণার কেন্দ্রমুখী ত্বরণ তার কৌণিক বেগ ও কেন্দ্র থেকে দূরত্বের উপর নির্ভর করে। কোনো কণার কেন্দ্রমুখী ত্বরণ তার কৌণিক বেগের বর্গের সমানুপাতিক এবং ঘূর্ণন কেন্দ্র থেকে দূরত্বের সমানুপাতিক। যেহেতু কোনো দৃঢ় বস্তুর সকল কণার কৌণিক বেগ সমান, সুতরাং যে কণা কেন্দ্র থেকে যত বেশি দূরত্বে থাকবে তার কেন্দ্রমুখী ত্বরণও তত বেশি হবে ।

Content added || updated By