কোনটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ নয়?

Created: 2 years ago | Updated: 5 months ago
Updated: 5 months ago

বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদঃ

১. তালিপাম । বৈজ্ঞানিক নাম: Corypha taliera Roxb. গোত্র: Palmac = Arecaceae. তালিপাম একটি বড় মনোকার্দিক (monocarpic) উদ্ভিদ যা জীবনে একবারমাত্র ফুল ও ফল দিয়ে মরে যায়। এর কাও ১০ মিটার উঁচু, ব্যাস প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত (গোড়ার দিকে)। পাতা লম্বা বৃত্তযুক্ত (প্রায় ৬ মিটার লম্বা) পাতা প্রায় গোল, পুষ্পমঞ্জুরী ৬ মিটার বা তার চেয়েও বড়, দেখতে পিরামিডের মতো। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত একটি তালিপামকে পৃথিবীর সর্বশেষ বন্য তালিপাম সদস্য বলে অভিহিত করে উদ্ভিদবিজ্ঞানিরা এ প্রজাতিকে ২০০১ সালে অতিবিপন্ন [Critically Endangered, (CR)] হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ গাছটি ২০১০ সালে ফুল ও ফল দিয়ে মারা গেছে। বীজগুলো থেকে চারা সংগ্রহ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যান ও মিরপুর জাতীয় উদ্যানে রোপন করা হয়েছে। ভারতে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া উদ্ভিদউদ্যানে একটি রোপিত গাছের বীজ ও চারা সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যে ফেরারচাইল্ড ট্রপিকাল গার্ডেনে পাঠানো হয়েছে। এভাবে Ex situ প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে তালিপামের বংশধারা অব্যাহত রাখায় IUCN 2013.2 তালিপামকে Extinct in the Wild (EW) o অভিহিত করেছে

২. মালাক্কা ঝাঁজি বা পাতা ঝাঁজি। বৈজ্ঞানিক নাম : Aldrovanda vesiculosa Linn. গোত্র: Droscraceae. শিকড়হীন নিমজ্জিত, রসাল ও ভাসমান উদ্ভিদ। কতকগুলো স্বচ্ছ পাতাসহ একটি সরু কাও থাকে। কাণ্ডের চারদিকে ৮টি পাতা স্পোকের মতো সাজানো থাকে। উদ্ভিদটি ১০-৩০ সেন্টিমিটার (৪-১২ ইঞ্চি) লম্বা হয়। বসন্তকালে ছোট সাদা ফুল ফোটে। শিকার ধরার ফাঁদ থাকে পানির নিচে। পাতাগুলোই ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। পাতাগুলো ৬ মিলিমিটার লম্বা। এসব ফাঁদে প্ল্যাংকটনজাতীয় আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ ও প্রাণী শিকার করে। বাংলাদেশে মালাক্কা ঝাঁজি মাত্র দুটি জায়গায় পাওয়া যেত... একটি হচ্ছে ঢাকা, অন্যটি রাজশাহী। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এ উদ্ভিদ আবিষ্কৃত হয় ঢাকার কাছাকাছি কোনো জলাভূমি থেকে। পরে রাজশাহীর চলনবিলের পরিষ্কার ও গভীর পানিতে প্রথমে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে, সর্বশেষে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে পাওয়া যায়। অবশ্য বিজ্ঞানী Cohn (১৮৫০) তাঁর এক নিবন্ধে এ ঝাঁজির প্রাপ্তিস্থান হিসেবে বাংলাদেশর নির্দিষ্ট এলাকার নাম উল্লেখ না করলেও অন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, সে জায়গাটি সম্ভবত চলনবিল-ই হবে। বিজ্ঞানিদের ধারণা, জলাবসতি ধ্বংসের কারণে পরিবেশ থেকে এ উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটেছে কিনা জোর অনুসন্ধান প্রয়োজন। বাংলাদেশের Red Data Book (2001) এ উদ্ভিদকে বিপন্ন [Endangered (EN)] বলে চিহ্নিত করেছে।

IUCN 2013.2-এর তালিকা অনুযায়ী এটি আগে ৪৩ দেশে পাওয়া যেত। এখন ২২টি দেশে এ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ তালিকায় বাংলাদেশ থেকে এটি বিলুপ্ত [ Extinct (Ex)] বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. ক্ষুদে বড়লা। বৈজ্ঞানিক নাম : Knema bengalensis de Wilde. গোত্র : Myristicaceae. এটি মাঝারি আকারের উদ্ভিদ। বাকল রেজিনযুক্ত ও সূক্ষ্ম দাগবাহী। নতুন শাখা-প্রশাখাগুলো রোমযুক্ত। বাংলাদেশের এন্ডেমিক উদ্ভিদ। ১৯৫৭ সালে কক্সবাজারের দুলাহাজরা থেকে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে আরেকটি গাছ পাওয়া গেছে কক্সবাজারের রিজু বনে। Red Data Book (2001) অনুযায়ী ক্ষুদে বড়লা শংকাকুল (Vulnerable (VU)] উদ্ভিদ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে আর এ উদ্ভিদ আছে কিনা সে বিষয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা শংকা প্রকাশ করেছেন। ক্ষুদে বড়লা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বসতি ধ্বংসকে দায়ী করেছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যে জায়গা থেকে গাছটি আবিষ্কৃত হয়েছে সেখানে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে স্ত্রী গাছ খুঁজে বের করে বীজ সংরক্ষণ, কলম লাগানো, সে সঙ্গে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে নতুন গাছ সৃষ্টি করে গাছ সংরক্ষণে জরুরী এগিয়ে আসতে হবে।

৪. কোরুদ। বৈজ্ঞানিক নাম : Licuala peltata Roxb. গোত্র : Arecaceae. কোরুদ হচ্ছে চিরসবুজ দলবদ্ধ পাম। লম্বায় ২-৩ মিটার, কান্ড ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট। পত্রবৃন্ত প্রায় ১.৫ সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রফলক প্রায় গোলাকার। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মিশ্র বনে অর্দ্র ছায়াঢাকা স্থানে এ পাম জন্মায় । এ গাছের পাতা ঝাপি বা ছাতা বানিয়ে ব্যবহার করা হয়, এবং ঘর ছাওয়ার কাজেও ব্যবহৃত হয়। অতি আহরণ এবং বসতি ধ্বংসের ফলে কোরুদ গাছ বাংলাদেশে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানিদের Red Data Book (2001)-এর তথ্য অনুযায়ী কোরুদ গাছ অন্যতম শংকাকুল [Vulnerable (VU)] গাছ হিসেবে পরিচিত। জ্যান্ত জার্মপ্লাজম ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাফারি পার্ক ও ইকোপার্কগুলোতে Ex situ conservation প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। IUCN এর Red List তালিকায় এ উদ্ভিদের নাম এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

৫. রোট্যালা। বৈজ্ঞানিক নাম : Rotala simpliciuscula Kochne. গোত্র: Lythraceae সরু, উভচর, বর্ষজীবী তৃণ। পাতা অতিক্ষুদ্র, ২.৫-৫.০ × ০.৫-২.২ মিলিমিটার আকারবিশিষ্ট। ধানক্ষেতের সিক্ত কিনারা বরাবর জন্মায়। এটি বাংলাদেশের এন্ডেমিক উদ্ভিদ। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল ঊনবিংশ শতকে। আবিষ্কারের পর থেকে এ তৃণ অন্য কোথাও বর্ণিত হয়নি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বসতি ধ্বংসের ফলে এ তৃণও হয়তো ধ্বংস বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 1997 IUCN Red List of Threatened Plants-এ এউদ্ভিদটি শংকাকুল হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও সাম্প্রতিকতম IUCN 2013.2 তে উদ্ভিদ তালিকাভুক্ত হয়নি।

Content added || updated By
Promotion