রাজা রামমোহন রচিত বাংলা ব্যাকরণের নাম কী ?
বাংলার নবজাগরণের স্রষ্টা ভারতের প্রথম আধুনিক পুরুষ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ১৭৭৪ সালে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে তাঁর জন্ম । অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন রাজা রামমোহন রায় । বিশেষ করে আরবি, ফারসি, উর্দু, ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় তিনি অসামান্য দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি বেদান্তসূত্র ও বেদান্তসারসহ উপনিষদের অনুবাদ প্রকাশ করেন । তাঁর অন্যান্য রচনার মধ্যে আছে তুফাতুল মুজাহহিদদীন (একেশ্বরবাদ সৌরভ), মনজারাতুল আদিয়ান (বিভিন্ন ধর্মের উপর আলোচনা), ভট্টাচার্যের সহিত বিচার, হিন্দুদিগের পৌত্তলিক ধর্মপ্রণালি ইত্যাদি। তাছাড়া তিনি সম্বাদ কৌমুদী, মিরাতুল আখবার ও ব্রাহ্মণিকাল ম্যাগাজিন নামে তিনটি পত্রিকার প্রকাশকও ছিলেন।
আধুনিক ভারতের রূপকার রাজা রামমোহন তৎকালীন সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিধারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন । নিজের চিন্তাধারার আলোকে নতুন সমাজ গঠনে প্রয়াসী হন। তিনি হিন্দু সমাজের সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, কৌলীন্য প্রথা ও অন্যান্য কুসংস্কার দূর করতে প্রচেষ্টা চালান। তাছাড়া তিনি সব কুসংস্কার দূর করে আদি একেশ্বরবাদের ভিত্তিতে হিন্দুধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। হিন্দুধর্মের সংস্কার তথা নিজ ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে আত্মীয় সভা নামে একটি সমিতি গঠন করেন। ১৮২৮ সালে ২০শে আগস্ট তিনি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন । এর পরে ব্রাহ্মসমাজের উপাসনালয় স্থাপন করেন । তাঁর ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা উপমহাদেশের ধর্মীয় ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে । শুধু সামাজিক আর ধর্মীয় বিষয় নয়, শিক্ষা বিস্তারেও তাঁর অবদান ছিল । তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন ইংরেজি শিক্ষার । এ কারণে তিনি নিজে সংস্কৃত পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও ১৯২৩ সালে প্রস্তাবিত সরকারি সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন । রাজা রামমোহন ১৮২২ সালে কোলকাতায় 'অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ইংরেজি, দর্শন, আধুনিক বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। এ দেশের মানুষকে সংস্কৃত শিক্ষার বদলে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন শিক্ষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে চিঠি লেখেন । তাছাড়া ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য ইংরেজ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১ লক্ষ টাকা তিনি সংস্কৃত ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যয় না করে আধুনিক শিক্ষায় ব্যয় করার জন্যও আবেদন করেন ।
১৮৩৩ সালে ভারতীয় রেনেসাঁর স্রষ্টা রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যু হয় । তাঁর মৃত্যুর দুই বছর পর ১৮৩৫ সালে তাঁর স্বপ্ন সফল হয় । ভারতীয়দের পাশ্চাত্য ভাষা ইংরেজিতে শিক্ষা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।