কোনটি জীবন্ত জীবাশ্ম নয়?
আদি শিলাস্তরে প্রস্তরীভূত অথবা পাললিক শিলাস্তর (sedimentary rock)-এ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত প্রগৈতিহাসিক (বিলুপ্ত) জীবের দেহ, দেহাংশ বা দেহের কোন অংশের ছাপ কিংবা রাসায়নিক পদার্থে সৃষ্ট জীবদেহের কাঠামোকে জীবাশ্ম (fossil; ল্যাটিন শব্দ fossilumn = মাটির নিচ থেকে খনন করে পাওয়া কোন বস্তু) বলা হয়। জীববিজ্ঞানের (যে শাখায় জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচিত হয় তাকে জীবাশ্মবিজ্ঞান বা প্যালিওন্টোলজি (Palacontalogy) বলে । অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও জীবাশ্মগুলো অধুনালুপ্ত প্রাচীন উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় সাক্ষ্য বহন করে এবং এদের ক্রমিক পরিবর্তন নির্দেশ করে। বিবর্তনের সপক্ষে জীবাশ্মঘটিত কয়েকটি প্রমাণ নিচে উপস্থাপিত হলো ।
ক. ঘোড়ার বিবর্তনের ধারা : জীবাশ্ম ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ঘোড়ার বিবর্তনে অন্ততঃ ১২টি গণ ও কয়েকশ জাতির উৎপত্তি ও বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে অবশেষে বর্তমান গণভুক্ত Equus প্রজাতির ঘোড়ার উৎপত্তি হয়েছে। চলন ও খাদ্যাভ্যাসজনিত অভিযোজন ঘোড়ার বিবর্তনকে প্রভাবিত করেছে। জীবাশ্ম ইতিহাসে পরিবর্তনশীল পরিবেশে ঘোড়ার অভিযোজনের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট বলে জানা গেছে। দেহের আকার, তৃতীয় আঙ্গুল, দাঁত ও দাঁতের চূড়া প্রভৃতির বৃদ্ধি; পা-গুলোর লম্বা হওয়া; পার্শ্বীয় আঙ্গুলগুলোর খাটো হওয়া; পিঠ সোজা হওয়া প্রভৃতি উপাদান ঘোড়ার বিবর্তনে প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রায় ৬ কোটি বছর আগে ১৫ ইঞ্চি (0.4m) উঁচু Eohippus-এর উৎপত্তির মধ্য দিয়ে যে বিবর্তন শুরু হয়েছিল তার আপাত সমাপ্তি হয়েছে ৬৩ ইঞ্চি (1.6m) উচ্চতা সম্পন্ন Equus উৎপত্তির মাধ্যমে ।
খ. সংযোগকারী যোগসূত্র (Connecting Link) : (দুটি নিকটবর্তী পর্ব বা শ্রেণির মধ্যবর্তী দশার জীবাশ্মকে সংযোগকারী যোগসূত্র বলে । archaeopteryx (আর্কিওপটেরিক্স) এ ধরনের একটি জীবাশ্ম। আজ থেকে ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগে জুরাসিক যুগে এর আবির্ভাব হয়েছিল। এর ধ্বংশবশেষ জার্মানীর বেডেরিয়ার বিখ্যতি সোলেন হোপেন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়। এতে রয়েছে পাখি এবং সরিসৃপ উভয় শ্রেণি (class)-র বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য করা যায়। সে কারণে Archaeopteryx-কে সরিসৃপ থেকে পাখি উদ্ভবের এক পর্যায় বা সংযোগকারী যোগসূত্র বলে মনে
করা হয়।
Archaeopteryx-এ সরিসৃপীয় বৈশিষ্ট্য-
১. শুষ্ক আঁইশযুক্ত দেহ ও দাঁতযুক্ত চোয়াল ।
২. লম্বা শরীর ও ২০টি কশেরুকা নিয়ে গঠিত লম্বা লেজ।
৩. পুরু ও ভারী হাড়; ডানার অগ্রভাগে নখর।
Archaeopteryx-এ পাখির বৈশিষ্ট্য-
১. দেহ পালকে আবৃত, দেখতে পাখির মতো।
২. চোয়াল পাখির চঞ্চুর মতো লম্বা।
৩. হাড়ের সংস্থাপন পাখির মতো এবং ডানা বিদ্যমান।
Archaeopteryx এর জীবাশ্ম সরিসৃপ থেকে পাখিতে রুপান্তরিত হওয়ার প্রমাণ বহন করে। একারণে বলা হয় Birds are Glorified Reptile (পাখি একটি মহিমান্বিত সরিসৃপ)।
গ. জীবন্ত জীবাশ্ম (Living Fossil) : যে সব প্রাণী সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করে আজও অঙ্গসংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় কাজের অপরিবর্তিত রূপ নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে আছে অথচ এদের সমসাময়িক ও সমগোত্রীয় সকলেরই বহু পূর্বে বিলুপ্তি ঘটেছে এবং যারা পর্ব থেকে পর্বের বা শ্রেণি থেকে শ্রেণির উদ্ভবের নিদর্শন বহন করে চলেছে তাদেরকে জীবন্ত জীবাশ্ম বা লিভিং ফসিল বলে। Platypus (প্লাটিপাস) এ ধরনের একটি জীবন্ত জীবাশ্ম। এর কিছু বৈশিষ্ট্য (যেমন-ডিম, রেচন-জননতন্ত্র) সরিসৃপ শ্রেণির মতো, আবার কিছু বৈশিষ্ট্য (যেমন- স্তনগ্রন্থি, লোম) স্তন্যপায়ীর মতো। এছাড়াও Limulus, Peripatus, Sphenodon, Latimaria-ও জীবন্ত জীবাশ্ম।