দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উন্নতি ঘটে কোনটির মাধ্যমে?
সুস্থ জীবন সকলেরই কাম্য। সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমরা নানা ধরনের ব্যায়াম করে থাকি। ব্যায়াম করার ফলে দেহ ও মনের উন্নয়ন সাধিত হয়। প্রতিদিন নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম করলে দেহ কাঠামো সুদৃঢ় ও সবল হয়। ব্যায়াম একাকী বা দলগতভাবে করা যায়। তবে একটানা ব্যায়াম করলে শরীরের জীবকোষগুলো ক্ষয়পূরণ করার সময় পায় না। তখন আমরা অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ি। এই ক্ষয়পূরণ এবং কর্মোদ্যম পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন। বিশ্রাম করলে ক্ষয়প্রাপ্ত জীবকোষগুলো পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে এবং শরীরের ক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ দূর হয়। ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেয়। প্রকৃতপক্ষে ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়। ভালো ঘুম হলে শরীর ও মন সতেজ থাকে। শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা সরঞ্জামবিহীন ও সরঞ্জামসহ বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম করি। কখনো কখনো ব্যায়ামের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগীতির মাধ্যমে শারীরিক কসরত করে থাকি। ব্রতচারী নৃত্য শারীরিক কসরতের একটি অন্যতম উদাহরণ। এই ধরনের ব্যায়াম ও শারীরিক কসরতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ ঘটে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
* শরীর গঠনে সুস্থতার জন্য ব্যারামের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব;
* সঠিক নিয়মকানুন মেনে কোন ক্ষেত্রে কোন ব্যায়াম গ্রহণ উপযোগী সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব; প্রাত্যহিক জীবনে *সহযোগিতামূলক মনোভাব বৃদ্ধি করতে পারব;
* শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশ্রাম, ঘুম ও বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব;
* বয়ঃক্রম অনুসারে বিশ্রাম ও ঘুমের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব; ব্রতচারী নৃত্যের মাধ্যমে শারীরিক কসরত প্রদর্শন করতে পারব;
* সঠিক পদ্ধতিতে যে ক্ষেত্রে যে ব্যায়াম উপযোগী তা অনুশীলন করতে পারব।
পাঠ - ১ : শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়ামের প্রভাব : শারীরিক সুস্থতার প্রধান বাহন হলো ব্যায়াম। ব্যায়াম ছাড়া একজন মানুষের শারীরিক সুস্থতা আশা করা যায় না। ব্যায়াম ও খেলাধুলা শুধু দেহের বৃদ্ধি ঘটায় না, মনেরও উন্নতি সাধন করে। শরীরচর্চায় দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উন্নতি হয়। দেহ ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে । কারণ মন ছাড়া দেহ এককভাবে চলতে পারে না, দেহ হচ্ছে মনের আধার। তাই, ‘সুস্থ দেহে সুন্দর মন- এটি প্রতিষ্ঠিত প্রবাদ হিসাবে সমাজে স্বীকৃত। মনস্তত্ত্ব একটি বিজ্ঞান। এর কাজ হচ্ছে মনকে নিয়ে । কিন্তু মনের উন্নতি কীভাবে হয় তা জানা প্রয়োজন। মন কাজ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থাৎ মস্তিষ্ক দ্বারা। প্রতিটি মানুষের দেহের মধ্যেই অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে। যেমন- হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, যকৃৎ, বৃক্ক, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, মেরুমজ্জা প্রভৃতি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মস্তিষ্ক। দেহের বিভিন্ন তন্ত্র নিজ নিজ ক্ষেত্র মোতাবেক কাজ করে, তবে এদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দেহ অচল হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে দেহের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজের সমন্বয় সাধিত হয়। ব্যায়াম এ সকল অঙ্গের সুষম উন্নতি সাধন করে। তবে এই সকল ব্যায়ামের কার্যক্রম বয়স ও লিঙ্গভেদে নির্দিষ্ট সময়ে ও মাত্রায় পরিচালনা করতে হয় । শিশুর দৈহিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের কর্মসূচিরও পরিবর্তন প্রয়োজন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যায়ামের কর্মসূচি সহজ থেকে ক্রমশই কঠিন হবে এবং ক্রমাগত উন্নততর হবে।
কাজ - ১ : ব্যায়ামের ফলে শরীরের কোন কোন অংশের কী কী উপকার হয় তা দলে বিভক্ত হয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করে শ্রেণিতে উপস্থাপন কর । |
পাঠ-২ : সরঞ্জামবিহীন ব্যায়াম : সরঞ্জাম ছাড়া যে সমস্ত ব্যায়াম করা হয়, তাকে সরঞ্জামবিহীন ব্যায়াম বলে। আমরা জিমন্যাস্টিকের ভাষায় 'ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ' বা খালি হাতের ব্যায়াম বলি। নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরঞ্জামবিহীন ব্যায়াম করা হয়।
১. স্পিড এক্সারসাইজ : শরীরের গতি বৃদ্ধির জন্য যে ব্যায়াম করা হয় তাকে স্পিড এক্সারসাইজ বলে। প্রথমে আস্তে আস্তে দৌড়ে শরীর গরম করে নিতে হবে। পরে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ব্যায়ামের উপযোগী হওয়ার পর গতি বাড়ানোর জন্য অল্প দূরত্বে বারবার জোরে দৌড়াতে হবে। যেমন- ২৫ মিটার দূরে একটি দাগ দিতে হবে। শুরু থেকে ঐ দাগ পর্যন্ত পুরো গতিতে দৌড়াতে হবে। পরে জগিং করে ফিরে এসে পুনরায় জোরে দৌড়াতে হবে। এভাবে ব্যায়ামের পুরো সময় না থেমে একের পর এক ব্যায়াম করে যাওয়াকে আমরা স্পিড এক্সারসাইজ বলি। অর্থাৎ যতক্ষণ ব্যায়াম করব ততক্ষণ একনাগাড়ে করে যেতে হবে।
২. এবডোমিনাল এক্সারসাইজ : এবডোমিনাল এক্সারসাইজ বলতে তলপেটের ব্যায়াম করাকে বোঝায়। যখন শুধু তলপেটের মেদ কমানোর জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম করা হয়, তাকে এবডোমিনাল এক্সারসাইজ বলে। যেমন- সিট আপ, হাঁটু ভেঙ্গে সিট আপ, দুই পা শূন্যে উঁচু করে রাখা ইত্যাদি।
ক. সিট আপ : চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাত মাথার নিচে দিয়ে দুই পা একত্র করে সোজা রাখতে হবে। তারপর মাথা উপর দিকে ভুলে যতটা সম্ভ সামনে ঝুঁকতে হবে। এভাবে একের পর এক শরীর উঠানামা করতে হবে। এ ব্যায়াম করার সময় হাটু ভাঁজ করা যাবে না
খ. হাঁটু ভেঙ্গে টি আन : শরীরের অবস্থান সিট আপের মতো, শুধু হাঁটু ভেঙে রেখে শরীরের উপরের অংশ উঠানামা করাতে হবে। এভাবে যত বেশি সিটআপ দেওয়া যাবে, তত বেশি পেটের উপকার হবে।
দুই পা শূন্যে ধরে রাখা : চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা একত্রে ৮ ইঞ্চি শূন্যে তুলে রাখতে হবে। এক মিনিট পর্যন্ত রাখার চেষ্টা করবে। এভাবে বারবার করতে হবে। এ ব্যায়ামগুলোর মাধ্যমে তলপেটের মেদ কমে যায়। এছাড়াও সমবেত ব্যায়াম, চিন আপ, পুশ আপ, পিঠের উপর দিয়ে লাফানো ও দলগত রিলে সবই সরঞ্জামবিহীন ব্যায়ামের অন্তর্গত ।
কাজ - ১ : দৈনন্দিন জীবনে সরঞ্জামবিহীন ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর । কাজ - ৩: এবডোমিনাল এক্সারসাইজগুলো অনুশীলন করে দেখাও। |
পাঠ-৩ : হ্যান্ড স্ট্যান্ড এবং হেন স্ট্যান্ড এ দুটো ব্যায়ামই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের ভিতর পড়ে। এ ব্যায়াম করতে কোনো সরঞ্জাম লাগে না। মাটিতেই এ ব্যায়াম করা যায়।
ক. অ্যান্ড স্ট্যান্ড (হাতে ভর করে দাঁড়ানো) : বার সোজা রেখে দুই হাজের তালু কাঁধ বরাবর সোজা করে মেঝেতে রাখতে হবে। দুই পা সামান্য আগে পিছে থাকবে। পিছনের পা প্রথমে উপরে ছে দেবে ও সাথে সাথে অন্য পা উপরে তুলে এক করতে হবে। কেমিরসহ হাঁটু ও পারের পাতা সোজা মাথার উপর রাখতে চেষ্টা করবে। কোনো অবস্থাতেই কনুই ভাঁজ হবে না। প্রথমে দেয়ালে বা সাহায্যকারীর সাহায্যে এ ব্যায়াম অনুশীলন করতে হবে। ধীরে ধীরে সাহায্যকারী ছাড়াই এ ব্যায়াম অনুশীলন করার চেষ্টা করবে।
খ . হেড স্ট্যান্ড (মাথার উপর ভর করে দাঁড়ানো) : কপাল একটু সামনে ও দুই হাতের তালু কাঁধ বরাবর একটু পিছনে মেঝেতে স্থাপন কর। দুই হাতের তালু ও কপালকে একটি ত্রিভুজের মতো কর। এবার কোমর সামনের দিকে টেনে কোমরসহ দুই পা উপরে তুলে দাও। দুই পা সোজা করে পায়ের মাথা সোজা (পয়েন্টেড) রাখ। কপাল ও দুই হাতের উপর সমান ভর থাকবে। উঠার সময় মাথা ভিতর দিক দিয়ে সম্মুখে ডিগবাজি দিয়ে উঠে পড়তে হবে।
কাজ – ১ : হ্যান্ড স্ট্যান্ড দেওয়ার কৌশলগুলো ব্যাখ্যা কর। কাজ – ২ : হেড স্ট্যান্ড মাঠে প্রদর্শন কর। |
পাঠ-৪ঃ এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিকস : ম্যাট বা গদির উপর মুক্ত হাতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যায়াম করাকে এডুকেশনাল জিমন্যাস্টিকস বা শিক্ষামূলক জিমন্যাস্টিকস বলা হয়। শিক্ষার্থীদের বয়স ও লিঙ্গভেদে এ ধরনের ব্যায়ামের কর্মসূচি নির্ধারণ করে অনুশীলন করাতে হয়। এ ধরনের ব্যায়ামের আগে শরীরকে ভালোভাবে গরম করে নিতে হয়। ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে মাঠ এবং সরঞ্জামগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে যাতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা না থাকে। একজন সাহায্যকারী রাখতে হবে যেন অনুশীলন করার সময় দুর্ঘটনা না ঘটে
১ . হেড স্প্রিং : শিক্ষার্থীদের উচ্চতা অনুসারে ভন্টিং বক্সের উচ্চতা নির্ধারণ করতে হবে। ভন্টিংয়ের পিছনে একটি ম্যাট থাকবে। যাতে পড়ার সময় ব্যথা না পায়। একজন সাহায্যকারী থাকবে। সে ভন্টিং বক্সের মাথায় বসে তাকে সাহায্য করবে। শিক্ষার্থীকে ১৫-২০ ফুট দূর থেকে দৌড়ে আসতে হবে। দুই হাত বক্সের উপর রেখে মাথা বক্সের সাথে লাগিয়ে দুই হাতের উপর ভর দিয়ে বা ধাক্কা দিয়ে শরীর সুইং করে দুই পা একত্র করে ল্যান্ডিং করতে হবে। যেহেতু মাথা লাগিয়ে এ ব্যায়ামটি করতে হয়, সেজন্য এর নাম হেড স্প্রিং। যখন হাত দ্বারা পুশ দিবে, তখন সাহায্যকারী প্রয়োজন হলে সাহায্য করবে। কারণ ঐ সময় হাত পিছলে মাথা নিচে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এভাবে একের পর এক সারিবদ্ধভাবে দৌড়ে এসে এ ব্যায়ামটি অনুশীলন করতে হবে।
২ . নেক স্প্রিং: নেক স্প্রিংও ভন্টিং বক্সে করতে হয়। সবকিছু হেড স্প্রিংয়ের মতো। শুধু মাথার পরিবর্তে ঘাড় লাগাতে হবে। কাছ থেকে আস্তে দৌড়ে এসে ঘাড় বক্সের উপরে রেখে দুই হাতের উপর ভর দিয়ে ল্যান্ডিং করতে হবে ।
৩ . হ্যান্ড স্প্রিং : হ্যান্ড স্প্রিং বক্সে না করে মাটিতে করতে হবে। হ্যান্ড স্প্রিং করার সময় ৪-৫ ফুট দূর থেকে দুই-তিন স্টেপ নিয়ে দুই হাত মাটিতে রাখার সাথে সাথে মাটিতে পুশ দিয়ে ঘুরে উঠে সোজা হতে হবে। যেহেতু হাতের উপর ভর বা পুশ দিয়ে উঠতে হয়, সেজন্য একে হ্যান্ড স্প্রিং বলে।
কাজ - ১ : হেড স্প্রিং দেওয়ার কৌশলগুলো করে দেখাও । কাজ – ২ : নেক স্প্রিং অনুশীলন করে দেখাও ৷ কাজ - ৩: হ্যান্ড স্প্রিং এর কৌশলগুলো প্রদর্শন কর। |
পাঠ-৫ঃ সরঞ্জামসহ ব্যায়াম : যেকোনো উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরঞ্জাম নিয়ে ব্যায়াম করাকে সরঞ্জামসহ ব্যায়াম বলে। যেমন- ক্লাইম্বিং রোপ, রোমান রিং, ফ্রিজবি, বল পাসিং, বল নিয়ন্ত্রণ, সাইক্লিং ইত্যাদি। সপ্তম শ্রেণিতে ইতিপূর্বে রোমান রিং ও ফ্রিজবি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
১. ক্লাইম্বিং রোপ : দড়ি বা রশি বেয়ে উপরে উঠাই হলো ক্লাইম্বিং রোপ। এই ব্যায়াম করার সময় যে রশি ব্যবহার করা হয় তা বেশি মোটা বা খুব চিকন হবে না। বেশি মোটা হলে ধরতে অসুবিধে হয় আবার চিকন হলে হাতে ব্যথা পাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যেকোনো গাছের ডালে রশি বেধে ঝুলা বা বেয়ে উপরে উঠাই হলো ক্লাইম্বিং। প্রথমে উঠতে অসুবিধা হলে দড়ির মাঝে মাঝে গিঁট দিতে হবে, যাতে গিট ধরে ধরে উপরে উঠা যায়। এ ধরনের ব্যায়ামে হাতের শক্তি বাড়ে।
২. বল পাসিং : খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনুসারে কয়েকটি সারিতে দাঁড় করাতে হবে। প্রত্যেক সারিতে সমান সংখ্যক খেলোয়াড় থাকবে। সকল খেলোয়াড় পা ফাঁক করে দাঁড়াবে। সারির সম্মুখের খেলোয়াড়ের নিকট বল থাকবে। সংকেতের সাথে সাথে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল পিছনে দিবে। এভাবে বলটি সারির পিছনের খেলোয়াড়ের নিকট যাবে। বল দেওয়া শেষ হলে বল মাথার উপর দিয়ে পাস দিয়ে সামনে আসবে । যে সারির বল পাস দেওয়া আগে শেষ হবে তারা বিজয়ী হবে।
কাজ - ১ : ক্লাইম্বিং রোপের কৌশলগুলো করে দেখাও । কাজ - ২ : গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বল পাসিং এর কৌশলগুলো প্রদর্শন কর। |
পাঠ-৬ : বিশ্রাম, ঘুম ও বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা : শরীর সুস্থ না থাকলে মন ভালো থাকে না। ফলে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করা যায় না। কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন এবং স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন নিজেকে সুস্থ রাখা। শুধু ব্যায়াম করলেই শরীর সুস্থ রাখা যায় না। আমাদের দেহে খাদ্য ও পানির যেমন প্রয়োজন তেমনি বিশ্রাম ও ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের পর শরীর ও মনের বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রয়োজন। চলাফেরা, কাজকর্ম ও ব্যায়ামের পর শরীর পরিশ্রান্ত হয়, শরীরের জীবকোষগুলো ক্ষয় হতে থাকে। তখন আমরা অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ি। শরীরের জীবকোষগুলোর ক্ষয়পুরণ ও পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার জন্য বিশ্রামের প্রয়োজন। বিশ্রামে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়। বিশ্রাম ও ঘুমের পরিবেশ শান্ত ও নির্জন হলে ভালো ঘুম হবে এবং দেহ ও মনের বিকাশ অব্যাহত থাকবে। ঘুমের সময় দেহের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থির হয়ে পূর্ণ বিশ্রামে থাকে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ও হজমশক্তির কাজ সুশৃঙ্খলভাবে চলতে থাকে। বিশ্রাম ও ঘুমের পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য বিনোদনও একটি মাধ্যম। যখন কোনো ব্যক্তি স্বতস্ফূর্তভাবে আনন্দ সহকারে তার সময় কাটায় তাকে চিত্তবিনোদন বলে। খেলাধুলা চিত্তবিনোদনের একটি মাধ্যম। খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন ছাড়াও সমাজে আরো বহু ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। যেমন— ভ্রমনের মাধ্যমে বিনোদন, সিনেমা, ও টিভির অনুষ্ঠান দেখে বিনোদন, নাটক উপভোগের মাধ্যমে বিনোদন, বনভোজনের মাধ্যমে বিনোদন, বই পড়ার মাধ্যমে বিনোদন, গল্প করার মাধ্যমে বিনোদন ইত্যাদি। সমাজে বসবাসরত মানুষের আগ্রহ ও চিন্তাধারা ভিন্ন হওয়ায় বিনোদনের ধারাও ভিন্ন। যে বিনোদনের মাধ্যমে কিছু শেখা যায়, তাকে শিক্ষামূলক বিনোদন বলে। যেমন :
১. শিক্ষামূলক গ্রন্থাবলি পাঠ : বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ পাঠের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান লাভ করতে পারে । কে কী ধরনের গ্রন্থাবলি পাঠ করবে তা নিজের ব্যক্তিগত আগ্রহের উপর নির্ভর করে। কেউ গল্পের বই পড়ে, কেউ ধর্মীয় বই পড়ে, কেউ উপন্যাস বা ক্রীড়া বিষয়ক ম্যাগাজিন পড়ে জ্ঞান লাভ করে থাকে ।
২. টিভি ও কম্পিউটারের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে : বর্তমানে কম্পিউটার ও টেলিভিশনে বহু ধরনের শিক্ষামূলক
অনুষ্ঠান দেখানো হয় । তা দেখে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন ও চিত্তবিনোদন করে থাকে। টিভিতে খেলাধুলা, ম্যাগাজিন শো, বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখে এবং কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলে শিক্ষার্থীরা আনন্দ লাভ করে ।
৩. আবৃত্তি ও সংগীত: অনেক পরিবারের মধ্যে আবৃত্তি ও সংগীতচর্চার মাধ্যমে অবসর সময় কাটানোর প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও সংগীতে অংশগ্রহণ করেও শিক্ষার্থীরা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় ও চিত্তবিনোদন করে থাকে।
৪. ভ্রমণ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় বা পরীক্ষা শেষে অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায় বা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে ভ্রমণকে বেছে নেয়। ভ্রমণের জন্য কেউ কেউ দেশে বা বিদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যায়। কখনো কখনো পরিবারের সবাই মিলে অথবা ক্লাসের সহপাঠি ও শিক্ষকবৃন্দ মিলে বনভোজনের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যখ্যাত স্থান, সমুদ্রতীর, ইতিহাসখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করে শিক্ষার্থীরা চিত্তবিনোদনের সাথে সাথে জ্ঞান অর্জন করে থাকে
কাজ – ১ : ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর । |
পাঠ ৭ : বয়স ও শারীরিক গঠন অনুসারে বিশ্রাম ও ঘুমের চাহিদা : বয়স ও শারীরিক গঠনের উপর বিশ্রাম ও ঘুমের চাহিদার তারতম্য হয়ে থাকে। যারা শিশু, তাদের বিশ্রাম ও ঘুমের চাহিদা একরকম। যারা কিশোর, তাদের বিশ্রাম ও ঘুমের চাহিদা ভিন্নতর। শিশু, যুবক ও বয়স্কদের বিশ্রাম ও ঘুমের চাহিদার পার্থক্য রয়েছে। শৈশবকাল হচ্ছে শিশুর বেড়ে উঠার সময়। এ সময় শিশু যেমন শারীরিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তেমনি মানসিক বিকাশও ঘটে,যা তাকে খেলাধুলা ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। শিশুকে খেলাধুলা করার সুযোগ করে দিতে হবে। খেলাধুলা করার পর কিছু সময় বিশ্রাম নিলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হয়। যে সমস্ত শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি বেশি, তারা অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এদের ঘুমের প্রয়োজন হয় বেশি। সাধারণত ৯-১০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারলে একটি শিশুর সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়। বয়স অনুসারে নিচে ঘুমানোর একটি চার্ট দেওয়া হলো
১. ৫ থেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন ১০-১১ ঘণ্টা।
২. ৮ থেকে ১১ বছর বয়স পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন ৯-১০ ঘণ্টা।
৩. ১২ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন ৮-৯ ঘণ্টা।
8. ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন ৬-৮ ঘণ্টা।
উপরোক্ত চার্ট অনুযায়ী সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার পরামর্শ দিতে হবে ।
কাজ – ১ : বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের ঘুমের চাহিদা বিশ্লেষণ কর। কাজ – ২ : বয়সভেদে ঘুমের একটি চার্ট প্রস্তুত করে শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখ |
পাঠ- ৮ : ব্রতচারী নৃত্য : গানের তালে তালে নাচের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে সকলেই পছন্দ করে। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যে লালিত আঞ্চলিক নৃত্যের মাধ্যমে সহজেই আনন্দের সাথে দৈহিক ব্যায়াম ও অঙ্গ- ভঙ্গিমা প্রদর্শন করা যায়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় আঞ্চলিক নৃত্যগুলোর মধ্যে লড়ি নৃত্য অন্যতম। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই এই নৃত্যগুলো অনুশীলন করতে পারে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন শারীরিক কসরত ও মানসিক আনন্দ পাওয়া যায় ।
লড়ি নৃত্য
স্থান- খেলার মাঠ, সরঞ্জাম-একটি বাঁশের লড়ি ও ঢোল ।
তাল- ঝা, ঝা ঝা, ঝা তা তা ।
লড়ি নৃত্যে কয়েকটি স্তর রয়েছে
ক. হুঁশিয়ার পজিশন খ. পাঁয়তারা গ. নৌকাবাইচ ঘ. সখা ঙ. মানুষ পোতা চ. বিজয় ।
১. হুঁশিয়ার পজিশন : খেলোয়াড়রা বাম হাতে লড়ি নিয়ে সোজা অবস্থায় দাঁড়াবে। লড়ির মাথা ৭-৮ ইঞ্চি বাদ রেখে ধরতে হবে । লড়ির শেষ মাথা মাটির দিকে থাকবে। অর্থাৎ পরবর্তী কার্যক্রম করার জন্য প্রস্তুত থাকা ।
২. পায়তারা : জোড় সংখ্যার খেলোয়াড়রা দু ফাইলে দাঁড়াবে বা লাইনে দাঁড়াবে। বাজনার তালে তালে
ফাইলগুলো ডাবল মার্চ করে আরম্ভ স্থানে ফিরে আসবে।
৩. নৌকাবাইচ : ১ম সংকেতে বাজনা বাজতে শুরু করবে। ২য় সংকেতে খেলোয়াড়রা ডান হাত দ্বারা লড়ির মাথা ধরে একটানে ডান দিক দিয়ে ঘুরিয়ে কাঠি পিঠের উপর রাখবে। বাম হাত দিয়ে কাঠির নিচ প্রান্ত ধরে কাঠির সাহায্যে পিঠে চাপ দিবে। ৩য় সংকেতে ছোট লাফ সহকারে বাম পা সামনে ও ডান পা পিছনে যাবে। উভয় হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে সামনে ঝুঁকে থাকবে। ৪র্থ সংকেতে নৌকার মতো দুলে দুলে পা দুটি সামনে ও পিছনে নিয়ে অগ্রসর হতে থাকবে। ৫ম সংকেতে নির্দিষ্ট সীমারেখায় পৌঁছামাত্র পূর্বের জায়গায় ফিরে আসবে। ৬ষ্ঠ সংকেতে আরম্ভ রেখায় এসে নাচতে থাকবে। ৭ম সংকেতে নাচ বন্ধ হবে। ৮ম সংকেতে লড়ি পিঠ থেকে টেনে এনে হুঁশিয়ার পজিশনে আসবে ।
৪. সখা : ১ম সংকেতে খেলোযাড়রা ডান হাত দিয়ে বাম দিকের লড়ির এক প্রান্ত ধরে একটানে বের করে জানুর উপর দুই হাত দিয়ে ধরে দাঁড়াবে। ২য় সংকেতে লড়িসহ বাম হাত সোজা করে উপরে উঠাবে এবং সেদিকে তাকাবে। ডান পা বাম পায়ের উপর আড়াআড়ি রাখবে। ৩য় সংকেতে সব দল এভাবে নাচতে নাচতে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছালে সব দল ঘুরে পূর্বের জায়গায় ফিরে এসে নাচতে থাকবে । ৪র্থ সংকেতে নাচ থামবে। ৫ম সংকেতে হুঁশিয়ার পজিশনে চলে যাবে।
৫. মানুষ পোতা : ১ম সংকেতে ডান হাত দিয়ে লড়ির মাথা টেনে এনে মাথা কলমের মতো করে ধরে পিঠের সাথে রাখতে হবে। ২য় সংকেতে ডান পা বাম দিকে ঘুরে শরীর বাঁকা করে সামনে ঝুঁকতে হবে । হাত ও পায়ের বিট একসাথে হবে। এভাবে নাচতে নাচতে একটি বৃত্ত করতে হবে। যতটি দল থাকবে ততটি বৃত্ত হবে। ৩য় সংকেতে নাচ থামবে। ৪র্থ সংকেতে লড়ি ঘুরিয়ে শরীরের পিছনে অর্থাৎ পিঠের উপর রাখতে হবে। ডান হাত কান বরাবর লড়িসহ উঁচু থাকবে।
৬. বিজয় : ১ম সংকেতে পায়ের তালের সাথে মাথা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকবে। এভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নাচতে থাকবে। ২য় সংকেতে বাম সাইডে ঘুরে নাচতে থাকবে। ৩য় সংকেতে নাচ থেমে যাবে। ৪র্থ সংকেতে সবাই এক লাফে ডান দিক ঘুরে দাঁড়াবে। ৫ম সংকেতে লড়ি হুঁশিয়ার পজিশনের অবস্থায় নিয়ে আসবে ।
লড়ি নৃত্যের গান
চল কোদাল চালাই
ভুলে মনের বালাই
ঝেড়ে অলস মেজাজ
হবে শরীর ঝালাই
যত ব্যাধির বালাই
বলবে পালাই পালাই
পেটে খিদের জ্বালায়
খাব ক্ষীর আর মালাই ।
এ ছাড়া আরও বহু লোকগীতি রয়েছে, যা দ্বারা আমরা শারীরিক কসরতের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করতে পারি। যেমন— জারি, সারি, বাউল ইত্যাদি। নিচে কয়েকটি লোকগীতির নমুনা দেওয়া হলো—
১. জারি গান
আরে ভালো ভালো ভালোরে ভাই
আরে ও ও আহা বেশ ভাই
আমরা আল্লার নামটি লইয়ারে ভাই
আমরা নাইচা নাইচা সবাই যাই
আরে শোন ক্যান শোন ক্যান মোমিন ভাই
আমরা বেয়াদপির মাপটি চাই
২. সারি গান
ও কাইয়ে ধান খাইলরে
খেদানের মানুষ নাই
খাওয়ার বেলায় আছে মানুষ
কামের বেলায় নাই
কামের বেলায় নাই
কাইয়ে ধান খাইলরে ।
ওরে হাত পাও থাকিতে তোরা
অবশ হইয়া রইলি,
কাইয়ে না খেদায়ে তোরা
খাইবার বসিলি
কাইয়ে ধান খাইল রে ।
ওরে ও পাড়াতে পাটা নাই পুতা নাই
মরিচ বাটে গালে,
তারা খাইল তাড়াতাড়ি
আমরা মরি ঝালে
কাইয়ে ধান খাইল রে ।
দলীয় কাজ - ১ : কয়েকজন শিক্ষার্থী লড়ি নৃত্য মাঠে প্রদর্শন করে দেখাও ৷ |