SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

গোল আলুর সবচেয়ে মারাত্মক রোগ-

Created: 2 years ago | Updated: 3 months ago

গোল আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ (Late Blight disease of Potato):
ধ্বসা (Blight) বলতে বুঝায়, কোন রোগের কারণে যখন কোন গাছের মাটির উপরের অংশ দ্রুত বিবর্ণ হয়ে মরে যায় । গোল আলু গাছে এ রোগ হলে আলু গাছের মাটির উপরের অংশ দ্রুত মরে যায় বলেই এ ধরনের নাম দেওয়া হয়েছে আলুর এ রোগটিকে । দুধরনের ব্লাইট রোগ হয়ে থাকে; একটি হলো লেট ব্লাইট, অপরটি হলো আর্লি ব্লাইট। (আর্লি ব্লাইট Alternaria solani দিয়ে হয়ে থাকে)। আলু গাছের সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগ হলো লেট ব্লাইট, যা বাংলায় বিলম্বিত ধ্বসা রোগ হিসেবে পরিচিত। এ রোগের কারণেই ১৯৪৫ সালে আয়ারল্যান্ডে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ইতিহাস প্রসিদ্ধ আইরিশ দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। আমাদের দেশে রংপুর, বগুড়া ও রাজশাহী জেলায় যথেষ্ট আলুর চাষ হয় । এসব অঞ্চলে এ রোগটি প্রতিবছর ফসলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রোগের বিস্তার : রোগাক্রান্ত আলু দ্বারাই রোগের প্রাথমিক সংক্রমণ ঘটে। জমিতে আলু লাগানোর পর চারা গাছ বের হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত আলুর অংশ থেকে সুপ্ত মাইসেলিয়াম উজ্জীবিত হয়ে উঠে। ছত্রাকের হাইফি থেকে উৎপন্ন হস্টোরিয়া (haustoria) নামের সরু পার্শ্বীয় উপবৃদ্ধি (outgrowth) পোষক কোষপ্রাচীর ভেদ করে ভেতরে ' প্রবেশ করে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য শুষে নেয়। এরপর অনুকুল পরিবেশে মাইসেলিয়ামগুলো পত্ররন্ধ্র ভেদ করে কনিডিওফোরকে বাইরে পাঠায়। এই কনিডিওফোরে কনিডিয়া উৎপন্ন হয় এবং পানি ও বাতাসের সাহায্যে বিস্তৃত হয়েনতুন সুস্থ আলু গাছকে আক্রমণ করে ধ্বসা রোগ সৃষ্টি করে। জমিতে যদি কোন রোগাক্রান্ত আলু না থাকে তাহলেও সে জমির গাছ এ প্যাথোজেন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কারণ অন্য কোন স্থানের রোগাক্রান্ত গাছ হতে কনিডিয়া বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয়ে ক্রমে সুস্থ আলু গাছের পাতায় পড়ে এবং রোগ সৃষ্টি করে ।

রোগের কারণঃ

(Phytophthora wfestans) নামক ছত্রাকের আক্রমণে আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ সৃষ্টি হয় । ছত্রাকটি Phycomycetes শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ছত্রাকের দেহটি সিনোসাইটিক মাইসেলিয়াম । এরা পোষক দেহের  আন্তঃকোষীয় ফাকে অবস্থান করে এবং হস্টোরিয়া নামের বিশেষ হাইফার মাধ্যমে পোষকে বংশবিস্তার ঘটে।

রোগের লক্ষণঃ

সাধারণত বীজ বপনের মাস দুই পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে । লক্ষণগুলো নিম্নরূপ- 

১. প্রথমে পাতায় সবুজ-ধূসর বর্ণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ দেখা যায় যেগুলো পরে অপেক্ষাকৃত বড় হয়ে বাদামি বর্ণের হয় এবং অবশেষে কালচে বাদামি বর্ণ ধারণ করে। ফুল আসার সময় বয়স্ক পাতার অগ্রভাগে বা কিনারায় লক্ষণ প্রথম প্রকাশিত হয়।

২. আক্রান্ত স্থানে মখমলের মতো আস্তরণ সৃষ্টি হয়। নিম্নত্বক অণুবীক্ষণযন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করলে পত্ররন্ধ্রপথে কনিডিওফোর বেরুতে দেখা যায়।

৩. আর্দ্র আবহাওয়ায় সমস্ত আক্রান্ত পাতা মরে যায় এবং রোগ পাতা থেকে কান্ডে পৌঁছে।

৪. রোগ প্রকট রূপে দেখা দিলে মাটির উপর গোটা গাছটাই মরে কালচে-বাদামি হয়ে যায়।

৫. উৎকট দুর্গন্ধযুক্ত পচনের সৃষ্টি হয়।

৬. ছত্রাকের আক্রমণ তীব্র হলে মাটির নিচে আলুও আক্রান্ত হতে পারে, আক্রান্ত অংশের খোসায় লালচে-বাদামি- কালো ছোপ দেখা যায়।

৭. ফসল তোলার সময় অথবা গুদামজাত করার সময় সাধরণত আলুর মধ্যে এ রোগের বিস্তার ঘটে। আর্দ্র পরিবেশে আক্রান্ত আলুগুলো পঁচতে শুরু করে।

রোগ দমন/ প্রতিকারঃ

নিম্নবর্ণিত উপায়ে গোল আলুর এই ছত্রাকঘটিত রোগটি প্রতিকার করা সম্ভব।

১. বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগেই শুকনো আলু রোগমুক্ত এলাকা থেকে বীজের জন্য সংগ্রহ করে পরবর্তী বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।

২. আলু চাষের জন্য সুস্থ ও জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। কোল্ডস্টোরেজ-এ রাখা বীজ ব্যবহার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

৩. পাতা থেকে আলুতে যাতে রোগ সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য আলু সংগ্রহের আগে সাইনক্স বা অ্যামোনিয়াম থায়োসায়ানেট ঔষুধ ছিটিয়ে গাছের পাতা ঝড়িয়ে ফেলতে হবে।

৪. জমি থেকে আলু ফসল উঠানোর পর পরিত্যক্ত আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৫. একই জমিতে প্রতি বছর আলু চাষ না করে ২/১ বছর পর পর চাষ করলে রোগের বিস্তার কম হবে।

৬. এলাকা ও জমির ধরণ অনুযায়ী জাত নির্বাচন করতে হবে। স্থানীয় জাত ফলন কম হলেও সাধারণত রোগ প্রবণ নয়।

৭. ছত্রাক প্রতিরোধক্ষম জাত লাগাতে হবে।

৮. গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে তুলে দিলে মাটির নিচের আলুকে অনেকাংশে ছত্রাকমুক্ত করা যায়।

৯. রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। প্রথমেই Bordaux mixture; (কপার সালফেট, লাইম ও পানি) ছিটিয়ে বা কপার-লাইম জাস্ট প্রয়োগ করে রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.