SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

রক্তের pH কত?

Created: 2 years ago | Updated: 1 month ago

প্রাণীদেহের রন্তু একধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ, আন্তঃকোষীয় লবণাক্ত এবং খানিকটা ক্ষারধর্মী তরল যোজক টিস্যু। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রন্তু থাকে, যেটি মানুষের দেহের মোট ওজনের প্রায় ৮%। মানুষ এবং অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীদেহের রক্ত লাল রঙের। রতন্ত্রর রসে লাল রংয়ের হিমোগ্লোবিন নামে লৌহ-ঘটিত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকায় রক্তের রং লাল। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে অক্সিজেন পরিবহন করে। কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে ফুসফুসে পরিবাহিত হয়, তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সিংহভাগ বাইকার্বনেট আয়ন হিসেবে রক্ত দ্বারা ফুসফুসে পরিবাহিত হয়।

রঙের উপাদান ও এদের কাজ: রষ্ট্রের প্রধান উপাদানগুলো হলো রক্তরস বা প্লাজমা এবং রক্তকণিকা (চিত্র ৩.০১)। সমগ্র রক্তের ৫৫% রক্তরস এবং বাকি ৪৫% রপ্তকপিকা। রক্তরসকে আলাদা করলে এটি হলুদ বর্ণের দেখার এবং রক্তকণিকাগুলো এই রক্তরসে ভাসমান থাকে।

 

৩.১.১ রক্তরস বা প্লাজমা

রক্তের তরল অংশকে প্লাজমা বলে। রক্তরসের প্রায় ৯০% পানি, বাকি ১০% দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে বিভিন্ন রকমের জৈব এবং অজৈব পদার্থ। অজৈব পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের আয়ন, যেমন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, আয়োডিন এবং O, CO, এবং N, জাতীয় গ্যাসীয় পদার্থ। জৈব পদার্থগুলো হলো:

১. খাদ্যসার: গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন ইত্যাদি।

২. রেচন পদার্থ: ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি।

৩. প্রোটিন: ফাইব্রিনোজেন, গ্লোবিউলিন, অ্যালবুমিন, প্রোথ্রম্বিন ইত্যাদি।

৪. প্রতিরক্ষামূলক দ্রব্যাদি: অ্যান্টিটক্সিন, অ্যাগ্লুটিনিন ইত্যাদি।

৫. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন।

৬. কোলেস্টেরল, লেসিথিন, বিলিরুবিন ইত্যাদি নানা ধরনের যৌগ।

রক্তরসের কাজগুলো হচ্ছে:

১. রক্তকণিকাসহ রক্তরসে দ্রবীভূত খাদ্যসার দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত করা।

২. টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্গত করে, সেগুলো রেচনের জন্য বৃক্কে পরিবহন করা।

৩. শ্বসনের ফলে কোষের সৃষ্ট CO, কে বাইকার্বনেট হিসেবে ফুসফুসে পরিবহন

৪. রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পরিবহন করা।

৫. হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি দেহের বিভিন্ন অংশে বহন করা।

৬. রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা।

সিরাম :

রক্ত থেকে রক্তকণিকা এবং রক্ত জমাট বাঁধার জন্য যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন আছে, সেটাকে সরিয়ে নেওয়ার পর যে তরলটি রয়ে যায়, তাকে সিরাম বলে। অন্যভাবে বলা যায়, রক্ত জমাট বাঁধার পর যে হালকা হলুদ রংয়ের স্বচ্ছ রস পাওয়া যায়, তাকে সিরাম বলে। রক্তরস বা প্লাজমা এবং সিরামের মাঝে পার্থক্য হলো রক্তরসে রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকে, সিরামে সেটি থাকে না।

৩.১.২ রক্তকণিকা

রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন রকমের কোষকে রক্তকণিকা বলে। রক্তকণিকাগুলো প্রধানত তিন রকমের, যথা:

 

(ক) লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট

(খ) শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট এবং

(গ) অণুচক্রিকা বা প্রম্বোসাইট।

লোহিত রক্তকণিকা

মানবদেহের পরিণত লোহিত রক্তকণিকা দ্বি- অবভল এবং চাকতি আকৃতির (চিত্র ৩.০২)। এতে হিমোগ্লোবিন নামে রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে দেখতে লাল বর্ণের হয়। এজন্য এদেরকে Red Blood Cell বা RBC বলে। অন্যভাবে বলা যায়, লোহিত কণিকা প্রকৃতপক্ষে হিমোগ্লোবিন ভি চ্যাপ্টা আকৃতির ভাসমান ব্যাগ। এ কারণে লোহিত কণিকা অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে। লোহিত কণিকাগুলোর বিভাজন হয় না। এ কণিকাগুলো সর্বক্ষণই অস্থিমজ্জার ভিতরে উৎপন্ন হতে থাকে এবং উৎপন্ন হওয়ার পর রক্তরসে চলে আসে। মানুষের লোহিত কণিকার আয়ু প্রায় চার মাস অর্থাৎ ১২০ দিন। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের লোহিত রক্তকণিকাগুলো উৎপন্ন হওয়ার পর রক্তরসে আসার পূর্বে নিউক্লিয়াসবিহীন হয়ে যায়। অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে এরকম ঘটে না অর্থাৎ এদের লোহিত কণিকাগুলোতে নিউক্লিয়াস থাকে। লোহিত কণিকা প্লীহা (Spleen) তে সঞ্চিত থাকে এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে প্লীহা থেকে লোহিত কণিকা রক্তরসে সরবরাহ হয়।

চিত্র ৩.০২: লোহিত কণিকা

বিভিন্ন বয়সের মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রত্নে পড়ে লোহিত কণিকার সংখ্যা ভিন্ন। যেমন ভুল দেহে; ৮a-ba লাখ; শিশুর দেহে; ৬০-৭০ লাখ; পূর্ণবয়স্ক পুরুষ দেহে: ৪.৫-৫.৫ লাখ এবং পূর্ণবয়স্ক নারীর দেহে: ৪.০-৫.০ লাখ।

লোহিত রক্তকণিকার প্রধান কাজ হলো:

১. দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।

২. নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইডকে টিস্যু থেকে ফুসফুসে বহন করা।

৩. হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখার জন্য বাফার হিসেবে কাজ করা।

 

চিত্র ৩,০৩: শ্বেত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণুকে ধ্বংস করছে।

শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট

শ্বেত কণিকার নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ। শ্বেত কণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন। হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে এদের শ্বেত রপ্তকণিকা, ইংরেজিতে White Blood Cell বা WBC বলে। শ্বেত কণিকার সংখ্যা RBC-এর তুলনায় অনেক কম। এরা অ্যামিবার মতো দেহের আকারের পরিবর্তন করে। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় (চিত্র ৩.০৩) এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে। শ্বেত কণিকাগুলো রত্নরসের মধ্য দিয়ে নিজেরাই চলতে পারে। রুন্তু জালিকার প্রাচীর ভেদ করে টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। দেহ বাইরের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত শ্বেত কণিকার সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রবে ৪-১০ হাজার শ্বেত রকণিকা থাকে। অসুস্থ মানবদেহে এর সংখ্যা বেড়ে যায়। শ্বেত রক্ত কণিকায় DNA থাকে।

প্রকারভেদ: গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুসারে শ্বেত কণিকাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় (চিত্র ৩.০৪), যথা (ক) অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন এবং (খ) গ্রানুলোসাইট বা দানাযুক্ত ।

(ক) অ্যাপ্রানুলোসাইট

এ ধরনের শ্বেত কণিকাগুলোর সাইটোপ্লাজম মানাহীন ও স্বচ্ছ। অ্যাগ্রানুলোসাইট শ্বেত কণিকা দুই রকমের; যথা-লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট। দেহের লিম্ফনোড, টনসিল, প্লীহা ইত্যাদি অংশে এরা তৈরি হয়। লিম্ফোসাইটগুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা। মনোসাইট ছোট, ডিম্বাকার ও বৃত্তাকার নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট বড় কণিকা। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং এই অ্যান্টিবডির দ্বারা দেহে প্রবেশ করা রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে। এভাবে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।

লিম্ফোসাইট

মনোসাইট

নিউট্রোফিল

ইওসিনোফিল

বেসোফিল

চিত্র ৩.০৪: বিভিন্ন প্রকার শ্বেত কণিকা

(খ) গ্রানুলোসাইট

এদের সাইটোপ্লাজম সূক্ষ্ম দানাযুক্ত। গ্রানুলোসাইট শ্বেত কণিকাগুলো নিউক্লিয়াসের আকৃতির ভিত্তিতে তিন প্রকার যথা : নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল।

নিউট্রোফিল ফ্যাপোসাইটোসিস প্রক্রিয়া জীবাণু ভক্ষণ করে। ইওসিনোফিল ও বেসোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে। বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রঞ্জকে রক্তবাহিকার ভেতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।

অণুচক্রিকা বা প্রম্বোসাইট

ইংরেজিতে এদেরকে প্লেইটলেট (Platelet) বলে। এগুলো গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে। এদের সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমে কোষ অঙ্গাণু- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু থাকে; কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না। অনেকের মতে, অণুচক্রিকাগুলো সম্পূর্ণ

 

চিত্র ০.০৫: অণুচক্রিকা এবং তার আকার পরিবর্তন

কোষ নয়; এগুলো অস্থিমজ্জার বৃহদাকার কোষের ছিন্ন অংশ। অনুচক্রিকাগুলোর গড় আয়ু ৫-১০ দিন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। অসুস্থ দেহে এদের সংখ্যা আরো বেশি হয়।

অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত তঞ্চন করা বা জমাট বাঁধানোতে (blood clotting) সাহায্য করা । যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সেখানকার অণুচক্রিকাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে অনিয়মিত আকার ধারণ করে (চিত্র ৩.০৫) এবং থ্রম্বোপ্লাসটিন (Thromboplastin) নামক পদার্থ তৈরি করে। এ পদার্থগুলো রক্তের প্রোটিন প্রোথ্রমবিনকে এমবিনে পরিণত করে। এমবিন পরবর্তী কালে রারসের প্রোটিন- ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে সন্তুকে জমাট বাধায় কিংবা রক্তের তঞ্চন ঘটায়। ফাইব্রিন একধরনের অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা প্রস্তুত করে। এটি ক্ষত স্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। তবে রন্তু তঞ্চন প্রক্রিয়াটি আরও জটিল, এ প্রক্রিয়ার জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন K ও ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে।

একক কাজ

কাজ: লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা এবং অনুচক্রিকার মধ্যে পার্থক্যগুলো ছকে লিখ।

 

৩.১.৩ রক্তের সাধারণ কাজ

১. শ্বাসকার্য: রক্ত অক্সিজেনকে ফুসফুস থেকে টিস্যু কোষে এবং টিস্যু কোষ থেকে কার্বন ডাই- অক্সাইডকে ফুসফুসে পরিবহন করে। লোহিত কণিকা ও রক্তরস প্রধানত এ কাজটি করে।

২. হরমোন পরিবহন: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে। ৩. খাদ্যসার পরিবহন: দেহের সঞ্চয় ভান্ডার থেকে এবং পরিপাককৃত খাদ্যসার দেহের টিস্যু কোষগুলোতে বহন করে ।

৪. বর্জ্য পরিবহন: নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থগুলোকে কিডনি বা বৃদ্ধ পরিবহন করে।

৫. উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ: দেহে তাপের কিস্তৃতি ঘটিয়ে দেহের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিম্নণ করে। ৬. রোগ প্রতিরোধ: দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে মনোসাইট ও নিউট্রোফিল জাতীয় খেত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণুকে গ্রাস করে ধ্বংস করে। লিম্ফোসাইট-জাতীয় খেত কণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহের ভিতরের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং বাইরের থেকে জীবাণুর আক্রমণকে প্রতিহত করে।

প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রক্তের বিভিন্ন উপাদানের স্বাভাবিক মান :

১. লোহিত রক্তকণিকা: (পুরুষ) প্রতি ঘনমিলিমিটারে ৪.৫-৫.৫ লাখ (নারী) প্রতি ঘনমিলিমিটারে ৪-৫ লাখ

২. শ্বেত কণিকা: প্রতি ঘনমিলিমিটারে ৪০০০-১০,০০০

(i) নিউট্রোফিল: ৪০-৭৫%

(ii) ইওসিনোফিল: ১-৬%

(iii) মনোসাইট: ২-১০%

এর মানের শতকরা হার।

(iv) লিম্ফোসাইট: ২০-৪৫%

(v) বেসোফিল: ০-১%

৩. হিমোগ্লোবিন

সর্বমোট স্বাভাবিক WBC

পুরুষ: ১৪-৪৬ g/dl.

নারী: ১২-১৪ g/dL

৪. অণুচক্রিকা: ১ প্রতি ঘনমিলিমিটার ৫০,০০০ - 8,00,000

অন্যান্য জৈব পদার্থ :

(i) সিরাম ইউরিয়া: ১৫-৪০ mg / L

(ii) সিরাম ক্রিয়েটিনিন : ০.৫-১.৫ mg /dL

(iii) কোলেস্টেরল: ০-200 mg / L

(iv) বিলিরুবিন : ০.২-১.০ mg / L

(v) রক্ত শর্করা (আহারের পূর্বে) স্বাভাবিক সীমা: ৪-৬ mmol/L

(dL = ডেসিলিটার)

 

৩.১.৪ রক্ত উপাদানের অস্বাভাবিক অবস্থা

মানুষের রক্তের বিভিন্ন উপাদানের তারতম্য ঘটলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তের অস্বাভাবিক অবস্থা বলা হয়। যেমন:

১. পলিসাইথিমিয়া: লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়া।

২. অ্যানিমিয়া: লোহিত কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাওয়া অথবা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় কমে যাওয়া।

৩. লিউকেমিয়া: নিউমোনিয়া, প্লেগ, কলেরা প্রভৃতি রোগে শ্বেত কণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু যদি শ্বেত কণিকার সংখ্যা অত্যধিক হারে বেড়ে ৫০,০০০-১,০০০,০০০ হয়, তাহলে তাকে লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার বলে।

৪. লিউকোসাইটোসিস: শ্বেত কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থার মান থেকে বেড়ে যদি ২০,০০০- ৩০,০০০ হয়, তাকে লিউকোসাইটোসিস বলে। নিউমোনিয়া, হুপিং কাশি ইত্যাদি রোগে এ অবস্থা হয়।

৫. থ্রম্বোসাইটোসিস: এ অবস্থায় অণুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। রক্তনালির অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়াকে থ্রম্বোসিস বলে। হৃৎপিণ্ডের করোনারি রক্তনালির রক্ত জমাট বাঁধলে তাকে করোনারি থম্বোসিস এবং গুরু মস্তিষ্কের রক্তনালিকায় রক্ত জমাট বাঁধলে তাকে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস বলে।

৬. পারপুরা: ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে এ অবস্থা হতে পারে। এ অবস্থায় অণুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়।

৭. থ্যালাসেমিয়া: থ্যালাসেমিয়া একধরনের বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়। হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতার কারণে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ রোগটি মানুষের অটোজোমে অবস্থিত প্ৰচ্ছন্ন জিনের দ্বারা ঘটে। যখন মাতা ও পিতা উভয়ের অটোজোমে এ জিনটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে, তখন তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন জিন দুটি একত্রিত হয়ে এই রোগের প্রকাশ ঘটায়। সাধারণত শিশু অবস্থায় থ্যালাসেমিয়া রোগটি শনাক্ত হয়। এ রোগের জন্য রোগীকে প্রতি ৩ মাস অন্তর রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তশূন্যতার হার কমে যায়।

Content updated By

Related Question

View More

Promotion

Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.