Admission
জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - মানব শারীরতত্ত্ব -পরিপাক ও শোষণ(তৃতীয় অধ্যায়)

মানবদেহের বিভিন্ন জৈবনিক কাজ পরিচালনা,শক্তি সরবরাহ, দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা এবং রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করার প্রাথমিক প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে পুষ্টি (nutrition)। খাদ্য (food)-ই মানবদেহে পুষ্টির যোগান দেয় । তবে মানুষ যেসব খাদ্য গ্রহণ করে থাকে তাদের অধিকাংশই দেহকোষের প্রোটোপ্লাজম শোষণ করতে পারেনা। শরীরের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন এনজাইমের তৎপরতায় খাদ্যবস্তুকে পরিপাক (digestion) নামের এক বিশেষ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রথমে সরল দ্রবণীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার পরে কোষে প্রবেশের উপযোগী হয় সবশেষে রক্ত এ পরিপাককৃত খাদ্যকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে ।

Content added || updated By

পরিপাক প্রক্রিয়াটি কতগুলো ধারাবাহিক যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

১. যান্ত্রিক পরিপাক (Mechanical digestion) : পরিপাকের সময় যে প্রক্রিয়ায় গৃহীত খাদ্যের পরিশোষণযোগ্য অংশ চিরানো, গলাধঃকরণ ও পৌষ্টিকনালি অতিক্রমের সময় নালির বিভিন্ন অংশের পেশল সঞ্চালনের ফলে গাঠনিক ভাঙনের (physical breakdown) মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত হয়ে এবং এনজাইমের ক্রিয়াতলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে (increases the surface area for the action of the digestive enzymes) সহজ ও সম্ভব করে তোলে তাকে যান্ত্রিক পরিপাক বলে ।)

২. রাসায়নিক পরিপাক (Chemical digestion) : (পরিপাকের সময় গৃহীত খাদ্যের পরিপাকযোগ্য অংশ যান্ত্রিক পরিপাকের পরপরই মুখ, পাকস্থলি ও অস্ত্রে এসিড, ক্ষার ও এনজাইমের সহায়তায় রাসায়নিক ভাঙনের (chemical breakdown) মাধ্যমে দেহকোষের গ্রহণোপযোগী উপাদানে পরিণত হওয়াকে রাসায়নিক পরিপাক বলে। নিচে মানুষের পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশে শর্করা, আমিষ ও স্নেহদ্রব্যের পরিপাক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।মুখগহ্বরে খাদ্য পরিপাক (Digestion in Buccal Cavity)

মানুষের পৌষ্টিকনালি মুখ থেকে পায় পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ৮-১০ মিটার লম্বা। পৌষ্টিকনালির শুরু মুখ থেকে। এটি নাসাছিদ্রের নিচে অবস্থিত এক আড়াআড়ি ছিদ্র যা একটি করে উপরের ও নিচের ঠোঁটে বেষ্টিত থাকে। মুখছিদ্রের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু মুখগহ্বর বা মুখবিবরে প্রবেশ করে।
মুখপরবর্তী গহ্বরটি মুখগহ্বর। একে ঘিরে এবং এর ভিতরে কয়েকটি অঙ্গ অবস্থিত। এসব অঙ্গের মধ্যে গাল, দাত, মাড়ি, জিহ্বা ও তালু প্রধান। মুখগহ্বরের ঊর্ধ্ব প্রাচীর তালুর অস্থি ও পেশি দিয়ে, সামনের প্রাচীর ঠোঁটের পেশি। দিয়ে এবং পাশের প্রাচীর গালের পেশি নিয়ে গঠিত। তালুর অগ্রভাগ অস্থিনির্মিত ও মধ্যভাগ থেকে একটি মুক্ত, পশ্চাৎভাগ পেশল ও নরম । কোমল তালুর পেছনের প্রান্তের বিশেষ আলজিহ্বা (cpiglottis) মুখগহ্বরে ঝুলে থাকে।

নিম্ন চোয়ালের অস্থির সাথে জিহ্বা যুক্ত থাকে। এর পৃষ্ঠতলে থাকে ফ্লাস্ক আকৃতির স্বাদকোরক বা স্বাদকুঁড়ি (taste bids)। স্বাদকুঁড়িগুলো খাদ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল। যেমন-জিহ্বার অগ্রপ্রান্তে মিষ্টি গ্রেভাগের দুপাশে নোনা, পশ্চাৎভাগের দুপাশে টক (অম্লতা) এবং পেছন দিকে তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করে। পাঁচ-দশ দিনের মধ্যে খাদ্যের ঘসায় স্বাদকুঁড়ি নষ্ট বা ছিন্ন হয়ে যায় এবং প্রতিস্থাপিত হয়।

 মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু দুর্ভাবে পরিপাক হয়- যান্ত্রিক ( mechanical) ও রাসায়নিক (chemical)।

যান্ত্রিক পরিপাক

সামান্যতম স্বাদ, গন্ধ ও খাদ্য গ্রহণে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্ক যে সংকেত পায় তার প্রেক্ষিতে মস্তিষ্ক লালাগ্রন্থিগুলোতে লালা ক্ষরণের বার্তা পাঠায়। লালা মূলত পানিতে গঠিত এবং খাদ্যকে এমনভাবে নরম ও মসৃণ করে যাতে দাঁতের কাজ দ্রুত ও সহজ হয়।

এ চার ধরনের দাঁত যেমন- ইনসিসর ( Incisor), ক্যানাইন (Canine), প্রিমোপার (Pre-molar) ও মোলার (Molar)-এর নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে বড় খাদ্যখণ্ড কাটা-ছেঁড়া, পেষণ-নিষ্পেষণ শেষে হজম উপযোগী ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়।

জিহ্বা নড়াচড়া ও সংকোচন-প্রসারণক্ষম পেশল অংশ। এটি স্বাদ নেওয়া ছাড়াও দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা সরাতে, মুখের চারপাশে ঘুরিয়ে বিভিন্ন দাঁতের নিচে পৌঁছাতে, লালা মিশ্রণে এবং সবশেষে গিলতে সাহায্য করে। যান্ত্রিক পরিপাকের সময় খাদ্যখণ্ড নিষ্পেষিত হয়ে নরম খাদ্যমও (bolus)-তে পরিণত হয়। জিহ্বার উপরতল যখন খাদ্যমণ্ডকে শক্ত তালুর (hard palate) বিপরীতে রেখে চাপ দেয় তখন খাদ্যমও পেছন দিকে যেতে বাধ্য হয়। T পেছনে কোমল তালু (soft palate) থাকায় খাদ্যপিণ্ড নাসাচ্ছিদ্রপথে প্রবেশে বাঁধা পায় । কোমল তালু পার হলেই খাবার গলবিলে এসে পৌঁছায়। গলবিল থেকে দুটি নালি চলে গেছে- একটি শ্বাসনালি(trachea), অন্যটি অন্ননালি (oesophagus)। আর জিহ্বার গোড়ার দিকে শ্বাসনালির অংশে ছোট উদগত অংশ হিসেবে অবস্থিত আলজিহ্বা (epiglottis) অন্ননালির উপর এমন এক উর্ধ্বগামী বলপ্রয়োগ করে যাতে চিবানো খাদ্য শ্বাসনালির ভিতর প্রবেশ না করে অন্ননালির ভিতর প্রবেশ করে।

দন্ত সংকেত (Dental formula) : স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মোট দাঁতের সংখ্যা যে সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে সংকেত বা ডেন্টাল ফর্মুলা বলে মানুষের চোয়ালে চার ধরনের দাঁত থাকে। একটি সরল রেখার উপর ও নিচে বিভিন্ন প্রক দাঁতের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর লিখে ঐ ধরনের দাত প্রতি চোয়ালের অর্ধাংশে কয়টি আছে। অতঃপর প্রতি চোয়ালের অর্ধাংশের মোট দাঁতের সংখ্যাকে ২ দ্বারা গুণ করে উভয় চোয়ালের দাঁতের সংখ্যা যোগ করলে মোট দাঁতের সংখ্য পাওয়া যায়। এ নিয়ম অনুযায়ী মানুষের দক্ষ সংকেত হচ্ছে

I2C1P2M3 X2 =৮ X২ = ১৬ + ১৬ = ৩২

রাসায়নিক পরিপাক

শর্করা পরিপাক: লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে টায়ালিন ও মন্টেজ (অঃ) নামে শর্করাবিশ্রেষী এনজাইম পাওয়া যায়। এগুলো জুটিল শর্করাকে মন্টোজ এবং সামনা মন্টোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে। টায়াদিনের ক্রিয়া মুখগহবরে শুরু হলেও এর পরিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয় পাকস্থলিতে।

১. জটিল শর্করা টায়ালিন → মল্টোজ ।

২. মল্টোজ  → গ্লুকোজ

আমিষ পরিপাক : মুখগহবরের লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে কোন প্রোটিওলাইটিক এনজাইম না থাকায় এখানে আমিষ জাতীয় খাদ্যের কোন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটেনা। 

স্নেহ পরিপাক: মুখগহ্বরে স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য কোন এনজাইম না থাকায় এধরনের খাদ্যের কোন পরিপাক ঘটেনা।

লালামিশ্রিত, চর্বিত ও আংশিক পরিপাককৃত শর্করা গলবিল ও অন্ননালির মাধ্যমে পাকস্থলিতে পৌঁছায় ।

পাকস্থলিতে খাদ্য পরিপাক (Digestion in Stomach)

পাকস্থলিটি ডায়াফ্রামের নিচে উদরের উপরের অংশে অবস্থিত প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১৫ সেন্টিমিটার চওড়া বাঁকানো থলির মতো অংশ । একে কয়েকটি অংশে ভাগ করা যায়, যথা:

যে অংশে অন্ননালি উন্মুক্ত হয় তা কার্ডিয়া (cardia)।

কার্ডিয়ার বাম পাশে পাকস্থলি প্রাচীর যা গম্বুজাকার ধারণ করে তা ফানডাস (fundus )

ডান অবতল ও বাম উত্তল কিনারা যথাক্রমে ছোট ও বড় বাঁক অংশটি ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়েছে তা হচ্ছে পাইলোরাস (pylonus)

কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক অংশে একটি করে বৃত্তাকার পেশিবলয় আছে। এদের যথাক্রমে কার্ডিয়াক ও পাইলোরিক স্ফিংক্টার বলে।

যান্ত্রিক পরিপাক

মুখ থেকে চর্বিত খাদ্য অন্ননালিপথে পাকস্থলিতে এসে ২-৬ ঘন্টাকাল অবস্থান করে । এসময় প্যারাইটাল কোষ থেকে HCI ক্ষরিত হয়ে খাদ্য বাহিত অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। চেমসণ পেশির ৩টি স্তর নিয়ে পাকস্থলি গঠিত। পেশিস্তর বিভিন্ন দিকমুখি হওয়ায় পাকস্থলি প্রাচীর নানাদিকে সঞ্চালিত হয়ে (মোচড় দিয়ে, সংকুচিত হয়ে কিংবা চাপা হয়ে) মুখগহ্বর থেকে আসা অর্ধচূর্ণ খাদ্যকে পিষে (paste)-এ পরিণত করে।

এসময় গ্যাস্ট্রিক জুস (gastric juice) ক্ষরিত হয়ে পাকস্থলির যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশে ঘন সুপের মতো মিশ্রণে পরিণত হয়। খাদ্যের এ অবস্থা কাইম (chyme) বা মন্ড নামে পরিচিত। এর উপর গ্যাস্ট্রিক অস্থি নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক কাজ শুরু হয়ে যায়।

রাসায়নিক পরিপাক

পাকস্থলির প্রাচীর পেশিবহুল এবং গ্যাস্টিক গ্রন্থি (gastric gland) সমৃদ্ধ। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি এক ধরনের নলাকার গ্রন্থি এবং চার ধরনের কোষে গঠিত। প্রত্যেক ধরনের কোষের ক্ষরণ আলাদা। সম্মিলিতভাবে (গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির ক্ষরণকে পার্শ্বিক জুস বলে। এর ৯৯.৪৫%ই পানি। গ্যাস্ট্রিন (gastrin) নামক হরমোন এই জুস ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ।শর্করা পরিপাক : পাকস্থলি থেকে শর্করাবিশ্লেষী কোন এনজাইম নিঃসৃত হয় না। ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

আমিষ পরিপাক: গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রোটিওলাইটিক (আমিষ বিশেষ এনজাইম থাকে । এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের HCI-এর সাথে বিক্রিয়া করে পেপসিন নামক সক্রিয় এনজাইমে পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিন পেপটোন-এ পরিণত করে। রেনিন দুগ্ধ আমিষ কেসিনকে প্যারাকেসিনে পরিণত করে।

স্নেহ পরিপাক : পাকস্থলির প্রাচীর থেকে গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়। এটি প্রশমিত স্নেহ দুবারে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল-এ পরিণত করে ।

স্নেহদ্রব্য গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ ফ্যাটি এসিড + গ্লিসারল অর্ধপাচিত এ খাদ্য ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। পাকস্থলির পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংটার (sphincter পেশির বেড়ী যা ছিদ্রপথকে বেষ্টন করে থাকে) পাকস্থলি থেকে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।

Content added By

যকৃত (Liver)

অবস্থান : যকৃত উদর-গহ্বরের উপরভাগে ডানদিকে ডায়াফ্রামের ঠিক নিচে ডিওডেনাম ও ডান বৃক্কের উপরদিকে পাকস্থলির ডান পাশে অবস্থিত।

গঠন : এটি মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষে এর ওজন প্রায় ১.৫-২.০০ কেজি। ডান, বাম, কোয়াড্রেট ও কডেট নামে ৪টি অসম্পূর্ণ খণ্ড নিয়ে যকৃত গঠিত। খণ্ডগুলো স্থিতিস্থাপক তত্ত্বসমৃদ্ধ ক্যাপসুলে আবৃত । ডান খণ্ডটি সবচেয়ে বড়। যকৃতের নিচের পিঠে পিত্তথলি (gall bladder) সংলগ্ন থাকে। প্রত্যেকটি খণ্ড বহুভুজাকার কোষে গঠিত। কোষগুলো একেকটি ক্ষুদ্র অণুখণ্ড নির্মাণ করে। প্রত্যেক অণুখণ্ডের কেন্দ্রে থাকে কেন্দ্রীয় শিরা (central vein)। যকৃত কোষগুলো ঢাকার স্পোকের মতো বিন্যস্ত। এদের গা বেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাইনুসয়েড (sinusoid) ও পিত্তনালিকা প্রসারিত হয়। পিত্তনালিকাগুলো পিত্তনালিতে গিয়ে শেষ হয়। যকৃত থেকে আসা ডান ও বাম নালি মিলে একটি সাধারণ  যকৃত নালি  পিত্তনালি গঠন করে। এটি পিত্তনালির সাথে মিলিত হয়ে অভিন্ন পিত্তনালি গঠন করে যা অ্যাম্পুলা অব ভ্যাটার (ampulla of vater) নামে নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়।

যকৃতের সঞ্চয়ী ও বিপাকীয় ভূমিকাঃ 

সঞ্চয়ী ভূমিকাঃ

যকৃত প্রায় পাঁচ শতাধিক জৈবনিক কাজে সহায়তা করে

১. শর্করা সঞ্চয় । (গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়া) যকৃতে ১০০ গ্রাম গ্লাইকোজেন জমা থাকতে পারে। আর পেশিতে এর চেয়েও বেশি পরিমাণ জমা থাকে।

২. পিত সক্ষয় : যকৃত থেকে তৈরিকৃত শিত, পিতলিতে জমা হয়। 

৩. ভিটামিন সঞ্চয় : যকৃতে প্রধানত লিপিতে দুগীয় ভিটামিন A, D, E ও K জমা রাখে। তবে পানিতে প্রবণীয় ভিটামিনও (B ও C) অল্প পরিমান সঞ্চয় করে। ১/১০০০ হচ্ছে আয়রন জমা থাকে।

৪. খনিজ লবণ সঞ্চয় : যকৃতে কপার, জিংক, কোরাস্ত, মলিবডেনাম, আয়রন, পটাশিয়াম সঞ্চয় করে। যকৃতের অন্ধ তরের 

৫. রক্ত সঞ্চয় : রক্তের আয়জন বেড়ে গেলে হেপাটিক পোর্টাল শিরাগুলো ১.৫ লিটার পর্যন্ত রক্ত সঞ্চয় করতে পারে।

 

বিপাকীয় ভূমিকাঃ

১. শর্করা বিপাক

i. গ্লাইকোজেন→গ্লুকোজ (গ্লুকোজেনোলাইসিস)

ii. গ্লুকোজ→ গ্লাইকোজেন (গ্লাইকোজেনেসিস)

iii. লিপিড / প্রোটিন→ গ্লুকোজ (গ্লুকোনিওজেনেসিস)

২. প্রোটিন বিপাক

i. ডিঅ্যামিনেশন : অতিরিক্ত প্রোটিন ইউরিয়াতে রূপান্তরকে ডিঅ্যামিনেশন বলে। 

ii. ট্রান্সঅ্যামিনেশন : একটি অ্যামিনো এসিড থেকে অ্যামিনো গ্রুপ বহন করে অন্য এক অর্গানিক এসিডে স্থানান্তরের মাধ্যমে অ্যামিনো এসিড সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ট্রান্সঅ্যামিনেশন বলা হয়।

iii. প্লাজমা প্রোটিন উৎপাদন : প্রোটিন প্লাজমায় অবস্থিত বিভিন্ন প্রোটিন অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, ইত্যাদি। সংশ্লেষণ করতে পারে। 

৩. ফ্যাট বিপাকঃ অতিরিক্ত ফ্যাট দেহের বিভিন্ন টিলাস্থানে সঞ্চিত হয়। আর শর্করার অভাব হলে গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ উৎপাদন করে।

৪. রক্তসংক্রান্ত কার্যাবলি : ভ্রূণ অবস্থায় যকৃৎ লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি করে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় লোহিত কণিকা ধ্বংস করে। যকৃৎ প্রোগ্রাম্বিন ও ফাইব্রিনোজেন সৃষ্টি করে রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করে। যকৃতে অবস্থিত মাস্ট কোষ হেপারিন নিঃসরণ করে রক্তপ্রবাহের মধ্যে রক্ত তঞ্চনে বাধা দেয়। যকৃৎ RBC-এর হিমোগ্লোবিন ভেঙে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন সৃষ্টি করে। যকৃত লৌহ সঞ্চয় করে হিমোগ্লোবিন গঠন করে।

৫. রেচন সংক্রান্ত কার্যাবলি : যকৃৎ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ, টক্সিন, ব্যাকটেরিয়া, অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত ওষুধ (drugs) পিত্তের মাধ্যম দেহ থেকে দূরীভূত করে। এছাড়া যকৃৎ বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবডি গঠন করে। 

৬. তাপ নিয়ন্ত্রণ : যকৃৎ রাসায়নিক বিক্রিয়াজাত অধিক উত্তাপ শোষণ করে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৭. কোলেস্টেরল উৎপাদন : কোলেস্টেরল বা ফ্যাটসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ কালে নানান প্রক্রিয়া শেষে যকৃতে কোলেস্টরল উৎপন্ন হয়। হাট অ্যাটাক (Coronary thrombosis) ও স্ট্রোক (cerebral thrombosis) সংক্রান্ত জটিলতায় কোলেস্টেরল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

৮. পিত্ত উৎপাদন : যকৃৎ কোষ (হেপাটোসাইট) অনবরত পিত্তরস ক্ষরণ করে এবং পিত্তথলিতে জমা রাখে। যকৃৎ হেপাটোসাইট কোয় স্টেরয়েড থেকে পিত্ত লবণ যেমন- সোডিয়াম গ্লাইকোকোলেট (Sodium glycocholate), সোডিয়াম টরোকোলেট(Sodium taurocholate) সংশ্লেষ করে। পরিপাক অঙ্গ হিসেবে যকৃতের পিত্ত উৎপাদন ও ক্ষরণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

৯. হরমোনের ভাঙন : যকৃৎ প্রায় সব হরমোনই কম বেশি ধ্বংস করে। তবে টেস্টোস্টেরণ ও অ্যালডোস্টেরণ যত দ্রুত ধ্বংস তন্ত্র ধ্বংস হয় না। এভাবে যকৃৎ বিভিন্ন হরমোনের কর্মকাণ্ডে স্থায়ী অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (হোমিওস্ট্যাসিস) সৃষ্টি করে। 

১০. টক্সিন বা বিষ অপসারণ : শরীরের ভেতর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ফলে উৎপন্ন যেসব পদার্থ মাত্রাতিরিক্ত জমা হলে দেহে হয় অন্য হরমোনগুলো (ইনসুলিন, গ্লুকাগন, আন্ত্রিক হরমোন, স্ত্রী যৌন হরমোন, অ্যাড্রেনাল হরমোন, থাইরক্সিন ইত্যাদি) বিষয়মতার সৃষ্টি করে এমন সব পদার্থকে টক্সিন বা বিষ বলে। যকৃৎ কোষের অভ্যন্তরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এই বিষ প্রশমিত হয়ে যায়।

Content added || updated By

অগ্ন্যাশয়ঃ অবস্থান: অগ্ন্যাশয় পাকস্থলির নিচে অবস্থিত এবং উদর গহ্বরের ডিওডেনামের অর্ধবৃত্তাকার কুন্ডলীর ফাঁক থেকে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত।

গঠন: অগ্ন্যাশয় ১২-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৫ সেন্টিমিটার চওড়া একটি মিশ্র গ্রন্থি (mixed gland)। এর চওড়া যে দিকটি ডিওডেনামের কুন্ডলির ফাঁকে থাকে তার নাম মাথা, যে অংশ সংকীর্ণ হয়ে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত সেটি লেজ এবং মাথা ও লেজের মাঝের অংশকে দেহ বলে। অগ্ন্যাশয়ের
গ্রন্থিগুলো থেকে ছোট ছোট নালিকা বেরিয়ে একত্রিত হয় এবং উইর্সাং নালি (duct of Wirsung) গঠন করে। এ নালি বাহুর দৈর্ঘ্য বরাবর এসে ডিওডেনামের কাছে অভিন্ন পিত্তনালির সাথে মিলিত হয়ে অ্যাম্পুলা অব ভ্যাটার(amula of vater)-এর মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিকোষগুলো ছোট ছোট নালিকার প্রান্তে আঙ্গুরের গোছার মতো সাজানো। এগুলোর বাইরে ক্ষুদ্র বহুভুজাকার কোষ একত্রিত হয়ে একেকটি আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স গঠন করে। আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স প্রায় ১০ লক্ষ কোষের একটি গুচ্ছ নিয়ে গঠিত এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। কোষগুলো চার ধরনের হয়: আলফা কোষ  গ্লুকাগন (glucagon) হরমোন ক্ষরণ করে যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, বিটা কোষ ইনসুলিন (insulin) হরমোন ক্ষরণ করে যা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়, ডেল্টা কোষ।  সোমাটোস্ট্যাটিন (somatostatin) হরমোন ক্ষরণ করে যা আলফা ও বিটা কোষের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং  গামা কোষ  পলিপেপটাইড ক্ষরণ করে ।

পরিপাকে অগ্ন্যাশয়ের কাজ : খাদ্য পাকস্থলি থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে যাওয়ার সময় ক্ষারীয় তরলরূপী অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত ২য় অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে দুধরনের ক্ষরণ মিলে অগ্ন্যাশয় রস গঠন করে

পরিপাক এনজাইম এবং একটি ক্ষারীয় তরল এ রসে যে ৩টি প্রধান এনজাইম থাকে তা হচ্ছে অ্যামাইলেজ, লাইপেজ ও প্রোটিয়েজ। আমাইলেজ স্টার্চকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্রতর কার্বোহাইড্রেট ও চিনির অণুতে পরিণত করে। লাইপেজ পিত্তলবণের উপস্থিতিতে ফ্যাটকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। প্রোটিন বিশ্লেষকারী বিভিন্ন এনজাইম (প্রোটিয়েজ) পেপটাইড অণুকে ক্ষুদ্রতর পেপটাইডে পরিণত করে। দেহে অধিকাংশ প্রোটিন পরিপাক হয় অগ্ন্যাশয় রসের বিভিন্ন প্রোটিয়েজের মাধ্যমে। অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ যে সব প্রোটিয়েজ ক্ষরণ করে তার মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে ট্রিপসিন ও কাইমোট্রিপসিন। এগুলো বড় প্রোটিন অণুকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্রতর পেপটাইডে পরিণত করে (পেপটাইড থেকে অ্যামিনো এসিডে পরিণত হওয়ার বিষয়টি অন্যান্য পেপটাইডেজের ক্রিয়ায় ক্ষুদ্রান্ত্রে সংঘটিত হয়)।

অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে অগ্ন্যাশয় রসের অংশ হিসেবে ক্ষরিত হয় বাইকার্বনেট আয়ন। আংশিক পাচিত খাদ্য (অর্থাৎ কাইম) গ্যাস্ট্রিনের কর্মকান্ডে অতিমাত্রায় আত্মিক থাকে। বাহকাথনাটের প্রকৃতি ক্ষারীয় হওয়ায় অর্ধপাচিত খাদ্য নিরপেক্ষ হয়ে যায়। ফলে এ খাদ্য ক্ষুদ্রান্তে গেলেও আন্ত্রিক প্রাচীরের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বাইকার্বনেট আয়ন ক্ষরিত হয় বহিঃক্ষরা অগ্ন্যাশয়ের নালিপ্রাচীরের কোষ থেকে । অগ্ন্যাশয় রস এভাবে অম্ল- ক্ষারের সাম্য, পাণিসাম্য, দেহতাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে

Content added By
মাইটোকন্ড্রিয়া
প্যানক্রিয়াস
যকৃত
নিউক্লিয়াস
পিত্তথলি
টায়ালিন ও মাল্টেজ
অ্যামাইলেজ ও মাল্টেজ
অ্যামাইলেজ ও সুক্রেজ
সুক্রেজ ও ল্যাকটেজ

পরিপাকে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা (Role of Nervous System in Digestion):

১. লালারস ক্ষরণ (Secretion of saliva) :

মুখগহ্বরে অবস্থিত লালাগ্রন্থি থেকে লালারস ক্ষরণ দুধরণের প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রথমটি সহজাত প্রতিবর্তী বা অনপেক্ষ প্রতিবর্তী (unconditional reflex) – এ ধরনের প্রতিবর্তী ক্রিয়া জন্মগত স্থির ও কোনো শর্তাধীন নয়। দ্বিতীয়টি অর্জিত বা সাপেক্ষ প্রতিবর্তী (conditional reflex) – এ ধরণের প্রতিবর্তী জন্মগত নয়, বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

২. গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরণ (Secretion of Gastric Juice)

ক. স্নায়ু পর্যায় (Nervous phase) বা মস্তিষ্ক দশা (Cephalic phase) :

মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তুর উপস্থিতি এবং এর গলাধঃকরণ একপ্রকার স্নায়ু উদ্দীপনাকে সৃষ্টি করে যা দ্রুত মস্তিষ্কের ভেগা স্নায়ু থেকে পাকস্থলীতে পৌঁছে। পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক উদ্দীপনায় গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয় পাকস্থলীতে খাদ্য পৌঁছার পূর্বে রস নিঃসরণ শুরু হয়। স্নায়ু পর্যায় প্রায় ১ ঘণ্টাকাল স্থায়ী হয়।

খ. পাকস্থলীর পর্যায় বা গ্যাস্ট্রিক পর্যায় (Gastric phase) :

খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছালে পাকস্থলীর প্রাচীর উদ্দীপ্ত হয় এবং স্নায়বিক উদ্দীপনা সাবমিউকাস স্তরের মেসনার’স প্লেক্সাস (meissener’s plexus)- এ পৌঁছে। ফলে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে উদ্দীপনা পৌঁছালে তা সক্রিয় হয়ে গ্যাস্ট্রিক রসের ক্ষরণ ঘটায়। পাশাপাশি উদ্দীপনা মিউকোসা অবস্থিত বিশেষ এন্ডোক্রিন কোষকে গ্যাস্ট্রিন (gastrin) হরমোন নিঃসরণের জন্য প্রভাবিত করে। উভয়বিধ ক্রিয়ার হাইড্রোক্লোরিক এসিড সমৃদ্ধ গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ এর প্রায় ৪ ঘণ্টা যাবৎ চলতে থাকে।

গ. আন্ত্রিক পর্যায় (Intestinal phase) :

যখন খাদ্যদলা/কাইম (bolus/chime) ডিওডেনামে প্রবেশ করে এর প্রাচীরের সংস্পর্শে আসে তখন হরমোনাল এবং স্নায়বিক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এ সময় ডিওডেনামের মিউকোসা কোলেসিস্টোকিনিন (cholecystokinin) ও সিক্রেটিন (secretin) হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়। সিক্রেটিন পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ বন্ধ করে এবং কোলেসিস্টোকিনিন পাকস্থলী থেকে খাদ্য ডিওডেনামে আসার গতি নিয়ন্ত্রণ করে।৩. অগ্ন্যাশয় রস ও পিত্ত নিঃসরণ (Pancreatic Juice and Bile Secretion) 

সিক্রেটিন এবং কোলেসিস্টোকিনিন উভয় হরমোনই অগ্ন্যাশয় ও পিত্ত ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ভেগাস স্নায়ু যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত করে।

পরিপাকে হরমোনের (Hormones) ভূমিকাঃ

১. গ্যাস্ট্রিন (Gastrin)

পাকস্থলীর জী-কোষ থেকে গ্যাস্ট্রিন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে পাকস্থলীর প্রাচীরে অবস্থিত গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক জুস নিঃসৃত হয়। এটি HCl এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

২. সিক্রেটিন (Secretin) :

অন্ত্রের (ডিওডেনামের) মিউকোসা থেকে হরমোন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে অগ্নাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। এটি পাকস্থলীর প্রাচীরকে পেপসিন এনজাইম। যকৃতকে পিত্ত ক্ষরণে উদ্দীপিত করে। এটি প্রথম আবিষ্কৃত হরমোন।

৩. কোলেসিস্টোকিনিন (cholecystokinin) :

এর অপর নাম প্যানক্রিওজাইমিন। ক্ষুদ্রান্তের প্রাচীর থেকে ক্ষরিত হরমোনটি অগ্নাশয় বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণ উদ্দীপিত করে। 

৪. সোমাটোস্ট্যাটিন (Somatostatin) :

এ হরমোনটি পাকস্থলী ও অন্ত্রের মিউকোসা তে অবস্থিত ডি-কোষ থেকে ক্ষরিত হয়। এটি গ্যাস্ট্রিন এর ক্ষরণ নিবারণ করে ফলে পাকস্থলীর রসের ক্ষরণ হ্রাস পায়। এটি অগ্নাশয় রসের ক্ষরণও হ্রাস করে।

৫. এন্টেরোকাইনিনঃ ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে নিঃসৃত হয়ে লিবারকুন গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে আন্ত্রিক রসে এনজাইম নিঃসরণ করে।

৬. এন্টেরোগ্যাস্টরোন: ডিওডেনাম থেকে নিঃসৃত হয়ে পাকস্থলীর বিচলন ও গ্যাস্ট্রিক জুস নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে।

৭. ডিওক্রাইনিন: ডিওডেনাম থেকে নিঃসৃত হয়ে ব্রুনারের গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে আন্ত্রিক রসে এনজাইম ও মিউকাস ক্ষরণ করে।

৮. প্যানক্রিয়েটিক পলিপেপটাইড: প্যানকিয়েটিক পলিপেপটাইড কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণে বাধা দেয়।

৯. ভিল্লিকাইনিন: ক্ষুদ্রান্ত থেকে নিঃসৃত হয়ে ভিলাই- এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

Content added By

ক্ষুদ্রাস্ত্রে খাদ্যদ্রব্যের পরিপাক (Digestion in Small Intestine)

পাকস্থলির পাইলোরিক স্ফিংক্টারের পর থেকে বৃহদন্ত্রের সূচনায় ইলিওকোলিক স্ফিংটার (iliocolic sphincter পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৬-৭ মিটার লম্বা, পাঁচানো অংশকে ক্ষুদ্রান্ত বলে। ক্ষুদ্রার তিনটি অংশে বিভক্ত, যথা ডিওডেনাম (duodenum), জেজুনাম (jejunum) এবং ইলিয়াম (ileum)। ডিওডেনাম হচ্ছে ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ যা "U"- আকৃতির ও ২৫-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। জেজুনাম মধ্যাংশ, লম্বায় আড়াই মিটার। শেষ অংশটি ইলিয়াম ক্ষুদ্রান্ত্রের তিন-পঞ্চমাংশ গঠন করে।


যান্ত্রিক পরিপাক

পিত্তরস পরোক্ষভাবে অস্ত্রে জীবাণুর ক্রিয়া কমায়
ও স্থানান্তরিত হয় । কুনার্স গ্রন্থি ও গবলেট কোষ থেকে মিউকাস তৈরি হয়। মিউকাস ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরকে এনজাইমের কার্যকারিতা থেকে রক্ষা করে।

সব ধরনের খাদ্যের চূড়ান্ত পরিপাক ক্ষুদ্রান্তেই সংঘটিত হয়। খাদ্যের উপর তিন ধরনের রস, যে (bile), অগ্ন্যাশয় রস (pancreatic juice) ও আন্ত্রিক রস (intestinal juice) ক্রিয়া করে।  আন্ত্রিক রসের মিউসিনের ক্রিয়ায় ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যস্থিত খাদ্যবস্তু পিচ্ছিল হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পিত্তলবণগুলো ক্ষুদ্রান্ত্রের পেশির ক্রমসংকোচন বাড়িয়ে বৃহদন্ত্রের দিকে খাদ্যের গতি বৃদ্ধি করে। কোলিসিস্টোকাইনিন নামক হরমোন পিত্তাশয়ের সংকোচন ঘটিয়ে পিত্তাশয়ে সঞ্চিত পিত্তরস ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে দেয়। পিতলবণ স্নেহদ্রব্যকে ইমালসিফাই (emulsify) করে সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে।

রাসায়নিক পরিপাক

পাকস্থলি থেকে আগত অম্লীয় কাইম অর্ধ-পরিপাককৃত শর্করা ও আমিষ এবং প্রায় অপরিপাককৃত স্নেহদ্রব্য নিয়ে গঠিত। কাইম ক্ষুদ্রান্ত্রের গহ্বরে পৌঁছালে অস্ত্রের প্রাচীর থেকে এন্টেরোকাইনিন (enterokinin), সিক্রেটিন (secretin) এবং কোলেসিস্টোকাইনিন (cholecystikinin) নামক হরমোন ক্ষরিত হয়। এসব হরমোনের প্রভাবে পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয় ও আন্ত্রিক গ্রন্থি থেকে যথাক্রমে পিত্তরস, অগ্ন্যাশয় রস ও আন্ত্রিক রস নিঃসৃত হয়।

পিত্তরস ক্ষার জাতীয় তরল পদার্থ। এতে কোন এনজাইম থাকে না। পিত্তরসের সোডিয়াম বাইকার্বোনেট উপাদানটি পাকস্থলি থেকে আগত HCI কে প্রশমিত করে অস্ত্রের অভ্যন্তরে একটি ক্ষারীয় মাধ্যম তৈরি করে যা ক্ষুদ্রান্ত্রে বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

শর্করা পরিপাক

অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত রসে শর্করা পরিপাকের জন্য নিচে বর্ণিত এনজাইম ক্রিয়া করে।

১. অ্যামাইলেজ এনজাইম স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন জাতীয় জটিল শর্করাকে মল্টোজে পরিণত করে।

স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন → মল্টোজ।

২. মল্টেজ এনজাইম মল্টোজ জাতীয় শর্করাকে গ্লুকোজে পরিণত করে। 
 
মল্টোজ→ গ্লুকোজ।

আন্ত্রিক রসে শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাককারী নিম্নলিখিত এনজাইম ক্রিয়া করে :

১. আন্ত্রিক অ্যামাইলেজ স্টার্চ, ডেক্সট্রিন প্রভৃতি পলিস্যাকারাইডকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে মল্টোজ, মল্টোট্রায়োজ ও ক্ষুদ্র ডেক্সট্রিন উৎপন্ন করে।

স্টার্চ, ডেক্সট্রিন + H2O → মল্টোজ, মল্টোট্রোয়োজ, ক্ষুদ্র ডেক্সট্রিন।

২. আইসোমস্টেজ এনজাইম আইসোমল্টোজ জাতীয় শর্করাকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে মল্টোজ ও গ্লুকোজ উৎপন্ন করে।

আইসোমল্টোজ + H2O → মল্টোজ + গ্লুকোজ ।

৩. মল্টেজ এনজাইম মল্টোজকে বিশ্লিষ্ট করে গ্লুকোজ তৈরি করে।

মল্টোজ+ H2O → গ্লুকোজ

সুক্রেজ এনজাইম সুক্রোজ নামক ডাইস্যাকারাইডকে ভেঙ্গে এক অণু গ্লুকোজ ও এক অণু ফ্রুক্টোজ তৈরি করে।

সুক্রোজ + H2O →গ্লুকোজ + ফ্রুক্টোজ ।

৫. ল্যাক্টেজ এনজাইম দুধের ল্যাক্টোজ নামক ডাইস্যাকারাইডকে ভেঙ্গে এক অণু গ্লুকোজ ও এক অণু গ্যালাক্টোজে পরিণত করে।

ল্যাক্টোজ + H2O → গ্লুকোজ + গ্যালাক্টোজ ।

অগ্ন্যাশয় রসে অবস্থিত এনজাইমসমূহ আমিষ জাতীয় খাদ্যের উপর নিম্নরূপ ক্রিয়া করে।

১. ট্রিপসিন এনজাইম নিষ্ক্রিয় ট্রিপসিনোজেনরূপে ক্ষরিত হয়। ডিওডেনামের মিউকোসা নিঃসৃত এন্টেরোকাইনেজ এনজাইমের সহায়তায় এটি সক্রিয় ট্রিপসিনে পরিণত হয়।

ট্রিপসিন প্রোটিওজ ও পেপটোন জাতীয় আমিষকে ভেঙ্গে পলিপেপটাইডে পরিণত করে।

প্রোটিওজ ও পেপটোন → পলিপেপটাইড ।

কাইমোট্রিপসিন নিষ্ক্রিয় কাইমোট্রিপসিনোজেনরূপে ক্ষরিত হয়। পরে ট্রিপসিনের ক্রিয়ায় এটি সক্রিয় কাইমোট্রিপসিনে পরিণত হয় । এটি প্রোটিওজ ও পেপটোনকে ভেঙ্গে পলিপেপটাইডে পরিণত হয়।

প্রোটিজ ও পেপটোন → পলিপেপটাইড + অ্যামিনো এসিড।

কার্বোক্সিপেপটাইডেজ এনজাইম পলিপেপটাইডের প্রান্তীয় লিঙ্কেজকে সরল পেপটাইড (ডাইপেপটাইড) ও অ্যামিনো এসিডে রূপান্তরিত করে।

পলিপেপটাইড → ডাইপেপটাইড + অ্যামিনো এসিড।

৪. অ্যামিনোপেপটাইডেজ এনজাইম পলিপেপটাইডকে ভেঙ্গে অ্যামিনো এসিডে পরিণত করে।

পলিপেপটাইড → অ্যামিনো এসিড।

৫. ট্রাইপেপটাইডেজ এনজাইম ট্রাইপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিডে পরিণত করে।

ট্রাইপেপটাইড → অ্যামিনো এসিড।

৬. ডাইপেপটাইডেজ এনজাইম ডাইপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিড পরিণত করে।

ডাইপেপটাইড → অ্যামিনো এসিড।

৭. কোলাজিনেজ এনজাইম মাছ ও মাংসে বিদ্যমান কোলাজেন জাতীয় প্রোটিনকে সরল পেপটাইডে রূপান্তরিত করে।

কোলাজেন → সরল পেপটাইড।

৮. ইলাস্টেজ এনজাইম যোজক টিস্যুর প্রোটিন ইলাস্টিনকে ভেঙ্গে পেপটাইড উৎপন্ন করে।

ইলাস্টিন → পেপটাইড ।

আন্ত্রিক রসে আমিষ পরিপাককারী এনজাইম অ্যামিনোপেপটাইডেজ পলিপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিডে পরিণত করে।

পলিপেপটাইড → অ্যামিনো এসিড।

স্নেহ পরিপাকে পিত্তরস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পিত্তরসে কোন এনজাইম থাকে না। অগ্ন্যাশয় রসে স্নেহজাতীয় খাদ্য বা ফ্যাট পরিপাককারী এনজাইম স্নেহকণাকে নিম্নরূপে পরিপাক করে-

পিত্তরসে বিদ্যমান পিতলবণ (bile salts) সোডিয়াম গ্লাইকোকোলেট (sodium glycocholate) ও সোডিয়াম টরোকোলেট (sodium taurocholate) স্নেহ জাতীয় খাদ্যকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে। এ প্রক্রিয়াকে ইমালসিফিকেশন (imulsification) বলে ।

১. লাইপেজ নামের এনজাইম স্নেহকণাকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।

স্নেহকণা → ফ্যাটি এসিড + গ্লিসারল।

২. ফসফোলাইপেজ এনজাইম ফসফোলিপিডের উপর নিম্নরূপ ক্রিয়া করে-

ফসফোলিপিড → ফ্যাটি এসিড + গ্লিসারল + ফসফোরিক এসিড।

৩। কোলেস্টেরল এস্টারেজ এনজাইম কোলেস্টেরল এস্টারের উপর ক্রিয়া করে ফ্যাটি এসিড ও কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে।

কোলেস্টেরল এস্টার → ফ্যাটি এসিড + কোলেস্টেরল।

১. লাইপেজ এনজাইম পিত্তলবণের প্রভাবে স্নেহকণায় পরিণত হওয়া লিপিডকে আর্দ্রবিশ্লিষ্ট করে মনোগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল এস্টার কোলেস্টেরল এস্টারেজ আন্ত্রিক রসে নিম্নলিখিত স্নেহ পরিপাককারী এনজাইম ক্রিয়া করে :
ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে। পরবর্তীতে তা ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে রূপান্তরিত হয়।

স্নেহকণা + মনোগ্লিসারাইড → ফ্যাটি এসিড।

২. লেসিথিনেজ এনজাইম লেসিথিনকে ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল, ফসফরিক এসিড ও কোলিনে পরিণত করে।

লেসিথিন → ফ্যাটি এসিড + গ্লিসারল + ফসফোরিক এসিড + কোলিন ।

৩. মনোগ্লিসারাইডেজ কোষের ভেতরে মনোগ্লিসারাইডকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।

মনোগ্লিসারাইড →  ফ্যাটি এসিড + গ্লিসারল ।

এছাড়াও আন্ত্রিক গ্রন্থির নিউক্লিয়েডেজ, নিউক্লিওটাইডেজ ও নিউক্লিওসাইডেজ এনজাইমসমূহ নিউক্লিক এসিড ও এর উপাদানসমূহে ফসফেট গ্রুপ, পেন্টোজ স্যুগার ও নাইট্রোজেন বেস-এ ভেঙ্গে দেয়।

খাদ্যবস্তুর শোষণ (Absorption of Food) ক্ষুদ্রান্ত্রের ইলিয়াম অংশে পরিপাকের চূড়ান্ত পর্যায়ের শেষে উৎপন্ন পদার্থ শোষিত হয়। এর অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত অসংখ্য ক্ষুদ্র অভিক্ষেপ বা ভিলাই (villi; একবচনে villus )- শোষণের জন্য যথাযথভাবে অভিযোজিত। ভিলাইগুলোর উপরিভাগের তল স্তম্ভাকার আবরণী কোষ দিয়ে আবৃত থাকে। মানুষের অস্ত্রে প্রায় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) ভিলাই থাকে । ক্ষুদ্রান্ত্রে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের শোষণ প্রক্রিয়া সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

শর্করা শোষণ : গুকোজ ও গ্যালাকটোজ ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকাস ঝিল্লির কাইনেজ নামক এনজাইমের সহায়তায় অতি দ্রুত ফসফরাস যুক্ত হয়ে সক্রিয় শোষণের মাধ্যমে শোষিত হয়ে পোর্টাল শিরা-র রক্তে প্রবেশ করে। ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ ও ল্যাকটোজ ব্যাপন প্রক্রিয়ায় শোষিত হয়। পোর্টাল শিরা দ্বারা শোষিত খাদ্যসার যকৃতে মুক্ত  করে এবং সেখান থেকে যকৃতে পৌঁছে।

আমিষ শোষণ : আমিষের পরিপাকজাত অ্যামিনো এসিডগুলো শোষিত হয়ে পোর্টাল শিরার রক্তে প্রবেশ এল-অ্যামিনো এসিডগুলো সক্রিয় পদ্ধতিতে এবং ডি- অ্যামিনো এসিডগুলো ব্যাপনের মাধ্যমে শোষিত হয়। মাসক্যুলারিস অ্যামিনো এসিড ব্যতীত কিছু প্রোটিওজ, পেপটোন, ও পলিপেপটাইড অণু অপরিবর্তিত অবস্থায়। পরিমাণে শোষিত হয়।


চর্বি বা লিপিড শোষণ : চর্বির পরিপাকজাত ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ভিলাইয়ের স্তম্ভাকার এপিথেলিয়াম কোষে প্রবেশ করে এবং পূনরায় লিপিডে পরিণত হয়। এপিথেলিয়াল কোষে যে প্রোটিন থাকে তা লিপিড অণুকে আবৃত করে লিপোপ্রোটিন কণা গঠন করে, তার নাম কাইলোমাইক্রন (chylomicrons) এগুলো এক্সোসাইটোসিস (exocytosis) প্রক্রিয়ায় এপিথেলিয়াল কোষ ত্যাগ করে এবং ভিলাইয়ের লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে। লসিকা তখন সাদা বর্ণ ধারণ করে। এ কারণে তখন লসিকা বাহিকাকে ল্যাকটিয়োল (lactcal) বলে । ল্যাকটিয়োল অর্থ হচ্ছে সাদাটে (milky)। কাইলোমাইক্রনগুলো লসিকার মাধ্যমে লসিকাতন্ত্রের ভেতর দিয়ে হৃৎপিন্ডের কাছে শিরারক্তের প্লাজমায় প্রবেশ করে। প্লাজমায় একটি এনজাইম লিপিডকে বিশ্লিষ্ট করে আবার কোষের গ্রহণ উপযোগী ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল সৃষ্টি করে। এগুলো শ্বসনে ব্যবহৃত হয় কিংবা স্নেহ পদার্থ (fat) হিসেবে যকৃত, মেসেন্টারি বা চামড়ার নিচে সঞ্চিত থাকে।

ক্ষুদ্রান্ত্রে লবণ, ভিটামিন এবং পানি ব্যাপন বা সক্রিয় শোষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাই দ্বারা শোষিত হয় । ইলিয়াম ও সিকামের মাঝখানে অবস্থিত স্ফিংক্টার পেশি সময় সময় খুলে এবং বন্ধ হয়ে সামান্য পরিমাণ পদার্থ ইলিয়াম থেকে বৃহদন্ত্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
 

Content added By
শুধুমাত্র ক্ষুদ্রান্ত্রে
শুধুমাত্র পাকস্থলীতে
পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে
পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রে

বৃহদন্ত্রের কাজঃ খাদ্যের পরিপাক এবং পরিপাককৃত খাদ্য দেহে শোষণের পর যে অংশটুকু অপাচ্য থাকে বা শোষিত হয় না, তা বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে। মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্রের ইলিয়ামের পেছন থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা, নলাকার ও খাঁজযুক্ত অংশকে বৃহদন্ত্র বলে । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ মিটার। এটি তিন অংশে বিভক্ত। সম্মুখের জেজুনাম সংলগ্ন গোলাকৃতির অংশকে সিকাম (caccum), মধ্যবর্তী আকৃতির বৃহৎ অংশকে কোলন (colon) এবং পশ্চাতের পায় সংলগ্ন থলে আকৃতির অংশকে মলাশয় (rectum), বলে। সিকামের সাথে একটি বদ্ধ ধরনের থলি যুক্ত থাকে। একে অ্যাপেনডিক্স (appendix) বলে) মানুষের বৃহদন্ত্র প্রধানত নিম্নবর্ণিত কাজগুলো সম্পন্ন করে।

১. মলাশয় ও সিকামে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া
প্রায় ৫০০ প্রজাতির) মিথোজীবী হিসেবে বাস করে।এসব ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদতত্ত্বর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ (যেগুলো পরিপাক করার মতো এনজাইম মানুষের
পৌষ্টিকনালি থেকে নিঃসৃত হয়না) প্রভৃতির ফারমেন্টেশন ও হাইড্রোলাইসিস ঘটিয়ে ক্ষুদ্র খাদ্যাণুতে পরিণত করে।

২. ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে আগত পরিপাক বর্জ্যে বিদ্যমান পানির প্রায় ৭০-৮০% অভিস্রবণের মাধ্যমে বৃহদন্তে শোষিত হয়ে কঠিন মলের আকার ধারণ করে। কিছু পরিমাণ অজৈব লবণ, গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড, ফোলিক এসিড,ভিটামিন -B ও K বৃহদন্ত্রে শোষিত হয়।

৩.বৃহদন্ত্রের মিউকোসা স্তরে অবস্থিত গবলেট কোষ থেকে মিউকাস ক্ষরণ করে বৃহদন্ত্রের  অভ্যন্তর ভাগকে পিচ্ছিল রাখে।


৪. ক্ষুদ্রান্ত্রের পরিপাক ও শোষণের পর খাদ্য ও পাচকরসগুলোর অবশিষ্ট উপাদান ইলিওকোলিক পেশিবলয় অতিক্রম করে সিকাম ও কোলনে প্রবেশ করে এবং সেখানে দীর্ঘসময় সঞ্চিত থাকে।

৫. দৈনিক প্রায় ৩৫০ গ্রাম তরল মন্ড (chyle) বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে। মন্ড থেকে শোষণের মাধ্যমে প্রায় ১৩৫ এর আর্দ্র মল (facces) উৎপন্ন হয়ে দেহের বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয়। মলাশয় থেকে মল পায়ুছিদ্র পথে বের করে দেওয়াকে মলত্যাগ বলে। মলত্যাগ একটি প্রতিবর্ত (reflex) ক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে মলত্যাগের প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পূনর্বয়স্ক মানুষ দিনে একবার কিংবা দুবার, শিশুরা দিনে কয়েকবার মলত্যাগ করে।

Content added By

"স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল'- একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় প্রবচন । আগে সাধারণ মানুষের চোখে স্বাস্থ্যবান মানুষ বলতে দীর্ঘকায় ও মোটা-সোটা ব্যক্তিকে বোঝাত। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে আমরা জানতে পেরেছি যে 'মোটা-সোটা' অতি ব্যক্তি মানেই স্বাস্থ্যবান মানুষ নয়। স্বাস্থ্যের আধুনিক সংজ্ঞা হচ্ছে : রোগ-ব্যাধি বা অন্যান্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতিমুক্ত শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক মঙ্গলকর অবস্থাকে স্বাস্থ্য বলে (Mosby's Medical Dictionary, 8th edition ব 2009)) এ সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্থূলতাকে স্বাস্থ্যের পরিবর্তে অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন
শাখার সৃষ্টি হয়েছে। আদর্শ দৈহিক ওজনের ২০% বা তারও বেশি পরিমাণ মেদ দেহে সঞ্চিত হলে তাকে স্থূলতা বলে। স্থূলতার ফলে দেহের ওজন স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায় পূর্ণবয়ষ্ক মানুষে দেহের মাত্রাতিরিক্ত ওজন নির্ধারণের জন্য উচ্চতা ও ওজনের যে আনুপাতিক হার উপস্থাপন করা হয় তাকে দেহের ওজন সূচক বা বডি মাস ইনডেক্স (Body Mass Index = BMI) বলে । যদি কারও BMI ২৫ কেজি/ বর্গমিটার থেকে ৩০ কেজি/বর্গ মিটারের মধ্যে থাকে তখন তাকে স্থূলকায় বা মোটা বলা যায়। BMI ৩০ কেজি/m-এর বেশি হলে তাকে অতিস্থূলকায় বলে ।

BMI = দেহের ওজন (কিলোগ্রাম) ব্যক্তির উচ্চতা (মিটার২)

স্থূলতার ব্যাপকতায় সারা পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে আজ স্থূলতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি শাখাও সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে শাখায় সুলতার কারণ, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় তাকে বেরিয়াট্রিকস (Bariatrics) বলে। স্থূলতার কারণে যে সব রোগ হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-করোনারি হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার (স্তন, কোলন), উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, যকৃত ও পিথেলির অসুখ, স্লিপ অ্যাপনিয়া, অস্টিও-আর্থাইটিস, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি।

Content added By
শ্বাসনালি
রক্তবাহিকায়
পাকস্থলী
অস্ত্র
হলুদ অস্থিমজ্জায়

স্থুলতার কারণ (Causes of Obesity):

ব্যক্তি পর্যায়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, কিন্তু পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম না করাকে স্থূলতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত তা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, সামাজিক পর্যায়ে সুলভ ও মজাদার খাবার, গাড়ীর উপর নির্ভরতা বেড়ে যাওয়া এবং পালন যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারকে স্থূলতা বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করা হয়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা যে সব কারণকে তার জন্য বিশেষভাবে দায়ী করেছেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

জিনগত : সফল বিপাক এবং দেহে মেদ সঞ্চয় ও বিস্তারের ক্ষেত্রে গুচ্ছ জিন ভূমিকা পালন করে। স্থূলকায় পাক-মায়ের সন্তান প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে স্থূলকায় হয়। নিম্ন বিপাক হার এবং জিনগত সংবেদনশীলতা স্থূলতার কারণ

পারিবারিক জীবনযাত্রা : পরিবারের জীবনযাত্রার উপর স্থূলতা প্রকাশ অনেকখানি নির্ভর করে। খ্যাদ্যাভ্যাস পারিবারিকভাবেই গড়ে উঠে। চর্বিযুক্ত ফাস্টফুড (বার্গার, পিৎজা ইত্যাদি) খাওয়া, ফল, সব্জি ও অপরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (লাল চালের ভাত) না খাওয়া, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করা; দামী রেস্তোরায় খাওয়ার আগে সংবর্ধক ও খাওয়ার শেষে চর্বি ও চিনিযুক্ত ডেসার্ট (dessert) খাওয়া।

আবেগ : বিষণ্ণতা, আশাহীনতা, ক্রোধ, একঘেঁয়েমি-জনিত বিরক্তি, নিজেকে ছোট ভাবা কিংবা অন্য কারণে অতিভোজন করার ফলে স্থূলতা দেখা দিতে পারে ।

কর্মক্ষেত্র: চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে ঠায় বসে থেকে কাজ করা এবং সহকর্মীদের চাপে ফাস্টফুড বা এ জাতীয় Ofধবার খাওয়া। কাজ শেষে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে না চেপে গাড়ি করে বাসায় ফেরা। পিতা-মাতা

মানসিক আঘাত : দুঃখজনক ঘটনাবলী, যেমন-শৈশবকালীন শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার; মারানোর বেদনা; কিংবা বৈবাহিক বা পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি অতিভোজনকে উসকে দেয়।

বিশ্রাম : বিশ্রামের সময় বাসায় বসে কেবল রিমোট কন্ট্রোলড টিভি দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা বা নো কম্পিউটারে গেম খেলার কারণে কায়িক পরিশ্রমের অভাবে স্থূলতা দেখা দেয়।

লিঙ্গভেদ : গড়পরতায় নারীর চেয়ে পুরুষদেহে বেশি পেশি থাকে। পেশি যেহেতু অন্যান্য টিস্যুর চেয়ে বেশি কা, কলরি ব্যবহার করে (এমনকি বিশ্রামের সময়ও) পুরুষ তাই নারীর চেয়ে বেশি ক্যালরি ব্যবহার করে । এ কারণে নারী- পুরুষ একই পরিমাণ আহার করলেও নারীদেহে মেদ জমার সম্ভাবনা বেশি থাকে।


গর্ভাবস্থা : প্রতিবার গর্ভধারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদেহে ৪-৬ পাউন্ড ওজন বেড়ে যায়। নিদ্রাহীনতা : রাতে ৬ ঘন্টার কম ঘুম হলে দেহে হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে ক্ষুধাগ্রতা বেড়ে যায় ফলে বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করায় স্থূলতার সৃষ্টি হয়।শিক্ষার অভাব : সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সুষম খাদ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, স্থূলতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে না জানা ইত্যাদি কারণে স্থূলতা দেখা দেয়।

অসুখ : পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome) হলে নারীদেহে স্থূলতা দেখা দিতে কুসিং সিনড্রোম (Cushing's Syndrome), হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) হলেও
স্থুলতা হতে পারে।

কতক ওষুধ : কিছু ওষুধ স্থূলতার সম্ভাবনাকে উসকে দিতে পারে, যেমন-কার্টিকোস্টেরয়েডস, অবসন্ন দূর করার ওষুধ (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস), জন্মবিরতিকরণ বড়ি প্রভৃতি । তাছাড়া ইনসুলিন ও কিছু ডায়াবেটিক প্রতিষেধক ওষুধও স্থূলতা সৃষ্টি করে।
 

Content added By

স্থূলতা প্রতিরোধ (Prevention of Obesity): স্থূলতাজনিত ঝুঁকির মধ্যে কেউ থাক বা না থাক সবারই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। স্থূলতা প্রতিরোধের জন্য নিতে উল্লেখিত আচরণ-কেন্দ্রিক বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ, পালন ও অনুসরণ করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম : সপ্তাহে অন্তত ১৫০-২৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা সাঁতার কাটার অভ্যাস করতে হবে।

স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ : কম ক্যালোরি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল, সব্জি ও গোটা শস্য দানা গ্রহণ করতে হবে। 

খাদ্য নিয়ন্ত্রণ : চর্বিময় খাবার, মিষ্টিসমৃদ্ধ আহার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অ্যালকোহল গ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

লোভনীয় খাবার পরিহার : লোভনীয় খাবারের দিকে হাত বাড়ানো ঠিক নয়। ভূক্তভোগীরা যেন আহার গ্রহণের সময় তাদের জন্য নির্ধারিত খাবার তালিকা কঠোরভাবে মেনে চলেন সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। 

দেহের ওজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা : প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত অন্তত একবার নিজের ওজন মেপে দেখতে হবে। রুটিন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের প্রভাব কতখানি সফল হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী ফল পেতে হলে খাদ্য ও ব্যায়াম সংক্রান্ত তালিকার প্রতি অটল ও বিশ্বস্ত থাকতে হবে।

চিকিৎসা: Orlistat (Xenical), Lorcaserin (Belviq), Phentermine (Suprenza) প্রভৃতি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্থূলতা প্রতিকারে মানুষ আজ অস্ত্রোপচারেও পিছপা হচ্ছে না ।

Content added By

পরিপাক গ্রন্থীঃ

 যেসব গ্রন্থির গ্রন্থি থলি বা গ্রন্থিকোষ বিভিন্ন উৎসেচক সমৃদ্ধ পাচকরস ক্ষরণ করে, তাদের পরিপাক গ্ৰন্থি বলে।

মানবদেহে পাঁচ ধরণের পৌষ্টিকগ্রন্থি রয়েছে, যথা – লালাগ্রন্থি, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি ও আন্ত্রিক গ্রন্থি।

১. লালাগ্রন্থি (Salivary glands)

মানুষের মুখগহ্বরের দুপাশে নিচে বর্ণিত তিন জোড়া লালাগ্রন্থি অবস্থিত।

ক. প্যারোটিড গ্রন্থি : এগুলো সবচেয়ে বড় লালাগ্রন্থি। প্রতি কানের নিচে রয়েছে একটি করে মোট দুটি প্যারোটিড গ্রন্থি।

খ. সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি : প্রতিমা নিম্নস্তরের কৌণিক অঞ্চলের নিচে একটি করে মোট একজোড়া সাব ম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি অবস্থিত।

গ. সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি : জিহ্বার নিচে অবস্থান করে একজোড়া সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি।

লালা (Saliva)

লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে লালা বা লালারস বলে। একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ১২০০-১৫০০ মিলিলিটার লালা ক্ষরণ করে। লালা সামান্য অম্লীয়, ফলে মুখ গহ্বরে সব সময় pH 6.2-7.4 মাত্রায় আম্লিক অবস্থা বিরাজ করে।

লালার উপাদান (Composition of saliva)

পানি : ৯৫.৫% – ৯৯.৫%

কোষীয় উপাদান :  ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, লিউকোসাইট, এপিথেলিয়াল কোষ ইত্যাদি।

গ্যাস : প্রতি 100 মিলি লালায় 1 মিলি অক্সিজেন 25 মিনিট নাইট্রোজেন এবং 50 মিলি কার্বন-ডাইঅক্সাইড দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।

অজৈব পদার্থ : প্রায় ০.২%; সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম ইত্যাদি।

জৈব পদার্থ : প্রায় ০.৩%; এনজাইম (টায়ালিন, লাইপেজ, কার্বনিক এনহাইড্রেজ, ফসফেটে, ব্যাকটেরিও লাইটিক এনজাইম ইত্যাদি), মিউসিন, ইউরিয়া, অ্যামিনো এসিড, কোলেস্টেরল, ভিটামিন, অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি ইত্যাদি।

লালার কাজ (Functions of saliva)

লালার অধিকাংশ প্রাণী। খাদ্যের স্বাদ অনুভব এবং পরিপাকের সময় বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য পানি খাদ্যের দ্রাবক হিসাবে খাদ্যকে ভিজিয়ে নরম করে।

১. মুখ, জিহ্ববা ও ঠোট লাগায় সিক্ত থাকায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়।

২. মিউসিন নামক গ্লাইকোপ্রোটিন খাদ্যের সঙ্গে পিচ্ছিল খাদ্যকে দলায় পরিণত করে। লালা খাদ্য চর্বণ ও গলাধঃকরণ সহায়ক। এসিড ও বেসকে প্রশমন (বাফার) করতেও এটি সাহায্য করে।

৩. ক্লোরাইড (Chloride) : সালিভারি অ্যামাইলেজকে সক্রিয় করে।

৪. সালিভারি অ্যামাইলেজ বা টায়ালিন এনজাইম (Salivary amylase or Ptyaline) :  রান্না করা স্টার্চের পলিস্যাকারাইড-কে ভেঙে মলটোজ এবং ডেক্সট্রিন নামক ডাইস্যাকারাইড-এ পরিণত করে।

৫. বাইকার্বনেট (Bicarbonate) : লালার অম্লতা PH 6.2 -7.4 এর মধ্যে বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি বাফার হিসাবে কাজ করে। ফলে মুখে সৃষ্ট এসিডের শক্তি কমিয়ে রাখার মাধ্যমে দাঁতের এনামেল ক্ষয় রোধ করে।

৬. লাইসোজাইম এনজাইম (Lysozyme enzyme) : গৃহিত খাদ্যের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের মাধ্যমে দাঁতকে রক্ষা করে।

৭. ইম্যুনোগ্লোব্যুলিন (Immuniglobulin) : লালা হচ্ছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সিস্টেমের অংশ।

 

Content added By