জন ডাল্টনের পরমাণু মতবাদের পরপরই পরমাণুর গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯৭-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন বিজ্ঞানী পরমানুর উপর বিভিন্ন পরীক্ষা - নিরিক্ষার পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ উপস্থাপন করেন যা পরমাণুর মডেল নামে পরিচিত। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো -
(১) থমসন পামপুডিং পরমাণু মডেল : ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ।
(২) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ।
(৩)বোর পরমাণু মডেল : ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত
(৪) বোর - সমারফিল্ড পরমাণু মডেল ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ।
(৫) তরঙ্গ বলবিদ্য পরমাণু মডেল : ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে লুইস দ্য ব্রগলি কর্তক প্রকাশিত
পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার :
১৯১১ সালে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের ছাত্র গিগার এবং ই. মার্সডেন বিখ্যাত a- কণা পরীক্ষা পরিচালনা করেন যা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে। তারা এই বিশেষ পদ্ধতিতে অতি পাতলা (0.004cm) সোনার পাতে প্রায় (20000) a- কণার প্রবাহ নিক্ষেপ করে দেখেন যে, অধিকাংশ a- কণা পাত ভেদ করে পিছনে রাখা গোলাকার ZnS পর্দকে দীপ্তিমিত করে।
রাদারফোর্ড কর্তৃক a-কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা :
হিলিয়াম পরমাণু থেকে দুইটি a-কণা বের করে নিলে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট থাকে একেই আলফা কণা বলে ।
প্রচন্ড গতিসম্পন্ন a-কণাসমূহকে একটি পাতলা সোনার পাতের উপর নিক্ষেপ করেন। একটি বৃত্তাকার জিংক সালফাইট (ZnS) আবরণযুক্ত একটি পর্দার কেন্দ্রে সোনার পাতটি রাখা হয়
পর্যবেক্ষন :-
১. প্রায় ৯৯% a-কণাই সোনার পাত বেধ করে সোজাসুজি চলে যায় এবং (ZnS) পর্দার উপর প্রতিপ্রভা বা দীপ্তিমান বা আলোকিত করে তোলে ।
২. কিছু সংখ্যাক a-কণা তাদের গতি পথে বেঁকে যায়
৩. প্রায় ২০,০০০ এর মধ্যে ১ টি a-কণা সোজা
বিপরীত দিকে ফিরে আসে।
সিদ্ধান্ত
১. পরমাণুর বেশি ভাগ এলাকাই ফাকা । সেই ফাঁকা স্থানে ইলেকট্রন থাকতে পারে। এদের ভর কম হওয়ায় তারা a-কণার গতিপথের কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না ৷
২. ভারী কোন কিছুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলেই কিছু সংখ্যক a-কণা বিপরীত দিতে ফিরে আসে । অথাৎ পরমাণুর কেন্দ্রে ভারী বস্তু কণা রয়েছে।
৩. যেহেতু a- কণা ধনাত্মক চার্জ যুক্ত এবং কিছু সংখ্যাক a-কণা বেকে যায় তাই বলা যায় বলা যায় পরমানুর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জ যুক্ত বস্তু রয়েছে যা দ্বারা a-কণা বিকষিত হয়। ভারী ও ধনাত্মক চার্জ যুক্ত এই কেন্দ্র কে নিউক্লিয়াস বলা হয়। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চর্জের পরিমাণ মৌলের পারমানবিক সংখ্যার সমান।
৫. যেহেতু বেশিভাগ - কণান স্বর্ণপাত ভেদ করে বের হয়ে যায় তাই বলা যায় পরমাণুর আকারের তুলনায় নিউক্লিাসের আকার খুবই ছোট। পরমাণুর আকার নিউক্লিাসের থেকে প্রায় ১০ থেকে ১ লক্ষ বড় হতে পারে।
রাদারফোর্ডের পরমাণুর মডেল :
১. পরমানু অত্যন্ত ক্ষুদ্র গোলাকৃতি কণা বিশেষ । এটি দুটি অংশে বিভক্ত ।
(i). কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস
(ii). কেন্দ্র বহির্ভূত অংশ
২. পরমাণুর কেন্দ্রেস্থলে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে ধনাত্মক চর্জ যুক্ত ভারী কণা বিদ্যমান। একে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলে ।
৩. নিউক্লিয়ার আকার সমগ্র পরমাণুর তুলনায় খুবই ক্ষুদ্র যেখানে পরমাণুর 10 cm ব্যাস নিউক্লিয়াস ব্যাস 10 cm
৪. নিউক্লিয়াসে পরমাণুর সমস্ত ধনাত্মক চার্জ ও ভর পুঞ্জিভূত থাকে। তাই মোটামোটি ভাবে নিউক্লিয়াসে ভরই পারমানবিক ভর ।
৫. সাধারন অবস্থায় পরমাণু বিদ্যুৎ নিরেপেক্ষ । কারণ নিউক্লিয়াসে ধনাত্মাক চার্জ যুক্ত প্রোটন সংখ্যা উহার চতুর্দিকে ঘূর্ণয়মান ঋনাত্মক চার্জ যুক্ত ইলেকট্রন সংখ্যা পরষ্পর সমান
৬. সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণয়মান গ্রহসমূহের মতো পরমাণু নিউক্লিয়াসের চারদিকে কতগুলো ঋণাত্মক কাণিকা সর্বদা ঘূণীয়মান। এগুলোকে ইলেকট্রন বলে ।
৭. সৌরজগতে ন্যায় অথাৎ সূর্যকে কেন্দ্র করে যেভাবে গ্রহগুলো ঘুরে তেমনি ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র সর্বদা ঘূর্ণয়মান। এ ঘূর্ণনের ফলে কেন্দ্রমূখী বল এবং কেন্দ্রবিমূখী বল পরষ্পর সমান থাকে বলে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসে পতিত হয় না।
রাদারফোর্ডের পরমাণুর মডেলের সীমাবদ্ধতা :
১. সৌরমন্ডলের গ্রহগুলো সামগ্রিকভাবে তড়িৎ নিরপেক্ষ, অথচ ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জ যুক্ত ।
২. ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব মতে কোন চার্জযুক্ত কণা অপর কোন চার্জযুক্ত কণাকে কেন্দ্র করে বৃত্তকার পথে ঘুরলে তা অনবরতভাবে শক্তি বিকিরন করবে এবং শক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে তার আবর্তনশীল বৃত্তাকার পথটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকবে। ফলে ঋনাত্মক চার্জ যুক্ত ইলেকট্রনসমূহ ক্রমশ শক্তি হারাতে হারাতে নিউক্লিয়াসে গমন করবে।এ অবস্থায় পরমাণুর অস্তিস্ব ধ্বংস হবে। অথচ পরমাণু হতে অনবরত শক্তি বিকিরণ বা ইলেকট্রনেসমূহের নিউক্লিয়াসে পতন কোনটি ঘটবে না ।
৩. ঘূর্ণনরত ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্বন্ধে কোন কোন ধারনা রাদারফোর্ডেও মডেল থেকে পাওয়া যায় না ।
৪. ঘূর্ণনরত ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্বন্ধে কোন কোন ধারনা রাদারফোর্ডেও মডেল থেকে পাওয়া যায় না ৷
৫. একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর গঠন এ মডেল ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৬. হাইড্রোজেনের বর্ণালীর কোন ব্যাখ্যা এ মডেল থেকে পাওয়া যায় না ৷
বোর পরমাণুর মডেল :
ম্যাক্স প্লাঙ্কের বিকিরন কোয়ান্টাম তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পরমাণুর এবং একই সাথে পারমানবিক বর্ণালী ব্যাখ্যার জন্য নীলস বোর ১৯১৩ সালে তাঁর বিখ্যাত পরমাণু মডেল প্রকাশ করেন। বোর পরমাণুর মডেলের প্রধান তিনটি স্বীকার্য হচ্ছে -
১.ইলেকট্রনের স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের ধারণা:
পরমাণুতে যে সব ইলেকট্রন থাকে তারা নিউক্লিয়ানকে কেন্দ্র করে ইচ্ছমত যে কোন বৃত্তাকার কক্ষপথে বিচরণ করতে পারে না, কেবলমাত্র কতগুলো নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের বৃত্তকার কক্ষপথে কোন রুপ শক্তি বিকিরণ না করে অনবরত ঘুরতে থাকে। এই কক্ষপথগুলোকে শক্তিস্তর বলে। শক্তিস্তর নির্দেশকারী এই সংখ্যাগুলোকে প্রধান কোয়ান্টাম বলে (n)। এই শক্তিস্তরগুলোকে 1,2,3...... ইত্যাদি পূর্ণ সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এই শক্তিস্তরগুলোকে ইংরেজী অক্ষর K,L,M,N... ইত্যাদি দ্বারাও প্রকাশ করা হয়। নিউক্লিয়াস হতে যত দূরে যাওয়া যায় কক্ষপথের শক্তি ততই বৃদ্ধি পায় ।
২.শক্তি শোষণ বা বিকিরণ ও বর্ণালী সৃষ্টির ধারণা :
নির্দিষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে যেকোন একটিতে বিচরণকালে ইলেকট্রন কোন শক্তি বর্জনও করে না, শোষণও করে না অথাৎ এই কক্ষপথগুলিতে ইলেকট্রন স্থির না থাকলেও এদের শক্তি স্থির থাকে । ইলেকট্রন এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে স্থানান্তরিত শক্তির শোষণ বা বিকিরণ ঘটে। উচ্চ শক্তিস্তর (যার শক্তি E2) হতে নিম্ন শক্তিস্ত (যার শক্তি E1) এ স্থানান্তরিত হলে যে শক্তি বিকিরণ হয় তার পরিমাণ হবে (E2– E1) । আবার নিম্ন শক্তিস্তর (যার শক্তি E1) হতে উচ্চ শক্তিস্ত (যার শক্তি E2) এ স্থানান্তরিত হলে যে শক্তি বিকিরণ হয় তার পরিমাণ হবে (E2 - E1 ) । অতএব শোষিত বা বিকিরিত শক্তিকে নিম্নের সমীকরনের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
বোর পরমাণুর মডেলের সীমাবদ্ধতা :
১. এই মডেল যে সকল পরমাণু বা আয়নে একটি মাত্র ইলেকট্রন থাকে (যেমন- H, He, Li2+) তাদের বর্ণালী ব্যাখ্যা করতে পারলেও একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুসমূহের বর্ণলী ব্যাখ্যা করতে পারে না
২. ইলেকট্রন যখন এক শক্তিস্তর হতে অপর শক্তিস্তরে স্থানান্তরিত হয় তখন বোর পরমাণু মডেল অনুসারে বর্ণালিতে একটি করে রেখা সৃষ্টি হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে অধিকতর সূক্ষ্ম যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করলে দেখা যায়, পারমাণবিক বর্ণলির প্রতিটি রেখা একাধিক সূক্ষ্ম রেখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। বোরের মতবাদ এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে না। অবশ্য পরবর্তীতে বোর মতবাদের সম্প্রসারন করে বিজ্ঞানী সমারফিল্ড এর ব্যাখ্য প্রদান করে।
৩. বোর মতবাদ হাইজেনবার্গ এর অনিশ্চয়তার নীতি, স্টার্ক ফলাফল, জীম্যান ফলাফল ব্যাখ্যা করতে পারে না ।
রাদারর্ফোডরে মডলেরে উল্লাযোগ্য প্রস্তাবসমূহ :
১. পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস বিদ্যমান ।
২. পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চর্তুদিকে ইলকেট্রন নামক ঋনাত্মক কণকিা সর্বদা ঘূর্ণায়মান ।
৩. নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জ যুক্ত প্রোটন সংখ্যা উহার চর্তুদিকে ঘূর্ণয়মান ঋনাত্মক চার্জ যুক্ত ইলকেট্রন সংখ্যা পরষ্পর সমান বলে পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ।
৪. পরমাণুর নিউক্লিয়াস ও ইলকেট্রনরে মধ্যে বিরাজিত কেন্দ্রমূখী স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষন বল এবং কেন্দ্রমূিখী বলরে মান পরষ্পর সমান এবং বিপরীতমুখী ।
বোর মডলেরে উল্লেেযাগ্য প্রস্তাবসমূহ :
১. ইলকেট্রনরে স্থির কক্ষ পথ বা শক্তস্তির সম্পর্কতি ধারণা।
২. ইলকেট্রনরে কৌণকি ভরবগে সম্পর্কিত ধারণা।
৩. ইলকেট্রনরে শক্তি শোষণ, বিকিরণ এবং বর্ণলী সৃষ্টির ধারণা
রাদারর্ফোড ও বোর মডলেরে প্রস্তাবসমূহ বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিতি বিষয়সমূহ পরলিক্ষতি হয়
১. রাদারর্ফোড মডলে পরমাণুর বর্ণালীর সম্পকে কোন ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও বোর মডলে পারে।
২. রাদারর্ফোড মডলে থেকে ইলকেট্রনরে কক্ষপথরে আকার ও আকৃতি সম্বন্ধে কোন ধারণা পাওয়া না গেলেও বোর মডলে থেকে পাওয়া যায় ।
৩. পরমানুর শক্তস্তিরসমূহরে মধ্যে ইলকেট্রন স্থানান্তররে জন্যে সৃষ্ট বভিন্নি বকিরিণ সম্পৰ্কতি ধারণা রাদারর্ফোড মডলে থেকে না পাওয়া গেলেও বোর মডলে থেকে পাওয়া যায়
৪.রাদারর্ফোড মডলে থেকে ইলকেট্রনরে কৌনকি ভরবগে সম্বন্ধে কোন ধারণা পাওয়া না গেলেও বোর মডলে থেকে পাওয়া যায় ।
৫.রাদারর্ফোড মডলেরে সাহায্যে কক্ষপথরে ব্যার্সাধ ইলকেট্রনরে গতবিগে, শক্তি ও বর্ণালীতে উৎপন্ন রেখার কম্পাঙ্ক নির্ণয় করা না গেলেও বোর মডলে থেকে নির্ণয় করা যায়।
৬.রাদারর্ফোড মডলে পরমাণুর সুস্থিতি ব্যাখ্যা করতে না পারলেও বোর মডলে পারে।
তাই বোর মডলে সামান্য কিছু সীমাদ্ধতা থাকলেও পরমাণু গঠন সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি ধারণা আমরা বোর মডলে থেকেই পাই। তাই বোর মডলেটি রাদারর্ফোড মডলে থেকে অধিক গ্রহনযোগ্য
১। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা ,n(Principle quantum number)
যে কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে পরমাণুতে অবস্থিত ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের আকার নির্ণয় করা যায় তাকে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। একে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়,n এর মান যথাক্রমে 1,2,3,4,..... প্রভৃতি পূর্ণ সংখ্যা। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান বৃদ্ধি হলে নিউক্লিয়াস হতে প্রধান স্তরের দূরত্ব এবং শক্তিস্তরের আকার বৃদ্ধি পায়। বোর মতবাদ অনুসারে n=1 হলে ১ম শক্তিস্তর বা K শেল, n=2 হলে ২য় শক্তিস্তর বা L শেল, n=3 এবং n=4 হলে M ও N ইত্যাদি বোঝায়। যে কোনো প্রধান শক্তিস্তর সর্বোচ্চ 2n² ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে।
২.সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা ,ℓ(Azimuthal quantum number)
কৌণিক ভরবেগ কোয়ান্টাম সংখ্যা বা অরবিটাল কোয়ান্টাম সংখ্যা নামেও পরিচিত, সাব শেলকে বর্ণনা করে এবং সম্পর্কের মাধ্যমে অরবিটাল কৌণিক ভরবেগের মাত্রা দেয়।
L2 = ħ2 ℓ (ℓ + 1) রসায়ন এবং বর্ণালীবিদ্যায়, ℓ = 0 কে s অরবিটাল, ℓ = 1, p অরবিটাল, ℓ = 2, d অরবিটাল এবং ℓ = 3, f অরবিটাল বলা হয়।
ℓ এর মান 0 থেকে n −1 পর্যন্ত, তাই প্রথম p অরবিটাল (ℓ = 1) দ্বিতীয় ইলেকট্রন শেলে (n = 2) প্রদর্শিত হয়, প্রথম d অরবিটাল (ℓ = 2) তৃতীয় শেলে (n = 2) প্রদর্শিত হয় = 3), এবং তাই:[2]
ℓ = 0, 1, 2,..., n −1 n = 3, ℓ = 0 থেকে শুরু হওয়া একটি কোয়ান্টাম সংখ্যা, একটি পরমাণুর তৃতীয় ইলেকট্রন শেলের s কক্ষপথে একটি ইলেকট্রনকে বর্ণনা করে। রসায়নে, এই কোয়ান্টাম সংখ্যাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি পারমাণবিক কক্ষপথের আকৃতি নির্দিষ্ট করে এবং রাসায়নিক বন্ধন এবং বন্ধন কোণকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে। আজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যাটি একটি কক্ষপথে উপস্থিত কৌণিক নোডের সংখ্যাও নির্দেশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, p অরবিটালের জন্য, ℓ = 1 এবং এইভাবে একটি p অরবিটালে কৌণিক নোডের পরিমাণ হল 1।
অরবিটালের আকৃতি আজিমুথাল কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা দেওয়া হয়।
৩. চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা ,m(Magnetic quantum number)যে সকল কোয়ান্টাম সংখ্যার সাহায্যে ইলেকট্রনের কক্ষপথের ত্রিমাত্রিক দিক বিন্যাস প্রকরণ সমূহ প্রকাশ করা হয়, তাকে ম্যাগনেটিক কোয়ান্টাম সংখ্যা বা চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা, m এর মান থেকে
এর পর্যন্ত পূর্ণসংখ্যা। নন-ডিজেনারেট অবস্থায় অরবিটালসমূহ সমশক্তির, তবে চৌম্বকক্ষেত্রে রাখলে শক্তির পার্থক্য তৈরি হয়। আর বলা বাহুল্য, z অক্ষ বরাবর অরবিটাল, যেমন pz, dz² এর বেলায় m=0
৪. ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা ,s(Spin quantum number)
নিজ অক্ষের চারদিকে ইলেকট্রনের ঘুর্ণনের দিক প্রকাশক কোয়ান্টাম সংখ্যা সমূহকে স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা বা ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। এই কোয়ান্টাম সংখ্যা, s, ফার্মিয়ন কণার বেলায় তা ±½ এর গুণিতক। ইলেক্ট্রনের বেলায় তা ½। +½ ও -½ এর মধ্যে যেকোনো একটিকে ঘড়ির কাটার দিকে ঘূর্ণায়মান ও অপরটি ঘড়ির কাটার বিপরীত অভিমুখে ঘূর্ণায়মান । এটিকে upspin ও downspin electrons ও বলা হয়।
পরমাণুরবাদের প্রথমিক ধারণা : -
অজানাকে জানার ইচ্ছা মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের একটি চিরন্তন ধারা। খ্রিস্টপূর্ব ৬৪০ অব্দে বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক লুসিপাস ও ডেমোক্রিটাস সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেন, সব পদার্থই অতি ক্ষুদ্র এক ধরনের অবিভাজ্য অসংখ্য কণা দিয়ে তৈরি। প্রায় একই সময়ে ভারতের প্রখ্যাত দার্শনিক কণাদ প্রায় একই ধরনের মতবাদ উপস্থাপন করেন। তিনি প্রস্তাব করেন যে, প্রাকৃতিক সব বস্তুই অসংখ্যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণু নামক অবিভাজ্য কণার সমন্বয়ে গঠিত।
প্রায় ১০০ বছর পর বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিন্টাটল প্রস্তাব করেন, পদার্থ অবিভাজ্য কণার সমষ্টি নয়। সব পার্থিব বস্তুই অবিচ্ছিন্ন পদার্থ দিয়ে গঠিত। অ্যারিস্টাটলের এ মতবাদ প্রায় ২০০০ বছর ব্যাপি প্রচলিত ছিল। পরে আঠার শতকের প্রথম দিকে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন কর্তৃক পদার্থের গঠন প্রস্তাবিত তত্ত্ব ডেমোক্রিটাসের পরমাণুবাদকে পুনরাই সমর্থন করেন। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ স্কুল শিক্ষক ও বিজ্ঞানী জন ডাল্টন তার পরমাণুবাদে ডেমোক্রিটাস ও কণাদ এর পরমাণুবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।ডাল্টনের মতবাদ অনুসারে পরমাণু অবিভাজ্য, একে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না । অবশেষে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ১৯১১ সালে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তার বিখ্যাত আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত রুপে প্রমাণ করেন যে, পরমাণু বিভাজ্য। পরমাণু বিশেষ কতগুলো কণিকার সম্বনয়ে গঠিত। পরমাণুকে বিভাজিত করলে ইলেকট্রন, প্রোটন, ও নিউট্রন প্রভূতি মূল কণিকা পাওয়া যায়। ১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের আরও উৎকর্ষ সাধন করেন
পরমানু ও পরমাণুর মৌলিক কণিকাসমূহ :
মৌলিক পদার্থেও ক্ষুদ্রতম কণা সাধারণত যার স্বাধীন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু ক্ষুদ্রতম একক রুপে সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে পারে, তাকে পরমাণু বলে। প্রত্যেক মৌলের প্রতীক দ্বারা ঐ মৌলের পরমাণুকে বুঝানো হয়। যেমন : H দ্বারা হাইড্রোজেনের পমাণু বুঝায় ।
পরমাণুসমূহকে বিভিন্ন ভাবে ভেঙ্গে যে সব কণা আবিষ্কিত হয়েছে মোটামুটি ভাবে তাদেরকে পরমাণুর মূল কাণিকা বলা হয়। অবশ্য অন্যভাবেও কিছু কিছু কণার সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। তাদের সংখ্যা প্রায় ২০০ এর মত এবং এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। মূল উপাদানরূপ যে সব অতি সূক্ষ কণিকা দ্বারা পরমাণু গঠিত তাদের কে পরমাণুর মূল কণিকা বলে
মূল কণিকা দুই প্রকার । যথা :
১. স্থায়ী মূল কণিকা ও
২.অস্থায়ী মূল কণিকা ।
১. স্থায়ী মূল কণিকা : যে সব অতি মূল কণিকা সব মৌলের পরমাণুতে থাকে, তাদেরকে স্থায়ী মূল কণিকা ।
স্থায়ী মূল কণিকা তিন প্রকার যথা :
ক.ইলেকট্রন
খ. প্রোটন
গ.নিউট্রন
২.অস্থায়ী মূল কণিকা : যে সব মূল কণিকা কোন কোন মৌলের পরমাণুতে অতি অল্প সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে থাকে, তাদের কে অস্থায়ী মূল কণিকা বলে। অস্থায়ী কণিকার কয়েকটি হচ্ছে ; (ক) পাইওন (খ) মিউওন (গ) নিউট্রিনো ও (ঘ) মেসন প্রভূতি । অস্থায়ী কণিকাগুলো সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে অন্য কণায় পরিণত হয়।
স্থায়ী কণিকা :
ক. ইলেকট্রন e : ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার জে. জে. থমসন ক্যাথোড রশ্মির উপর পরীক্ষার সময় ইলেকট্রনের অস্থিত্ব আবিষ্কার করেন। সব প্রকার পরমাণুতে কম বেশি ইলেকট্রন বিদ্যমান। পদার্থের মধ্যে ইলেকট্রন সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম কণা ।
ইলেকট্রন আবিষ্কার : তড়িৎ বা চৌম্বকক্ষেত্রে এদের বিক্ষেপনের ধরন থেকে জে. জে. থমসন এই কণাগুলোকে ঋণাত্মক বলে প্রমাণ করেন। এই ঋণাত্মক বিদুৎবাহী কণাগুলো ইলেকট্রন নামে পরিচিত।
লঘু চাপে (0.1 – 0.001 mm (Hg) একটি কাচের আবদ্ধ পাত্রে কোন গ্যাস নিয়ে এর ভিতরে দুটি তড়িৎদ্বার প্রবেশ করিয়ে যতেষ্ঠ বিদ্যুত বিভব প্রয়োগ করলে তড়িৎদ্বার দুইটির ভিতর বিদ্যুৎক্ষরণ হতে থাকে এবং ক্যাথোড হতে সোজাসোজি আলোক রশ্মি বের হয়। কোন বাধা না থাকলে এই রশ্মি ক্যাথোড হতে অ্যানোডের দিকে প্রবাহমান থেকে অ্যানোডের পিছনে কাচের উপর পতিত হয়ে প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে । এরাই ক্যাথোড রশ্মি আবার যদি পাত্রকে কোন তড়িৎ ক্ষেত্রে এমনভাবে বসানো হয় যাতে ক্যাথোড রশ্মির প্রবাহ পথের এক পাশে দ্বিতীয় আরেকটি তড়িৎ ক্ষেত্রের ধনাত্মাক (অ্যানোড) তড়িৎদ্বার ও অপর পাশে ঋনাত্মক তড়িৎদ্বার (ক্যাথোড) থাকে তাহলে দেখা যায় প্রবাহমান এই রশ্মি নিজের পথ থেকে ধনাত্মাক তড়িৎদ্বারের (অ্যানোড) দিকে বেঁকে যায়। এতে বুঝা যায় এই রশ্মি ঋনাত্মক আধানের ক্ষুদ্র প্রবাহ ।
ক্যাথোড রশ্মিতে উৎপন্ন ইলেকট্রনগুলো মুক্ত ও সর্বদাই একই প্রকার। যে কোন গ্যাস থেকে একই ইলেকট্রন রশ্মি বের হয় এবং এরা ক্যাথোডের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল নয় অথাৎ পরীক্ষার সাহয্যে জানা গেছে যে, যে কোন উপায়ে যে কোন উৎস থেকে প্রাপ্ত ও যে কোনো গতিবেগ সম্পন্ন সব ইলেকট্রন একই রকম, একই চার্জ (-1.6×10-19 C) যুক্ত ও একই ভর (9.1085×10-28 g) বিশিষ্ট ।
প্রোটন P : ইলেকট্রনের মত প্রোটনও সব পদর্থের পরমাণুর একটি সাধারন উপাদান । ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড এ তথ্য সর্ব প্রথম প্রমাণ করেন । প্রোটন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে বিদ্যমান সর্বাপেক্ষ হালকা ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট একটি স্থায়ী কণা ।
প্রোটন আবিষ্কার : ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী গোল্ডস্টাইন ক্যাথোড রশ্মি নল পরীক্ষা দ্বারা ধনাত্মক আয়ন আবিষ্কার করেন। ক্যাথোড রশ্মি যন্ত্রে সচ্ছিদ্র ক্যাথোড ব্যবহার কার হয় তাহলে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ক্যাথোড হতে অ্যানোডের দিকে ক্যাথোড রশ্মির মত এক বিপরীত মুখী রশ্মি অ্যানোড হতে ক্যাথোডের দিকে সঞ্চালিত হয়ে ক্যাথোডের ছিদ্র পথে নির্গত হয়ে ক্যাথোড তড়িৎদ্বাড়ের পিছনে কাচের দেওয়ালে দীপ্তিমান (প্রতি প্রভা সৃষ্টির মাধ্যমে) করে তুলে। এ রশ্মিকে অ্যানোড রশ্মি বলে।
আবার যদি পাত্রকে কোন তড়িৎ ক্ষেত্রে এমনভাবে বসানো হয় যাতে অ্যানোড রশ্মির প্রবাহ পথের এক পাশে দ্বিতীয় আরেকটি তড়িৎ ক্ষেত্রের ধনাত্মাক (অ্যানোড) তড়িৎদ্বার ও অপর পাশে ঋনাত্মক তড়িৎদ্বার (ক্যাথোড) থাকে তাহলে দেখা যায় প্রবাহমান এই রশ্মি নিজের পথ থেকে ঋনাত্মক তড়িৎদ্বারের (ক্যাথোড) দিকে বেঁকে যায় । এতে বুঝা যায় এই রশ্মি ধনাত্মক আধানের ক্ষুদ্র প্রবাহ ।
প্রোটনের চার্জ (+1.6×10-19 C) ও ভর (1.672×10-24 g)।
নিউট্রন (n): ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড পরমাণুর মধ্যে চার্জ বিহীন ও প্রোটনের মত এক একক ভর বিশিষ্ট এক ধরনের মূল কণিকার অস্তিত্ব কল্পনা করেন। কারণ দেখা গেছে, কোন পরমাণুতে উপস্থিত চার্জ যুক্ত প্রোটন এবং ঋনাত্মক চার্জ যুক্ত ইলেকট্রনের মোট ভরের চেয়ে পরমাণুর মোট ভর বা পারমাণবিক ভর বেশি। পরবর্তিতে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জেমস চ্যাডউইক মূল কণিকা হিসাবে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে চার্জ নিরপেক্ষ নিউট্রনের উপস্থিতি প্রমাণ করেন ।
পরমাণু সমূহকে তদের প্রোটন, নিউট্রন, এবং ভরের সংখ্যার পাথ্যর্ক বা মিল আমিলের উপর ভিত্তি করে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা :
ক. আইসোটোপ
খ. আইসোবার
গ. আইসোটোন
ক. আইসোটোপ : যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা অভিন্ন, কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন, তাদেরকে পরষ্পরের আইসোটোপ বলে।
আইসোটোপের বৈশিষ্ট :
১. এরা একই মৌলের ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু
২. পর্যায় সারণিতে এরা একই ঘরে অবস্থান করে
৩. এদের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই কিন্তু কতিপয় জৈব ধর্ম ভিন্ন।
৪. এদের প্রোটন সংখ্যা অভিন্ন, কিন্তু ভর সংখ্যা ও
নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন
খ. আইসোবার : যে সব পরমাণুর ভর সংখ্যা অথাৎ নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যা সমান হয়, কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন হয়, তাদের কে আইসোবার বলে ।
আইসোটোনের বৈশিষ্ট :
১. এরা ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু
২. পর্যায় সারণিতে এরা ভিন্ন ভিন্ন ঘরে অবস্থান করে
৩. এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন ।
৪. এদের নিউট্রন সংখ্য অভিন্ন, কিন্তু প্রোটন ও ভর সংখ্যা সংখ্যা পরষ্পর ভিন্ন
প্রাথমিক কণিকা : পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই ক্ষুদ্র হতে অতিক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা গঠিত এমন ক্ষুদ্র কণিকা রয়েছে যাদের ভর নয় এই কণিকাগুলোকে আমরা প্রাথমিক কণিকা বলতে পারি। সধারনত প্রাথমিক কণিকাগুলোকে তাদের স্পিন বা ঘূর্ণনের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
(i) ফার্মিয়ন ও
(ii) বোসন
ফার্মিয়ন : ফার্মি-ডিরাক পরিসংখ্যান বলবিদ্যা হতে প্রাপ্ত যে সকল মৌলিক কণিকার স্পিন অর্ধ ইস্টিজার বা পূর্ণসংখ্যা তাদেরকে ফার্মিয়ন বলে ।
বৈশিষ্ট্য :
(i). এরা সকল পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকা।
(ii). এদের স্পিন অর্ধ পূর্ণ সংখ্যা ।
ফার্মিয়ন প্রধানত দুই প্রকার। যথা
(i). কোয়ার্ক কণিকা
(ii). লেপটন কণিকা
কোয়ার্ক কণিকা : ভগ্নাংশ চার্জ বিশিষ্ট ফার্মিয়ন শ্রেণির কণিকাগুলোকে কোয়ার্ক বলে। যাদের মাধ্যমে হেড্রন তৈরি হয়। কোয়ার্ক কণা ছয় ধরনের।
ক. আপ কোয়ার্ক, এর চার্জ + 2/3
খ. ডাউন কোয়ার্ক, এর চার্জ - 1/3
গ. চার্ম কোয়ার্ক, এর চার্জ + 2/3
ঘ. স্টেঞ্জ কোয়াকর্, এর চার্জ - 1/3
ঙ. টপ কোয়ার্ক, এর চার্জ + 2/3
চ. বটম কোয়ার্ক, এর চার্জ - 1/3
প্রোটন ও নিউট্রন কোয়ার্ক কণা দ্বারা গঠিত। একটি প্রোটন ভাঙ্গা হলে দুইটি আপ কোয়ার্ক একটি ডাউন কোয়ার্ক পাওয়া যায়। এইজন্যই প্রোটনের চার্জ +1 । প্রোটনের চার্জ = (+2/3+ + 2/3) + (- 1/3) = +1 । একটি নিউট্রন ভাঙ্গা হলে একটি আপ কোয়ার্ক দুইটি ডাউন কোয়ার্ক পাওয়া যায়। এইজন্যই প্রোটনের চার্জ + ০। নিউট্রনের চার্জ = (+2/3) + (- 1/3)+(-1/3) = +0|
লেপটন : ফার্মিয়ন শ্রেণির যে সকল কণার মধ্যে শক্তিশালী ইন্টার অ্যাকশন হয় না এবং যাদের চার্জ পূর্ণ সংখ্য আথবা শূন্য তাদের কে লেপটন বলে । লেপটন কণা ছয় প্রকার যথা:
ক. ইলেকট্রন, এর চার্জ, - 1
খ. ইলেকট্রন নিউট্রনো, এর চার্জ, ০
গ. মিউন, এর চার্জ, -1
ঘ. মিউন নিউট্রনো, এর চার্জ, ০
ঙ. টাউ, এর চার্জ, - 1
চ. টাউ নিউট্রনো এর চার্জ, ০
বোসন : বোসন আইনস্টাইনের পরিসংখ্যান বলবিদ্য হতে প্রপ্ত যে সকল যে সকল কণিকার চার্জ পূর্ণসংখ্যা তাদের বোসন বলে। বোসন লেপটন কণা ছয় প্রকার। যথা:
ক. ফোটন, এর চার্জ = 0, স্পিন = 1
খ. W বোনস, এর চার্জ = -1, স্পিন = 1
গ. Z বোসন, এর চার্জ = 0, স্পিন = 1
ঘ. গ্লুওন, এর চার্জ = 0, স্পিন = 1
ঙ. হিগস বোসন, এর চার্জ = 0, স্পিন = 0
চ. গ্রাভিন, এর চার্জ = 0, স্পিন = 2
• পারমাণবিক সংখ্যা বা ভর-ক্রমাঙ্ক (Atomic Number) : কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ধনাত্মক তড়িতের মোট একক সংখ্যাকে ওই মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু-ক্রমাঙ্ক বলে ।
যেহেতু, প্রত্যেক প্রোটনে ধনাত্মক তড়িতের পরিমাণ এক একক ; সুতরাং, কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনগুলির মোট সংখ্যাই হল ওই পারমাণবিক সংখ্যা । পারমাণবিক সংখ্যাকে 'Z' অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
• ভর সংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ওই মৌলের বা পরমাণুর ভরসংখ্যা বলে । অর্থাৎ ভরসংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা । ভরসংখ্যাকে 'A' অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।
• ভর সংখ্যা এবং পারমাণবিক সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক : কোনো মৌলের পরমাণুতে যদি P -সংখ্যক প্রোটন এবং N -সংখ্যক নিউট্রন থাকে, তাহলে
পরমাণুটির ভরসংখ্যা (A) = প্রোটন-সংখ্যা (P) + নিউট্রন-সংখ্যা (N)
যেহেতু, প্রোটন-সংখ্যা (P) = পারমাণবিক-সংখ্যা (Z)
অতএব, ভরসংখ্যা (A) = পারমাণবিক-সংখ্যা (Z) + নিউট্রন-সংখ্যা (N) বা Z = A - N
অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা (Z) = 8 এবং ভর-সংখ্যা (A) = 16 ; সুতরাং অক্সিজেনকে 8O16 লিখে প্রকাশ করা হয় ।
• পারমাণবিক ভর (Atomic mass) : একটি কার্বন-12(6C12) পরমাণুর ভর 12 ধরে অন্য কোনো মৌলের একটি C-12 পরমাণুর ভরের 1/12 অংশ অপেক্ষা যতগুণ ভারী, সেই সংখ্যাকে মৌলটির পারমাণবিক ভর বা পারমাণবিক গুরুত্ব বলে । অর্থাৎ
মৌলের পারমাণবিক ভর = মৌলের 1টি পরমাণুর ভর / 1টি C-12 পরমাণুর ভরের 1/12 অংশ
সমজাতীয় দুটি রাশির অনুপাত হওয়ায় মৌলের পারমাণবিক ভর একটি এককহীন সংখ্যা মাত্র ।
► পারমাণবিক ভর একক (Atomic Mass Unit, সংক্ষেপে amu বা u) :
• সংজ্ঞা:- কোনো মৌলের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভরকে যে একক দ্বারা প্রকাশ করা হয়, সেই একককে পারমাণবিক ভর একক বলা হয় ।
এক পারমাণবিক ভর একক (amu বা u) =112×1টি C-12 পরমাণুর প্রকৃত ভর ।
এখান, 1টি কার্বন পরমাণুর ভর =126.023×1023 গ্রাম
সুতরাং, এক পারমাণবিক ভর একক (amu বা u) =112×126.023×1023 গ্রাম =1.6603×10−24গ্রাম =1.6603×10−27কেজি । এক পারমাণবিক ভর একক (amu বা u) -কে এক ডালটন (Dalton, সংক্ষেপে Da) ও বলা হয় ।
এই এককে প্রোটনের ভর (mp) = 1.0072766 amu বা u
নিউট্রনের ভর (mn) = 1.0086654 amu বা u
ইলেকট্রনের ভর (me) = 0.00055 amu বা u