বাজিতপুর গ্রামের বর্গাচাষী রহিম মিয়ার আজ খুশির দিন। কেননা, নতুন ফসল কেটে সে আজ বাড়িতে তুলেছে। রহিমের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরাও আজ খুব আনন্দিত। তারা মায়ের কাছে নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা ও পায়েস খাওয়ার আবদার করছে। রহিম মিয়ার মনে দুঃখ, কষ্টে ফলানো ফসল অন্যের ঘরে চলে যায়। যদি নিজের কিছু জমি থাকতো তাহলে এ কষ্ট আর থাকতো না।
উদ্দীপকের রহিম মিয়ার অবস্থার উত্তরণে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্দীপকের রহিম মিয়া একজন বর্গাচাষী। সে অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু তার মনে দুঃখ তার ফলানো ফসল অন্যের ঘরে চলে যায়। তার বাসনা তার যদি একটু জমি থাকতো তাহলে এ কষ্ট আর হতো না। রহিম মিয়ার বক্তব্যে সম্পত্তির ভিত্তিতে শ্রেণি বৈষম্যের বিষয়টি বা সম্পত্তির মালিকানার ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাসের দিকটি পরিলক্ষিত হয়। আর সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাস সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়।
সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাস বলতে বোঝায়, সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে উঁচু-নিচু প্রভেদ। সমাজবিজ্ঞান সমাজের মানুষের এই উঁচু-নিচু প্রভেদ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা চালায়। সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূল কারণ কী, এর শেকড় কোথায় গ্রোথিত, এর পিছনে কোন উপাদানগুলো ক্রিয়াশীল ইত্যাকর বিষয়গুলোর কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি এর সমাধান বা স্তরবিন্যাসের মাত্রা কমিয়ে আনার উপায় নিয়েও বিচার বিশ্লেষণ করে। সমাজে সবাই সম-সম্পদের মালিক নয়, আবার সবাই একই মর্যাদার অধিকারী নয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মানুষই হয় একজনের থেকে বেশি সম্পদশালী, না হয় কম সম্পদশালী। হয় বেশি মর্যাদার অধিকারী, না হয় কম মর্যাদার অধিকারী। সমাজবিজ্ঞান এই কম সম্পদশালী বা কম মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সৎ উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে সামাজিক স্তরবিন্যাস কমিয়ে আনার শিক্ষা দেয়। কেননা, সামাজিক গতিশীলতার মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।
তাই বলা যায়, রহিম মিয়া তার কর্মদক্ষতার মাধমে তার সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান তার জন্য ফলপ্রসূ হবে।