রনি তার জন্মদিনে একটি বই উপহার পেলো। বইটি পড়ে রনি সমাজের ক্ষুদ্র সংগঠনের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকরণ, কার্যাবলি এবং সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারল। সে মানুষের আচার- আচরণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রথা, বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন জাতি সম্বন্ধেও জানতে পারে। অবশেষে রনি মানুষের পারিপার্শ্বিক ঘটনাসমূহের কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের নবীনতম শাখা সমাজবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। এই কথা অনস্বীকার্য যে, বিষয়টি মানব সমাজের সামগ্রিক পাঠ।
সমাজবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Sociology, যা ল্যাটিন শব্দ Socius (অর্থ-সমাজ) ও গ্রিক শব্দ Logos (অর্থ-বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান) এই দুটি শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। তাই উৎপত্তি অর্থে বলা যায়, সমাজ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞানই সমাজবিজ্ঞান। পারিভাষিক অর্থে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান হলো ঐ বিজ্ঞান যা সমাজের সাথে জড়িত সকল' বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে।
সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বস্তুত মানব সমাজের এমন কোনো দিক নেই যা সমাজবিজ্ঞানে আলোচিত হয়নি। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি দিক নিয়ে সমাজবিজ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন করে। সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার ব্যাপকতার কারণে সমাজবিজ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করে আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন- ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান সমাজের অতীত ইতিহাস নিয়ে, বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞান পরিবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে, নগর সমাজবিজ্ঞান নগরের স্বরূপ, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান গ্রামের স্বরূপ, ধর্মের সমাজবিজ্ঞান ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এমনিভাবে সমাজবিজ্ঞানের আরো বহুবিধ শাখা রয়েছে যে শাখাগুলো বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনা করে। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় মানব সমাজের সাথে জড়িত সকল বিষয়ই আলোচিত হয়। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞানকে মানব সমাজের সামগ্রিক পাঠ বলা হয়।
উপরের আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানই মানবসমাজের সামগ্রিক পাঠ, এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।