Blog

Artificial Intelligence এর যুগে আমাদের টিকে থাকার লড়াই

Artificial Intelligence এর যুগে আমাদের টিকে থাকার লড়াই

আমরা এখন একটা নতুন শিল্পবিপ্লবের যুগে পা রেখেছি । Artificial Intelligence কথাটা এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে সবক্ষেত্রে। শিল্পবিপ্লব মানেই একটা বড় আকারের পরিবর্তন ঘটে যাওয়া। চিরাচরিত পদ্ধতিগুলোতে আমূল বদল আসা। এ পর্যন্ত পৃথিবীতে তিনবার শিল্পবিপ্লব ঘটেছে। প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটেছিল ইংল্যান্ডে, এর সময়কাল 1760-1840 সাল পর্যন্ত। চিরাচরিত কৃষি, শিল্প, বানিজ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটল সেই প্রথম। যন্ত্রের উন্নতির যুগের সূচনা হলো তখন থেকেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবর্তন যিনি এলেন, তার নাম জেমস ওয়াট। প্রবল প্রতিভাবান এই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিজ্ঞানী নিউকমেনের বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালিত এক যন্ত্র পরীক্ষা করতে গিয়েই আবিষ্কার করে বসলেন এক নতুন বিষয়। আবদ্ধপাত্রে বাষ্পকে ধরে সেই বাষ্পের চাপকেই কাজে লাগিয়ে কত অসাধ্য সাধন করা সম্ভব, তা দেখালেন তিনি। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য জেমস ওয়াটকেই বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কর্তা বলা হয়। বাষ্পের দুর্বার শক্তিকে কাজে লাগানো শুরু হলো সেই সময় থেকেই। যন্ত্র মানে যার সাহায্যে কম বল প্রয়োগ করে বেশি বাধা অতিক্রম করা যায়। সেই বেশি বাধা সহজে অতিক্রম করতে সাহায্য করল বাষ্প। পাশাপাশি পরের দিকে দ্রুততার সাথে ব্যবহৃত হতে লাগল কয়লা আর ইস্পাত। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলো। এগিয়ে এলেন জর্জ স্টিভেনশনের মতো মানুষেরা, রেলপথ বসল বিস্তৃত এলাকা জুড়ে, টেমস নদীতে স্টীমার, জাহাজ চলতে আরম্ভ করল। শিল্পবিপ্লব ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল অন্য দেশে। এইভাবেই চিরাচরিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটল।

এরপর দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব এলো 1870 সালের দিকে। এই সময়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা বিদ্যুতের ব্যবহার। বাষ্পের শক্তি এর আগে মানুষ দেখে নিয়েছে, এইবার এলো বিদ্যুত। জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে গেল। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খবর পাঠানো হতে থাকল দ্রুত। আলোকিত হয়ে উঠল পৃথিবী। উৎপাদন ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা আরোও দ্রুতগতিতে পৌঁছে গেল।

কিন্তু তারপরেই পৃথিবীতে ঘটল ভয়াবহ যুদ্ধ। ক্ষমতা প্রদর্শন করা, ঔপনিবেশিক শাসন, বাজার দখল সবকিছুকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে জড়ালো বিভিন্ন দেশ। দুটো বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেল পৃথিবীর বুকে। প্রবল ক্ষয়ক্ষতি, রক্তপাত, অশান্তি নিয়ে শেষ হলো যুদ্ধ। তখন Great Depression পিরিয়ড চলছে। ফলে দীর্ঘসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির হার থমকে থাকল। কিন্তু একদিন আবার একটা নতুন শিল্পবিপ্লব এলো। 1969 সালে এলো ইন্টারনেট। এটাকে বলা হলো ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব। এর মূল জায়গাটা হলো তথ্যপ্রযুক্তির জগতে বিরাট এবং এক অভাবনীয় সাফল্য। তথ্যের সংরক্ষণ, আদানপ্রদান, মত বিনিময়, ভাবনার প্রকাশ সবেতেই চলে এলো বিপ্লব। অর্থাৎ এক আশ্চর্য পৃথিবী যেন চলে এলো হাতের মুঠোয়। জ্ঞানচর্চা অত্যন্ত সহজ হয়ে গেল। সহজলভ্য জ্ঞান অর্জনের এই সুযোগ পেয়ে খুব দ্রুত হয়ে উঠল মানুষের অগ্রগতি। একটি নতুন শব্দ উঠে এলো --"কুইক লার্নিং", এ যেন কে কত দ্রুত শিখতে পারে, তার এক প্রতিযোগিতার বাজার।

এই তিনটি শিল্পবিপ্লবের পর, এখন আরেকটা শিল্পবিপ্লব আসছে, এটাই হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই শিল্পবিপ্লব নিয়ে আসছে রোবটের যুগ; আসছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা। অর্থাৎ মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে রোবটের ব্যবহার। World Economic Forum এ ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়েছে বিষয়টি। আলোচিত হয়েছে cloud computing, internet of things, AI এর মতো বিষয়গুলি। এ আই যে এক যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক নির্মাণ এতে সন্দেহ নেই। এ আই কথা শুনে বা data দেখে চিনে নিতে পারে, সে নতুন জিনিস শিখে নিতেও পারে খুব দ্রুত, সে পরিকল্পনা করতে পারে, সমস্যার পথ শনাক্ত করতে পারে এবং সমাধান করতেও পারে। ফলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে, মানুষ তথ্য দেখে যা করতে পারে, এ আইও সেটা পারে। আগামীতে আরোও উন্নত হবে এ আই, তখন তার কর্মদক্ষতা হবে মানুষের থেকে বেশি। এইভাবেই মানবসম্পদের বিকল্প হতে পারে এ আই। যারা ইতিমধ্যেই চ্যাট জিপিটি বা Bard Google AI চালাচ্ছেন, নিশ্চয়ই তারা এই দিকটা ধরতে পারছেন। আমি নিজেও অল্পবিস্তর চালাচ্ছি প্রয়োজন মতো, আমিও এর দুর্বার শক্তিকে উপলব্ধি করতে পারছি। এমনিতে এ আই হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়নি, 2015 সালেই World Economic Forum এর Executive Chairman, Klaus Schwab এইদিকটা সম্পর্কে বলেছিলেন। এক নতুন পৃথিবীর সম্ভাবনা সেই সময়ে তিনি দেখছিলেন, যেখানে বেশকিছু নতুন, আকর্ষণীয় বিষয় আসবে, যেমন-- Robotics, AI, Nanotechnology, Biotechnology, Internet of Things ইত্যাদি । এর পরের বছর অর্থাৎ 2016 তে সান ফ্রান্সিসকো শহরে এই নিয়ে আলোচনা হয়। বলাই বাহুল্য, তাদের পূর্বাভাস আজ সত্যের পথ ধরেছে। কল্পবিজ্ঞানের পাতায় পাতায় যে রোবটের বাড়বাড়ন্তের গল্প লেখা হয়েছিল এতদিন ধরে, সেই যুগ আজ আর কল্পনা নয়; সেই যুগ আজ বাস্তবতার পথে নেমে এসেছে পায়ে পায়ে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কখনও থামানো যায় না, থামানো উচিতও নয়, থামালে পিছিয়ে যেতে হবে। তাই চরম বাস্তবতা হলো, একে মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হব। কিন্তু মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে যদি রোবটের জয়জয়কার হয়, তা কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়! এর উত্তর হলো, বড় আকারের পরিবর্তনে প্রথমদিকে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিল্পবিপ্লবে যখন উন্নত যন্ত্রের ব্যবহার হতে লাগল, তখন বহু কুটিরশিল্প শেষ হয়ে গিয়েছিল। অনেক গ্রামের মানুষ হাতের কাজ হারিয়ে শহরে ভিড় করেছিলেন কাজের খোঁজে। হাতের কাজ কখনও যন্ত্রের সাথে পাল্লা দিতে পারে না, সেই সময়েও পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাপক আকারে কর্মসংস্থান হয়েছিল। অর্থাৎ প্রথমদিকে একটা প্রবল ঝড়ের মতো ওলোটপালোট হয়, তারপর সেই ঝড়ের ঝাপটা সামলে আবার মানুষ এগিয়ে চলে। কিন্তু তাহলে এই সময়ে আমাদের দায়িত্ব কি! এর উত্তর হলো -- দায়িত্ব অনেক। যেহেতু যন্ত্রের সাথেই আমাদের বাস করতে হবে, তাই যন্ত্রকে কখনও শত্রু না ভাবাটাই প্রথম দায়িত্ব। কারণ, আমার ভালো না লাগলেও যন্ত্র কিন্তু থাকবেই, সে তার কাজও করবে।

দ্বিতীয় কথা হলো, নিজের ফিল্ডে ক্রমাগত জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা। কারণ, বিশ্বজুড়ে কুইক লার্নিং বহু হারে বেড়েছে, আরোও বাড়বে। কাজেই প্রতিযোগিতা জারি রাখতে এটা ভীষণ জরুরি। সাধারণ গতানুগতিক, একমুখী কাজ অটোমেশনের হাতে যাবেই। আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা শেখা খুব জরুরি। প্রযুক্তির এই আধুনিক দুনিয়ায় একে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়।

তৃতীয় কথা, নিজের সৃজনশীলতা ধরে রাখা। চ্যাটবট কোথায় ভুল করছে, কোথায় ঘাটতি তার থাকছে, কোন জায়গাটা সে বলছে না; এইগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, ধারণা করতে হবে। আর সাথে সৃজনশীলতা আনবে নতুন উদ্ভাবন, নতুন কিছু চিন্তা, নতুন কৌতূহল। মনে রাখতে হবে, যা পুরাতন তা কিন্তু এ আই ইতিমধ্যেই জানে। সে জানে না, কেবলমাত্র নতুন আইডিয়া, নতুন ভাবনা, নতুন কোন চিন্তা। তাই সৃজনশীলতার চর্চার বিকল্প আর নাই। যারা গতানুগতিক, চিরাচরিত ধারার চলতে চান, নতুন ফিল্ডে পা রাখার কৌতূহল যাদের নেই, নতুন বিশ্বে এক্সপ্লোর করতে যারা অনীহা দেখাবেন, তাদের জন্য সত্যিই রোবট এক বিপদ।

এখন সময় এসেছে, প্রস্তুত হওয়ার। এইরকম একটা সময় চোখে দেখার সুযোগও কিন্তু সব প্রজন্ম পায় না। এগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতের এক একটা টার্নিং পয়েন্ট। তাই যন্ত্রের সাথে ঝগড়া নয়, বরং বন্ধুত্ব করেই এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি।

1 299