Blog

শিক্ষার্থী কাকে বলে? | একজন ভালো শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য

শিক্ষা ছাড়া বর্তমানের এ বাংলাদেশ সম্পূর্ণ রূপে অচল ও নিষ্ক্রিয়। শিক্ষা নির্ভর বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই শিক্ষা অর্জন করে যাচ্ছে নিজের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এত শিক্ষা অর্জন করার পরও আমাদের মাঝে শিক্ষার্থী সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানটুকু যোগান দেওয়ার সময় নেই।

 

বর্তমানে আমরা শিক্ষা অর্জন করা নিয়ে এত বেশি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, একজন শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য কিরূপ হওয়া উচিত এবং শিক্ষার্থী কাকে বলে এ বিষয়ে ধারণা নেই। অনেকেই আছেন যারা বর্তমানে শিক্ষার্থী কাকে বলে এ বিষয়ে ধারণা অর্জন করার জন্য এ পোস্টটিতে প্রবেশ করেছেন।

 

শিক্ষার্থী কাকে বলে এবং একজন আদর্শ ও ভালো ছাত্রের কি বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত এ বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়ার জন্য আপনি একটি সঠিক পোস্টে প্রবেশ করেছেন। এখানে আমরা শিক্ষার্থী কাকে বলে এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে জ্ঞান অর্জন করবে এবং একজন ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্য কিরূপ হওয়া উচিত এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করব।

 

প্রথমে চলুন জেনে নেই শিক্ষার্থী কাকে বলে বা কোন কোন গুণ দ্বারা শিক্ষার্থীদের কে চেনা যায়।

 

শিক্ষার্থী কাকে বলে?

 

যারা নিয়মিত লেখাপড়া করে এবং সর্বদা জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহী ও যত্নশীল থাকে তাদেরকে শিক্ষার্থী বলে। শিক্ষা শাস্ত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থী তো তারাই যারা সব সময় জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে আগ্রহী থাকে এবং বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটায়।

 

একজন ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্য

 

কতিপয় বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে আমরা একজন ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্যকে অনুভব করতে পারে। নিচে কতিপয়  ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:

 

  1. একজন ভালো ছাত্র সবসময় শিক্ষকগণের আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে।
  2. গুরুজনদের সাথে সাক্ষাৎ হলে বিনয়ের সাথে সালাম প্রদান করে তাদের খোঁজখবর নিবে।
  3. শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক যা শিক্ষা দেন তা মনোযোগ সহকারে শোনা ও বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটানো।
  4. গুরুজন ও শিক্ষকগণের সাথে সবসময় নম্র, ভদ্র ও উত্তম আদর্শ প্রদর্শন করা।
  5. বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহ পাঠিয়ে দের সাথে সদ্ব্যবহার ও সুসম্পর্ক ধরে রাখা।
  6. পাঠশালা কিংবা শ্রেণিকক্ষ কিংবা বিদ্যালয়ের সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে যত্নশীল হওয়া।
  7. ব্যবহৃত জামা কাপড়, শরীর ও ঘরবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  8. গুরুজনদের দেখার পর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা।
  9. শ্রেণিকক্ষের বাইরে যাওয়া ও প্রবেশ করার সময় শিক্ষকের অনুমতি নেওয়া।
  10. শিক্ষকদের প্রদান করা শিক্ষাকে সব সময় উত্তম বলে জীবনে মেনে চলা।
  11. গুরুজন ও শিক্ষকগণ অপছন্দ করে এমন কোন অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা।
  12. পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন কোন অবস্থাতে পরিচিত ও অপরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে অভদ্র আচরণ প্রদর্শন না করা।
  13. সর্ব অবস্থায় পাঠদানকারী শিক্ষকদের জন্য কল্যাণ ও রহমত কামনা করা এবং মৃত্যুর পর তাদের জন্য প্রভুর নিকট প্রার্থনা করা।
  14. বিশৃংখল জীবনযাপন পরিহার করে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়া।
  15. শিক্ষকদের সহচর্যে সর্বদা থাকার চেষ্টা করা এবং জ্ঞান অর্জনের প্রতি একটু বেশি উৎসাহিত ও আগ্রহ প্রদর্শন করা।
  16. অযথা না পড়াশোনা করে, বুঝেশুনে পড়াশোনা করার অভ্যাস করা।
  17. সঠিক সময় উচিত কথা বলা এবং গুরুজনদের উপর কোন কথা বা বাণী ত্যাগ না করা।
  18. শ্রেণীকক্ষে বা অন্যান্য যে কোন স্থানে শিক্ষা গ্রহণের সময় লজ্জাশীলতা পরিহার করা।
  19. শ্রেণীকক্ষের যাওয়ার পূর্বে এবং বাড়িতে অবস্থান করার সময় নিয়মিত পড়া আয়ত্ত করা।

 

শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার নিয়ম ও ব্যবস্থা

 

একজন কৃষকের জন্য যেমন চাষাবাদ অনেক বেশি জরুরী ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থীর জন্য জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রে পড়াশোনা করা অনেক বেশি জরুরী। আর শিক্ষার্থীর পড়ালেখা করার জন্য কিছু নিয়ম বা ব্যবস্থা রয়েছে।

 

কোন ধরনের নিয়ম বা পদ্ধতি ছাড়া আমরা কোন ধরনের কাজ সঠিক মত বাস্তবায়ন করতে পারি না। তাই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিষয়টি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে সুগঠিত নিয়ম ব্যবস্থা অবলম্বন করে চলতে হবে।

 

শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করার সময় যে কয়েকটি দিক চিন্তা ভাবনা করে পড়ালেখা করতে থাকবে সেটাকে বলা হয় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার নিয়ম। ঠিক এর বিপরীত দিকে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখা শেখানোর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে বা সরকার কর্তৃপক্ষ থেকে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার ব্যবস্থা বলা হয়।

 

তো চলুন প্রথমে জেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার নিয়ম:

 

  • শিক্ষার্থীদেরকে কোন ধরনের বহিরাগত চাপ প্রদান করা যাবে না কাজ করার জন্য।
  • পড়াশুনা করার জন্য অবশ্যই একটি সুগঠিত ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে বাসায়।
  • পড়ালেখা করার সময় শিক্ষার্থীর গানের মাঝে যেন কোন ধরনের সাউন্ড না আসে সেদিকে চিন্তা করতে হবে।
  • বিদ্যালয় হতে গ্রহণযোগ্য পড়ালেখার রিভিশন করার সময় বাসায় প্রস্তুত গুরুজন গুলোকে পাশে থাকতে হবে।
  • পড়াশুনা করার পূর্বে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরিবার হতে যথেষ্ট পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীকে ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রদান করার এবং শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
  • একটি নির্দিষ্ট চ্যাট প্রদান করতে হবে যে অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করবে।

 

এবার চলুন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গুলো কি কি তা জেনে নেই:

 

  • উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হয় (বিদ্যালয়)।
  • শিক্ষার্থীদেরকে প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্য বই প্রদান করতে হবে এবং শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি বহিরাগত আরো একটি শিক্ষকের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীর পড়ালেখার মনোযোগ বৃদ্ধি করার জন্য নির্দিষ্ট সময় খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয়

 

সকল শিক্ষার্থীর মেধা সমান নয় এবং বোঝার ক্ষমতা সমান নয়, এর মধ্যে রয়েছে বিরাট পার্থক্য। কোন কোন শিক্ষার্থী অধিক মনোযোগী হয় এবং এ কারণে তার মেধা ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোন কোন শিক্ষার্থীর মনোযোগ কম থাকায় মেধা শক্তি কমে যায়।

 

মেধা কমে সবচেয়ে কমে যাওয়া বা মেধা শক্তি কম হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত কতিপয় শিক্ষার্থী পড়ালেখা পিছিয়ে পড়ে। এবং এর জন্য আমাদেরকে অবশ্যই কিছু না কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হয় তাদেরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।

 

অবশ্যই আমরা একজন পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী থেকে এগিয়ে আনতে পারব কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে। বাসায় অনেক গুরুজন রয়েছেন যারা দুশ্চিন্তায় পড়ে নিজ সন্তানের মেধার দিকে চিন্তা করে।

 

আসলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই কেননা প্রত্যেকের প্রভু প্রত্যেককেই কিছু না কিছু গুণে গুণান্বিত করেছেন। প্রত্যেকেরই মেধা সমান তবে মনোযোগ কম বা বেশি হওয়ার কারণে পার্থক্য দেখা যায়।

 

আপনার সন্তানের মনোযোগ কম বিধায় আপনার সন্তানের মেধা শক্তি কমে গেছে, ঠিক এজন্য আপনাকে আপনার সন্তানের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ গুরুজন অসংখ্য শিক্ষক নিযুক্ত করার মাধ্যমে মেধা বিকাশ করার চিন্তা ভাবনা করেন।

 

আসলে এই পদ্ধতি নিতান্তই ভুল কেননা এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে কোনদিন শিক্ষার্থী তার মেধার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয় না। বরং কতিপয় নিয়ম অবলম্বন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনোযোগ বৃদ্ধি করে মেধা শক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটানো সম্ভব।

 

নিচে কতিপয় করণীয় উল্লেখ করা হলো আপনার শিশুর মেধাবৃত্তি ও মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য:

 

  • অবশ্যই আপনার শিশুকে একটি উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য।
  • শিক্ষা গ্রহণ করার সময় আপনার শিশু যতই দুর্বল হোক না কেন, কখনো তাকে নিরাশ করা যাবে না।
  • আপনার শিক্ষার্থীর যা যা প্রয়োজন পড়ালেখা করার জন্য তা সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
  • শিশুকাল থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ একটিমাত্র শিক্ষক নিয়োগ করার মাধ্যমে আপনার শিশুর বিকাশ করতে পারেন।
  • খেলাধুলা করার জন্য অবশ্যই একটি সময় দিবেন তবে, সেক্ষেত্রে নিজে পাশে থাকবেন।
  • সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পড়াশোনা করার সময় আপনাকে আপনার শিশু সাথে বসতে হবে।
  • আপনার শিশু পড়ালেখা করা কালীন কোন ধরনের কথাবার্তা বলা যাবেনা এবং টিভি চালু করা যাবে না।

 

বর্তমান সমাজে আমরা অনেকে আছি যারা শিশু পড়ালেখা কালীন তার নিকট পৌঁছায় না এবং টিভি চালু করে দেই। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল যেটি আমাদের করা উচিত নয় এবং যা যা উচিত তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের করণীয়

 

শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হওয়ার পর শিক্ষাদীদের কে কতিপয় নিয়ম অবলম্বন করতে হবে এবং ইহার মাধ্যমে একজন শিক্ষাকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। নিচে কতিপয় শিক্ষার্থীর করণীয় কাজগুলো উল্লেখ করা হলো:

 

  • শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং খাতার পাতা ছিড়ে ফেলে দেওয়া যাবে না।
  • শিক্ষক উপস্থিত হলে তিনাকে সম্মান প্রদান করতে হবে এবং ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করতে হবে।
  • শিক্ষকের প্রত্যেকটি বাণী সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে এবং শুনতে হবে, বুঝতে না পারলে জিজ্ঞাসা করতে হবে।
  • শিক্ষকের পচেটে বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং তা বারবার চর্চা করার মাধ্যমে মুখস্ত করতে হবে।
  • বেশি বেশি করে লিখতে হবে এবং লেখার গতি এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে হবে।
  • অবশ্যই কোন ধরনের বাজে কথা বার্তা বা আওয়াজ করা যাবে না, আদর্শ শিক্ষার্থী হতে গেলে।
  • পড়াশুনা করার সময় অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে এবং অন্য কোন দিকে চিন্তা ভাবনা করা যাবে না।
1 2.4k
No bio avaliable
Author’s Profile