Blog
Created: Oct 06, 2025, 01:00 PM Updated: Oct 26, 2025, 08:55 PM
0
50631

নোবেল পুরস্কার ২০২৫ তালিকা | সকল বিজয়ীদের নাম ছবি সহ

 ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার: শুরু হলো বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির ঘোষণা

একনজরে ২০২৫ নোবেল পুরস্কার:

 চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৫

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ৩ জন।

মেরি ব্রাঙ্কো (Mary E. Brunkow)

ফ্রেডেরিক জে. "ফ্রেড" র‍্যামসডেল (Fred Ramsdell)

শিমন সাগাগুচি (Shimon Sakaguchi)

অবদান:

পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এটি রোগ-প্রতিরোধ বা ইমিউন সিস্টেমের একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীরের নিজস্ব উপাদান (self-antigens) এবং ক্ষতিকারক নয় এমন বহিরাগত উপাদান (যেমন: কিছু খাদ্য উপাদান, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া) এর বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া (immune response) সৃষ্টি হওয়া রোধ করা হয়।
["for their discoveries concerning peripheral immune tolerance."]

 পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার - ২০২৫

পদার্থবিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ৩ জন।

জন ক্লার্ক (John Clarke)

মিশেল দেভরেট (Michel H. Devoret)

জন এম মার্টিনিস (John M. Martinis)

অবদান:

ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন গবেষণার জন্য এই বিজ্ঞানীদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
["for the discovery of macroscopic quantum mechanical tunnelling and energy quantisation in an electric circuit"]

 রসায়নে নোবেল পুরস্কার—২০২৫

রসায়নে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ৩ জন।

সুসুমু কিতাগাওয়া (Susumu Kitagawa)

রিচার্ড রবসন (Richard Robson)

ওমর এম. ইয়াগি (Omar M. Yaghi)

অবদান:

‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ উন্নয়নের জন্য তাদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
["for the development of metal–organic frameworks"]

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার - ২০২৫

সাহিত্যে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ১ জন।

লাজলো ক্রাজনাহরকাই(László Krasznahorkai)

অবদান:

কঠিন সময়ের মধ্যেও শিল্পের শক্তিতে বিশ্বাস জাগানো অনুপ্রেরণাদায়ী ও দূরদর্শী সাহিত্যকর্মের জন্য।
["for his compelling and visionary oeuvre that, in the midst of apocalyptic terror, reaffirms the power of art”.]

 

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার - ২০২৫

শান্তিতে এবারের নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন - ১ জন।

মারিয়া কোরিনা মাচাদো (Maria Corina Machado)

অবদান:

ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিরাম প্রচেষ্টা এবং একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে উত্তরণের সংগ্রামের জন্য তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন।
["for her tireless work promoting democratic rights for the people of Venezuela and for her struggle to achieve a just and peaceful transition from dictatorship to democracy."]


🧬 চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার ২০২৫

চলতি বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে (Physiology or Medicine) নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী—
মেরি ব্রাঙ্কো (Mary E. Brunkow)), ফ্রেড রামসডেল (Fred Ramsdell) এবং শিমন সাগাগুচি (Shimon Sakaguchi)

 অবদান:

তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ (Peripheral Immune Tolerance) বিষয়ক অসাধারণ গবেষণার জন্য।

এটি রোগ-প্রতিরোধ বা ইমিউন সিস্টেমের একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীরের নিজস্ব উপাদান (self-antigens) এবং ক্ষতিকারক নয় এমন বহিরাগত উপাদান (যেমন: কিছু খাদ্য উপাদান, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া) এর বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া (immune response) সৃষ্টি হওয়া রোধ করা হয়।
["for their discoveries concerning peripheral immune tolerance."]

মেরি ব্রাঙ্কো (Mary E. Brunkow), ফ্রেডেরিক জে. "ফ্রেড" র‍্যামসডেল (Fred Ramsdell), শিমন সাগাগুচি (Shimon Sakaguchi)

বাংলাদেশ সময় সোমবার ০৬ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট (Karolinska Institute) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

🔬 কী এই ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’?

‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমের (রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।
এটি এমন একটি জৈবিক প্রক্রিয়া, যা শরীরকে নিজের উপাদান (self-antigens) কিংবা ক্ষতিকারক নয় এমন বহিরাগত উপাদানের (যেমন: কিছু খাদ্য উপাদান, উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া) বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখে।

এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে অটোইমিউন রোগ (autoimmune diseases), অ্যালার্জিঅঙ্গ প্রতিস্থাপনজনিত জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 ঘোষণা অনুষ্ঠান ও আয়োজক সংস্থা

চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার প্রতিবছরের মতো এবারও ঘোষণা করেছে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট

 সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ইমিউন টলারেন্স বা শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা সাম্প্রতিক দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম আলোচিত বিষয়।
ব্রাঙ্কো, রামসডেল ও সাগাগুচি–এর এই আবিষ্কার ইমিউন সিস্টেমকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি করেছে।
এটি ক্যানসার চিকিৎসা, টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট ও নতুন প্রজন্মের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।

২০২৫ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

মেরি ব্রাঙ্কো (Mary E. Brunkow):

মেরি ই. ব্রাঙ্কো একজন মার্কিন জীববিজ্ঞানী, যিনি ২০২৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরের Institute for Systems Biology–তে কর্মরত ছিলেন। তাঁর গবেষণা মূলত ইমিউনোলজি বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। এই বছরের নোবেল পুরস্কার তিনি ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাকাগুচির সঙ্গে যৌথভাবে পেয়েছেন “peripheral immune tolerance” বিষয়ক যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য। তাঁদের গবেষণায় প্রকাশ পায়, কীভাবে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) নিজেদের অঙ্গ বা টিস্যুকে আক্রমণ না করে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখে।

দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় থাকা কিছু বিশেষ কোষ, যাদের বলা হয় Regulatory T Cells (Tregs), ইমিউন সিস্টেমের একপ্রকার “সিকিউরিটি গার্ড” হিসেবে কাজ করে। এরা অন্য প্রতিরোধ কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যাতে তারা নিজের দেহের টিস্যুকে আক্রমণ না করে। এই ধারণাটিই হলো Peripheral Immune Tolerance, যা দেহকে স্বয়ংক্রিয় রোগ (autoimmune disease) থেকে সুরক্ষা দেয়। ২০০১ সালে মেরি ই. ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড রামসডেল একসঙ্গে কাজ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন শনাক্ত করেন, যার নাম Foxp3। তাঁরা দেখান যে, এই জিনে পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটলে ইঁদুরসহ মানুষের শরীরে গুরুতর স্বয়ংক্রিয় রোগ দেখা দেয়, যেমন IPEX (Immune dysregulation, Polyendocrinopathy, Enteropathy, X-linked syndrome)।

এরপর ২০০৩ সালে জাপানি বিজ্ঞানী শিমন সাকাগুচি প্রমাণ করেন, এই Foxp3 জিনই নিয়ন্ত্রণ করে সেই Regulatory T Cells-এর বিকাশ, যেগুলো দেহের ইমিউন সিস্টেমকে নিজ টিস্যুর প্রতি সহনশীল রাখে। তাঁদের এই আবিষ্কার ইমিউনোলজি বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং ক্যানসার, স্বয়ংক্রিয় রোগ ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায় বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। বর্তমানে তাঁদের আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে বহু ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে।

মেরি ই. ব্রাঙ্কো ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া চতুর্দশ নারী বিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণা মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জটিলতা বুঝতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর অবদান এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ফ্রেডেরিক জে. "ফ্রেড" র‍্যামসডেল (Fred Ramsdell):

ফ্রেডেরিক জে. “ফ্রেড” র‍্যামসডেল একজন মার্কিন অনাক্রম্যবিদ (Immunologist), যিনি মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য ২০২৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এলমহার্স্ট শহরে ৪ ডিসেম্বর ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। র‍্যামসডেল ১৯৮৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ডিয়েগো (University of California, San Diego) থেকে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (UCLA) থেকে অনাক্রম্যবিদ্যায় পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

ডক্টরেট শেষ করার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)–এ গবেষণা শুরু করেন এবং পরে সিয়াটল অঞ্চলের বিভিন্ন বায়োটেক কোম্পানিতে কাজ করেন। তিনি ডারউইন মলিকুলার/সেলটেক, জাইমোজেনেটিক্স, নভো নরডিস্ক এবং এটাইর ফার্মা (Atyr Pharma)–এর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের শুরু থেকে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর পার্কার ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপি (Parker Institute for Cancer Immunotherapy)–এর গবেষণা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি Sonoma Biotherapeutics–এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা (Scientific Advisor) হিসেবেও যুক্ত আছেন।

র‍্যামসডেল ও তাঁর গবেষণা দল এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন, যা মানবদেহের স্বয়ংক্রিয় রোগ (autoimmune disease) বোঝার নতুন দিক উন্মোচন করে। তাঁরা “স্কার্ফি মাউস (scurfy mice)” নামের এক বিশেষ ইঁদুর প্রজাতিতে এমন একটি জিন মিউটেশন শনাক্ত করেন, যা তাদেরকে স্বতঃঅনাক্রম্য রোগে আক্রান্ত করে তোলে। এই জিনটির নাম তাঁরা দেন FOXP3 (Forkhead Box Protein P3)। পরবর্তীতে তাঁরা প্রমাণ করেন যে, মানবদেহেও এই FOXP3 জিনে ত্রুটি ঘটলে IPEX (Immune dysregulation, Polyendocrinopathy, Enteropathy, X-linked syndrome)** নামের গুরুতর রোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া তাঁরা দেখান, এই FOXP3 জিনটি Regulatory T Cells–এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ইমিউন সিস্টেমকে নিজের শরীরের অঙ্গ আক্রমণ থেকে বিরত রাখে।

র‍্যামসডেলের গবেষণা ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন করে। এই আবিষ্কার শুধু স্বয়ংক্রিয় রোগের চিকিৎসাতেই নয়, বরং ক্যানসার চিকিৎসা ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২০১৭ সালে তিনি শিমন সাকাগুচিআলেকজান্ডার রুডেনস্কি–এর সঙ্গে যৌথভাবে ক্রাফোর্ড পুরস্কার (Craaford Prize) লাভ করেন “আর্থ্রাইটিস ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় রোগে ক্ষতিকর প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধকারী নিয়ন্ত্রক টি কোষ আবিষ্কারের জন্য”।

পরবর্তীতে ২০২৫ সালে ফ্রেড র‍্যামসডেল, মেরি ই. ব্রাঙ্কো এবং শিমন সাকাগুচি–এর সঙ্গে যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তাঁদের peripheral immune tolerance বিষয়ক গবেষণার জন্য। তাঁদের এই আবিষ্কার মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয় এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

শিমন সাগাগুচি (Shimon Sakaguchi):

শিমোন সাকাগুচি (জাপানি: 坂口 志文) একজন বিশিষ্ট জাপানি অনাক্রম্যবিদ (Immunologist) এবং ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি ১৯৫১ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানে জন্মগ্রহণ করেন। আধুনিক ইমিউনোলজি বিজ্ঞানে তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে Regulatory T Cells (Tregs) আবিষ্কার এবং ইমিউন সিস্টেমে এদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি সুপরিচিত। ২০২৫ সালে তিনি মেরি ই. ব্রাঙ্কোফ্রেড র‍্যামসডেল–এর সঙ্গে যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন “peripheral immune tolerance” বিষয়ক যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য।

সাকাগুচির গবেষণা মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রথম প্রমাণ করেন যে, দেহে এমন কিছু বিশেষ ধরনের টি কোষ রয়েছে—যেগুলো অন্য প্রতিরোধ কোষগুলোর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই কোষগুলোকে বলা হয় Regulatory T Cells (Tregs)। আগে ধারণা করা হতো যে, দেহের “self-tolerance” বা নিজের টিস্যুর প্রতি সহনশীলতা কেবলমাত্র থাইমাসে (Thymus) গঠিত হয়, যা “central tolerance” নামে পরিচিত। কিন্তু সাকাগুচি দেখান যে, দেহে “peripheral tolerance” নামের আরেকটি প্রক্রিয়া রয়েছে, যা এই নিয়ন্ত্রক টি কোষগুলির মাধ্যমে কাজ করে এবং দেহকে স্বয়ংক্রিয় রোগ (autoimmune diseases) থেকে রক্ষা করে।

এরপর ২০০১ সালে মেরি ই. ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র‍্যামসডেল FOXP3 জিনের আবিষ্কার করেন, যা Tregs কোষের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। ২০০৩ সালে সাকাগুচি এই দুটি গবেষণাকে একত্রিত করে প্রমাণ করেন যে FOXP3 জিনই নিয়ন্ত্রক টি কোষের গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁর এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটায় এবং ক্যানসার, স্বয়ংক্রিয় রোগ ও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায় নতুন পথ দেখায়।

শিমোন সাকাগুচির গবেষণা বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর কাজের ফলে এমন সব থেরাপি তৈরি হচ্ছে, যা একদিকে ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধ করতে পারে, আবার অন্যদিকে ক্যানসার চিকিৎসায় রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে টিউমার ধ্বংসে সহায়তা করতে পারে।

তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য সাকাগুচি এর আগে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ক্রাফোর্ড পুরস্কার (Craaford Prize) (২০১৭), যা তিনি ফ্রেড র‍্যামসডেল ও আলেকজান্ডার রুডেনস্কির সঙ্গে যৌথভাবে লাভ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর অবদান মানবজাতির রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জটিলতা ও ভারসাম্য বোঝার ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০২৫ সালের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।


⚛️ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ২০২৫

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ২০২৫: কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নতুন দিগন্ত উন্মোচন

২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী— ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জন ক্লার্ক (John Clarke), ফরাসি বিজ্ঞানী মিশেল এইচ. ডেভোরেট (Michel H. Devoret) এবং মার্কিন বিজ্ঞানী জন এম. মার্টিনিস (John M. Martinis)। তাঁরা বৈদ্যুতিক সার্কিটে “macroscopic quantum mechanical tunnelling and energy quantisation” বা বৃহদাকার কোয়ান্টাম যান্ত্রিক টানেলিং ও শক্তির কোয়ান্টাইজেশন বিষয়ক যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য এ পুরস্কারে ভূষিত হন।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে) রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস তাঁদের নাম ঘোষণা করে। এই গবেষণায় তাঁরা এমন এক বৈদ্যুতিক সার্কিটে কোয়ান্টাম প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন, যা আকারে এত বড় যে হাতেও ধরা যায়। এটি প্রমাণ করে যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স কেবলমাত্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার ক্ষেত্রেই নয়, বরং বৃহদাকার সিস্টেমেও কার্যকর হতে পারে।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো “Tunnelling”—যেখানে একটি কণা এমন একটি বাধা অতিক্রম করে যেতে পারে, যা ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মে সম্ভব নয়। সাধারণত, যখন অনেক কণার সমষ্টি থাকে, তখন এই কোয়ান্টাম প্রভাব অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু ক্লার্ক, ডেভোরেট এবং মার্টিনিস তাঁদের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য বৃহৎ সিস্টেমেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেতে পারে।

তাঁদের গবেষণার শুরু ১৯৮৪–৮৫ সালে, যখন তাঁরা সুপারকন্ডাক্টর বা অতিচালক পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট নির্মাণ করেন। সার্কিটটির দুটি সুপারকন্ডাক্টর উপাদানের মাঝে একটি অত্যন্ত পাতলা অ-পরিবাহী স্তর স্থাপন করা হয়—যা Josephson Junction নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় তাঁরা বৈদ্যুতিক প্রবাহের বিভিন্ন অবস্থার সূক্ষ্ম পরিমাপ করতে সক্ষম হন এবং দেখতে পান, পুরো সার্কিটটি যেন একক একটি কোয়ান্টাম কণার মতো আচরণ করছে।

প্রথমে সার্কিটটি এমন একটি অবস্থায় থাকে, যেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু কোনো ভোল্টেজ নেই—অর্থাৎ এটি একপ্রকার “শূন্য-ভোল্টেজ” অবস্থায় আবদ্ধ। আশ্চর্যের বিষয়, এই সিস্টেমটি হঠাৎই কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে এবং নতুন অবস্থায় প্রবেশ করে, যা একটি ভোল্টেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে বৃহদাকার সার্কিটেও কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ঘটতে পারে।

তাঁরা আরও দেখান, সিস্টেমটি শক্তি নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্রহণ বা নির্গত করতে পারে, অর্থাৎ এটি energy quantisation অনুসরণ করে—যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম মৌলিক নীতি।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে এরিকসন (Olle Eriksson) বলেন, “কোয়ান্টাম মেকানিক্স শত বছরের পুরোনো হলেও এখনও এটি আমাদের নতুন নতুন বিস্ময়ের মুখোমুখি করে। এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি।”

এই আবিষ্কার শুধুমাত্র তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্যই নয়, বরং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্ম—যেমন কোয়ান্টাম কম্পিউটার, কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং কোয়ান্টাম সেন্সর উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

জন ক্লার্ক (John Clarke):

জন ক্লার্ক একজন ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক।

জীবন:
জন ক্লার্ক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্টস কলেজ এবং ডারউইন কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএ, এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন যথাক্রমে ১৯৬৪, ১৯৬৮ এবং ১৯৬৮ সালে। তিনি সুপারকন্ডাক্টিভিটি ও সুপারকন্ডাক্টিং ইলেকট্রনিক্সে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে সুপারকন্ডাক্টিং কোয়ান্টাম ইন্টারফেরেন্স ডিভাইস (SQUIDs) উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি বিজ্ঞানজগতে খ্যাতি অর্জন করেন। SQUID হলো এক ধরনের অতিসংবেদনশীল চৌম্বক প্রবাহ শনাক্তকারী। বর্তমানে তিনি কোয়ান্টাম-নয়েজ সীমিত অ্যাম্প্লিফায়ার হিসেবে কনফিগার করা SQUID ব্যবহার করে মহাবিশ্বের অদৃশ্য পদার্থের সম্ভাব্য উপাদান অ্যাক্সিয়ন (Axion) অনুসন্ধানের প্রকল্পে কাজ করছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা:
জন ক্লার্ক ১৯৭০–৭২ সালে আলফ্রেড পি. স্লোন ফেলোশিপ এবং ১৯৭৭–৭৮ সালে গুগেনহেইম ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি রয়েল সোসাইটি অব লন্ডন-এর ফেলো নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি কমস্টক পুরস্কার ইন ফিজিক্স এবং ২০০৪ সালে হিউজ মেডেল অর্জন করেন। ২০১২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর বিদেশি সহযোগী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৭ সালে আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি-এর সদস্য হন।

সবশেষে, ২০২৫ সালে জন ক্লার্ক পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং শক্তির কুয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য।

 

মিশেল দেভরেট (Michel H. Devoret):

মিশেল এইচ. ডেভোরে (Michel H. Devoret) একজন ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের F. W. Beinecke অধ্যাপক (Professor of Applied Physics)। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের Applied Physics Nanofabrication Lab-এর পরিচালক এবং বর্তমানে Google Quantum AI-এর প্রধান বিজ্ঞানী (Chief Scientist)। ১৯৫৩ সালে প্যারিসে জন্ম নেওয়া ডেভোরে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষভাবে পরিচিত ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং (macroscopic quantum tunnelling), একক ইলেকট্রন পাম্প (single-electron pump), সার্কিট কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিক্স (circuit quantum electrodynamics), এবং “কুয়ান্ট্রনিক্স” (quantronics) ক্ষেত্রের সূচনায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য।

জীবন:
মিশেল ডেভোরে ১৯৭৫ সালে প্যারিসের École nationale supérieure des télécommunications থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ১৯৮২ সালে University of Paris-Sud (বর্তমানে Paris-Saclay University) থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচডি চলাকালীন তিনি প্যারিসের molecular quantum physics group-এ গবেষণা করেন। পরবর্তীতে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের University of California, Berkeley-তে জন ক্লার্কের ল্যাবরেটরিতে post-doctoral researcher হিসেবে কাজ করেন, যেখানে তিনি ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং নিয়ে গবেষণা করেন।

গবেষণা:
ডেভোরের গবেষণা মূলত solid state physics এবং condensed matter physics-এ কেন্দ্রীভূত। বিশেষ করে তিনি সার্কিট কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিক্স এবং “কুয়ান্ট্রনিক্স” নামে নতুন একটি ক্ষেত্রের সূচনা করেন, যেখানে বৈদ্যুতিক প্রবাহ ও ভোল্টেজের মতো সমষ্টিগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে কোয়ান্টাম যান্ত্রিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। তিনি single Cooper pair device, quantum computation, এবং metrology সম্পর্কিত গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

রব স্কোলকফ (Rob Schoelkopf) ও স্টিভেন গারভিন (Steven Girvin)-এর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি circuit QED-এর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন, যা বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অন্যতম কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত। তাঁর দল এমন কোয়ান্টাম অ্যাম্প্লিফায়ার তৈরি করে যা quantum noise limit পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম এবং এর মাধ্যমে মাপার প্রক্রিয়ার মৌলিক back-action পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। তাঁরা দেখান যে, একটি কোয়ান্টাম জাম্পকে মাঝপথে থামিয়ে তা বিপরীত দিকে ফেরানো সম্ভব—যা কোয়ান্টাম মাপবিদ্যার এক যুগান্তকারী অর্জন। বর্তমানে তিনি quantum error correction এবং fault-tolerant quantum operation নিয়ে গবেষণা করছেন।

ডেভোরে কোয়ান্টাম ইনফরমেশন ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এ. মার্বলস্টোন (A. Marblestone)-এর সঙ্গে যৌথ গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন যে entanglement-এর কারণে নির্দিষ্ট কিছু যোগাযোগ চ্যানেলে exponential quantum enhancement সম্ভব, যা “quantum pseudo-telepathy” নামে পরিচিত।

পুরস্কার ও সম্মাননা:
২০১৩ সালে মিশেল ডেভোরে রব স্কোলকফের সঙ্গে যৌথভাবে John Bell Prize পান মৌলিক ও অগ্রণী পরীক্ষামূলক আবিষ্কারের জন্য। পরবর্তীতে ২০২৫ সালে তিনি জন ক্লার্ক ও জন মার্টিনিসের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, বৈদ্যুতিক সার্কিটে macroscopic quantum mechanical tunnellingenergy quantisation আবিষ্কারের জন্য।

 

জন এম মার্টিনিস (John M. Martinis:

জন এম. মার্টিনিস (John M. Martinis) একজন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারার পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট (superconducting qubit) ব্যবহার করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে Google Quantum A.I. Lab তাঁকে এবং তাঁর গবেষক দলকে বহুমিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তিতে নিয়োগ করে—যেখানে তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল একটি কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণ। ২০২৫ সালে তিনি জন ক্লার্ক ও মিশেল ডেভোরের সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান বৈদ্যুতিক সার্কিটে macroscopic quantum mechanical tunnelling এবং energy quantisation আবিষ্কারের জন্য।

শিক্ষা:
মার্টিনিস তাঁর পিএইচডি গবেষণার সময় জোসেফসন টানেল জংশনের (Josephson tunnel junction) উপর ভোল্টেজ পার্থক্যের মাধ্যমে macroscopic quantum behavior নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর কাজ সেই সময় কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক্সে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

পেশাজীবন:
পিএইচডির পর তিনি প্রথমে ফ্রান্সের Commissariat à l'Énergie Atomique (CEA Saclay)-তে পোস্টডক্টরাল গবেষণা করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের National Institute of Standards and Technology (NIST)-এর Electromagnetic Technology Division-এ যোগ দেন, যেখানে তিনি superconducting quantum interference device (SQUID) অ্যাম্প্লিফায়ার নিয়ে কাজ করেন। NIST-এ থাকার সময় তিনি superconducting transition-edge sensor microcalorimeter ব্যবহার করে এক্স-রে সনাক্তকরণের (X-ray detection) একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

২০০২ সাল থেকে মার্টিনিস Josephson-junction qubit নিয়ে গবেষণা শুরু করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা। ২০০৪ সালে তিনি University of California, Santa Barbara (UCSB)-তে যোগ দেন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত Worster Chair in Experimental Physics পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মার্টিনিস ও তাঁর দল Nature জার্নালে “Quantum supremacy using a programmable superconducting processor” শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে তাঁরা ৫৩ কিউবিট বিশিষ্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে quantum supremacy অর্জনের ঘোষণা দেন। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম প্রমাণ যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোনো নির্দিষ্ট কাজ ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের চেয়ে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে, যা extended Church–Turing thesis-এর প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

২০২০ সালে তিনি Google থেকে পদত্যাগ করে Silicon Quantum Computing (SQC) কোম্পানিতে যোগ দেন, যা অধ্যাপক মিশেল সিমন্সের (Michelle Simmons) নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালে তিনি Qolab নামের একটি কোম্পানি সহ-প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ছিল সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃহৎ স্কেলে উচ্চমানের কিউবিট তৈরি করে কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণ করা। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি কোম্পানির Chief Technology Officer (CTO) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা:

Fritz London Memorial Prize (2014) – কোয়ান্টাম সুপারকন্ডাক্টিভিটি গবেষণায় অবদানের জন্য

John Stewart Bell Prize (2021) – কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মৌলিক প্রশ্ন ও এর প্রয়োগে গবেষণার জন্য

Nobel Prize in Physics (2025) – বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং ও শক্তির কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য

জন মার্টিনিসের গবেষণা আধুনিক কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কোয়ান্টাম তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে।

২০২৫ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।


⚗️ রসায়নে নোবেল পুরস্কার ২০২৫

২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন তিন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী— জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড রবসন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের অধ্যাপক ওমর এম. ইয়াগি। বুধবার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেলে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম ঘোষণা করে। তাঁরা “মেটাল–অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস (MOF)” নামে এক নতুন ধরনের আণবিক কাঠামো উদ্ভাবনের জন্য এ বছরের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

এই উদ্ভাবনী কাঠামো এমন এক ধরনের আণবিক নির্মাণ, যার মধ্যে বড় বড় ফাঁকা স্থান বা গহ্বর থাকে। এর ভেতর দিয়ে গ্যাস ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে। মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ, কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ, বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ, কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান হেইনার লিঙ্কে বলেন, “মেটাল–অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস অসীম সম্ভাবনাময়, যা রসায়নবিদদের নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত উপাদান তৈরির সুযোগ দিচ্ছে।”

এই গবেষণার সূচনা হয় ১৯৮৯ সালে, যখন রিচার্ড রবসন প্রথমবারের মতো ধনাত্মক তামার আয়ন ও চার বাহুযুক্ত এক অণুর সংযোজনের মাধ্যমে একটি সুবিন্যস্ত স্ফটিক কাঠামো তৈরি করেন, যার ভেতর অসংখ্য ফাঁকা গহ্বর ছিল। তবে এটি স্থিতিশীল ছিল না। পরবর্তীতে সুসুমু কিতাগাওয়া ও ওমর ইয়াগি এই কাঠামোকে স্থিতিশীল করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। ১৯৯২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তাঁরা আলাদা আলাদাভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন— কিতাগাওয়া দেখান যে এই কাঠামোর ভেতর দিয়ে গ্যাস প্রবেশ ও নির্গমন করতে পারে এবং MOF-কে নমনীয় করা সম্ভব। ইয়াগি একটি অত্যন্ত স্থিতিশীল MOF তৈরি করেন এবং এর নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করার পথ উন্মুক্ত করেন।

তাঁদের এই অগ্রণী কাজের ফলে রসায়নবিদেরা এখন পর্যন্ত দশ হাজারেরও বেশি ভিন্ন ধরনের মেটাল–অরগানিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছেন। এই উপকরণগুলোর মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পানির বিশুদ্ধকরণ, কার্বন ডাই অক্সাইড সংরক্ষণ এবং মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণের মতো বৈপ্লবিক সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

তিন বিজ্ঞানীকে ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কারের সম্মাননা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার সমানভাবে প্রদান করা হবে।

সুসুমু কিতাগাওয়া (Susumu Kitagawa)রিচার্ড রবসন (Richard Robson)ওমর এম. ইয়াগি (Omar M. Yaghi)

২০২৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তিনজন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

সুসুমু কিতাগাওয়া (Susumu Kitagawa):

সুসুমু কিতাগাওয়া (Susumu Kitagawa) একজন বিশিষ্ট জাপানি রসায়নবিদ, যিনি সমন্বয় রসায়ন (Coordination Chemistry)মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্ক (Metal–Organic Frameworks বা MOFs) গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৫১ সালের ৪ জুলাই জাপানের কিয়োটো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড সেল-ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সেস (iCeMS)-এর বিশিষ্ট অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কিতাগাওয়া মূলত অজৈব-জৈব সংকর যৌগ (hybrid inorganic-organic compounds) এবং সচ্ছিদ্র (porous) সমন্বয় পলিমার নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর আবিষ্কৃত মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস (MOFs) হলো এক ধরনের অণুজাতীয় জালকাঠামো, যার মধ্যে ফাঁকা স্থান বা ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলোর মাধ্যমে গ্যাস বা রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণ, শোষণ কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সম্ভব। এই কাঠামো ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ, বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ, এমনকি বিষাক্ত গ্যাস সংরক্ষণ করা যায় — যা পরিবেশবিজ্ঞান ও জ্বালানি প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

সুসুমু কিতাগাওয়া তাঁর অসামান্য গবেষণার মাধ্যমে রসায়নের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছেন, যা বর্তমানে সবুজ প্রযুক্তি (green technology) ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

২০২৫ সালে তিনি ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রিচার্ড রবসন এবং মার্কিন বিজ্ঞানী ওমর এম. ইয়াগি-এর সঙ্গে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাদের আবিষ্কৃত MOF কাঠামো আধুনিক রসায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও শিল্পপ্রযুক্তিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

 

রিচার্ড রবসন (Richard Robson):

রিচার্ড রবসন (Richard Robson)

রিচার্ড রবসন FAA FRS (জন্ম ১৯৩৭) একজন ব্রিটিশ রসায়নবিদ এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি সমন্বয় রসায়নের একজন শীর্ষস্থানীয় গবেষক হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে ধাতব-জৈব পরিকাঠামো (Metal–Organic Frameworks, MOFs)সমন্বয় পলিমার নিয়ে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। তাঁকে প্রায়ই “অবস্থান্তর ধাতুর সঙ্গে যুক্ত কেলাস প্রকৌশলের (Coordination Chemistry) একজন পথিকৃৎ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

তিনি ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণা কাজ সমন্বয় যৌগের গঠন, তাদের ভৌত বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে। রবসনের গবেষণা রসায়নবিদ্যায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যার মাধ্যমে গ্যাস শোষণ, অনুঘটন, এমনকি শক্তি সঞ্চয়েও নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

২০২৫ সালে সুসুমু কিতাগাওয়া এবং ওমর এম. ইয়াগি-এর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, ধাতব-জৈব পরিকাঠামোর বিকাশ ও প্রয়োগে অসাধারণ অবদানের জন্য।

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

জন্ম: ১৯৩৭, গ্লাসবার্ন (Glusburn), যুক্তরাজ্য

পিএইচডি: ১৯৬২, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য

বর্তমান পদ: অধ্যাপক, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া

বিশেষত্ব: ধাতব-জৈব পরিকাঠামো, সমন্বয় পলিমার

পুরস্কার: রসায়নে নোবেল পুরস্কার ২০২৫ (যৌথভাবে)

 

ওমর এম. ইয়াগি (Omar M. Yaghi):

ওমর মুয়ান্নিস ইয়াগি (Omar Mwannes Yaghi)

ওমর মুয়ান্নিস ইয়াগি (আরবি: عمر مونّس ياغي; জন্ম ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫) একজন প্রখ্যাত মার্কিন রসায়নবিদ, যিনি জালিকা রসায়ন (Reticular Chemistry)-এর জনক হিসেবে সুপরিচিত। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলির রসায়ন বিভাগের জেমস ও নিলটিয়ে চেয়ার অধ্যাপক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসজার্মান জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি লেওপোল্ডিনা-র নির্বাচিত সদস্য।

ইয়াগির গবেষণা রসায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি ধাতব-জৈব পরিকাঠামো (Metal–Organic Frameworks, MOFs) এবং সমযোজী জৈব পরিকাঠামো (Covalent Organic Frameworks, COFs) উদ্ভাবন ও বিকাশে নেতৃত্ব দেন। এই পরিকাঠামোগুলি অতি-সচ্ছিদ্র এবং গ্যাস সংরক্ষণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ, মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণ ও জ্বালানি উৎপাদনের মতো প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০২৫ সালে সুসুমু কিতাগাওয়ারিচার্ড রবসন-এর সঙ্গে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

শিক্ষা ও পেশাগত জীবন:

জন্ম: ১৯৬৫, আম্মান, জর্ডান

স্নাতক: ১৯৮৫, নিউ ইয়র্ক রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় (আলবেনি), যুক্তরাষ্ট্র

পিএইচডি: ১৯৯০, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা–শ্যাম্পেইন, যুক্তরাষ্ট্র

পোস্টডক্টরাল ফেলো: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (NSF Fellow, ১৯৯০)

অধ্যাপক: অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান–অ্যান আরবার, এবং বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি

সম্মাননা ও পুরস্কার:
ইয়াগি তাঁর গবেষণার জন্য বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

উপাদান গবেষণা সমাজ পদক (Materials Research Society Medal)

আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কার (ACS Award in Materials Chemistry)

বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার (King Faisal International Prize in Science)

আলবার্ট আইনস্টাইন ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড অব সায়েন্স

বিবিভিএ ফাউন্ডেশন ফ্রন্টিয়ার্স অব নলেজ অ্যাওয়ার্ড

এনি অ্যাওয়ার্ড (Excellence in Energy)

আমিনফ পুরস্কার (Royal Swedish Academy of Sciences)

ওলফ পুরস্কার (Wolf Prize in Chemistry)

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

নাম: ওমর এম. ইয়াগি

জন্ম: ১৯৬৫, আম্মান, জর্ডান

পিএইচডি: ১৯৯০, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আর্বানা–শ্যাম্পেইন

বর্তমান পদ: অধ্যাপক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলি, যুক্তরাষ্ট্র

বিশেষত্ব: জালিকা রসায়ন, ধাতব ও জৈব পরিকাঠামো

পুরস্কার: রসায়নে নোবেল পুরস্কার ২০২৫ (যৌথভাবে)

২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।


✍️ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ২০২৫

২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাজলো ক্রাজনাহরকাই। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর ২০২৫) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস তাঁর নাম ঘোষণা করে। ডিস্টোপিয়ান ও গভীর বিষণ্ণতাময় সাহিত্যরচনার জন্য তিনি এ বছরের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

লাজলো ক্রাজনাহরকাই আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে বিবেচিত। তাঁর রচনাগুলো সমাজ, মানবজীবন ও অস্তিত্বের গভীর সংকটকে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে Sátántangó এবং The Melancholy of Resistance— দুটি উপন্যাসই পরবর্তীতে বিখ্যাত চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়।

এর আগে তিনি ২০১৫ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার এবং ২০১৯ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেটেড লিটারেচার অর্জন করেন, যা তাঁর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে আরও মজবুত করে।

১৯০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে মোট ১১৭ বার। সাম্প্রতিক বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন অ্যানি এরনো, বব ডিলান, আবদুলরাজাক গুরনাহ, লুইজ গ্লিক, পিটার হান্ডকে, ওলগা তোকারচুক ও হান কাং। লাজলো ক্রাজনাহরকাইয়ের এই অর্জন হাঙ্গেরিয়ান সাহিত্যের জন্য এক অনন্য সম্মান ও গৌরবের অধ্যায় যোগ করেছে।

লাজলো ক্রাজনাহরকাই(László Krasznahorkai)

২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

লাজলো ক্রাজনাহরকাই(László Krasznahorkai):

লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই (হাঙ্গেরীয়: László Krasznahorkai; জন্ম ৫ জানুয়ারি ১৯৫৪, গিউলা, হাঙ্গেরি) একজন নোবেল পুরস্কারজয়ী হাঙ্গেরীয় ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার, যিনি তাঁর জটিল, গভীর দার্শনিক ও ভাষাশৈলীতে সমৃদ্ধ উপন্যাসগুলোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তাঁর লেখায় প্রলয়, বিশৃঙ্খলা, অস্তিত্বগত যন্ত্রণা ও মানবতার নৈতিক সংকটকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। তাঁর সাহিত্যকর্মগুলো প্রায়ই “পোস্টমডার্ন”, “ডিস্টোপিয়ান” ও “বিষণ্ণ” রূপে চিহ্নিত।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির গিউলায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গিওর্গি ক্রাসনাহোরকাই ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মাতা জুলিয়া প্যালিঙ্কাস ছিলেন একজন সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসক। কৈশোরে তিনি জানতে পারেন তাঁর পরিবারের ইহুদি বংশোদ্ভূত ইতিহাসের কথা, যা পরবর্তীতে তাঁর লেখায় গভীর আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে।

তিনি ১৯৭২ সালে এরকেল ফেরেঙ্ক হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এবং এরপর জোসেফ আত্তিলা বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান সেজেদ বিশ্ববিদ্যালয়) ও বুদাপেস্টের ইওটভোস লোরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (ELTE) আইন ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ELTE-র মানবিক অনুষদ থেকে হাঙ্গেরীয় ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর থিসিস ছিল নির্বাসিত লেখক সান্দোর মারাইয়ের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে।

সাহিত্যজীবন

ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮৫ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস Sátántangó প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যজগতে অভূতপূর্ব সাড়া জাগান। উপন্যাসটি হাঙ্গেরীয় সমাজতান্ত্রিক গ্রামীণ জীবনের পতন ও বিভ্রমের প্রতীকী চিত্র তুলে ধরে। এটি পরে বেলা টার (Béla Tarr) পরিচালিত একটি কালজয়ী চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়, যা সাত ঘণ্টাব্যাপী হলেও আধুনিক ইউরোপীয় চলচ্চিত্রে এক অনন্য স্থান অধিকার করেছে।

১৯৮৯ সালে প্রকাশিত The Melancholy of Resistance তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়। উপন্যাসটি এক রহস্যময় সার্কাস, বিশাল মৃত তিমি, এবং শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে মানবসমাজের নৈতিক পতনের প্রতীকী রূপ তুলে ধরে। ১৯৯৯ সালের War and War তাঁর আরেকটি শ্রেষ্ঠ রচনা, যেখানে একজন সরকারি কর্মচারীর মনস্তাত্ত্বিক ভ্রমণের মাধ্যমে সময়, ইতিহাস ও ভাষার সীমা অতিক্রমের চেষ্টাকে বর্ণনা করা হয়েছে।

তিনি পূর্ব এশিয়ার দর্শন ও নান্দনিকতা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। জাপান, চীন ও কিয়োটোতে কাটানো সময় তাঁর রচনায় পূর্বতাত্ত্বিক ভাবধারার সংযোজন ঘটায়, যার স্পষ্ট ছাপ দেখা যায় Seiobo There Below (২০০৮) উপন্যাসে। এই গ্রন্থে সৌন্দর্য, শিল্প, ও আধ্যাত্মিক জাগরণের চিরন্তন অনুসন্ধানকে বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

২০১৬ সালে প্রকাশিত Baron Wenckheim’s Homecoming (Báró Wenckheim hazatér) হাঙ্গেরির এক ক্ষুদ্র শহরে ফিরে আসা এক পতিত অভিজাতের কাহিনি, যা ব্যঙ্গ, ট্র্যাজেডি ও আধ্যাত্মিক প্রতীকবাদের অনন্য সমন্বয়।

তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাস Herscht 07769 (২০২১) এবং Zsömle odavan (২০২৪) আধুনিক ইউরোপীয় সমাজের নৈতিক ভাঙন ও শিল্পের পুনর্জন্মের সম্ভাবনাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে।

শৈলী ও প্রভাব

ক্রাসনাহোরকাইয়ের গদ্য দীর্ঘ, বিরামহীন এবং স্রোতস্বিনী—যেখানে চিন্তার পর চিন্তা অনন্ত ধারা তৈরি করে। সমালোচকরা তাঁকে ফিওদর দস্তয়েভস্কি, ফ্রান্‌ৎস কাফকা এবং গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের উত্তরসূরি বলে অভিহিত করেছেন। আমেরিকান লেখিকা সুসান সোন্ট্যাগ তাঁকে বলেছেন—“বিশ্বের সর্বনাশের কাহিনিকার”, আর জার্মান লেখক ডব্লিউ.জি. সেবাল্ড তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলনা করেছেন “গোগোলের Dead Souls”-এর সার্বজনীনতার সঙ্গে।

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি বহু বছর জার্মানির বার্লিনে বসবাস করেছেন, যেখানে তিনি “ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন”-এ অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে তিনি হাঙ্গেরির সেন্টলাসজলো পাহাড়ে নির্জনবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। তাঁর স্ত্রী ডোরা কোপসানি, যিনি একজন চিত্রশিল্পী ও সাইনোলজিস্ট; তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন—

১৯৮৭: József Attila Award

১৯৯৩: Bestenliste Prize (জার্মানি)

২০০৪: Kossuth Prize (হাঙ্গেরি)

২০১৩: Best Translated Book Award (Satantango)

২০১৫: Man Booker International Prize

২০১৯: National Book Award for Translated Literature (Baron Wenckheim’s Homecoming)

২০২১: Austrian State Prize for European Literature

২০২৫: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার

উত্তরাধিকার

লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের এক বিশাল নাম। তাঁর লেখায় ধ্বংসের মধ্যেও মানবতার আলোকরশ্মি ও শিল্পের পুনর্জন্মের বিশ্বাস জাগ্রত থাকে। চলচ্চিত্র, সাহিত্য, ও দর্শনের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে তাঁর সৃষ্টিকর্ম মানবচেতনার সীমান্ত অন্বেষণ করে—যা তাঁকে ২১শ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

২০২৫ সালের সাহিত্যে  নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।


☮️ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৫

২০২৫ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম ঘোষণা করে। তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিরাম প্রচেষ্টা এবং একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে উত্তরণের সংগ্রামের জন্য।

মারিয়া কোরিনা মাচাদো লাতিন আমেরিকার সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সাহসী ও নিবেদিত শান্তিকর্মীরূপে বিবেচিত। তিনি ভেনেজুয়েলায় এককালীন বিভক্ত রাজনৈতিক বিরোধকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং জনগণের ভোট ও প্রতিনিধিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে বিরোধী দলটি বিনামূল্যে ও ন্যায়সংগত নির্বাচনের দাবিতে এক যৌথ প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়।

ভেনেজুয়েলার বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠোর। দেশটি অতীতের তুলনায় এখন একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যে ভুগছেন, অপরদিকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করছেন। রাষ্ট্রীয় সহিংস যন্ত্রপাতি সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মাচাদো ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে Súmate নামে গণতান্ত্রিক উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জনগণের জন্য মুক্ত ও ন্যায়সংগত নির্বাচনের পক্ষ নিয়েছেন।

২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু কর্তৃত্ববাদী শাসক তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ দেন। এরপর তিনি একটি ভিন্ন দলের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন প্রদান করেন এবং শত শত হাজার স্বেচ্ছাসেবক দেশব্যাপী ভোট পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তারা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেন, যদিও ঝুঁকি ও হুমকির মুখোমুখি হতে হয়।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি মতে, মারিয়া কোরিনা মাচাদো সেই সব নারী ও পুরুষের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন যাঁরা দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে বিশ্বের জন্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। তার সাহস ও নেতৃত্ব ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য স্বাধীনতা ও শান্তির নতুন সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মারিয়া কোরিনা মাচাদো (Maria Corina Machado)

২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই -

মারিয়া কোরিনা মাচাদো প্যারিসকা (স্পেনীয়: María Corina Machado Parisca; জন্ম ৭ অক্টোবর ১৯৬৭) একজন ভেনেজুয়েলীয় রাজনীতিবিদ ও শিল্প প্রকৌশলী, যিনি ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতৃত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহসী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন এবং ২০২৫ সালে সাহসীভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় করেন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

মাচাদো কারাকাসে জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রকৌশল ও অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি অ্যাটেনিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা কারাকাসের পথ শিশুদের কল্যাণে কাজ করে।

রাজনীতিতে প্রবেশ

মাচাদো ২০০২ সালে ভোট পর্যবেক্ষণ সংস্থা Súmate-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ভেন্তে ভেনেজুয়েলা রাজনৈতিক দলের জাতীয় সমন্বয়ক। ২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিরোধীদলীয় প্রাইমারিতে প্রার্থী ছিলেন, যদিও হেনরিক ক্যাপ্রিলেসের কাছে পরাজিত হন।

২০১৪ সালে ভেনেজুয়েলায় গণবিক্ষোভ চলাকালীন তিনি নিকোলাস মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অগ্রণী নেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি সংকটের সময় তিনি ঘোষণা দেন যে তিনি পুনরায় রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হবেন যদি হুয়ান গুয়াইদো নির্বাচনের আহ্বান দেন। তবে তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

২০২৩ সালে তিনি ইউনিটারি প্ল্যাটফর্মের প্রাইমারিতে প্রাক-প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তাঁকে ১৫ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট এই অযোগ্যতা নিশ্চিত করে। পরে তিনি বিরোধীদলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলেও তাঁকে প্রতিস্থাপন করা হয়।

সাহস ও আত্মগোপন

১ আগস্ট ২০২৪-এ তিনি একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেখানে উল্লেখ করেন যে নিকোলাস মাদুরোর একনায়কতন্ত্র থেকে নিজের জীবন, স্বাধীনতা ও সহদেশবাসীর স্বাধীনতার জন্য তিনি আত্মগোপন করেছেন। তারপরও তিনি দেশে রয়েছেন, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫

১০ অক্টোবর ২০২৫-এ নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি মাচাদোকে শান্তি পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করে। কমিটির মতে, তিনি ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার ও একনায়ক শাসন থেকে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। মাচাদোকে আধুনিক লাতিন আমেরিকার এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি বিপুল বিপদ সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ ও নাগরিক সাহসিকতার প্রতীক হয়ে রয়েছেন।

অবদান ও নেতৃত্ব

ভেনেজুয়েলায় বিরোধীদলকে একত্রিত করা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করা।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রচেষ্টা ও ভোট পর্যবেক্ষণে সক্রিয় নেতৃত্ব।

বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি অবিচল সমর্থন।

জনগণের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচনী প্রতিনিধিত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রাম।

মাচাদো প্রমাণ করেছেন যে গণতন্ত্রের হাতিয়ারই শান্তির হাতিয়ার। তিনি এমন ভবিষ্যতের প্রতীক, যেখানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত, জনগণের কণ্ঠস্বর শোনা যায় এবং মানুষ শান্তিতে বসবাসের স্বাধীনতা পায়।

২০২৫ সালের শান্তিতে  নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ১০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে।


💰 অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৫

📅 সম্ভাব্য ঘোষণা: সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
📍 ঘোষণাস্থল: The Royal Swedish Academy of Sciences

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারটি ১৯৬৯ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে।
গত বছর বৈশ্বিক দারিদ্র্য নিরসনে তথ্যভিত্তিক গবেষণার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
👉 এবারের বিজয়ীর নাম ও অবদান প্রকাশ করা হবে ঘোষণার দিন।


নোবেল পুরস্কার শুধু একাডেমিক স্বীকৃতি নয়, এটি মানবতার অগ্রগতির প্রতীক।
প্রতিবছরের মতো এবারও স্যাট একাডেমি পাঠকদের জন্য নিয়ে আসবে ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কারের প্রতিটি ক্যাটাগরির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও বিজয়ীদের প্রোফাইল

📢 তাই আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন — প্রতিটি ঘোষণার পরই আমরা আপডেট দেব বিজয়ীদের নাম ও তাঁদের অবদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ।


🏆 নোবেল পুরস্কার কী? | Nobel Prize Explained in Bangla

নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize) হলো বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী ও ডিনামাইট আবিষ্কারক আলফ্রেড নোবেল (Alfred Nobel)। ১৮৯৫ সালে মৃত্যুর আগে নিজের উইলে তিনি নির্দেশনা দেন, তাঁর সম্পদের একটি বড় অংশ ব্যয় করা হবে এমন এক তহবিল গঠনে, যেখান থেকে প্রতি বছর মানবকল্যাণে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হবে।
এইভাবেই ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয়।


🎓 নোবেল পুরস্কারের বিভাগসমূহ

প্রথমদিকে নোবেল পুরস্কার পাঁচটি বিভাগে প্রদান করা হতো, পরবর্তীতে যুক্ত হয় ষষ্ঠ বিভাগ অর্থনীতি। বর্তমানে নোবেল পুরস্কার নিম্নলিখিত ছয়টি বিভাগে দেওয়া হয় —

1️⃣ পদার্থবিজ্ঞান (Physics) – মহাবিশ্ব, শক্তি, পদার্থ ও প্রকৃতির মৌলিক নিয়ম নিয়ে গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য।
2️⃣ রসায়ন (Chemistry) – পদার্থের গঠন, বিক্রিয়া ও ব্যবহার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য।
3️⃣ চিকিৎসাবিজ্ঞান বা শারীরবিদ্যা (Physiology or Medicine) – মানবদেহ, রোগ, বা চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য।
4️⃣ সাহিত্য (Literature) – সাহিত্য জগতে গভীর প্রভাব ফেলেছে এমন সৃজনশীল ও মানবিক লেখনীর জন্য।
5️⃣ শান্তি (Peace) – যুদ্ধবিরোধী প্রচেষ্টা, মানবাধিকার রক্ষা ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য।
6️⃣ অর্থনীতি (Economic Sciences) – ১৯৬৮ সালে সুইডিশ সেন্ট্রাল ব্যাংকের উদ্যোগে যুক্ত হওয়া বিভাগ, যা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও তত্ত্বে অবদানের স্বীকৃতি দেয়।


💰 পুরস্কারের অংশ হিসেবে যা দেওয়া হয়

প্রত্যেক নোবেল বিজয়ী (Nobel Laureate) পান—

একটি স্বর্ণপদক (Gold Medal)

একটি সনদপত্র (Diploma)

এবং একটি নগদ অর্থ পুরস্কার (Cash Prize)

পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়, যা আসে Nobel Foundation-এর আয় থেকে।


📅 পুরস্কার প্রদানের তারিখ ও স্থান

নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়—
এই দিনটি হলো আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী।

পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও অর্থনীতি পুরস্কার প্রদান করা হয় সুইডেনের স্টকহোমে,

আর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয় নরওয়ের অসলো শহরে


🌍 কেন দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার?

নোবেল পুরস্কারের উদ্দেশ্য হলো মানবজাতির উন্নয়ন, শান্তি ও জ্ঞানের প্রসারে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অসাধারণ অবদান রাখে তাদের সম্মান জানানো।
আলফ্রেড নোবেলের উইলে বলা হয়,

“এই পুরস্কার সেইসব মানুষকে দেওয়া হবে যারা মানবতার সর্বোচ্চ কল্যাণে কাজ করেছে।”

প্রতিটি বিভাগে অবদানের ক্ষেত্র আলাদা —

🔬 পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নতুন তত্ত্ব বা আবিষ্কার।

💉 চিকিৎসাবিজ্ঞানে: মানব স্বাস্থ্যের উন্নয়নে চিকিৎসা বা গবেষণায় সাফল্য।

✍️ সাহিত্যে: মানবিক অনুভূতি ও মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলে এমন রচনা।

☮️ শান্তিতে: যুদ্ধবিরোধ, মানবাধিকার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান।

💹 অর্থনীতিতে: অর্থনৈতিক তত্ত্ব, নীতি বা বিশ্লেষণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।


🔍 নোবেল পুরস্কার নির্বাচনের প্রক্রিয়া

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কঠোর ও গোপনীয়।

1️⃣ প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নোবেল কমিটি মনোনয়ন আহ্বান করে।
2️⃣ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩০০ জন বা তার বেশি প্রার্থী মনোনীত হন।
3️⃣ বিশদ যাচাই-বাছাই, গবেষণার মান ও প্রভাব মূল্যায়নের পর কমিটি চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি গোপন রাখা হয় এবং ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না।


🕊️ সবচেয়ে জনপ্রিয় বিভাগ: নোবেল শান্তি পুরস্কার

সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় বিভাগ হলো নোবেল শান্তি পুরস্কার
এটি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা, ও যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রমে অসাধারণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তি বা সংগঠনকে দেওয়া হয়।
অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব — যেমন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, মালালা ইউসুফজাই, বারাক ওবামা প্রমুখ — এই পুরস্কার অর্জন করেছেন।


 সংক্ষেপে

বিষয়তথ্য
প্রতিষ্ঠাতাআলফ্রেড নোবেল
শুরু১৯০১ সাল
বিভাগ৬টি
প্রদান তারিখ১০ ডিসেম্বর
প্রদান স্থানস্টকহোম (সুইডেন) ও অসলো (নরওয়ে)
লক্ষ্যমানবতার কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা

🔹 নোবেল পুরস্কার শুধু একটি পুরস্কার নয়, এটি মানবতার জন্য শ্রেষ্ঠত্ব ও উদ্ভাবনের প্রতীক।
যারা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শান্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন, নোবেল পুরস্কার তাঁদের কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

6 50.6k

Author

Manager
2k Followers

অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে

All Comments

Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...