দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান আমাদের নিত্য সঙ্গী। সকালে ঘুম থেকে উঠা হতে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত সকল কর্মকাণ্ডের সাথে মিশে আছে বিজ্ঞান বিজ্ঞান মানব জীবনকে করেছে সুন্দর ও সমৃদ্ধ, বাড়িয়ে দিয়েছে আরাম-আয়েশ এবং সুখ সাচ্ছন্দা। কিন্তু বিজ্ঞানের এই সমৃদ্ধি একদিনে সম্ভব হয়নি। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি বিজ্ঞানীদের চিন্তা-চেতনা, তথ্য উদ্ভাবন এবং প্রয়োগ বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে। মানব সম্পদ, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সমাজবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ রসায়ন, গণিত এবং জীববিজ্ঞান এমন কি জীবন দর্শনের ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছে বিজ্ঞান। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের সাথে পরিমাপ বিষয়টি জড়িত। পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সকল পরীক্ষণেই বিভিন্ন রাশির পরিমাপ করতে হয়। ভৌত জগতের প্রকৃতি, বর্তমান সভ্যতায় পদার্থবিজ্ঞানের অবদান এবং পরিসর, বিস্ময়কর আবিষ্কার, বিভিন্ন বিজ্ঞানের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক, পরিমাপের নির্ভুলতা দূর করে সঠিকতা যাচাই, বিভিন্ন মৌলিক এককের মধ্যে সম্পর্ক ও বিজ্ঞানীদের অবদানসহ নানা বিষয়ে বিজ্ঞানের প্রয়োগই হলো এ অধ্যায়ের মূল বিষয়।
▪️ভৌত জগতের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর এবং এর উদ্দীপক অবদান ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধারণা, সূত্র, নীতি, স্বীকার্য, অনুকল্প এবং তত্ত্বের অর্থ উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️ পদার্থবিজ্ঞানের সাথে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে।
▪️স্থান, সময়, ভর এবং অন্যান্য প্রতিভাসের কার্যকরণ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️মৌলিক ও লক্ষ এককের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে।
▪️পরিমাপের মূলনীতি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ক্রমবিকাশ ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️পরিমাপের ত্রুটি ব্যাখ্যা করতে পারবে।
▪️ পরিমাপযোগ্য রাশির শুদ্ধতর মান নির্ধারণের কৌশল প্রয়োগ করতে পারবে।
স্ফেরোমিটারের সাহায্যে গোলীয় তলের বক্রতার ব্যাসার্ধ নির্ণয় করতে পারবে।
নিক্তির সাহায্যে দোলন পদ্ধতিতে বস্তুর ভর নির্ণয় করতে পারবে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে জানতে হলে কোন বা কোন ধরনের পরিমাপের প্রয়োজন হয়। পদার্থের যে সব ভৌত বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা যায় তাদেরকে রাশি (quantity) বলে। যেমন, দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, আয়তন, বেগ, কাজ ইত্যাদি প্রত্যেকে এক একটি রাশি। পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর... গত যে কোন রাশিকে ভৌত (physical) রাশি বলে।
কিছু কিছু ভৌত রাশিকে শুধুমাত্র মান দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়। আবার অনেক ভৌত রাশি রয়েছে যাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য মান ও দিক উভয়ই প্রয়োজন হয়। তাই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভৌত রাশিগুলোকে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি ; যথা—
(ক) স্কেলার রাশি বা অদিক রাশি (Scalar quantity)।
(খ) ভেক্টর রাশি বা দিক রাশি বা সদিক রাশি (Vector quantity)।
যে সব ভৌত রাশির শুধু মান আছে, কিন্তু দিক নেই, তাদেরকে স্কেলার রাশি বা অদিক রাশি বলে। যেমন দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, জনসংখ্যা, তাপমাত্রা, তাপ, বৈদ্যুতিক বিভব, দ্রুতি, কাজ ইত্যাদি কেলার বা অদিক রাশি।
যে সব ভৌত রাশির মান এবং দিক দুই-ই আছে, তাদেরকে ভেক্টর রাশি বা দিক রাশি বলে। যেমন সরণ, বেগ, ত্বরণ, মন্দন, বল, ওজন ইত্যাদি ভেক্টর বা দিক রাশি।
কোন একটি ভেক্টর রাশিকে দুভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে, যথা- (১) অক্ষর দ্বারা এবং (২) সরলরেখা দ্বারা।
১। অক্ষর দ্বারা কোন একটি ভেক্টর রাশিকে চারভাবে প্রকাশ করা হয়, যথা-
(ক) কোন অক্ষরের উপর তীর চিহ্ন দ্বারা রাশিটির ভেক্টর রূপ এবং এর দুই পাশের দুটি খাড়া রেখা দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়। সাধারণভাবে শুধু অক্ষর দ্বারাও রাশিটির মান নির্দেশ করা হয়।
A অক্ষরের ভেক্টর রূপ Ā এবং মান রূপ | A | বা A
(খ) কোন অক্ষরের উপর রেখা চিহ্ন দ্বারা রাশিটির ভেক্টর রূপ এবং এর দুই পাশের দুটি খাড়া রেখ দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়।
A অক্ষরের ভেক্টর রূপ Ā এবং মান রূপ । A
(গ) কোন অক্ষরের নিচে রেখা চিহ্ন দ্বারা রাশিটির ভেক্টর রূপ এবং এর দুই পাশের দুটি খাড়া রেখ দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়।
A অক্ষরের ভেক্টর রূপ এবং মান রূপ | |
(ঘ) মোটা হরফের অক্ষর দিয়ে ভেক্টর রাশি প্রকাশ করা হয়। যেমন A অক্ষরের ভেক্টর রূপ এবং এর মান A ভেক্টর রাশি নির্দেশের ক্ষেত্রে (ক)-এ ব্যবহৃত চিহ্নই শ্রেয়। তাই এই বই-এ আমরা এই পদ্ধতিই ব্যবহার করব।
২। সরলরেখা দ্বারা ভেক্টর রাশি নির্দেশ করতে হলে রাশিটির দিকে বা সমান্তরালে একটি সরলরেখা অংকন করে সরলরেখাটির শেষ প্রান্তে একটি তীর চিহ্ন দ্বারা রাশিটির দিক এবং কোন স্কেলে উত্ত সরলরেখাটির দৈর্ঘ্য দ্বারা এর মান নির্দেশ করা হয়। এ পদ্ধতিকে জ্যামিতিক উপায়ে ভেক্টরের নির্দেশনাও বলে।
মনে করি, একটি ভেক্টর রাশির মান 5 এবং এর দিক পূর্ব দিক। একে সরলরেখা দ্বারা প্রকাশ করতে হবে। এখন AC একটি সরলরেখা পূর্ব- পশ্চিম দিক বরাবর অংকন করে AC সরলরেখা হতে সুবিধামত দৈর্ঘ্যকে একক ধরে এর 5 গুণ দৈর্ঘ্য AB কেটে নিই এবং AB-এর শেষ প্রান্তে পূর্ব দিকে তীর চিহ্ন যুক্ত করি [চিত্র ১:১]। এই তীর চিহ্নিত সরলরেখাই ভেক্টর রাশিটি নির্দেশ করবে। ভেক্টর রাশি নির্দেশী সরলরেখার তীর চিহ্নিত প্রান্ত B-কে শীর্ষবিন্দু বা অন্ত বিন্দু এবং অপর প্রান্ত A-কে আদিবিন্দু বা মূলবিন্দু বা পাদবিন্দু বলে।
আমরা জানি প্রত্যেক বস্তু যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থা বজায় রাখতে চায় অর্থাৎ বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। বস্তুর এ ধর্মকে জড়তা বলে। বস্তুর এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে বাইরে থেকে একটা কিছু প্রয়োগ করতে হয়।
বইটি তার অবস্থানের পরিবর্তন করছে অর্থাৎ বইট... গতিশীল হচ্ছে। তুমি যখন বস্তুটিকে ঠেলো বা টানো তখন তুমি বস্তুটির উপর কিছু একটা প্রয়োগ কর। সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে এই ঠেলা (Push) এবং টানাই (Pull) হচ্ছে বল। তোমার হাত ও বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের ফলশ্রুতি হচ্ছে বল। কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল হচ্ছে ঐ বস্তু এবং অন্য কোনো বস্তুর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল। কোনো বস্তুর পরিপার্শ্ব যা অন্যান্য বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত, ঐ বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে যেমন, তুমি যদি কোনো বইকে হাত দিয়ে ধরে রাখ, তাহলে বইয়ের পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগুলো হচ্ছে তোমার হাত, যা বইটির ওপর ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়োগ করে; এবং পৃথিবী যা বইটির ওপর নিম্নমুখী বল প্রয়োগ করে (বই-এর ওজন)।
আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা বলে কোনো কিছু ঠেলতে বা টানতে, বহন করতে বা নিক্ষেপ করতে বলের প্রয়োজন হয়। আমরা আমাদের নিজের উপরও বলের প্রভাব অনুভব করতে পারি যখন কেউ আমাদেরকে ধাক্কা দেয় বা কোনো গতিশীল বস্তু আমাদেরকে আঘাত করে অথবা মেলার মাঠে যখন আমরা কোনো নাগরদোলায় চড়ে বসি। এসবই হচ্ছে বলের স্বজ্ঞামূলক ধারণা।
বলের স্বজ্ঞামূলক ধারণা থেকে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক ধারণায় উপনীত হওয়া কিন্তু খুব সহজে হয়নি। অ্যারিস্টটলের মতো প্রাচীন বিজ্ঞ চিন্তাবিদদেরও বল সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ছিল। বল সংক্রান্ত প্রথম বৈজ্ঞানিক ধারণার অবতারণা করেন গ্যালিলিও। স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতি বিষয়ক সূত্রাবলি থেকেই বল সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক ধারণা পাওয়া যায়। মহাকর্ষ বলের সূত্রের সাহায্যে তিনি বল সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ধারণা দেন।
স্থূল জগতে আমরা মহাকর্ষ বল ছাড়াও আরো নানা রকম বলের সাথে পরিচিত হই, যেমন পেশি শক্তি, দুটি বস্তুর মধ্যকার স্পর্শ বল যেমন ঘর্ষণ বল, সঙ্কুচিত বা প্রসারিত স্প্রিং কর্তৃক প্রযুক্ত বল, টানা তার বা সুতার উপর বল, কঠিন বস্তু যখন প্রবাহীর সংস্পর্শে থাকে তখন প্লবতা বা সান্দ্র বল, প্রবাহীর চাপের কারণে বল বা তরলের পৃষ্ঠটানজনিত বল ইত্যাদি। দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে না থাকলেও বল ক্রিয়াশীল হতে পারে, যেমন মহাকর্ষ বল, বা দুটি আহিত বস্তুর মধ্যকার বল। সূক্ষ্ম জগতে আমরা প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে নিউক্লিয় বল, আন্তঃপারমাণবিক বা আন্তঃআণবিক বলের কথাও আমরা জানি ।
কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা এ তিনটি শব্দ আমাদের অতি পরিচিত। আমরা দৈনন্দিন জীবনে কাজ শব্দটিকে শারীরিক কিংবা মানসিক যে কোন কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকি। তাই সাধারণ অর্থে কোন কিছু করার নামই কাজ। যেমন রিকশাওয়ালা যখন রিক্সা টানে তখন সে কাজ করে। কুলি যখন মাল বহন করে তখন স... কাজ করে, ঘোড়া যখন গাড়ি টানে তখন এটি কাজ করে ইত্যাদি। এ থেকে স্পষ্ট যে কাজ শব্দটি দৈনন্দিন জীবনে কোন নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে কাজ বলতে নির্দিষ্ট একটি অর্থ বুঝায়। আবার ক্ষমতা ও শক্তি উভয়ই সাধারণভাবে একই অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা এক নয়। এ অধ্যায়ে কাজ, ক্ষমতা ও শক্তির প্রকৃত ব্যাখ্যা এবং এদের সম্পর্কিত বিভিন্ন সম্পর্ক আলোচনা করা হবে।
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে বলের অভিমুখে যদি বস্তুটির সরণ ঘটে তবে ক্রিয়াশীল বল কাজ করেছে বুঝায়। কাজের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া যায়।
উপরের সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট যে কোন বস্তুর উপরে শুধু বল প্রয়োগ করলেই কাজ হয় না। যেমন একটি কাঠের গুড়ির উপর বল প্রয়োগ করা হল ; কিন্তু গুড়িটির কোন স্থানান্তর হল না। সুতরাং প্রযুক্ত বল কোন কাজ করল না। অতএব, সিদ্ধান্ত এই যে, বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের ক্রিয়া রেখায় ঐ বস্তুর স্থানান্তর না ঘটে, তবে কাজ সম্পাদিত হয় না।
কাজের জন্য বলের প্রয়োজন। বল দুভাগে কাজ করতে পারে। যথা- (১) বলের দ্বারা বা বলের দিকে কাজ এবং (২) বলের বিরুদ্ধে বা বলের বিপরীত দিকে কাজ।
যদি বল প্রয়োগে বলের প্রয়োগ বিন্দু বলের ক্রিয়ার অভিমুখে সরে যায় বা বলের দিকে সরণের ধনাত্মক উপাংশ থাকে তবে বলের দ্বারা কাজ হয়েছে বুঝায়। বলের দ্বারাকৃত কাজকে ধনাত্মক কাজ বলে।
(ক) একটি বস্তুকে ছাদের উপর হতে নিচে ফেলা হল। এক্ষেত্রে বলের দ্বারা কাজ হল বুঝায়।
(খ) একটি ফুটবল চলন্ত অবস্থায় আছে। বল প্রয়োগ করার ফলে ফুটবলটি বলের দিকে সরে গেল। এ ক্ষেত্রেও বলের দ্বারা কাজ হয়েছে বুঝায়।
সংজ্ঞা : বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দু বলের ক্রিয়ার বিপরীত দিকে সরে যায় বা বলের দিকে সরণের ঋণাত্মক উপাংশ থাকে তবে যে কাজ সম্পাদিত হবে তাকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বা ঋণাত্মক কাজ বলে।
(ক) একটি বস্তুকে মাটি হতে টেবিলের উপর উঠানো হল। এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে সরানো হল। অতএব বলের বিরুদ্ধে কাজ হয়েছে বুঝাবে।
(খ) সমবেগে গতিশীল একটি গাড়ি ব্রেক করলে কিছুদূর গিয়ে থেমে যাবে। এক্ষেত্রে ব্রেকজনিত বল গাড়ির গতির বিপরীত দিকে ক্রিয়া করায় বলের বিরুদ্ধে কাজ হয়েছে বুঝাবে।
মনে করি A বিন্দুতে অবস্থিত কোন একটি বস্তুর উপর AB বরাবর F বল প্রযুক্ত হওয়ায় বস্তুটি A বিন্দু হতে B বিন্দুতে যেতে s দূরত্ব অতিক্রম করল । চিত্র ৬১ (ক)]। তা হলে,
কৃত কাজ = বলের মান × বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর সরণের মান
বা, W=F × s
যদি বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর তথা বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ, বলের বিপরীত দিকে AB = s হয় [চিত্র ৬১ (খ)] তবে,
কৃত কাজ = বলের মান x বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর সরণের মান
W= F × ( — s ) = - F × s
ঋণ চিহ্ন বল ও সরণ বিপরীতমুখী বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
এবার মনে করি একটি বস্তুর উপর F পরিমাণ বল AB অভিমুখে প্রযুক্ত হওয়ায় বস্তুটি বলের অভিমুখের সাথে কোণ উৎপন্ন করে s পরিমাণ দূরত্ব সরে C বিন্দুতে পৌঁছল[ চিত্র ৬.১ (গ) ]। তা হলে বলের ক্রিয়ারেখা বরাবর বস্তুর সরণ = AB = s cos।
এখানে BC AB,
কৃত কাজ, W= বলের মান × বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর সরণের মান
বা, W = Fs
= বলের মান x বলের দিকে সরণের উপাংশের মান।
= সরণের মান × সরণের দিকে বলের উপাংশের মান।
মনে করি, বল একটি ভেক্টর বা দিক রাশি এবং সরণ একটি ভেক্টর বা দিক রাশি।
অতএব, কাজ= বল × সরণ
বা, [s হল বল F-এর দিকে সরণের উপাংশ বা অংশক]
(ক) = 0° হলে, অর্থাৎ বলের দিকে যখন বস্তুর সরণ হয়, তখন
এখানে কাজ ধনাত্মক (positive)। এক কথায় ও সূক্ষ্মকোণ হলে কাজ ধনাত্মক। কাজ ধনাত্মক হলে বলের দ্বারা কাজ বুঝায় ।
(খ) =90° হলে
(গ) = 180° হলে কাজ ঋণাত্মক (negative) হবে।
কাজ ঋণাত্মক হলে বলের বিরুদ্ধে কাজ বুঝায় ।
উপরের সমীকরণগুলো হতে সিদ্ধাস্ত করা যায় যে, বল প্রয়োগের ফলে যদি বনের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে তবেই কাজ সাধিত হবে। এটিই কাজের শর্ত।
কাজ দুটি দিক রাশি ও এর ডট বা স্কেলার গুণফল। এটি একটি স্কেলার রাশি। কাজের শুধুমাত্র মান রয়েছে।
কতকগুলো বল যদি একসাথে বস্তুর উপর কাজ করে, তবে প্রতিটি বল দ্বারা কাজের পরিমাণ পৃথক পৃথকভাবে নির্ণয় করে সবগুলোকে একত্রে যোগ করে মোট কাজের পরিমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ মোট কাজের পরিমাণ।
W = w1 + w2 + w3 +…….. + wn
কাজ পরিমাপের সংজ্ঞা এবং সমীকরণ অনুসারে বল প্রয়োগের ফলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ না ঘটে,
তবে কাজ W= 0।
সুতরাং শূন্য কাজের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া য়ায়।
সংজ্ঞা ঃ বল প্রয়োগের ফলে যদি বস্তুর সরণ না হয় ( = 0), অর্থাৎ বলের প্রয়োগ বিন্দু স্থির থাকে অথবা প্রয়োগ বিন্দু বলের উল্লম্ব অভিমুখে ( = 90°) সরে যায়। তবে বলের দ্বারা শূন্য কাজ হয়েছে বুঝাবে ।
(ক) একজন লোক একটি ভারী বাক্স মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকটি কোন কাজ করছে না, কারণ বাক্সটির কোন সরণ নেই ।
(খ) স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কেটে স্থির থাকলে কোন কাজ করা হয় না।
(গ) একটি বস্তু দড়িতে বেঁধে বৃত্তাকার পথে ঘুরালে কোন কাজ হবে না। কেননা প্রতি মূহূর্তে বস্তুটির বেগ বা সরণ বস্তুর অবস্থান বিন্দু হতে বৃত্তের স্পর্শক বরাবর এবং বলের দিক কেন্দ্রমুখী। অর্থাৎ কেন্দ্রমুখী বল ও সরণের অন্তর্ভুক্ত কোণ 90°। সুতরাং, কেন্দ্রমুখী বল দ্বারা কৃত কাজ শূন্য।
আমরা জানি,
কাজ W = = Fs cos
উপরের সমীকরণের ডানপাশে Fs ও cos তিনটি রাশি রয়েছে। এদের যে কোন একটি শূন্য হলে ডানপক্ষ অর্থাৎ কাজ শূন্য হবে।
(ক) যদি বস্তুতে বল প্রয়োগ না করা হয় তবে কাজ W = 0 হবে।
(খ) বল প্রয়োগ করার ফলে যদি বস্তুর সরণ না ঘটে, তবে W= 0 হবে।
(গ) যদি cos = 0 হয়, অর্থাৎ = 90° হয়, তবে w = 0 হবে। এ অবস্থা ঘটবে যখন বল F ও সরণ s-এর মধ্যবর্তী কোণ 90° হবে।
বলের দ্বারা কাজ | বলের বিরুদ্ধে কাজ |
---|---|
১। যদি বল প্রয়োগের ফলে বলের দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে বা বলের দিকে সরণের ধনাত্মক উপাংশ থাকে তবে ঐ সরণের জন্য কৃতকাজকে বলের দ্বারা কাজ বলে। | ১। যদি বল প্রয়োগের ফলে বলের বিপরীত দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে বা বলের দিকে সরণের ঋণাত্মক উপাংশ থাকে তবে ঐ সরণের জন্য কৃতকাজকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বলে। |
২। বলের দ্বারা কাজ ধনাত্মক রাশি। | ২। বলের বিরুদ্ধে কাজ ঋণাত্মক রাশি। |
৩। বলের দ্বারা কাজ হলে বস্তুতে ত্বরণের সৃষ্টি হয়। | ৩। বলের বিরুদ্ধে কাজ হলে বস্তুর উপর মন্দন সৃষ্টি হয়। |
৪। বলের দ্বারা কাজ হলে স্থিতিশক্তি হ্রাস পায়। | ৪। বলের বিরুদ্ধে কাজ হলে স্থিতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। |
৫। বলের দ্বারা কাজ হলে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। | ৬। বলের বিরুদ্ধে কাজ হলে গতিশক্তি হ্রাস পায়। |
৬। বলের দ্বারা কাজের ক্ষেত্রে 90° < <0° | ৬। বলের বিরুদ্ধে কাজের ক্ষেত্রে 180°> < 90° । |
কাজের একক আলোচনা করার আগে একক কাজ কি তা জানা দরকার। কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগে বলের ক্রিয়ারেখা বরাবর যদি বস্তুর একক সরণ হয়, তবে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, একক কাজ বলে ।
এ পদ্ধতিতে কাজের পরম একক হল জুল (Joule)। এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে বলের ক্রিয়া রেখা বরাবর বস্তুর সরণ যদি এক মিটার হয়, তবে যে কাজ সম্পন্ন হয় তাকে এক জুল বলে।
:- 1 জুল = 1 নিউটন × 1 মিটার।
তাৎপর্য : ধরা যাক 50J পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
এখন, 50J = 50 N x 1m = 1N × 50m = 5N × 10m ইত্যাদি।
সুতরাং, 50J কাজ সম্পাদন বলতে বুঝায় 50 N বল প্রয়োগ করে বলের দিকে 1 m সরণ ঘটান বা 1 N বল প্রয়োগ করে 50 m সরণ ঘটান; কিংবা 5N বল প্রয়োগ করে 10m সরণ ঘটান ইত্যাদি।
পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজ পরিমাপের জন্য ইলেকট্রন ভোল্ট (eV) নামে পরিচিত একটি সুবিধাজনক একক ব্যবহার করা হয়। এক ভোল্ট বিভব পার্থক্যে একটি ইলেকট্রনের অর্জিত শক্তিই এক ইলেকট্রন ভোল্ট ।
1eV = 1.6 x 10-19 জুল।
বিদ্যুৎবিজ্ঞানে কাজের আর একটি ব্যবহারিক একক আছে। এর নাম কিলোওয়াট-ঘণ্টা (K. W. H.)।
এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোন উৎস এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে তাকে এক কিলোওয়াট-ঘণ্টা বলে।
কাজের মাত্রা সমীকরণ :
কাজের মাত্রা সমীকরণ : [W] = [বল ] x [সরণ] = [MLT-2] [L] = [ML2T-2]।
(১) মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ‘h’ উচ্চতা হতে ফেলা হল।
কৃত কাজ = বল x সরণ
বা, W= F × h=mgh [:- F = mg]
বা, W = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ × উচ্চতা
অভিকর্ষ বলের দিক নিচের দিকে এবং এক্ষেত্রে সরণ ও নিচের দিকে। অর্থাৎ, বল ও সরণ একই দিকে হওয়ায় কাজ ধনাত্মক।
(২) ‘m’ ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে ‘h’ উচ্চতা উপরে উঠালে
কৃত কাজ = ভর x অভিকর্ষীয় ত্বরণ x উচ্চতা [বা, W= mgh]
এক্ষেত্রে বল ও সরণ বিপরীত দিকে হওয়ায় এই কাজ ঋণাত্মক।
(৩) মনে করি 'm' ভরবিশিষ্ট একটি বস্তু কোন একটি মসৃণ নততল বেয়ে A হতে B-তে সরে এল। যদি g অভিকর্ষীয় ত্বরণ হয়, তবে অভিকর্ষ বল mg বস্তুটিকে খাড়াভাবে নিচের দিকে টানবে।
ধরি সরণের অভিমুখ এবং অভিকর্ষ বলের অভিমুখের মধ্যে ও কোণ আছে এবং AB = s
অভিকর্ষ বল mg-এর দিকে সরণের অংশ = s cos
যদি তল না থাকত তবে বস্তুটি যে সময়ে A হতে B-তে যায়, সে সময়ে তা AC = h দূরত্ব নিচে নামত ।
h = s cos
কৃত কাজ, W=mgs cos বা, W=mgh
তলটি অনুভূমিকের সাথে x কোণে অবস্থান করলে, = ( 90° – )
গ্রহ-নক্ষত্রের প্রকৃতি, স্বরুপ, গতিবিধি ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞানীদের অপরিসীম কৌতূহল ছিল। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্র (Tycho Brahe), জোহান্স কেপলার (Johannes Kepler) গ্রহ, নক্ষত্রের গতিবিধি সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। কেপলার প্রথম উপল... ্ধি করেন যে গ্রহগুলো কোন এক বলের প্রভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে অবিরত ঘুরছে। কিন্তু কি ধরনের বল ক্রিয়াশীল তা সঠিকভাবে বোঝাতে সমর্থ হননি। 1681 খ্রিস্টাব্দে মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন (Sir Isaac Newton) প্রথম “মহাকর্ষ সূত্র' আবিষ্কার করে এ সমস্যার সমাধান করেন। কথিত আছে, নিউটন তাঁর গৃহ-সংলগ্ন বাগানে একটি আপেল গাছের নিচে বসে বই পড়ছিলেন। এমন সময় একটি আপেল তাঁর নিকটে মাটিতে পড়ে। তিনি ভাবলেন গাছের উপরে ফাঁকা, নিচে ফাঁকা, ডানে ফাঁকা এবং বামেও ফাঁকা। আপেল ফল মাটিতে পড়ল কেন ? এই 'কেন' এর উদ্ঘাটন করতে গিয়ে তিনি মহাকর্ষ (Gravitation) এবং অভিকর্ষ (Gravity) আবিষ্কার করেন এবং সূর্যের চারদিকে গ্রহ-উপগ্রহের আবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করেন। এ অধ্যায়ে আমরা মহাকর্ষ, অভিকর্ষ, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র, অভিকর্ষজ ত্বরণ, মুক্তি বেগ, কেপলারের সূত্র, গ্রহের গতি ইত্যাদি আলোচনা করব।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন আবিষ্কার করেন যে এ মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তু বা বস্তু কণার মধ্যে একটি পারস্পরিক আকর্ষণ রয়েছে। দুটি বস্তু বা বস্তুকণার মধ্যকার এই পারস্পরিক আকর্ষণ বলকে কখনও মহাকর্ষ আবার কখনও অভিকর্ষ বলা হয়।
এ দুটি বলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ কি ? এদের সংজ্ঞা নিম্নে দেয়া হল :
সূর্য এবং চন্দ্রের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলের নাম মহাকর্ষ, অপর পক্ষে পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলই অভিকর্ষ। আরও সোজা ভাষায় বলা যায় পৃথিবী এবং আম গাছের একটি আমের মধ্যকার যে আকর্ষণ বল তা অভিকর্ষ। কিন্তু একই আম গাছের দুটি আমের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ বলের নাম মহাকর্ষ।
পদার্থের কিছু সাধারণ ধর্ম রয়েছে যা পদার্থের তিনটি অবস্থাতেই পরিলক্ষিত হয়। এ রকম একটি ধর্ম হলো স্থিতিস্থাপকতা। যেসব পদার্থ প্রবাহিত হয় এদের বলা হয় প্রবাহী পদার্থ বা ফ্লুয়িড। তরল পদার্থ ও গ্যাস হলো ফ্লুয়িড। এ ছাড়া প্রবাহী পদার্থের আরও কিছু ধর্ম আছে, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তরল পদার্থের পৃষ্ঠট... ন ও সান্দ্রতা। এ অধ্যায়ে আমরা আন্তঃআণবিক আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল, পদার্থের তিন অবস্থা, পদার্থের বন্ধন, স্থিতিস্থাপকতা, পৃষ্ঠটান ও সান্দ্রতা নিয়ে আলোচনা করবো ।
কোনো ঘটনা, কোনো রাশি বা কোনো অপেক্ষকের (function) বা কোনো কিছুর যদি বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটে তবে তাকে আমরা বলি পর্যাবৃত্তিক ঘটনা বা রাশি বা অপেক্ষক। যেমন, প্রতি বছর ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করি, প্রতি বছর ১ বৈশাখ আমাদের বাংলা নববর্ষ। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকে, ঘড়ির একটা কাঁ... া নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি নির্দিষ্ট দাগ অতিক্রম করে, সাইন (sine) বা কোসাইন (cosine) ফাংশনগুলো 360° পরপর একই মান গ্রহণ করে। পর্যাবৃত্তি দু'রকমের হতে পারে স্থানিক পর্যাবৃত্তি এবং কালিক পর্যাবৃত্তি।
সংজ্ঞা : কোনো বস্তুর গতি যদি এমনভাবে পুনরাবৃত্তি হয় যে নির্দিষ্ট সময় পরপর কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে একই দিক থেকে অতিক্রম করে তবে তাকে বলে স্থানিক পর্যাবৃত্তি। ঘড়ির কোনো কাঁটার গতি, সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলোর গতি, একটি উল্লম্ব স্প্রিং এর তরঙ্গের উপরিস্থ কোনো কণার গতি ইত্যাদি স্থানিক পর্যাবৃত্তির উদাহরণ ।
সংজ্ঞা : কোনো রাশি বা ফাংশনের মান যদি এমন হয় যে নির্দিষ্ট সময় পরপর সেটি একই মান গ্রহণ করে যেমন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় বিজয় দিবস, প্রতি এক বছর পর পর এর পুনরাবৃত্তি ঘটে; আমরা বাড়িঘরে যে তবে তাকে বলে কালিক পর্যাবৃত্তি।
তড়িৎ প্রবাহ ব্যবহার করি সেটি হচ্ছে পর্যাবৃত্ত বা দিক পরিবর্তী প্রবাহ (alternating current বা AC)। এ প্রবাহ আমাদের দেশে প্রতি 0.02s পরপর একই মান গ্রহণ করে। এ অধ্যায়ে এবং এ বই-এর অন্যত্র অন্যভাবে উল্লেখ না করলে পর্যাবৃত্তি বলতেই আমরা স্থানিক পর্যাবৃত্তিকে বোঝাবো।
তরঙ্গ ও তরঙ্গ-গতি পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব ধরনের তরঙ্গের ক্ষেত্রে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। প্রথমত, তরঙ্গ চলনক্ষম আলোড়ন বা আন্দোলন এবং দ্বিতীয়ত তরঙ্গ একস্থান হতে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালন করে। আমরা যে শব্দ শুনি বা আলো দেখি তা তরঙ্গ আকারে ... ৎস থেকে আমাদের কাছে পৌঁছায়। কাজেই তরঙ্গ প্রকৃতি এবং তরঙ্গ গতি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই অধ্যায়ে তরঙ্গের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং শব্দতরঙ্গ আলোচনা করব।
একটি পুকুরের স্থির পানিতে ঢিল ছুড়লে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ঢিলটি যে বিন্দুতে পানিতে প্রবেশ করে সে বিন্দুকে কেন্দ্র করে পানির উপরিপৃষ্ঠে সারি সারি তরঙ্গ ক্রমবর্ধমান বৃত্তাকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পানির উপরিতলে একস্থান হতে অন্যস্থানে শক্তির সঞ্চালন ঘটে। পানির উপরে একটি শোলা বা পাটকাঠি থাকলে দেখা যাবে যে শোলা বা কাঠিটি একই স্থানে থেকে উপরে-নিচে উঠানামা করছে। এর অর্থ হল মাধ্যমের কণাগুলো স্থান ত্যাগ করে না, যদি করত তবে শোনা বা কাঠিটি সরে পাড়ে চলে আসত। মাধ্যমের কণাগুলোর মধ্যে সংযুক্তি বলের কারণে এগুলো স্থান ত্যাগ করে না, তবে আন্দোলনের দ্বারা পার্শ্ববর্তী কণাগুলোতে শক্তি সঞ্চালিত হয় এবং পাশের কণাগুলো আন্দোলিত হয়। এভাবে শক্তি তরঙ্গাকারে একস্থান হতে অন্যস্থানে সঞ্চালিত হয়। সুতরাং, তরঙ্গের নিম্নরূপ সংজ্ঞা দেয়া যায় :
যে সব তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয় সেগুলোকে যান্ত্রিক তরঙ্গ বলে। শব্দতরঙ্গ, টানা তারে সৃষ্ট তুরঙ্গ ইত্যাদি যান্ত্রিক তরঙ্গের উদাহরণ।
মাধ্যম ছাড়াও তরঙ্গ সঞ্চালিত হতে পারে। সূর্য থেকে আমরা যে আলো পাই তা কোন মাধ্যম ছাড়াই চলাচল করে। এদেরকে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ বলে। তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের পর্যাবৃত্ত গতি পরিবর্তনের ফলে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের উৎপত্তি হয়।