অনুকরণ (Imprinting)
অনুকরণ অন্যতম শিক্ষণ আচরণ। এটি হচ্ছে প্রাণীর পরিস্ফুটনকালে তরুণ প্রাণীতে অত্যন্ত সংবেদনশীল ধাপে (critical period) একটি নির্দিষ্ট উদ্দীপনার প্রতি সৃষ্ট স্থায়ী আচরণ। ডিম ফুটে সদ্যসৃষ্ট হাঁসশাবক নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে হাটতে সক্ষম হলেই নীড় ছেড়ে কেবল মাকে অনুকরণ করে দূরে চলে যায়, অন্য কাউকে অনুসরণ করে না। কিন্তু ডিম যদি ইনক্যুবেটারে ফুটানো হয় কিংবা ডিমফুটে হাঁসশাবক বের হওয়ার পরপরই মা হাঁসকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে শাবকগুলো চোখ মেলে প্রথম যে বড় সচল বস্তু দেখবে তাকেই অনুসরণ করবে। তরুণ বয়সেও ওই সচল বস্তুকে অনুসরণ করে চলবে। তখন আসল মাকে ফিরিয়ে দিলেও 'নকল' মা-ই ওদের কাছে আসল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ নকল মা-ই হাঁস শাবকদের কাছে আসল মা হিসেবে স্থায়ীভাবে মুদ্রিত হয়ে যাবে। এভাবে পরিস্ফুটনের মুহূর্তে কোনো সচল বস্তু, ব্যক্তি কিংবা গন্ধ ও উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করতে পারে। পরিস্ফুটনকালে সংবেদনশীল মুহূর্ত প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এ সময়কাল জন্মের কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন বা মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে। তবে জন্মের পর পাখি বা স্তন্যপায়ীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালনের উদ্যোগ নিলে পোষ মানানো সহজ হয়। সার্কাসে পশু নিয়ে খেলা দেখানোর প্রাণিগুলোকে একারণে খুব কম বয়সে আসল মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ।শুধু সচল বড় বস্তুই নয়, আগেই বলা হয়েছে যে, গায়ের গন্ধও শাবকরা অনুসরণ করে। চিকা (shrew) নামে পরিচিত গন্ধ মুষিকের শাবকেরা মায়ের গায়ের গন্ধে উদ্দীপ্ত হয়। বাচ্চাসহ কোথাও যেতে চাইলে মায়ের গা থেকে ক্ষরিত গন্ধে শাবকরা একজন আরেকজনের শরীর কামড়ে ধরে রেলের বগির মতো পরস্পরের পেছনে থেকে অগ্রসর হয়, মায়ের অবস্থান থাকে একেবারে সামনে। গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মুষিকশাবকেরা গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ৫-৬ দিন বয়সি শাবকদের যদি অন্য প্রজাতির মা-মুষিককে বিকল্প হিসেবে দেওয়া হয় তাহলে 'বিকল্প' বা 'নকল' মাকেই আসল মনে করে দিন কাটায়। দিন ১৫ পর যদি শাবকগুলোর কাছে আসল মাকে ফেরত দেওয়া হয় তাহলেও আর গৃহীত হয় না। কিন্তু বিকল্প মায়ের গায়ের গন্ধে মাখানো কাপড়ের টুকরাকেও তারা অনুসরণ করতে রাজী থাকে।