৬.১ চিত্রে M1M2 একটি সমতল দর্পণ। একটি আলোক রশ্মি P বিন্দু থেকে PO পথে এসে দর্পণের O বিন্দু হতে OQ পথে প্রতিফলিত হয়ে Q বিন্দুতে পৌঁছাল। P ও Q বিন্দু থেকে দর্পণের উপর PM1 ও QM2 লম্ব টানা হলো। আপতন বিন্দু O তে NO লম্ব টানা হয়। ধরা যাক, PM1 = h1 এবং QM2 = h2, OM1 = x, M1M2 = d.
.. OM2 = (d - x )
সুতরাং এখন ধরা যাক, P বিন্দু থেকে POQ পথে Q বিন্দুতে আসতে আলোক রশ্মির প্রয়োজনীয় সময় t এবং আলোর বেগ c। আলোক রশ্মিটির অতিক্রান্ত পথ l = PO + OQ = l1+ l2 এখন, ফার্মাটের নীতি অনুসারে, দর্পণ তলে O বিন্দুটির অবস্থান এমন হবে যেন P বিন্দু থেকে Q বিন্দুতে পৌঁছাতে আলোর ভ্রমণকাল সর্বাপেক্ষা কম বা বেশি অথবা স্থির থাকবে। অন্য কথায়, আলোক রশ্মির মোট পথ l সর্বাপেক্ষা কম বা সর্বাপেক্ষা বেশি অথবা স্থির থাকবে। সকল ক্ষেত্রেই ক্যালকুলাস থেকে এই শর্তের গাণিতিক রূপ আমরা পাই, অতএব, অর্থাৎ আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান। এটাই প্রতিফলনের দ্বিতীয় সূত্র। আবার আলোকপথ POQ-এর মান সর্বাপেক্ষা কম হবে যখন PO এবং OQ সমেত তলটি M1M2 তলের উপর লম্ব হবে। পুনরায় যেহেতু অঙ্কন অনুসারে ON রেখাটি M1 M2 তলের উপর অভিলম্ব, সুতরাং আপতিত রশ্মি PO, প্রতিফলিত রশ্মি oQ এবং আপতন বিন্দু O-তে M1M2 তলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব NO একই সমতলে থাকবে। এটাই প্রতিফলনের প্রথম সূত্র। সুতরাং ফার্মাটের ন্যূনতম পথ বা ন্যূনতম সময়ের নীতি থেকে আলোর প্রতিফলনের সূত্রগুলো প্রতিপাদিত হলো। ৬.২ চিত্রে XY হচ্ছে দুটি প্রতিসারক মাধ্যমের বিভেদ তল। একটি আলোক রশ্মি প্রথম মাধ্যমের P বিন্দু থেকে PO পথে এসে বিভেদতলের O বিন্দুতে আপতিত হলো এবং সেখান থেকে O2 পথে দ্বিতীয় মাধ্যমের Q বিন্দুতে পৌঁছাল NON' হলো O বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব। সুতরাং আপতন কোণ PON = i এবং প্রতিসরণ কোণ N' OQ = r। P ও Q বিন্দু হতে বিভেদতলের উপর যথাক্রমে PR ও QS লম্ব টানা হলো। ধরা যাক, PR = h1, QS =h2, OR =x, RS = d এবং OS = ( d- x ) । প্রথম মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক এবং দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক | প্রথম মাধ্যমে আলোর বেগ C1 দ্বিতীয় মাধ্যমে আলোর বেগ C2 এবং শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ C0। প্রথম মাধ্যমে আলোক রশ্মির জ্যামিতিক পথ, PO = l1 এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে জ্যামিতিক পথ, OQ = l2 l সুতরাং মোট জ্যামিতিক পথ POQ = l1 + l2 এবং মোট আলোক পথ, =l1 + |2 অতএব, আলোকরশ্মি P বিন্দু থেকে O বিন্দুতে পৌঁছতে প্রয়োজনীয় অতএব, . (6.2) সুতরাং (6.2) সমীকরণ দাঁড়ায়, ..(6.3) এটাই প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্র বা স্নেলের সূত্র । ফার্মাটের নীতি অনুসারে আলোক পথ তখনই সর্বনিম্ন হবে যখন PO এবং OQ রশ্মিম্বর একই সমতলে থাকবে এবং যা XY তলের উপর লম্ব হবে। যেহেতু XY তলের আপতন বিন্দু O-তে অঙ্কিত NON' রেখা XY তলের উপর অভিলম্ব। সুতরাং আপতিত PO রশ্মি, প্রতিসৃত o রশ্মি ও আপতন বিন্দু O-তে অঙ্কিত NON' অভিলম্ব একই সমতলে থাকে আর এটাই প্রতিসরণের প্রথম সূত্র । অতএব ফার্মাটের ন্যূনতম সময় বা ন্যূনতম পথ থেকে প্রতিসরণের সূত্রগুলো প্রতিপাদিত হলো।
ফার্মাটের নীতি ও আলোর প্রতিসরণ Fermat's Principle and Refraction of Light
৬.৪ চিত্রে ক ও খ দুটি গোলীয় লেন্স। এই অধ্যায়ে আমরা গোলীয় লেন্স নিয়ে আলোচনা করব। লেন্স সাধারণত কাচ, কোয়ার্টজ, প্লাস্টিক ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হয়। লেন্সের পৃষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে একটি সমতল ও একটি গোলক পৃষ্ঠের অংশ হতে পারে অথবা দুটিই গোলকের অংশ হতে পারে ।
স্থূলমধ্য বা উত্তল বা অভিসারী লেন্স : যে লেন্সের মধ্যভাগ মোটা ও প্রাপ্ত সরু তাকে স্কুলমধ্য লেন্স বলে। স্কুল মধ্য লেন্সে আলোক রশ্মি উত্তল পৃষ্ঠে আপতিত হয় বলে তাকে উত্তল লেন্স বলে। এই লেন্স সাধারণত এক গুচ্ছ আলোক রশ্মিকে অভিসারী করে থাকে বলে তাকে অভিসারী লেন্সও বলা হয় [চিত্র ৬.৪ (ক)]।
ক্ষীণমধ্য বা অবতল বা অপসারী লেন্স: যে লেন্সের মধ্যভাগ সরু ও প্রাপ্তের দিক মোটা তাকে ক্ষীণমধ্য লেন্স বলে। ক্ষীণমধ্য লেন্সে আলোক রশ্মি অবতল পৃষ্ঠে আপতিত হয় বলে তাকে অবতল লেন্স বলে। এই লেন্স সাধারণত এক গুচ্ছ আলোক রশ্মিকে অপসারী করে থাকে বলে তাকে অপসারী লেন্সও বলা হয়। চিত্র ৬.৪ (খ) ]। তলের আকৃতির উপর নির্ভর করে প্রত্যেক প্রকার লেন্স আবার তিন ধরনের হতে পারে।
যে লেন্সের দুটি তলই উত্তল তাকে উভোত্তল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৫ (ক)]।
যে লেন্সের একটি তল সমতল ও অপরটি উত্তল তাকে সমতলোত্তল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৫ (খ)]।
যে উত্তল লেন্সের একটি তল উত্তল ও অপরটি অবতল তাকে অবতলোত্তল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৫ (গ)]।
যে লেন্সের দুই তলই অবতল তাকে উভাবতল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৬ (ক)]।
২. সমতলাতল লেন্স (Plano concave lens) : যে লেন্সের একটি তল সমতল ও অপরটি অবতল তাকে সমতলাবতল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৬ (খ)]।
৩. উত্তলাতল লেন্স (Convexo-concave lens) : যে অবতল লেন্সের একটি তল অবতল ও অপরটি উত্তল তাকে উত্তলাবতল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৬ (গ)]।
যে পৃষ্ঠ দিয়ে আলোক রশ্মি লেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে অর্থাৎ লেন্সের যে পৃষ্ঠে আলোক রশ্মি আপতিত হয় তাকে লেন্সের প্রথম পৃষ্ঠ বলে। আর যে পৃষ্ঠ থেকে আলোক রশ্মি বেরিয়ে যায় তাকে লেন্সের দ্বিতীয় পৃষ্ঠ বলে। যে লেন্সে দুই পৃষ্ঠের মধ্যবর্তী দূরত্ব খুব কম তাকে সরু লেন্স বলে। ৬.৭ চিত্রে 1 ও 2 যথাক্রমে লেন্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠ।
লেন্সের সংজ্ঞা থেকে দেখা যায় যে, এর প্রত্যেকটি পৃষ্ঠ এক একটি গোলকের অংশ। সুতরাং লেন্সের বক্রতার কেন্দ্র দুটি। লেন্সের কোনো পৃষ্ঠ যে গোলকের অংশ সেই গোলকের কেন্দ্রকে লেন্সের ঐ পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্র বলে। ৬.৭ চিত্রে C1 ও C2 লেন্সের বক্রতার কেন্দ্র।
৩. বক্রতার ব্যাসার্ধ (Radius of curvature) : লেন্সের বক্রতার ব্যাসার্ধ দুটি। লেন্সের কোনো পৃষ্ঠ যে গোলকের অংশ সেই গোলকের ব্যাসার্ধকে লেন্সের ঐ পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ বলে। ৬.৭ চিত্রে r1 ও r2 যথাক্রমে লেন্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ।
৪. প্রধান অক্ষ (Principal axis) : লেন্সের উভয় পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে গমনকারী সরলরেখাকে প্রধান অক্ষ বলে। লেন্সের একটি পৃষ্ঠ সমতল ও অপর পৃষ্ঠ গোলীয় হলে গোলীয় পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্র থেকে সমতল পৃষ্ঠের উপর অভিলম্বই হবে লেন্সের প্রধান অক্ষ । ৬.৭ চিত্র C1 ও C2 সরলরেখা লেন্সের প্রধান অক্ষ ।
৫. প্রধান ফোকাস (Principal focus) : লেন্সের দুটি প্রধান ফোকাস থাকে; যথা-
ক. প্রথম প্রধান ফোকাস (First principal focus) ও
খ. দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস (Second principal focus)।
উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে প্রধান অক্ষের উপরস্থ যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে নিঃসৃত অপসারী রশ্মিগুচ্ছ লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়ে চলে যায় সেই বিন্দুকেই উত্তল লেন্সের প্রথম-প্রধান ফোকাস বলে [চিত্র ৬.৮ (ক)] । অবতল লেন্সের ক্ষেত্রে প্রধান অক্ষের উপরস্থ যে নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখী অভিসারী রশ্মিগুচ্ছ লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়ে চলে যায় তাকে অবতল লেন্সের প্রথম প্রধান ফোকাস বলে [চিত্র ৬.৮ (খ)]।
প্রধান অক্ষের সমান্তরাল একগুচ্ছ আলোক রশ্মি উত্তল লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয় [চিত্র ৬.৯ (ক)]। অপরপক্ষে অবতল লেন্সে দেখা যায় প্রতিসরণের উপর রশ্মিগুলো এমনভাবে নির্গত হয় যে এগুলোকে পেছন দিকে বাড়ালে প্রধান অক্ষকে একটি বিন্দুতে ছেদ করে, অর্থাৎ প্রতিসরিত রশ্মিগুচ্ছ একটি বিন্দু থেকে নিঃসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়। এই বিন্দুই হচ্ছে দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস [চিত্র ৬.৯ (খ)]।
লেন্সের প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপর যে বিন্দুতে মিলিত হয় (উত্তল লেলে) বা যে বিন্দু থেকে নিঃসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সে) সেই বিন্দুকে লেলের দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস বলে । ৬.৯ চিত্রে F2 দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস ।
লেন্সে বিম্ব গঠনের জন্য দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বলে লেদের প্রধান ফোকাস বলতে দ্বিতীয় প্রধান ফোকাসকেই বোঝায়।
কোনো আলোক রশ্মি যদি কোনো লেন্সের এক পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে নির্গত হওয়ার সময় আপতিত রশ্মির সমান্তরালভাবে নির্গত হয় তাহলে সেই রশ্মি লেলের প্রধান অক্ষের উপর যে বিন্দু দিয়ে যায় সেই বিন্দুকে লেলের আলোক কেন্দ্র বলে। অর্থাৎ লেন্সের প্রধান অক্ষের উপরস্থ যে বিন্দুর মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি গেলে প্রতিসরণের ফলে এর দিকের কোনো পরিবর্তন হয় না সেই বিন্দুকে লেন্সের আলোক কেন্দ্র বলে।
৬.১০ চিত্রে S'Q রশ্মি লেন্সে আপতিত হয়ে RS পথে বেরিয়ে গেলে QR রশ্মি প্রধান অক্ষকে O বিন্দুতে ছেদ করে। O লেন্সের আলোক কেন্দ্র। সরু লেন্সের ক্ষেত্রে S'Q, QR ও RS একই সরলরেখায় থাকে। লেন্সের আকৃতির উপর নির্ভর করে আলোক কেন্দ্র লেন্সের ভেতরে বা বাইরে হতে পারে।
৭. ফোকাস দূরত্ব (Focal length) : আলোক কেন্দ্র থেকে প্রধান ফোকাস বা দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস পর্যন্ত দূরত্বকে লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বলে। ফোকাস দূরত্বকে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আলোক কেন্দ্র থেকে প্রথম প্রধান ফোকাসের দূরত্বকে প্রথম ফোকাস দূরত্ব f1 আর দ্বিতীয় প্রধান ফোকাসের দূরত্বকে দ্বিতীয় ফোকাস দূরত্ব f2 বলে। লেন্সের চারদিকে একই সমসত্ত্ব মাধ্যম থাকলে এই দুই ফোকাস দূরত্বের মান সমান হয়।
আরও দেখুন...