প্রাথমিক তথ্য- বেগুন গোত্রের সবজি চাষের জন্য মাটি উর্বর ও সুনিষ্কাশিত হওয়া প্রয়োজন। সব ধরনের মাটিতে চাষ করা গেলেও দোআশ মাটিতে ফলন বেশি হয়। বেগুন গোত্রের সবজিগুলো কিছুটা অম্ল মাটিতে ভালো হয় । বেগুন কিছুটা উষ্ণ জলবায়ুর ফসল। কিন্তু টমেটো ও আলু ঠান্ডা জলবায়ুর ফসল। বেগুন গোত্রের সবজিতে পানিবদ্ধতা হলে বিশেষত বেগুন ও টমেটো খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বেগুন ও টমেটোর বীজ বীজতলায় বপন করে চারা তৈরির পর মূল মাঠে চারা রোপণ করতে হয়। তবে চারা গজানোর পর ২-৩ পাতা বিশিষ্ট হলে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করে চারাকে কষ্ট সহিষ্ণ করে নিলে ভালো হয়। চারা অবশ্যই বিকালে লাগায়ে হালকা সেচ দিতে হয় এবং রোপণ পরবর্তী প্রায় ১ সপ্তাহ ছায়ার ব্যবস্থা করা হলে চারা দ্রুত লেগে যায়। ৩৫-৪০ দিন বয়সে চারার ৫/৬টি পাতা হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। মাটির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে রোপণ দূরত্ব কম বেশি করতে হয়। চারা রোপণ পরবর্তী দুই সারির মাঝখান হতে দফায় দফায় মাটি তুলে দিয়ে চারার সারি উঁচু করতে হবে এবং মাঝখান দিয়ে পানি সেচ ও নিকাশ করা যাবে। চারা লাগানোর পর হতে ২-৩ কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতিবার সার প্রয়োগের সময় মাটি আগলা করে সার মাটিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হয়। এতে আগাছা দমন হয়, গাছের শেকড়ে আলাবাতাস লাগে, সেচ নিকাশের নালা উপযুক্ত গভীর হয়। চারা রোপণের পর বেগুন প্রায় ৯০ দিনে, টমেটো ৮০ দিনে এবং আলু ১০০ দিনে সংগ্রহ করা যায়। বেগুন সংগ্রহে বিলম্ব হলে খাবার অনুপযোগী হয়ে যায় । অথচ টমেটো ও আলু পরিপুষ্ট হওয়ার পরও কিছুটা বিলম্বে সংগ্রহ করলে কোন ক্ষতি হয় না ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। জমি, ২। লাঙ্গল, ৩। কোঁদাল, ৪। আঁচড়া, ৫। মই, ৬। টেপ, ৭। সুতলি, ৮। সার, ৯। ঝুড়ি, ১০ নিড়ানি, ১১। কাঠি, ১২। সবজি রাখার পাত্র।
কাজের ধাপ
১. উঁচু, রৌদ্রযুক্ত, উর্বর ও দোঁআশ মাটির জমি নির্বাচন করে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে।
২. জমি একদিকে সামান্য ঢালু করে নিলে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হবে।
৩. বেগুন, টমেটো ও আলু রোপণের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে লাইন টেনে লাইন/সারিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা/আলু। রোপণ করতে হবে। তত্ত্বীয় অংশে রোপণ/বপন দূরত্ব উল্লেখ আছে।
8. জমি তৈরির সময় বিভিন্ন প্রকার সারের মধ্যে মৌল (প্রাথমিক) সার সম্পূর্ণ জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। তত্ত্বীয় অংশে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি উল্লেখ আছে।
৫. উপরি প্রয়োগের সার ধাপে ধাপে চারার সারির পাশ দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে কোদাল বা নিড়ানির সাহায্যে মাটি নড়াচাড়া করে মিশিয়ে দিতে হবে।
৬. মাটিতে সার মেশানোর পর কোদাল দিয়ে মাটি হালকাভাবে সারিতে তুলে দিতে হবে এবং এতে দুই সারির মাঝখান দিয়ে নালা তৈরি হবে।
৭. টমেটো গাছের জন্য ইংরেজি 'এ' অক্ষরের ন্যায় করে বাঁশ দিয়ে বাউনি করে দিতে হবে।
৮. খারিফ মৌসুমে বেগুনের জমি হতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. রবি মৌসুমে সবগুলো সবজির জমিতেই শুষ্ক অবস্থায় ১০ দিন পর পর প্রয়োজনে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. উপরি প্রয়োগের সার দেয়ার পর পরই হালকা সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা দ্রুত শুরু হয় সেজন্য সেচ দিতে হবে।
১১. বেগুন প্রায় ৮০-৯০ দিন হতে, টমেটো ৭০-৮০ দিন হতে এবং আলু আগাম ও স্বল্প মেয়াদি জাত ব্যতিত অন্যান্য জাতগুলো ১০০-১২০ দিন হতে ফল তোলার উপযোগী হয়।
১২. সবজির স্থায়ীত্ব অনেকটা নির্ভর করে পরিপক্কতার ওপর। তাই টমেটোর রঙ হালকা হলুদাভ লালচে দেখার সাথে সাথেই তুলতে হবে। বেগুন কচি অবস্থায় গুণগত মান ভাল থাকে তাই কচি অবস্থায় তুলতে হবে।
১৩. পরিপুষ্ট ফল রং ধরার আগে সংগ্রহ করে পরিষ্কার ও বাছাই করে টমেটো ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ৮-১০ দিন রাখা যায় ।
১৪. আলু ঘরে মাচায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৩-৪ মাস এবং হিমাগারে ৩.৩°-৩.৪° সে. তাপমাত্রা ও ৮০-৯০% স্বাভাবিক পরিবেশে ভালো থাকে । আদ্রতায় ৭-৮ মাস ভালো রাখা যাবে। আলুর জন্য প্রতি ৩ টনে ১ কেজি সেভিন পাউডার ছিটিয়ে দিলে আলু
১৫. সমস্ত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখতে হবে।
আরও দেখুন...