টুলস: কোনো জব বা ওয়ার্কপিসকে প্রয়োজন অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত আকার, আকৃতি এবং মসৃণতায় পরিবর্তন করার জন্য যান্ত্রিক সুবিধা সম্বলিত যে ডিভাইসসমূহ ব্যবহার করা হয় তাদেরকে টুলস বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায় টুলস হলো এক প্রকার যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের সমষ্টি যা কোনো ধাতু বা ওয়ার্কপিস থেকে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ধাতু কেটে বা ক্ষয় করে নির্দিষ্ট আকার, আকৃতি এবং মসৃণতা দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ টুলস হলো এক প্রকার হাতিয়ার যা ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ সহজ সাধ্য হয়।
মেকানিক্স কাজে যেসব টুলস ও ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহৃত হয় তাদের কাজের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাদেরকে প্রধানত ৫ (পাঁচ) ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। যথা-
১. মার্কিং বা লেআউট টুলস (Marking or Layout Tools)
২. কাটিং টুলস (Cutting Tools)
৩. আনুষঙ্গিক হ্যান্ড টুলস (Related Hand Tools)
৪. পাওয়ার টুলস (Power Tools)
৫. মেশিন টুলস (Machine Tools)
২.৪.১. মার্কিং বা লেআউট টুলস (Marking or Layout Tools)
কাজ আরম্ভ করার পূর্বে অথবা কাজের সময় ড্রয়িং অনুযায়ী ধাতুখণ্ডের উপরিভাগে যেসকল টুলস দ্বারা মার্কিং করা হয় বা দাগ কেটে চিহ্ন দেওয়া হয় বা চিহ্নিত করার কাজে সাহায্য করে, সেসব টুলসকে মার্কিং বালে-আউট টুলস বলা হয়। প্রদত্ত ছয়িং অনুসারে কার্যবস্তুর উপরিতলে ড্রয়িং বা নকশা অংকন করাকে মার্কিং অথবা লে-আউট বলা হয়। কাগজের উপর পেন্সিল ব্যবহার করে যে নিয়মে মেকানিক্যাল ড্রয়িং করা হয় অনুরূপ নিয়মে মার্কিং অথবা লেআউট টুলস ব্যবহার করে কার্যবস্তু তৈরি করার জন্য ওয়ার্কপিসের উপর মার্কিং অথবা লেজাউট করা হয়। বেঞ্চওয়ার্ক, পিটমেটাল ওয়ার্ক, ড্রিলিং এর ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য লে আউট ওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভিন্ন প্রকার মার্কিং অথবা লেআউট টুলসমূহ হলো-
• সেন্টার পাঞ্চ (Centre Punch): একটি বিন্দু চিহ্নিত করতে একটি সেন্টার পাঞ্চ ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত গর্ত বা ছিল করার সময় একটি পর্ভের কেন্দ্র চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। সেন্টার পাঞ্চ এর পয়েন্ট অ্যাঙ্গেল ২০°।
• ডট পাঙ্ক (Dot Punch): ডটপাঞ্চ, সেন্টার পাঞ্চের ন্যায় কাজ করে কিন্তু ভটপাঞ্চের পয়েন্ট অ্যাঙ্গেল ৬০° হয়ে থাকে।
• স্কাইবার (Scrlber): ফাইবার হলো একটি হ্যান্ড টুল যা দিয়ে খাত কাজে মেশিনিং বা ওয়েল্ডিং বা কাটিং করার আগে ওয়ার্কপিলে লাইন চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফাইবার ব্যবহারের প্রক্রিয়াটিকে ফাইবিং বলা হয় এবং এটি মার্কিং করার একটি অংশ।
• হারমাফ্রোডাইট ক্যালিপার্স (Harmafrodite Calipers ) : একটি হারমাফ্রোডাইট ক্যালিপারের একটি পা ভিতরের দিকে বাঁকানো থাকে এবং একটি সোজা পা একটি ধারালো বিন্দুতে শেষ হয় এই ধরনের ক্যালিপার একটি সমতল বা বাঁকা পৃষ্ঠ থেকে একটি নির্দিষ্ট দুরত্বে লাইন স্কাইব করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• ইনসাইড ক্যালিপার্স (Inside Calipers): ইনসাইড ক্যালিপার্স ভিতরের গর্ভের ব্যাস এবং পৃষ্ঠের মধ্যে দুরত্ব পরিমাণ করে।
• আউটসাইড ক্যালিপার্স (Outside Calipers): আউটসাইড ক্যালিপার্স বস্তুর বেধ এবং বাইরের ব্যাস পরিমাপ করে।
• ডিভাইডার (Divider): এটি দুই পা বিশিষ্ট একটি পরোক্ষ পরীক্ষণ ও মাপন হ্যাটুন। এটিকে মার্কিং এর কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে হয়। ডিভাইডারের পা দুটি ক্রমশ সরু হয়ে প্রান্ত ভাগ সূঁচালো থাকে। এটির সাহায্যে স্টিল রুল থেকে মাথ ভোলা, বৃত্ত বা বৃত্তচাপ অংকন, দুইটি বিন্দু বা রেখার দুরত্ব নির্ণয় করা এবং রেখাকে বিভক্ত করা যায়।
• সারফেস পেজ (Surface Gauge): সারফেস পেজগুলি প্রাথমিকভাবে প্লাউড বেস থেকে রেফারেন্স পৃষ্ঠগুলিকে নির্ভুল উলম্ব বা আনুভুমিক পৃষ্ঠ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।
• সারফেস প্লেট (Surface Plate ): সারফেস গ্রেটের উপর সারফেস গেজ, মার্কিং ব্লক ইত্যাদি যন্ত্র রেখে বস্তুর উপরিভাগের সমতা পরীক্ষা করা যায়। তাছাড়া ওয়ার্কপিসকে সাধারণত সারফেস প্লেটের উপর রেখে মার্কিং করা হয়।
• ভার্নিয়ার হাইট পেজ (Vernier Height Gange): এটি একটি প্রত্যক্ষ, সুক্ষ্ম ও সরল উচ্চতা ও উলম্ব দূরত্ব মাপক যন্ত্র। মেশিনশনে ও মেটাল ওয়ার্কিংশপে জবের উপর লে- আউট ও মার্কিং করার জন্য বিশেষভাবে এটি ব্যবহৃত হয়। ভার্ণিয়ার হাইট পেজের গঠন ও কার্যপ্রণালী ভার্নিয়ার ক্যালিপার্সের মতই। তবে এটি উচ্চতা পরিমাপ করা বা উচ্চতা পরীক্ষা করা ছাড়াও সারফেস পেজের অনুরুপ মার্কিং করতে ব্যবহার করা হয়। এর প্রধান স্কেলের দন্ডটি খাড়াভাবে ৰেসেৱ উপর শক্ত করে আটকানো থাকে।
এ যন্ত্রে দু'টি 'জ' এর পরিবর্তে একটি 'জ' থাকে। এবং 'জ' এর সাথে একটি ধারালো ফাইবার ক্ষু-এর সাহায্যে জাবদ্ধ করা থাকে। ফাইবারের স্থলে রড সংযুক্ত করে এর সাহায্যে ডেপথ পেজের ন্যায় গভীরতাও মেপে নেওয়া যায়। এ ছাড়া ফাইবারের পরিবর্তে ডায়াল ইন্ডিকেটর সংযুক্ত করে আরও সূক্ষ্ম এবং সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়।
• ট্রাইস্কোয়ার (Tri-Square): ট্রাই স্কোয়ার এক প্রকার প্রত্যক্ষ কৌণিক মাপক যন্ত্র। এটি কোনো বস্তুর সন্নিহিত দু'টি তল পরস্পরের সাথে এক সমকোণে আছে কি না অথবা কোনো তলের উপরিভাগের সমতলতা পরীক্ষা করা এবং মার্কিং করার সময় সরলরেখা টানতে ব্যবহৃত হয়।
• কম্বিনেশন সেট (Combination Set): কম্বিনেশন সূক্ষ্মভাবে বস্তুর সমকোণ ও সমতলতা পরীক্ষা করা ছাড়াও এটি কোনো বস্তুর ওপর সুক্ষ্মভাবে সমান্তরাল সরলরেখা টানতে ব্যবহৃত হয়। ক্ষয়্যার হেডের সাহায্যে ৪৫° কোণে এবং ৯০° কোণে সরলরেখা টানা যায়।
• স্টিল রোল (Steel Rule) : মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপের কাজে বিভিন্ন মান গ্রহণে সবচেয়ে সরল ও সাধারণ মাপ যন্ত্র হলো প্লেইন স্টিল রুল বা সংক্ষেপে এটিকে স্টিল রুল ৰলা হয়। এটি সাধারণত ১৫ সে.মি. এবং ৩০ সে.মি. লম্বা হয়। এতে সর্বনিম্ন ০.৫ মি.মি. মাপ নেওয়া যায়। এটি স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি হয় এবং এর সাহায্যে জবের দৈৰ্ঘ্য, প্ৰন্থ, বেধ এবং উচ্চতার মাপ সরাসরি গ্রহণ করা যায়।
• প্যারালাল ক্যাম্প (Parallel Clamp): কাজ করার সময় যখন আন্যের সহায়তার প্রয়োজন হয় তখন প্যারালাল ক্যাম্প বন্ধু ক্লাম্প করার কাজে ব্যবহার করা হয়।
আরও দেখুন...