109 মিটারকে ন্যানোমিটার বলে এবং বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে 1 থেকে 100 ন্যানোমিটার আকৃতির কোনো কিছু তৈরি করা এবং ব্যবহার করাকে ন্যানোটেকনোলজি বলে। এই আকৃতির কোনো কিছু তৈরি করা হলে তাকে সাধারণভাবে ন্যানো-পার্টিকেল বলে। ক্ষুদ্র আকৃতির জন্য ন্যানো পার্টিকেলের পৃষ্ঠদেশের পরিমাণ তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি; সেজন্য রাসায়নিকভাবে অনেক বেশি ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, একটি দ্রব্যের বড় আকৃতিতে যে ধর্ম বা গুণাগুণ থাকে, ন্যানো পার্টিকেল হলে তার ভেতর কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাব দেখা যেতে শুরু করে বলে সেই ধৰ্ম বা গুণাগুন পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায় অনেক ধাতুর কাঠিন্য ন্যানো আকৃতিতে সাধারণ অবস্থা থেকে সাতগুণ বেশি হতে পারে। এই কারণে এই ন্যানো-পার্টিকেল নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে কৌতুহলী।
রসায়নবিদেরা অনেকদিন থেকে ন্যানো ব্যাসার্ধের পলিমার তৈরি করে আসছেন এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের চিপস তৈরি করার সময় প্রযুক্তিবিদেরা সেখানে ন্যানো আকৃতির ডিজাইন করে আসছেন, কিন্তু শুধু সাম্প্রতিক সময়ে ন্যানো পার্টিকেল তৈরি এবং ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় টুল তৈরি হয়েছে এবং ন্যানো পার্টিকেলের জগৎ সত্যিকার অর্থে উন্মুক্ত হয়েছে।
এ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বৃহৎ স্কেলে পণ্যোৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্য আকারে সুক্ষ্ম ও ছোট হলেও অত্যন্ত মজবুত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই ও হালকা হয়। “আগামী বিশ্ব হবে ন্যানোটেকনোলজির বিশ্ব, — এই প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে স্মার্ট ওষুধের মাধ্যমে প্রাণঘাতী ক্যান্সার ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ন্যানো রোবট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কার্যকরী ও সপ্তার শক্তি উৎপাদনসহ পানি ও বায়ুদূষণ কষানো সম্ভব হৰে মৰ্মে গবেষকগণ আমাদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। ন্যানো প্রযুক্তি দুটি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় :
(ক) ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ (Bottom Up) : এই পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুর আনবিক উপাদান থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় কোনো জিনিস তৈরি করা হয়।
(খ) বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্র (Top Down) : এই পদ্ধতিতে একটু বড় আকৃতির কিছু থেকে শুরু করে তাকে ভেঙে ছোট করতে করতে কোনো বস্তুকে ক্ষুদ্রাকৃতির আকৃতিতে পরিণত করা হয়।
ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার
১. কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারে ব্যবহার : প্রসেসরের উচ্চ গতি, দীর্ঘস্থায়িত্ব, কম শক্তি খরচ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে
ব্যবহার্য। একই সঙ্গে ডিসপ্লে ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে। ২. চিকিৎসা ক্ষেত্রে : ন্যানো-রোবট ব্যবহার করে অপারেশন করা, যেমন- এনজিওপ্লাস্টি সরাসরি রোগাক্রান্ত সেনে চিকিৎসা প্রদান করা, যেমন— ন্যানো ক্রায়োসার্জারি, ডায়াগনোসিস করা, যেমন-
এন্ডোসকপি, এনজিওগ্রাম, কলোনোস্কোপি ইত্যাদি।
৩. বাদ্যশিল্পে : খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেটিং, খাদ্যে স্বাদ তৈরিতে, খাদ্যের গুণাগুণ রক্ষার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যাদি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। ৪. গানি ক্ষেত্রে জ্বালানি উৎসের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ফুয়েল তৈরির কাজে, যেমন-
হাইড্রোজেন আয়ন থেকে ফুয়েল, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌরকোষ তৈরির কাজে। e. যোগাযোগ ক্ষেত্রে : হালকা ওজনের ও কম জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন পাড়ি প্রস্তুতকরণে।
৬. খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে : বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সামগ্রী যেমন— ক্রিকেট, টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য, ফুটবল বা গলফ বলের বাতাসের ভারসাম্য রক্ষার্থে।
৭. বায়ু ও পানি দূষণ রোধে : শিল্প কারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্যকে ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে অক্ষতিকর বস্তুতে রূপান্তর করে পানিতে নিষ্কাশিত করা; যেমন— ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যকে এই প্রযুক্তির সাহায্যে দূষণমুক্ত করে নদীর পানির দূষণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তেমনিভাবে গাড়ি ও শিল্পকারখানার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ন্যানো পার্টিকেলের সহায়তায় দূষণমুক্ত গ্যাসে পরিণত করে বায়ু দুষণ রোধ করা যায়।
৮. প্রসাধন শিল্পে : প্রসাধনীতে জিংক অক্সাইড-এর ন্যানো পার্টিকেল যুক্ত হওয়ায় ত্বকের ক্যান্সাররোধ সম্ভব
হয়েছে। সেই সাথে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার তৈরির কাজে ব্যবহার্য রাসায়নিক পদার্থ তৈরির ক্ষেত্রে এবং
এন্টি-এজিং ক্রিম তৈরিতেও ন্যানো-টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।
তবে উল্লেখ্য যে ন্যানো পার্টিকেলের ব্যবহারে নানাবিধ সুবিধা থাকলেও অন্যদিকে ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরি, প্রচলিত জ্বালানী গ্যাস-তৈল ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে এর অপব্যবহার, অভিজাত শ্রেণির উদ্ভবের দরুন ধনী ও নির্ধনের পার্থক্য চরম মাত্রায় বৃদ্ধি, কালোবাজারী এবং সর্বোপরি মানব শরীরের কোষের গঠনশৈলী পরিবর্তনসহ কোষ মেরে ফেলার মতো ক্ষতিকারক প্রযুক্তি হিসেবে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান হতে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি।