সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ “একটি তুলসী গাছের কাহিনি” গল্পটি ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প' নামক গল্পগ্রন্থ থেকে সংকলিত। গল্পের সীমিত পরিসরে জীবনের গভীর কোনো তাৎপর্যকে ইঙ্গিতময় ও ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ করে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ মুন্সিয়ানা রয়েছে। “একটি তুলসী গাছের কাহিনি”তেও এ গুণটি লক্ষ করা যায়।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশবিভাগের অব্যবহিত পরেই ঢাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি দখল করে কলকাতা থেকে আগত কয়েকজন উদ্বাস্তু কর্মচারী। কলকাতার ঘিঞ্জি এলাকায় কোনোরকমে মাথা গুঁজে দুর্বিষহ জীবনযাপন করলেও নিরাশ্রিত উদ্বাস্তু জীবনের যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা এতদিন তাদের গ্রাস করেছিল কলকাতার তুলনায় অনেক অনেক খোলামেলা বাড়ি পেয়ে তারা কেবল যে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল তা নয়, বরং বাড়িটিকে তাদের কাছে মনে হলো বেহেশ্ত । অচিরেই বাড়ির উঠানে আগাছার মধ্যে তারা আবিষ্কার করল একটি তুলসী গাছ। সবাই প্ৰথমে গাছটাকে উপড়ে ফেলার জন্য হইচই করলেও সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা দ্বিধাও জাগে এবং শেষ পর্যন্ত বেঁচে যায় তুলসী গাছটা। দেখা গেল সকলের অজান্তে কেউ একজন গাছটার পরিচর্যা করতে শুরু করেছে। তারপর একদিন সরকারি নির্দেশে বেআইনি দখল থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হলো। শূন্য বাড়িটাতে রইল কেবল ছড়ানো পরিত্যক্ত আবর্জনা আর সেই তুলসী গাছটা। যত্নের অভাবে তুলসী গাছটা অচিরেই আবার শুষ্কপ্রায় হয়ে উঠল । যে রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তের শিকার হয়েছে অসংখ্য মানুষের শান্ত জীবন তুলসী গাছটাও যে তারই শিকার অসহায় গাছটা তা জানবে কী করে।
আরও দেখুন...