খাদ্যপ্রাণে ভরপুর ফল অতি গুরুত্বপূর্ণ ফসল । ফল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী । ফলের মধ্যে যেসব উপাদান আছে তা আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন । আমাদের শরীর রক্ষার্থে যে সব ভিটামিন প্রয়াজন তার সবগুলো ফলে রয়েছে । শরীরিক সুস্থতা ও সুঠাম দেহ রক্ষায় ফলের ভূমিকা অপরিসীম । খাদ্য হিসাবে ফলের সুবিধা হলো যে রান্না ছাড়াই ফল খাওয়া যায় । বাংলাদেশের আবহাওয়া ফল চাষের খুব উপযোগী এবং একর প্রতি গড় ফলন যে কোন মাঠ ফসলের তুলনায় বেশি। মাঠ ফসলের তুলনায় ফল উৎপাদনে বেশি হওয়ায় ফলচাষে আর্থিক দিক দিয়ে কৃষকের আরও বেশি লাভবান হতে পারে ।
বাংলাদেশে সারাবছরই বিভিন্ন জাতের ফল হয় । কিন্তু বিভিন্ন রোগের দরুন ফলের উৎপাদন অনেক স্থানে আশাতীত হয় না । তাছাড়া রোগ ফলের গুণাগুণও নষ্ট করে । ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ফলের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক ।
বাংলাদেশের ফল ও ফল গাছের প্রধান প্রধান রোগের তালিকা
ফল ও ফল গাছের রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার
বৈজ্ঞানিক কৃষির বিকাশ ও উদ্ভিদ রোগের বিকাশ ফসল চাষাবাদের শুরু থেকে সমান্তরালভাবে চলছে । জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ শুরু করে। যেমন-
১। নতুন জাতের আবাদি ফসল / গাছ
২। অধিক ফলনশীল ফসলের জাত
৩। উন্নত সার আধুনিক সারের উদ্ভাবন ও ব্যবহার
৪ । অঢেল সেচের পানি এবং
৫ । পতিত না রেখে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার
কিন্তু রোগব্যাধির প্রতি বিশেষ নজর না রেখে এসব প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগ বালাই বিস্তার লাভ করে । যেমন-
১। বীজ ও অন্যান্য অঙ্গজ বংশবৃদ্ধির উপকরণের সাথে শক্তিশালী রোগজীবাণুর আবির্ভাব
২। নতুন শস্য জাত চাষের ফলে পূর্বের রোগ জীবাণুর অধিকতর শক্তি সঞ্চয়
৩। বিরাট এলাকা জুড়ে একই ফসল ও একই জাত চাষ, নিবিড় চাষ এবং সারা বছর ফসল দ্বারা মাঠ আচ্ছাদিত থাকায় রোগজীবাণু বেঁচে থাকার বংশ বৃদ্ধি ও বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পায় ।
৪ । সার ও পানি নির্বিচারে ব্যবহার রোগজীবাণু বিস্তারে সহায়ক। সুতরাং যে প্রযুক্তি বা কৌশল আমরা ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করছি তা রোগ জীবাণু বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। আধুনিক প্রযুক্তি রোগ জীবাণু সম্পর্কিত বিপদ বৃদ্ধির যেমন সহায়ক, তেমনি বৈজ্ঞানিক ভাবেই রোগজীবাণু নিয়ন্ত্রনও সম্ভব । জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাকোবিলায় অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন । একই ভাবে রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণে ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে । এই দুই পরিস্থিতি হতে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার অথাৎ সংরক্ষনের উপর গুরুত্ব অনুধাবন করতে যাতে অধিক উৎপাদনের মাঝে সাথে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হলো
১। মাঠে বা বাগানে যা রোপণ বা বপন করা হবে তা শস্য/গাছে পরিণত হবে ।
২। যা আবাদ করা হবে তা থেকে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যাবে ।
৩ । যা উৎপন্ন হবে তা নিরাপদে বাজারে আসবে এবং অবশেষে তাই গ্রাহকের নিকট পৌছুবে।
উপরোক্ত তিনটি বাক্য হতে এটা বোঝায় যে, ফসল চাষাবাদের প্রত্যেকটি বা যে কোন ধাপে রোগ সৃষ্টি হয় । এ রোগ দমনের প্রয়োজন রয়েছে, উৎপাদনের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে লক্ষ্য মাত্রায় পৌঁছার জন্য । উদ্ভিদ রোগ দমনের মূলনীতি (Principles of plant disease control) একটি কার্যকরী উদ্ভিদ রোগ দমন কর্মসুচী প্রনয়নে নিম্নলিখিত মুল বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার ।
১। শস্যের প্রকার : লতা, গুল্ম গাছ, অর্থকরী ফসল, খাদ্য শস্য ইত্যাদি শস্যের বৃদ্ধির পর্যায়
২। রোগজীবাণুর প্রকৃতি ও ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি রোগ জীবাণুর জীবনচক্র, বীজ, মাটি বা । বায়ু বাহিত, বিস্তারের ধরন ইত্যাদি ।
৩। রোগের প্রকৃতি ও অভ্যন্তররীণ/বাহ্যিক, বীজ, মূল, ফুল, পাতায় আক্রমণ এ সকল বিষয় মনে রেখে উদ্ভিদ রোগ দমন কর্মসূচি নিম্নলিখিত ৪টি মূলনীতির ভিত্তিতে প্রনয়ন করা যায় ।
ক. রোগজীবাণু বর্জন (Exclusion of pathogen)
খ. রোগ জীবাণু নিমূল (Eradication of the pathogen)
গ. রোগ জীবাণুর হাত থেকে ফসলকে বাঁচানো
ঘ. রোগ প্রতিরোধী জাত উন্নয়ন (Resistant variety)
উপরোক্ত ৪(চার) মূলনীতির উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদের রোগ দমনে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়
১ । আইন প্রয়োগের মাধ্যমে (Legislative measures )
২ । চাষাবাদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (Cultural practices)
৩ । রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার (Use of Chemicals)
৪ । রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (Use of resistant variety)
৫ । জৈবিক দমন (Biological control)
৬। সমন্বিত রোগ দমন (IPM - Integrated Pest Management)
রোগ দমন ব্যবস্থা কোন সময় নেওয়া হলো তার উপর ভিত্তি করে রোগ দমন পদ্ধতি দুই প্রকার
১ । প্রাফোইলক্সিস - রোগ যাতে সৃষ্টি না হয় তার ব্যবস্থা নেওয়াকে প্রিভেনটিভ ব্যবস্থা বলে ।
২ । থেরাপি ও রোগ শুরু হওয়ার পর রোগের বৃদ্ধি রহিত করার ব্যবস্থাকে কিউরেটিভ ব্যবস্থা বলে ।
সারণি— ১ উদ্ভিদের রোগ দমন পদ্ধতিগুলো নিম্নে ছকে দেখানো হলো
(Plant Quarantine) সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি আইন যার মাধ্যমে কোন এলাকায় কোন নতুন বা অধিকতর শক্তিশালী রোগ জীবাণু প্রবেশে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য কৃষিজাত পণ্যের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় । একে উদ্ভিদ সংগনিরোধ বলা হয় ।
১৬৬০ সালে কারবারী গাছ নিষিদ্ধ করে ফ্রান্সে প্রথম উদ্ভিদ সংগনিরোধ আইন চালু করে । পরবর্তীতে ১৯১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কোয়ারেন্টাইন আইন চালু হয় । বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালের ক্ষতিকর বালাই আইন প্রণীত হয় যা ১৯৮৯ সালে সংশোধিত ও ১৯৯২ সালে বর্ধিত আকারে অনুমোদিত হয়ে চালু রয়েছে ।
কোয়ারেন্টাইল বা সংগনিরোধ ব্যবস্থাকে ২ ভাগে প্রয়োগ করা যায় ।
ক) Exclusive quarantine এটা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ও নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কার্যকরী করা হয়। যেমন: আলুর মড়ক রোগ দেখা দিলে কোন দেশ ইচ্ছা করলে সে বৎসর পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে আলু বীজ আমদানি বন্ধ রাখতে পারে। অথবা নির্দিষ্ট কোন দেশ থেকে আলু বীজ আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ।
খ) নিয়ন্ত্রিত কোয়ারেন্টাইন: এটা কিছুটা শিথিল আইন। পরিদর্শন সনদপত্র প্রদান, বীজ পরিশোধন ও সনদপত্র প্রদান এবং অন্তরণ সনদপত্র প্রদানের মাধ্যমে বীজ আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উপরোক্ত আইন সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের জন্য দরকার পোষক ও রোগজীবাণুর প্রাকৃতি ও রোগ বিস্তারের ধরনের উপর সম্যক জ্ঞান ।
কোয়ারেন্টাইন আইন কোন দেশের প্রবেশ পথে (বিমান বন্দর, সামুদ্রিক বন্দর, স্থল বন্দর ইত্যাদি) কার্যকরী করা যায় । ঐ সব পথে কোয়ারেন্টাইন বস্তু পরীক্ষা করা হয় । কোয়ারেন্টাইন বতু বলতে বুঝায়, চারা গাছে গাছের পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড, মূল বা মূল সমষ্টি, বীজ সমষ্টি, বীজ, মাটিস্থ টবের গাছ ইত্যাদি, যাদের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত রোগজীবাণু বাহিত হতে পারে ।
প্রবেশ পথে রোগজীবাণুকে তিনটি শ্রেণিতে বিবেচনা করে কোয়ারেন্টাইন বস্তু পরীক্ষা করা হয় । যথা-
শ্রেনী কঃ যে রোগজীবাণু কোন এলাকায় সম্পূর্ণ নতুন ও শক্তিশালী । যেমন- বাংলাদেশের জন্য Septoria nodorum (সেপটোরিয়া নডরাম) (গমের বরচ রোগ), সিনকাইট্রিয়াস এন্ডাবোয়োটিকাম (আলুর ওয়াট রোগ)।
শ্রেণি খঃ যে রোগজীবাণু নতুন নয় কিন্তু অধিকতর শক্তিশালী যেমন: ফাইটোপথরা ইনফেসটানস (আলুর মড়ক রোগ)।
শ্রেণি গঃ যে রোগ জীবাণু সব সময় কিছু না কিছু রোগ ছড়ায় তবে মারাত্মক নয় । বাইপালারিস অরাইজি (ধানের বাদামি দাগ রোগ)।
চাষাবাদ পদ্ধতি (Cultural practices)
চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমেও ফসলের রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় । যেমন ভালো এবং সুস্ববীজ বাছাই করে বপন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে জমি তৈরি, ভালো ভাবে জমি চাষ দেয়া, সুষম সার ব্যবহার, শস্য পর্য্যায় বা জমি পতিত রেখে, আগাছা দমন করে, পরিষ্কার সেচের পানি ব্যবহার, পরিপক্ক ফসল কাটা, ফসলের আবর্জনা পরিষ্কার, ফসল সঠিকভাবে শুকানো ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগ-জীবাণু এড়িয়ে চলা যায় । উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে সুস্থ বীজ বপন করলে বীজ বাহিত রোগের তীব্রতা কমে । জমিতে পটাশ সারের অভাব হলে ধানের কাণ্ড পচা রোগ যেমন বেশি হয়, তেমনি নাইট্রোজেনের আধিক্যে ধানের বাস্ট ও ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট রোগ বেশি হয়।
আগাছা অনেক রোগজীবাণুকে আশ্রয় দেয়। যেমন বন্য বেগুন গাছ কেটে ফেললে আলুর মড়ক রোগ এড়ানো যায় । শস্য পর্যায় অবলম্বন করে বায়ুবাহিত রোগ লিফ রাষ্ট পাউডারি মিলডিউ, অলটরনারিয়া বাইটের তীব্রতা কমানো যায় । জমি পতিত রেখে কৃমিজনিত শিকড়-গিট, গোড়াপচা ও মূল পচা রোগ দমন করা যায় ।
উচ্ছেদ (Eradication): প্রধান পোষক বা বিকল্প পোষক ধ্বংসের মাধ্যমে রোগ দমন করা যায় ।
জৈবিক দমন (Biological Control)
উদ্ভিদ রোগ জীবাণুকে জীবিত এজেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রণকে জৈবিক দমন বলে। এ সমত এজেন্টকে এস্টাগনিস্ট বলে । ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি কৃত্রিম এন্টাগনিস্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এস্টাগনিষ্ট এর বৈশিষ্ট্য হলো এরা উদ্ভিদের রোগ উৎপাদন করে না ।
মাটিতে বা পত্রপৃষ্ঠে রোগজীবাণু ও এন্টাগনিষ্ট একত্রে বাস করে। এ দুয়ের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষিত হয়। ভারসাম্য বজায় থাকলে ফসলে রোগ হয় না বা তীব্রতা কম থাকে। কিন্তু ভারসাম্য ক্ষুন্ন হলে অর্থাৎ এন্টাগনিস্ট যদি শক্তি হারিয় ফেলে তাহলে ফসলের রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় । এমনকি মহামারী দেখা দিতে পারে । এন্টাগনিস্ট-এর শক্তি বৃদ্ধি করে এন ভারসাম্য পুনরায় স্থাপন করা যায় ।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে এটা করা যায়। যেমন:
১। হাইপার প্যারাসিটিজম: এখানে এন্টাগনিষ্ট রাগজীবাণুর রোগ সৃষ্টি করে ।
২। আরোপিত প্রতিরোধঃ রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাশীল ভাইরাস স্ট্রেন অনুপ্রবেশের দ্বারা উদ্ভিদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করলে পরবর্তীতে অধিকতর শক্তিশালী ভাইরাস ঐ গাছের রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। রোগ জীবাণু দমনের এ কৌশলকে Cross Protection বলে ।
৩। ব্যাকটেরিয়াও কাজ প্রয়োগ: ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী ভাইরাস প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস।
৪। ফাঁদ শস্য: কিছু শস্যের সংস্পর্শে আসলে কৃমি খাদ্যাভাবে মারা যায় । তিতা বেগুন জমিতে লাগালে কৃমির সংখ্যা কমে যায় ।
৫। বৈরিভাবাপন্ন গাছ: এসপারাগাস ও মেরিগাল্ডে প্রভৃতি গাছের মূল থেকে বিষাক্ত পদার্থ (পটাসিয়াম সায়ানাইড বের হয় বলে সংবেদনশীল শস্যের সাথে এদের মিশ্র ফসল চাষ করলে কৃমির সংখ্যা কমে যায় ।
৬। মিশ্র ফসল: পোষক ও অপোষক শস্য মিশ্র ফসল হিসাবে চাষ করলে অপোষক গাছ রোগজীবাণুর সহায়ক নয় বলে পোষাকের রোগের তীব্রতা কমে যায় ।
৭। বীজ বাহিত রোগ: এন্টাগনিস্ট ব্যাকটেরিয়া পাউডার বীজের সাথে মিশ্রিত করে বীজ বপন করলে বীজের পচন, চারার বাইট ইত্যাদি রোগ কমে যায় ।
৮। মাটির জৈব সংশোধন: সবুজ সার, করাতের গুঁড়া, হাড়ের গুঁড়া, সরিষার খৈল, ছাই ইত্যাদির দ্বারা মাটি পরিশোধন করলে মাটিতে উপকারী অনুজীবের সংখ্যা ও শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলের রোগের তীব্রতা কমে যায়।
পোকা দমনের মত উদ্ভিদ রোগের জৈবিক দমন এখনও কার্যকরীভাবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। কিনতু ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। যেমন- Trichodernoa harzianum নামক ছত্রাক ।
উদ্ভিদ নির্যাস দ্বারা রোগ দমন (Plant extract) উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে উদ্ভিদের রোগ দমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি । সাম্প্রতিককালে বাংলাদশেও উদ্ভিদ রোগ দমনে উদ্ভিদ নির্যাস সফলতার সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে । যেমন- রসুনের রস (পানি: রসুন = ১৪১ ) কিংবা মান্ডা
পাতার রস (পানি ও পাতা = ১ : ১) দ্বারা বীজ শাধেন করলে চযড়সড়ংরং বিহীধং অনেক বীজবাহিত ছত্রাককে দমন করা যায় ।
রোগ প্রতিরোধজাত ব্যবহার (use of disease Resistant variety)
রোগ প্রতিরোধী বলতে পোষাকের দ্বারা পরজীবির আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতোক বুঝায় । পাষকের এই ক্ষমতা নিজস্ব বংশ পরম্পরায় স্থায়ী । এটা জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উদ্ভিদের রোগ প্রতিরাধী ক্ষমতা প্রকট (dominant) ও রোগ সংবেদনশীল প্রচ্ছন্ন বিশিষ্ট। প্রকট জিন যে জাতে থাকে সে জাত রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সম্পন্ন । বিভিন্ন পদ্ধতিতে (নির্বাচন, সংকরায়ণ, টিস্যু কালচার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি) এ প্রকট “জিন” সংবেদনশীল জাতে স্থানান্তর করা যায়। রোগপ্রতিরোধী জাত ব্যবহারই হচ্ছে উদ্ভিদ রোগ দমনে উত্তম ও আধুি নক পন্থা ।
রাসায়নিক দমন (Chemicals Control) উদ্ভিদ রোগ সৃষ্টির পূর্বে বা পরে রোগনাশক প্রয়োগে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় । কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে রোগনাশককে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় যথা
১) প্রতিরক্ষামূলক রোগনাশক ২) নিরাময়কারী রোগনাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক
প্রতিরক্ষামূলক (Preventive) রোগনাশক
এগুলো প্রতিরোধের লক্ষ্যে রোগাক্রমণের পূর্বে বা শুরুতে প্রয়োগকরা হয় । প্রতিরক্ষামূলক রোগনাশক অজৈব ও জৈব রাসায়নিক প্রকৃতির হতে পারে । রোগ দমনের ঔষধগুলোকে মোটামুটি পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- তাম্র- ঘটিত রোগ নাশক, গন্ধক ঘটিত রোগনাশক, জৈব রোগনাশক (ঔষধ), পারদ ঘটিত রোগ নাশক এবং ধুম্র উৎপাদক মাটি পরিশোধক। অধিকাংশ ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ ঔষধ প্রয়োগে দমন করা যায় । ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ঔষধ ব্যবহারে তেমন ফল লাভ হয় না বরং বীজ পরিশোধন দ্বারা রোগ বিস্তার রোধ করা হয় । ভাইরাস রোগ আক্রান্ত গাছকে সুস্থ করার কোন ঔষধ নেই, কেবল মাত্র আক্রান্ত গাছকে ধ্বংস করে কীটনাশক ছিটিয়ে জাবপোকা, হপার প্রভৃতি দ্বারা রোগ বিস্তৃতি রোধ করা যায় । ভাইরাস হতে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সুস্থ গাছ হতে বীজ নেয়ার ব্যবস্থা করা হয় । নেমাটোডজনিত রোগ ও অন্যান্য কোন কোন রোগের বেলায় মাটি পরিশোধন করতে হয় ।
সাধারণত আক্রান্ত গাছ কিংবা অঙ্গকে রক্ষা করা ও রোগকে সরাসরি দমন করার উদ্দেশে তাম্র ঘটিত, গন্ধক ঘটিত ও জৈব ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়। পারদ ঘটিত ঔষধ গুঁড়ার আকারে ডাষ্টিং এর কাজে ব্যবহার করা হয় বীজ শোধনের জন্য। ফিউমিগ্যান্ট বা ধুম্র উৎপাদক ঔষধ ব্যবহৃত হয় মাটি শোধনের জন্য । বোর্দোমিকচার সহ কয়েকটি ঔষধ নিজেরাই তৈরি করে নেয়া যায় । যে সব স্থানে বোর্দোমিকচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে বোর্দো মিকচারের স্থানে অন্যান্য তাম্র ঘটিত ঔষধ যেমন কপার অক্সিক্লোরাইড, কপার-এ- কম্পাউন্ড, কুপ্রাভিট ও পেরেনকসের যে কোনটি প্রযোজ্য ।
উপরে বর্ণিত রোগনাশকগুলো গাছ বিশাষেন করেনা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা করলেও তা সর্বাঙ্গে ছড়ায় না । সাধারণত এগুলো স্থানীয় ভিত্তিতে কাজ করে। এগুলো গাছের রোগের আক্রমণ কমায় তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
কিন্তু আক্রান্ত গাছকে রোগমুক্ত করে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে না কিছু কিছু রোগ-নাশক আছে যা গাছে বিশোষিত হয়ে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের দেহের মধ্যে জীবাণু থাকলে অথবা প্রবেশ করতে চেষ্টা করলে তাকে ধ্বংস করে এবং রোগ নিরাময় করে গাছকে সুস্থ করে। নিরাময়কারী রোগনাশক সিস্টেমিক বা সর্বাঙ্গবাহী, অক্সামিন, পিরাসিডিন ও বেঞ্জি মিডাজেল শ্রেণির, সিস্টেমিক প্রকৃতির অক্সামিন, ভিটাভেক্স ও পন্ট ভ্যাক্স। পিরামিডিন-মিলকার্ব, মিলটেক্স বেঞ্জিমিডাজেল - বেনামিল এবং ব্যাভিস্টিন অ্যান্টিবায়োটিক রোগনাশক- এটি অণুজীব থেকে উৎপন্ন এক প্রকার দ্রব্য যা অন্যান্য অণুজীবের ক্ষতি কারক। সিস্টেমিক রোগনাশকের ন্যায় এটিও সর্বাঙ্গীয় প্রকৃতির। স্ট্রেপটোমাইসিন, এগ্রিমাইসিন এক্টিডাওন, ব্লাস্টিসিডিন, কাসুমিন বিশেষ উল্লেখ্যযোগ্য অ্যান্টিবায়োটিক রোগনাশক ।
সমন্ধিত রোগ দমন (Integrated Pest Management ) - IPM
উদ্ভিদের সবগুলো রাগ দমন পদ্ধতি সমানভাবে কার্যকরি নয় এবং রাসায়নিক পদ্ধতি তাৎক্ষণিক কার্যকর হলেও রোগনাশক পরিবেশ দুষন করে । রোগ প্রতিরোধীজাত উন্নয়ন সময় সাপেক্ষ ও অন্যান্য পদ্ধতি ব্যয় বহুল । প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত না করে উদ্ভিদ রোগ দমনের সকল কার্যকর উত্তম পদ্ধতিগুলোর সমন্বয় সাধন করে রোগ দমনের যে পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা তাই সমন্বিত রোগ দমন। এতে থাকতে পারে সুস্থ সবল রোগ, জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন ভাবে জমি তৈরি, আগাছা দমন, সুষম সার প্রয়োগ, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার, , মাঠে রোগ দমনে কার্যকর রোগনাশকের ন্যূনতম ব্যবহার ও উপযুক্ত সময় ফসল উত্তোলন ।
ফল ও ফল গাছের রোগের নামগুলো বর্ণনা
ফল ও ফল গাছের প্রধান প্রধান রোগের নামের বর্ণনা প্রথম পত্রের অষ্টম অধ্যায়ের ৮.১ এ বিস্তারিতভাবে দেয়া হয়েছে।
ফল ও ফল গাছের রোগের লক্ষণ দেখে শনাক্তকরণ
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ফল ও ফল গাছের রোগ ও রোগের লক্ষণ দেখে শনাক্তকরণের বিস্তারিত বিবরণ প্রথম পত্রের অষ্টম অধ্যায়ের ৮.২ এ দেয়া হয়েছে ।
রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা ব্যাখ্যা
ফল ও ফল গাছের প্রধান প্রধান রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বর্ণনা প্রথম পত্রের অষ্টম অধ্যায়ের ৮.৩ এ দেওয়া হয়েছে।
রোগনাশকের নাম ও প্রয়োগ মাত্রা
ফল ও ফল গাছের রোগ দমনের জন্য যে সকল বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলোর নাম, প্রয়োগ মাত্রা এবং কোন কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা হয় তার বিস্তারিত বর্ণনা প্রথম পত্রের অষ্টম অধ্যায়ের পৃষ্ঠা- ৭৪-৭৫ সারণি ১, ২ এ দেয়া হয়েছে ।
প্রধান প্রধান ফল গাছের প্রধান প্রধান রোগগুলোর নাম, লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো আমের-এনথ্রাকনোজ, স্যুটি মোল্ড, পাউডারি মিলডিউ ।
১. অ্যানথ্রাকনোজ (Anthracnose)
লক্ষনঃ পাতা ও কচি ডালে ফোসকা পড়ে। আক্রান্ত স্থানের তত্ত্ব ফেটে যায়। আক্রান্ত কচি ডাল ও পুষ্পদণ্ড কাল হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে। মুকুল কালো রং ধারন করে শুকিয়ে যায় পরিণত আমের গায়ে কাল দাগ পড়ে ।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার ও আম বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জানুয়ারি - ফেব্রুয়ারি মাসে ০.২ % ব্যাভিস্টিন টিল্ট (০.০৫) নোইন ভালকান ৭২ ডব্লিউপি (০.২%) ৩/৪ বার প্রে করলে এবং মার্চ- এপ্রিল ও আগষ্ট – সেপ্টেম্বর মাসে অনুরূপ স্প্রে করলে গুটি ও পরিপক্ক আমের আক্রমণ দমন করা যায় ।
২, রোগের নাম : পাউডারি মিলডিউ (Powdry mildew )
লক্ষণ: কচি পাতা ও পুষ্পমঞ্জরীতে পাউডারের মত গুড়া দেখা যায় । রোগের ব্যাপক তা বৃদ্ধি পেলে গাছের আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে আবৃত হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। পুষ্প দণ্ড বা ফল দণ্ড শুকিয়ে যায় এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আগা মরা লক্ষণ দেখা দেয়।
কারণ: অইডিয়াম গিফেরি নামক ছত্রাক ।
প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ আম বাগান পরিষ্কার ও পরিছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে ও পরে থিওভিট (০.৩%) সালফোটক্স (০.২%) টিস্ট (০.০৫%) ৩৪ বার ছিটালে এ রোগ দমন সম্ভব ।
৩. রোগের নাম (Shooty mould)
লক্ষণ: পাতার উপরি ভাগ কাল পাউডারের আবরণে ঢেকে যাওয়াই হচ্ছে এ রোগের লক্ষন । পোকা নিঃসৃত মধুতে ছত্রাক আটকে যায় । ঐ অবস্থায় ছত্রাক কর্তৃক উৎপাদিত প্রচুর কাল ভারে পত্রপৃষ্ঠে লেগে যায় এবং কাল আস্তরণের সৃষ্টি করে ।
কারণ: ক্যাপননাডিয়াম ম্যাংগিফেরি নামক ছত্রাক, জাব পোকা, হপার বা স্কেল পোকা যৌথভাবে স্যুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি করে ।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার: ম্যালাথিয়ন (০.০৩%) এর সাথে ব্যভিষ্টিন বা গোল্ডেন এম ৪৫ (০.২%) মিশ্রিত করে ২/৩ বার ছিটালে পাতার কাল তর দূর হয় ।
কলার রোগ- সিগাটোকা, পানামা, গুচ্ছ মাথা
৪. রোগের নাম: সিগাটোকা (Sigatoka )
লক্ষণ: রোগের প্রথমদিকে ঈষৎ হলুদ থেকে সবুজাভ হলুদ বর্ণের ছোটদাগ বয়স্ক পাতার শিরার সমান্তরালে সৃষ্টি হয় । কালক্রমে পাতার দাগ আকারে বড় হয় ও গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে পাতার কিনারা আক্রান্ত হয় এবং পাতা পোড়া বা ঝলসানো ভাব ধারণ করে ।
কারন: সারকোসপোরা মিউসি নামক ছত্রাক
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১. নির্দিষ্ট দুরত্বে গাছ লাগানো ও রোগমুক্ত সাকার ব্যবহারে এ রোগের আক্রমণ কমানো যায় ।
২. রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ও বয়স্ক পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
৩. বর্ষার প্রারম্ভে ও বর্ষার শেষে নিয়মিত টিল্ট (০.০৫%) বা ব্যাভিস্টিন (০.১%), ৩/৪ বার স্প্রে করলে সিগাটোকার আক্রমণ হ্রাস করা সম্ভব ।
(ii) রোগের নাম: পানামা (Panama or Fusarium with )
লক্ষণ: রোগের প্রথমে আক্রান্ত গাছের বয়স্ক পাতার কিনারায় হলুদ বর্ণের দাগ পড়তে থাকে । কালক্রমে পাতা সম্পূর্ণ হলুদ হয়ে যায় ও পরে বাদামি বর্ণ ধারণ করে। শেষে আক্রান্ত পাতার বৃত্তের মাঝখানে ভেঙে যায় এবং নিচের দিকে ঝুলে পড়ে।
কারণ: ফিউজেরিয়াম অক্সিসপোরাম নামক ছত্রাক
প্রতিরোধ ও প্রতিকার:
১। চারা লাগানোর আগে গর্তে ৫% ফরমালডিহাইড দ্বারা গর্তের মাটি নির্জীব ( শোধন) করতে হবে ।
২। চারা লাগানার পূর্বে হেক্টর প্রতি ২.২৫ টন চুন জমিতে ছিটিয়ে মাটির অম্লত্ব কমালে রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যায়।
৩। আলু, টমেটো ও বেগুন ব্যতিত অন্য ফসলের সাথে শস্য পর্যায় অবলম্বন করে রোগের তীব্রতা কমানো সম্ভব।
(iii) রোগের নাম ও গুচ্ছ মাথা (Bunchy top)
লক্ষণ: এ রোগের প্রথম লক্ষণ হলো পাতায় গাঢ় সবুজের মধ্যে হালকা সবুজ বা অতি হালকা হলুদ রঙের ডোরা। পাতা ফ্যাকাশে হয় এবং গাছের মাথা থেকে একযোগে গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতার আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট এবং তলায়োরের মতো সোজা হয় । গাছের উচ্চতা ২-৩ ফুটের বেশি হয় না ।
কারণ: মাইকোপ্লাজমা ও জাব পোকা এ রোগ ছড়ায় ।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১। রোগমুক্ত এলাকা ও গাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে ।
২ । আক্রান্ত গাছ দেখলে তা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
৩। হেক্টর প্রতি ২-২.৫ মন চুন প্রয়োগে রোগের তীব্রতা কমায়
পেঁপের রোগ - মোজাইক, এনথ্রাকনোজ, কাল্ড বা গোড়া পচা ও চারা ঢলে পড়া
(i) রোগের নাম : পেঁপের মোজাইক (Papaya Mosaic )
লক্ষণ : সকল বয়সের গাছে মোজাইকের আক্রমণ ঘটে। গাছের শীর্ষ কচি পাতায় গাঢ় সবুজ বর্ণের জ্যাবড়া এলাকা একান্তভাবে হলুদাভ সবুজের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় পরিলক্ষিত হয়। আক্রান্ত পাতা ক্ষুদ্রাকৃতির ও কুকড়ে যায় । পত্র বৃত্ত দৈর্ঘ্যে হ্রাস পায় এবং শীর্ষ পাতা গুলো খাড়া হয়ে যায়। ফল ক্ষুদ্রাকৃতির ও বিকৃত হয়।
কারণ: পাপাইয়া মোজাইক ভাইরাস
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১। ভাইরাস মুক্ত গাছের ফল থেকে সংগৃহীত বীজ লাগানো ।
২। জাবপোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন/সুমিথিয়ন বা এনথিও ০.১% হারে পেঁপে গাছের ২ মাস বয়স থেকে ১৫ দিন অন্তর ৬-৭ বার স্প্রে করলে মোজাইকের তীব্রতা কমানো যায় ।
৩। আক্রান্ত জমিতে পেঁপে ও কুমড়া জাতীয় ফসল চাষ না করাই উত্তম ।
(ii) রোগের নাম: এনথ্রাকনোজ (Anthracnose): পেঁপের এনথ্রাকনোজ রোগ আমের বা পেয়ারার এনথ্রাকনোজ রোগের মত একই বৈশিষ্ট্যের।
(iii) রোগের নামঃ কান্ড বা গোড়া পচা ও চারা চলে পড়া (Stem or foot rot and Damping off) লক্ষণ: গোঁড়া পচা রোগ সাধারণত ২-৩ মাস বয়স্ক গাছে দেখা যায়। কাণ্ডের গোড়ার মাটি সংলগ্ন স্থানের ফর পড়ে যায় এবং আক্রান্ত অংশ গাঢ় বাদামি বা কাল হয়ে যায়। এ পচন কাণ্ডে ও নিচের দিকে সম্প্রসারিত হতে পারে । বাতাসের ধাক্কার গাছ উপড়ে পড়ে গিয়ে মরে যায় ।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১। অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পানি নিষ্কাশনের সুবন্দোবস্ত যুক্ত জমিতে নার্সারি করলে চারা ঢলে পড়া রোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
২। নার্সারির মাটি ০.৫% ফরমালিন দ্বারা শোধন করে বীজ লাগানো উচিত।
৩। আক্রান্ত গাছের গোড়ার ০.১% সেপনিল স্প্রে করলে গোড়া পচা বন্ধ হয় ।
পেয়ারার রোগ-এনথ্রাকনোজ, উইলট
(i) রোগের নাম: পেয়ারার ফোসকা রোগ (Anthracnose)
লক্ষণ: সব বয়সের পাতায় ফোসকা পড়ে । প্রথমত পেয়ারার পায়ে ছোট ছোট দাগ পড়ে যা পরবর্তীতে বড় হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে । ফলের ত্বক ছিড়ে যায় ও কালো হয়ে যায় । আক্রমণ বেশি হলে কচি ও পরিপদ ফল ফেটে যার এবং পরবর্তীতে পচে যায়।
কারণঃ কলেকটট্রিকাম সিডি, পেস্টালোটিওপসিস সিডি ও ট্রাইগুস্পিডিয়া থিওমি নামক তিনটি ছত্রাক দ্বারা এ রোগের বিস্তার ঘটে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাগান
২। পেয়ারার কুড়ি আসার পূর্বে প্রাউড/টিস্ট(০.১%) বা ডারবেন, এম ৪৫ (০.২%) ১৫ দিন অন্তর ৪/৫ বার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায় ।
(ii) রোগের নাম: পেয়ারার উইলট (Guava Wilt)
লক্ষণ: এ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো গাছের আগা মরে যাওয়া
কারণ: মৃত্তিকা বাহিত ফিউজেরিয়াম অক্সিসপারোম এফ এসপি সিডি নামক ছত্রাক
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১। আক্রান্ত গাছে জিংক সালফেট দ্রবণ স্প্রে করা
২। ১% পটাশ স্প্রে করা
৩ । আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে ০.২% রিডোমিল দ্রবণ ঢালা ।
কাঁঠালের রোগ: কাঁঠালের ফল পচা রোগ
(i) রোগের নাম: ফল পচা (Fruit rot of jack Fruit )
লক্ষণ: কচি ফল বা মুচি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। পানি সিদ্ধ কাল দাগ হিসেবে পুষ্প মঞ্জুরীর গোড়ায় বা মুচির বৃত্তে এ রোগের আবির্ভাব ঘটে। কালক্রমে দাগ বৃদ্ধি পায় এবং সম্পূর্ণ বৃত্ত ও মুর্চি কাল হয়ে যায় । আক্রান্ত পুষ্পমঞ্জুরী বা মুচি নরম হয়ে পড়ে ঝরে পড়ে ।
কারণঃ রাইযোপাস আরটোকারপি
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
১। মরা পাতা, ডাল-পালা ইত্যাদি সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেললে ছত্রাকের সুপ্ত শক্তি কমে যায় ।
২। কচি ফল, পুষ্প মঞ্জরী ও পুরুষ ফুলে মৌসুমের প্রারম্ভে অর্থাৎ মার্চ মাসের গোড়ার দিকে ০.২% ডায়ানে এম-৪৫ বা ০.১% লোইন কিংবা এডিস্টিন/জেনুইন (০.২%) ১০ দিন অন্তর ৩/৪ বার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যেতে পারে ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। আগা মরা রোগের ফল বা ফল গাছের কোন অংশ আক্রান্ত হয় ?
২। পাউডারি মিলডিউ রোগে ফল ও ফল গাছের কোন অংশ আক্রান্ত হয় ?
৩। ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ কী ?
৪ । পানামা রোগের লক্ষণ কী ?
সংক্ষিত প্রশ্ন
১। আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও কাঁঠালের পচা রোগের লক্ষণগুলো লেখ ।
২। কলা, পেঁপে ও পেয়ারার প্রত্যেকের ৩টি করে রোগের নাম লেখ ।
৩ । পেয়ার ক্যাংকার ও কুলের পাউডারী মিলডিউ রোগের দমন পদ্ধতি লেখ ।
৪ । ডাইব্যাক রোগের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর ।
৫। আমের স্যুটি মোল্ড কি বর্ণনা কর ।
৬। পেঁপে গাছের মোজাইক রোগ সম্বন্ধে লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১ । আম, কাঁঠাল কলা, পেঁপে ও পেয়ারা প্রত্যেকটির ১টি করে রোগের নাম, কারণ ও লক্ষণ বর্ণনা কর ।
২। ফল ও ফল গাছের রোগ কীভাবে নির্ণয় করা যায় । বাংলাদেশে প্রধান তিনটি ফলের ও ফল গাছের রোগের লক্ষণ ও দমন ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ।
৩। পেঁপের কাণ্ড পচা রোগের কারন, বিস্তার ও তার প্রতিরোধ ও প্রতিকার বর্ণনা কর ।
৪ । কাঁঠালের ফল পচা রোগের লক্ষণ, রোগের কারণ ও প্রতিরোধ এবং প্রতিকার বর্ণনা কর ।
৫। কলার পানামা রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার বর্ণনা কর ।
৬ । ফলের প্রধান প্রধান ১০টি রোগের নাম, ফসলের নাম ও কারণ লেখ ।
৭ । ফল ও গাছে রোগাক্রমণের লক্ষণ দেখে আম, কাঁঠাল পেপে, কলা ও পেয়ারার প্রত্যেকর ২টি করে রোগ শনাক্ত করার পদ্ধতি লেখ ।
৮। বাংলাদেশে ব্যবহার হয় এমন ১০টি রোগনাশকের নাম ও রোগের নাম এবং প্রয়োগ মাত্ৰা লেখ ।
আরও দেখুন...